ঘি হলো পৃথিবীর অন্যতম বিশুদ্ধ খাবার। ঘি কখন খাবেন বা কীভাবে খাবেন এটা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে ঘি আসলে কেন খাবেন? আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি খাবার কেন খান? এটার সঠিক উত্তর কি আপনার জানা আছে? একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। আমরা সবাই বাচার জন্যই খাবার খেয়ে থাকি।আমাদের বেচে থাকার জন্য কাজ করতে হয়। আর এই কাজ করার জন্য শরীরের পর্যাপ্ত শক্তির উৎস আমরা পেয়ে থাকি খাবার থেকে।
তবে সকল খাবার ই আমাদের শরীরের জন্য একই শক্তি বা প্রোটিন সরবরাহ করে না। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো এক প্লেট খাওয়ার চেয়ে অন্য আরেকটি খাবারের মাত্র ১ চামচেই আপনি তার চেয়ে অধিকতর পুষ্টির নিশ্চয়তা পেয়ে যাবেন। ঠিক তেমনি একটি খাবার হলো “ঘি”। ঘি তে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন বি ১২ , বুটিরিক এসিড,ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সহ আরও নানা পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীর কে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।
ঘি খেলে যে উপকার মিলবে
ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে বলে শেষ করা কঠিন। ঘি এর নানাবিধ উপকারিতার কারনে অনেকেই এটিকে সুপারফুড নামে আখ্যায়িত করে থাকে।
- ঘি আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- শরীরে ভিটামিনের অভাব দূর করে।
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
- জয়েন্টের ব্যাথার সমস্যা দূর করে।
- দেহের কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।


কোন সময়ে এবং কীভাবে ঘি খাওয়া উত্তম
ঘি আমাদের শরীরের জন্য এতো বেশি উপকারি যে, আপনি এই ঘি যেকোনো সময়, এবং যেকোনো ভাবে খেতে পারবেন।ঘি নিয়ে অবশ্য আমাদের প্রচলিত কিছু ভুল ধারনা রয়েছে। যেমন খালি ঘি খাওয়া যায় না বা গ্রীষ্মকালে ঘি খাওয়া উচিত না। মুলত এগুলো পুরোটাই ভুল ধারনা। ঘি আপনি যেকোনো সময় খেতে পারবেন তবে শরীরে ঘি এর সঠিক পুষ্টিগুনের নিশ্চয়তা দিতে চাইলে আপনাকে কিছু টিপস ফলো করতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি সেই টোটকা বা টিপস-
ঘি কত প্রকার কি কি এবং ঘি এর পুষ্টিগুণ
সকালে ঘি খাওয়ার উপকারিতা
ঘি খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো সকালে খালি পেটে । সারাদিন শরীর কে সতেজ রাখতে চাইলে এবং এনার্জির যোগান দিতে চাইলে রোজ সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ ঘি খাবেন। এক্ষেত্রে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চা চামচ ঘি মিশিয়ে নিবেন। খালি পেটে যদি শূধু ঘি খেতে না পারেন সেক্ষেত্রে রুটি, পরোটা, খিচুড়ি কিংবা ভাতের সাথে ঘি মিশিয়েও খেতে পারেন।
হজম শক্তি বাড়াতে
ঘি তে রইয়েছে বুটারিক এসিড। খালি পেটে হালকা গরম পানির সাথে ঘি খেলে এটি প্রাকৃতিক ভাবেই হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সাথে পেট পরিষ্কার রাখা, পেট ব্যাথা, কোষ্টকাঠিন্য এর মতো সমস্যার ও সমাধান করে থাকে।
ত্বকের লাবন্য বজায় রাখতে
ঘি তে রয়েছে ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন। তাই সকালে খালি পেটে ঘি খেলে এটি আমাদের ত্বক কে প্রাকৃতিক ভাবেই সুস্থ্য এবং সুন্দর রাখবে। নিয়মত সকালে ঘি খেলে এটি ত্বকের শুষ্কতা রোধ করতে এবং চোখের নিচের ফোলাভাব ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে।
ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে
খালি পেটে ঘি খেলে এটি দীর্ঘক্ষন আপনার পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা সহজ হয়।


শরীর কে ডিটক্সিফাই করে
হালকা কুসুম গরম পানির সাথে ঘি মিশিয়ে খেলে এটি শরীর থেকে সকল টক্সিক বা দুষিত পদার্থ দূর হতে সাহায্য করে।এটি একটি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া।
মেধাবিকাশে সহয়তা করে
দেশি ঘি তে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি এসিড মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া স্মৃতিশক্তি ও মৃগিরুগির মতো স্নায়ুবিধ ব্যাধি তে সহায়ক এই ঘি।
মৌসুম ভেদে ঘি এর উপকারিতা
ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে তো জানলাম। চলুন তবে এবার জেনে নেওয়া যাক মৌসুম ভেদে ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে-
শীতকালে কেন ঘি খাবেন?
ঘি খাওয়ার নেই কোনো বিশেষ ঋতু । তবে শিতকালে ঘি খাওয়ার উপকারিতা সর্বাধিক। বাহিরে যখন কুয়াশা ভেজা আবহাওয়া, ঠিক তখনি গরম ভাত কিংবা খিচুরির সাথে এক চামচ ঘি! আহা, এ যেন কি এক চমৎকার স্বাদ। শুধু স্বাদের জন্যই না শীতকালে ঘি খেলে পাবেন নানাবিধ উপকার। চিকিৎসক দের মতে শীতকালে ঘি খেলে এটি আপনার সর্দি- কাশি ও ঠান্ডার সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।
সেই সাথে শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে এবং শরীর কে উষ্ণ রাখতেও শীতকালে ঘি এর জুরি মেলা ভার। এছাড়াও শীতকালে আমাদের অনেকের ত্বক অনেক শুষ্ক ও খসখসে মনে হয় সেক্ষেত্রে স্কিন কে মশ্চারাইজ করার জন্য ঘি খেতে পারেন এবং রাতে ঘুমানোর আগে ঘি আলতো হাতে স্কিনে ম্যাসাজ করতে পারেন।
গরমে কি ঘি খাওয়া যাবে?
সাধারনত ঘি বেশী খাওয়া হয় শীতকালে। এই কারনে অনেকেই ভেবে থাকেন গরমে বোধহয় ঘি টা খাওয়া ঠিক হবে নাহ। কিন্তু ঘি আমাদের শরীরের জন্য এতোটাই উপকারি যে আপনি যে কোনো সময়ে এই ঘি খেতে পারবেন। এমনকি বৈশাখের প্রখর রোদের সময়েও আপনি নিশ্চিন্তে ঘি খেতে পারবেন। বিশেষজ্ঞ দের মতে ঘি শরীরে প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও ঘি আমাদের জণ্য প্রটিনের সেরা উৎস। তুলনামুলক ভাবে শীতকালের চেয়ে গ্রীস্মকালে আমাদের শরীর অধিক ঘেমে যাবার ফলে ক্যালরি লস হয় বেশী। তাই গ্রীস্মকালেও নিজের শরীর কে চাঙ্গা রাখতে ঘি খাওয়া উচিত। ঘি গরমে আমাদের পানি শুন্যতার হাত থেকে রক্ষা করবে। এক্ষেত্রে ডাল, ভাত কিংবা রুটি দিয়ে ঘি খাওয়া যেতে পারে।
বর্ষাকালে ঘি খাওয়ার উপকারিতা
বর্ষাকাল মানেই নান ধরনের রোগব্যাধি এবং সংক্রমন এর আশংকা। তাই এসকল সমস্যা থেকে বাঁচতে বর্ষায় রোজ ১ চামচ ঘি রাখুন নিজেদের খাবার তালিকায়। ঘি তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন যা আপনাকে বর্ষা তে সর্দি কাশি থেকে দূরে রাখবে এবং রোগ জীবানুর সংক্রমন থেকে বাচতে সাহায্য করবে। তবে হ্যা সারাদিন বৃষ্টি তে ভিজে এক চামচ ঘি খেলেই সর্দি কাশি দূর হবে এমনটি কিন্তু না। বর্ষাকালে রোগ জীবানুর প্রকোপে পরার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। তাই এসময় সতর্ক থাকুন এবং নিয়মিত খাবার তালিকায় ঘি, ডিম, শাকসবজি সহ পুষ্টিকর খাবার রাখুন।


ঘি যেভাবে খেতে পারেন
ঘি খাওয়ার বিশেষ নিয়ম নেই। যেভাবে ইচ্ছে খেতে পারেন। তবে একই প্রসেসে বারবার ঘি খেলে একঘেয়েমি মনে হতে পারে। বিশেষ করে বাচ্চারা একই খাবার বারবার খেতে চায় না। তাই খালি মুখে ঘি খাওয়া ছাড়াও ঘি দিয়ে তৈরি করতে পারেন মজাদার কিছু আইটেম।
- তেল হিসেবে ।
- গরম ভাত অথবা খিচুরির সাথে।
- সবজি ও মাংস রান্নায়।
- মিষ্টি তৈরিতে।
- সেমাই বা বিভিন্ন ডেজার্ট তৈরিতে।
- নান রুটি অথবা পরোটা তৈরিতে।
- বিরিয়ানি বা পোলাও রান্নাতে।
- তন্দুর রুটি ভাঁজতে এবং পরিবেশন করতে
- বিরিয়ানি সহ এই ধরনের অন্যান্য খাবার রান্না ও পরিবেষণের জন্য ঘি ব্যবহার করা হয়।
ঘি যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যকর। তবে উচিতের থেকে বেশি খাওয়া পেতে সমস্যার পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই কারণে পরিমিত মাত্রায় ঘি খাওয়া জরুরি। আমাদের আজকের লেখায় আমরা ঘি খাওয়ার উপযুক্ত সময়, প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করাক হয়েছে।