কথায় বলে স্বাস্থ্য সকল সুখের মুল। সত্যি সুস্বাস্থ্য ছাড়া যেনো জীবন টাই অপূর্ন। স্বাস্থ্য বলতে আমরা অনেকেই শরীরের বাড়তি ওজন কে মনে করি। তবে এটি কিন্তু সম্পূর্ন ভুল ধারনা। বরং বাড়তি ওজন আপনার সুস্থ্য তার পথে বড় বাধার কারন হতে পারে। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। ঠিক তেমনি বাড়তি ওজন ও স্বাস্থ্য এর জন্য ক্ষতিকর।
ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে আমরা অনেকেই ঘি খাই না। কারন ঘি তে রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। তবে সঠিক সময়ে এবং সঠিক নিয়মে ঘি খেলে এটি আপনার ওজন বাড়াতে না বরং ওজন কমাতে সাহায্য করবে। ঘি কীভাবে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলে সেটিই জানবো আমরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে।
ঘি খেলে কী ওজন কমবে?
ঘি আমাদের শরীরে সুপারফুডের ন্যায় কাজ করে। ঘি এর রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। এর মধ্য অন্যতম হলো বিউটারিক এসিড (Butyric Acid)। এই এসিড আমাদের শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়া দেশি গরুর দুধে তৈরি করা ঘি আমাদের শরীরের মেটাবলিজম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে যা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ঘি মানেই স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরপুর একটি খাবার। ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হলেও ঘি তে থাকা এই স্যাচুরেটেড ফ্যাট এর আরেকটি নাম হলো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এই ফ্যাট টি আমাদের শরীর থেকে বাড়তি মেদ ঝড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও ঘি তে থাকা লিলোনিক এসিড অতিরিক্ত ওজনের বিরুদ্ধে কাজ করে।
অনেকেই ওজন কমানোর জণ্য ডায়েট করে থাকেন। সেক্ষেত্রে দৈনিক ১ চা চামচ ঘি খেতে পারেন। ঘি হলো স্বাস্থ্যকর ডায়েটের একটি সেরা মাধ্যম। চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবারের পরিমান কমিয়ে দিয়ে দৈনিক শাকসবজি, ফল ও ডালের সাথে ঘি খাবেন। দেখবেন এটি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
ওজন কমাতে কোন ঘি খাওয়া উচিত
আমাদের দেশে সাধারনত দুই ধরনের ঘি পাওয়া যায়। সাধারনত দুধের ভিন্নতার কারনে এই ঘি দুইটির উপকারিতা ও পুষ্টিগুন ও আলাদা হয়ে থাকে।
সাদা ঘি: সাদা ঘি হলো মোষের দুধ থেকে তৈরিকৃত ঘি। এটি দেখতে কিছুটা সাদা বা হালকা বাদামি বর্নের হয়ে থাকে। সাদা ঘি তে রয়েছে আয়রন, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। সাদা ঘি ওজন নিয়ন্ত্রনে কাজ করে।
হলুদ ঘি: হলুদ ঘি হলো দেশি গরুর দুধ থেকে তৈরি কৃত ঘি। মহিষের দুধের তুলনায় গরুর দুধে প্রোটিনের পরিমান বেশী। এছাড়াও গরুর দুধের পুষ্টিগুন মহিষের দুধ অপেক্ষা অনেক বেশী। তাই অতিরিক্ত হলুদ ঘি খেলে এটি আপনার ওজন বৃদ্ধির কারন হতে পারে। তবে দৈনিক পরিমিত পরিমানে ঘি খেলে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি রোগমুক্তির ক্ষেত্রেও দারুন কার্যকরী।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট কি ক্ষতিকর?
বিশেষজ্ঞ দের মতে স্যাচুরেটে ফ্যাট হলো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। একজন মানুষ প্রতিদিনের খাবার থেকে যে পরিমান ক্যালরি পেয়ে থাকে তার মাঝে অন্তত ২০-৩৫ শতাংশ হওয়া উচিত ফ্যাট। অর্থাৎ আপনি দৈনিক ২০-৩৫ শতাংশ ফ্যাট খেতে পারবেন। এর ফ্যাটের মাঝে ১০% যদি স্যাচুরেটেড ফ্যাট হয়ে থাকে তাহলে সেখানে ক্ষতির কোনো আশংকা নেই বরং এটি শরীরের জন্য ও উপকারি। তাই নিয়ম মেনে দৈনিক সঠিক পরিমানে ঘি খেলে এটি অবশ্যই আপনার জন্য উপকারি।
রূপচর্চায় ও শিশুর সুস্থতায় ঘি এর ব্যবহার এবং উপকারিতা
অতিরিক্ত ওজন বাড়ার কারন কী?
ফিট লাইফ কে না চায় বলুন। তবে বিভিন্ন অনিয়মের কারনে বাড়তি ওজনের সমস্যায় আমরা অনেকেই ভুগছি। বাড়তি ওজন একদিকে যেমন আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য এর অবনতি ঘটাবে ঠিক সেই সাথে মানসিক ভাবেও বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাড়তি ওজনের কিছু প্রধান কারন।
- শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ক্যালরি গ্রহন করা।
- তেল চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া। বিশেষ করে বাহিরের ফার্স্টফুড বেশী খাওয়া।
- খাবারে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনির ব্যবহার করা।
- শারীরিক পরিশ্রম না করা।
- পর্যাপ্ত সময় না ঘুমানো।
- দীর্ঘক্ষন শুয়ে বসে থাক।
- পরিমান মতো প্রোটিন এবং ফাইবার যুক্ত খাবার না খাওয়া।
- শরীরে হরমোনের তারতম্য হওয়া।
- অতিরিক্ত মানষিক দুশ্চিন্তা এর ফলেও অনেক সময় ওজন বৃদ্ধি পায়।
- তারাহুড়া করে খাবার খাওয়া, খাবার ভাল ভাবে চিবিয়ে না খেলে এটি আপনার শরীরে এক্সট্রা মেদ জমাবে।
- অত্যাধিক লবন খাওয়া।
এছাড়াও শারীরিক কিছু জটিলতার কারনে অথবা অসুস্থতা জনিত কারনে ওষুধ খাওয়ার সময় এটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনেও ওজন বেড়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন থাকার অসুবিধা
অতিরিক্ত ওজন কেউ ই চায় না। অনেকের কাছে অতিরিক্ত ওজন মানে সেটি দৈহিক সৌন্দর্য্য নষ্টের কারন। তবে ডাক্তারদের মতো শুধু সৌন্দর্য্য নষ্ট না বরং অতিরিক্ত ফ্যাটের কারনে আপনার শরীরে হতে পারে না রোগ।
- অতিরিক্ত ওজনের ফলে ডায়াবেটিকস এর মাত্রা বেড়ে যায়।
- উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে থাকে।
- হৃদরোগের আশংকা থাকে।
- রক্তে ব্যাড কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- হজমে সমস্যা হয়। ফলে কোষ্টকাঠিন্য এর সমস্যায় ভুগতে হয়।
- অতিরিক্ত ওজনের কারনে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বাড়তি ওজন মানূষের শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন হরমোনের ভারসম্য নষ্ট করে ফেলে।
- অতিরিক্ত মেদ অনেক সময় পুরুষদের মূত্রাশয় এর ক্যান্সার এবং নারীদের জরায়ু ক্যান্সার এর সম্ভাবনা কে বাড়িয়ে তোলে।
ঘি খাওয়ার পাশাপাশি ওজন কমানোর কিছু উপায়
ঘি খেলে যেহেতু ওজন কমে তাই ওজন কমানোর জণ্য কেউ যদি শূধু ঘি খেয়ে থাকেন তাহলে কিছু খুব একটা লাভ হবে না। আপনি যদি নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন না করেন তাহলে ঘি কোনোভাবেই আপনার ওজন কমাতে পারবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফিট থাকার জন্য ঘি খাওয়ার পাশাপাশি আর কি কি করনীয়-
- সঠিক খাদ্যাভাস মেনে চলা।
- দ্রুত হজম হয় এমন খাবার খাওয়া।
- অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করা।
- অতিরিক্ত চা – কফি পান করা থেকে বিরত থাকা।
- শারীরিক পরিশ্রম করা। নিয়মিত ব্যায়াম না করলেও অন্তত ৩০ মিনিট হাটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা পরিত্যাগ করুন।
- একেবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহন কে না বলুন। খাবার খাওয়ার সময় ভালো ভাবে চিবিয়ে খান যাতে দ্রুত হজম হয়।
- রাতে ঘুমানোর অন্তত ১ -২ ঘন্টা আগে খাবার খান এবং রাতে ভারি খাবার এড়িয়ে চলুন।
- দৈনিক ১ চা চামচ ঘি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার কে না বলুন।
ঘি খাওয়ার উপকারিতা
ঘি ওজন নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। চলুন ঘি এর কিছু উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।
- ঘি দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে।
- ঘি মস্থিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
- রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
- ত্বক ও চুল সুন্দর রাখে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- শরীরে এক্সটা এনার্জি এর যোগান দেয়।
- শীতকালে সর্দি কাশি এর হাত থেকে রক্ষা করে।
- প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- চোখের স্বাস্থ্য এর উন্নতি ঘটায়।
দৈনিক কি পরিমানে ঘি খাওয়া উচিত
বিশেষজ্ঞ দের মতে একজন সুস্থ্য ব্যাক্তি দৈনিক ২ চা চামচ ঘি খেতে পারবেন। তবে আপনি যদী ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে চান এবং আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই দিনের বেশীর ভাগ সময় শুয়ে বসে থাকেন সেক্ষেত্রে দৈনিক ১ চা চামচের বেশী ঘি না খাওয়াটাই উত্তম।
উপসংহার
অতিরিক্ত ওজনের ভয়ে যারা খাবারের তালিকা থেকে ঘি বাদ দিয়েছিলেন আমি বলবো আপনারা ভীষণ মজার ও পূষ্টিকর খাবার মিস করেছেন। সুস্থ্য থাকার জন্য দৈনিক সঠিক পরিমানে ঘি খান।খাদ্যাভাসে সামান্য পরিবর্তন ই আপনাকে একটা সুস্থ্য সুন্দর জীবন দিতে সক্ষম।