You are currently viewing গাওয়া ঘি কি, তৈরি পদ্ধতি ও এর উপকারিতা 
গাওয়া ঘি কি

গাওয়া ঘি কি, তৈরি পদ্ধতি ও এর উপকারিতা 

ছোটবেলায় মা’র মুখে বহুবার শুনেছি ঘি খাও। ঘি খেলে বুদ্ধি বাড়বে। ঘি খেলে যে শুধুই বুদ্ধি বাড়ে তা কিন্তু না, ঘি আমাদের শরীরে সুপারফুডের মতো কাজ করে। ঘি হলো স্বাদ এবং ঘ্রানে ভরপুর একটি খাবার। বিশেষ করে গরম ভাত কিংবা খিচুড়ির সাথে ১ চামচ ঘি যেনো বাঙালিদের কাছে একটি অমৃত। ছোটবেলায় ভাতের সাথে ঘি মিশিয়ে খেতে বেশ পছন্দ করতাম জন্য বাবা সবসময় বাজার  থেকে ঘি আনতেন।  

দেখতে দেখতে সময় বদলেছে। এখন অবশ্য আমি নিজেই বেশ যাছাই বাছাই করে ঘি কিনি। বর্তমান বাজারে তো অনেক রকম ঘি পাওয়া যায়। তবে সকল ঘি এর মাঝে স্বাদে ও ঘ্রানে সেরা মানের ঘি হলো গাওয়া ঘি। গাওয়া ঘি এর মতো এতোটা স্বাদ ও চমৎকার ঘ্রানের ঘি আর দ্বিতীয়টি নেই। আজকের এই ব্লগে আমরা গাওয়া ঘি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

গাওয়া ঘি কি? 

সকল ঘি এর মাঝে বিশুদ্ধতার আরেক নাম গাওয়া ঘি। গাওয়া গাওয়া ঘি অনেকের কাছেই স্বরের ঘি নামেও পরিচিত। সরাসরি দুধ জ্বাল করে দুধ থেকে স্বর সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই স্বর থেকেই তৈরি হয় গাওয়া ঘি। এই ঘি এর দুইটি আলাদা ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে। একটি হলো মিষ্টি জ্বালের  ঘি এবং অন্যটি কড়া জ্বালের ঘি। কড়া জ্বালের ঘি বেশ দানাদার হয়ে থাকে। 

খাটি গাওয়া ঘি

খাটি গাওয়া ঘি তৈরি পদ্ধতি  

গাওয়া ঘি তৈরি পদ্ধতি কিছুটা জটিল ও সময়সাপেক্ষ্য। ঠিক সেই কারনেই হয়তো অনান্য ঘি এর চেয়ে এই ঘি এর স্বাদ বেশি। পুষ্টিগুনে ভরপুর মজাদার এই গাওয়া ঘি তৈরি করা হয় নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি অনুসরন করে।  

দুধ নির্বাচন

ঘি তৈরির জন্য সর্বপ্রথম খাটি দুধ সংগ্রহ করতে হবে। সাধারনত গরুর দুধ, মহিষের দুধ, কিংবা ছাগলের দুধ থেকে ঘি তৈরি করা হয়। এর মাঝে অধিক জনপ্রিয় হলো গরু ও মহিষের ঘি। ঘি হলো একটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। গরুর দুধের চর্বি বা ফ্যাট থেকেই তৈরি হয় গাওয়া ঘি। তাই দুধ সংগ্রহ করার সময় যেই দুধে ফ্যাট এর পরিমান বেশী থাকবে সেই দুধ ই নির্বাচন করা উচিত। পশুর উপর ভিত্তি করে দুধে প্রায় ৩% থেকে ৮% ফ্যাট পাওয়া যায়। গরুর দুধের চেয়ে মহিষের দুধে তুলনামুলক ফ্যাট এর পরিমান টা বেশী। তবে গরুর ঘি ও মহিষের ঘি এর মাঝে বিশেষ একটি পার্থক্য রয়েছে। আর সেটি হলো ঘি এর স্বাদ ও রঙ।

  • হলুদ ঘি-  হলুদ ঘি তৈরি করা হয় দেশি গরুর দুধ থেকে।
  • সাদা ঘি- মহিষের দুধ হতে তৈরিকৃত ঘি সাদা বর্নের হয়ে থাকে। 

সর সংগ্রহ

ঘি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় দুধ সংগ্রহ এর পর এটিকে চুলায় জ্বাল করতে হবে। পর্যাপ্ত সময় ধরে জ্বাল দেবার পরে দেখবেন দুধ এর উপরে হালকা বাদামি বর্নের স্বর জমা হতে শুরু করেছে। এটি কিন্তু বেশ সময়সাপেক্ষ্য ব্যাপার। দুধ গুলো জাল দেবার মাধ্যমেই স্বর গুলো অল্প অল্প করে জমাতে হবে।

সর থেকে মাখন সংগ্রহ 

সর সংগ্রহ হয়ে গেলে স্বর  গুলোকে হাতের সাহায্য ভালো ভাবে মেখে নিতে হবে বা পাটায় পিষতে হবে। এক্ষেত্রে ব্লেন্ডারের মাধ্যমেও ব্লেন্ড করা যায়। শুধু খেয়াল রাখতে হবে যেনো কোনো ভাবেই সর গুলো জমাট না বাধে। এরপর বাটা সর গুলোকে অন্য একটি পাত্রে রাখুন এবং অল্প অল্প করে ঠান্ডা পানি মেশাতে থাকুন। এতে করে সর থেকে মাখনের অংশ আলাদা হয়ে উপরে ভেসে উঠবে এবং বাকি অংশ ঘোল হিসেবে নিচে জমা হবে। এরপর সর থেকে পাওয়া মাখন এখটি পরিষ্কার সুতি কাপড়ে রাখুন যাতে সর থেকে এক্সট্রা পানি গুলো ঝরে পরে। এভাবেই একদম পার্ফেক্ট মাখন রেডি হয়ে যাবে।

মাখন থেকে ঘি সংগ্রহ  

মাখন থেকে ঘি সংগ্রহ করা হয় জ্বালের মাধ্যমে। মাখন গুলোকে কড়া আচে জ্বাল দিতে হবে যতোক্ষন না মাখন পুরোপুরি গলে গিয়ে তেলের আকার ধারন করে। কথায় বলে “সোনা যতো পুড়ে যায় ততোই সোনা খাটি হয়” ঠিক তেমনি ঘি তেও যত আচ বা জ্বাল দেওয়া হয় ঘি এর স্বাদ তত বৃদ্ধি পায়। তাই গাওয়া ঘি তৈরির ক্ষেত্রে এই জ্বালের বিষয় টি মাথায় রাখতে হবে। এরপর এটি সম্পূর্ন তেলের বর্ণ ধারন করলে চুলার আচ কমিয়ে আরও বেশ কিছুক্ষন জ্বাল দিতে হবে। দেখবেন একটা  সময় কি সুন্দর সুঘ্রান ছড়িয়েছে এই দানাদার ঘি থেকে।   

গাওয়া ঘি এর উপকারিতা

গাওয়া ঘি এর উপকারিতা 

ঘি এর রয়েছে নিজস্ব স্বাদ ও ঘ্রান। যা অন্য খাবারের সাথে মিশালে সেই খাবারের স্বাদ টাকেও দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। তবে শুধু স্বাদ না বরং গুনে মানেও সেরা “ঘি”। ঘি এর স্বাস্থ্যউপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেও চেষ্টা করবেন নিজেদের খাবারে দৈনিক অন্তত ১ চামচ ঘি রাখার জন্য। ভারতীয় চার্বাক দর্শনের একটি প্রচলিত কথা রয়েছে “ঋন করে হলেও ঘি খাও, যতো দিন বাঁচো সুখে বাঁচো।” চলুন জেনে নেওয়া যাক গাওয়া ঘি এর কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-

  • প্রতিদিন সকালে ঘি খেলে এটি হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। সেই সাথে কোষ্ট্যকাঠিন্য, পেটের ব্যাথা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করবে।
  • ঘি মস্থিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যাথা দূর করতে ঘি দারুণ উপকারি।
  • গাওয়া ঘি আমাদের চোখের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত ঘি খেলে এটি হার্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
  • ঘি তে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা আমাদের লিভার কে সুস্থ্য রাখে।
  • এছাড়া ডায়বেটিকস, ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধ করতেও ঘি সহায়ক ভুমিকা রাখে।
  • ঘি ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে থাকে।
  • ঘি তে রয়েছে ভিটামিন এ ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন বি ১২। যা আমাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে।
  • শীতকাল বা বর্ষাকালে ঘি খেলে এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সর্দি কাশি থেকে দূরে রাখে।  

ঘি সংরক্ষণের উপায় জানুন, আপনার ঘি ভালো রাখুন!

রুপচর্চায় গাওয়া ঘি এর ব্যবহার  

ঘি এর উপকারিতা শুনে কি নিয়মিত ঘি খাচ্ছেন?  যদি খেয়ে থাকেন আমার ছোট্ট পরামর্শ হলো ঘি খাওয়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝে একটু রুপচর্চা তেও ব্যবহার করুন। এতে আপনার শরীর এবং সৌন্দর্য্য দুটোই ভালো থাকবে। ঘি হলো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। শীতকালে শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় আমরা চিন্তিত থাকি। তবে ঘি কিন্তু ত্বকের অতিরিক্ত রুক্ষ ও শুষ্কভাব দূর করে। ত্বকের ধরন বুঝে ২/৩ ফোটা ঘি আপনার স্কিনে ব্যবহার করতে পারেন। কিছুদিন ব্যবহারের পরে দেখবেন ত্বকে আলাদা একটা গ্লো দেখা যাচ্ছে। তবে তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারিদের ত্বকে ঘি ব্যবহার না করা করার পরামর্শ রইলো।

ত্বকের মসৃনতা বাড়াতে ঘি এবং পাকা কলা বেশ উপকারি। তাই এই দুইটি উপকরন দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। প্রথমে কলা ব্লেন্ড করে নিবেন এরপর সামান্য পরিমানে ঘি এড করে নিবেন। যদি আপনার ত্বকে মধু সুট করে করে তাহলে একটু মধু ও মিশীয়ে নিয়ে পারেন। এরপর এই ফেসপ্যাক টি তৈরি করে ৫ মিনিটের জন্য ফ্রিজে রাখবেন। তারপর পরিষ্কার মুখে ব্যবহার করে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন। সপ্তাহে ১ দিন ব্যবহার করতে পারেন এই ফেসপ্যাক টি। 

ঠোটের কালো দাগ নিয়ে কি আপনি চিন্তিত? নামি দামি ক্রিম ব্যবহার করেও কালো ভাব দূর হচ্ছে না? তাহলে রোজ ঠোটে ঘি ম্যাসাজ করুন। নিয়মিত ধৈর্য্য সহকারে ব্যবহার করলে এটি আপনার ঠোট কে মশ্চারাইজ রাখবে সেই সাথে কালো ভাব কেউ কমিয়ে ফেলবে। নিয়মিত ঘি ব্যবহারের পাশাপাশি বাহিরে গেলে ঠোটে  অবশ্যঈ SPF যুক্ত লিপবাম ব্যবহার করবেন। ঘি, মেথি, সামান্য মেহেদি গুড়া এবং পাকা কলা মিশিয়ে একটি হেয়ারপ্যাক তৈরি করতে পারেন। এটি চুলের আগা ফাটা সমস্যা দূর করবে এবং চুলের শাইনি ভাব বজায় রাখবে।  

রুপচর্চায় গাওয়া ঘি

খাঁটি গাওয়া ঘি যেভাবে চিনবেন 

  • খাঁটি ঘি চেনার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো প্রথমে হাতের তালুতে ঘি নিন। শরিরের স্বাভাবিক তাপেই যদি ঘি গুলো গলতে শুরু করে তাহলে বুঝবেন এটি খাঁটি ঘি।
  • ঘি এর জার বা বোতল সহ ঘি ফ্রিজে রাখু। যদি ঘি একেবারে জমে যায় তাহলে এটি খাঁটি। তবে যদি বোতলের মাঝেই ঘি এর আলাদা আলাদা স্তর দেখা যায় তাহলে এটাতে ভেজাল মিশ্রনের সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ঘ্রানেই বুঝবেন ঘি টি খাটি কিনা। ভেজাল ঘিতে ডালডা বা পামওয়েলের গন্ধ পাওয়া যায় এবং ঘি এর কালার টাও অনেক বেশী হলদে মনে হয়। 

খাঁটি গাওয়া ঘি কোথায় পাবেন  

দেশের প্রায় সকল স্থানেই এখন কমবেশী ঘি পাওয়া যায়। দিন দিন ক্রমশই বাড়ছে এই ঘি এর জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশে ঘি এর জন্য বিখ্যাত হলো পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ জেলা। তাই আপনি সরাসরি এই এলাকা থেকে ঘি সংগ্রহ করতে পারেন। অথবা বিভিন্ন ব্যান্ড এর ঘি ও টেষ্ট করতে পারেন। যেমনঃ প্রান, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, মিল্ক ভিটা ইত্যাদি। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন উদ্দোক্তা ও বর্তমানে হোম মেইড ঘি নিয়ে কাজ করছে এবং অনলাইনে তাদের সেবা প্রদান করছে। তাদের থেকেও যাছাই বাছাই করে খাটি গাওয়া ঘি নিতে পারেন। ঠিক তেমনি একটি নির্ভরযোগ্য পেইজ হলো “বিন্নি ফুড”। আর যদি ঘি কেনার ঝামেলা এড়াতে চান সেক্ষেত্রে বাসাতেই বানিয়ে নিতে পারেন চমৎকার গাওয়া ঘি। 

উপরিউক্ত আলোচনায় গাওয়া ঘি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে এই ঘি কীভাবে তৈরি হয়, কীভাবে চেনা যায় ইত্যাদি বিষয়ে। আশা করি লেখাতি পরে আপনি ঘি সম্পর্কিত অনেক বিষয়ে জানতে পেরেছেন। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.