বর্তমান সময়ে রান্নার জন্য রাইস কুকার সবার বাসায়ই আছে। এই যন্ত্র টি এখনকার সময়ে খুবই পরিচিত একটি যন্ত্র বলা যাই। শুরুতে শুধু ভাত রান্না করার ক্ষমতার জন্য এটি হত। তবে বর্তমান এতে শুধু ভাত রান্না পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং ভাত রান্নার পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন ধরণে খাবার তৈরি করা যায়।
রাইস কুকারে যেসব খাবার রান্না করা যায়, আমরা এমন কিছু খাবারের রেসিপি সম্পর্কে আলোচনা করবো। এতে আপনি রাইস কুকার ব্যবহার করে সহজেই আপনার পছন্দের খাবার তৈরি করতে পারবেন।
রাইস কুকারে যেসব খাবার রান্না করা যায়
এখানে এমন কিছু খাবারের রেসিপি দেওয়া হলো যা আপনি রাইস কুকারে রান্না করতে পারবেন।
সুস্বাদু কেক
কেক খেতে মোটামুটি সকলেই পছন্দ করে। কিন্তু কেক সবাই বানাতে পারেনা কারণ অনেকেই মনে করে “ওভেন ” ছাড়া কেক বানানো সম্ভব না। এর পেছনে কারণ হচ্ছে কেক পুড়ে যায়, ঠিক মতো কেক ফোলে না ইত্যাদি। তাই কেক খেতে ইচ্ছে করলেও এইসব ঝামেলার কারণে অনেকেই কেক বানানোর সাহস পায়না। তবে আপনি বাড়িতে বসে কুকার ইউজ করে ঝামেলা ছাড়াই কেক তৈরি করতে পারবেন।
রান্না করার পদ্ধতি
রাইস কুকারে কেক তৈরির জন্য প্রথমে কেকের ব্যাটার তৈরি করে নিন। এরপর রাইস কুকারের প্যানে তেল দিয়ে ব্রাশ করে নিন। এবার রাইস কুকার অন করে তাতে তৈরী করা কেকের ব্যাটার দিয়ে দিন। কেক হতে কতটুকু সময় লাগবে তা ব্যাটার এর পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।
ঝরঝরে পোলাও রান্না করুন
অনেকেই ঝরঝরে পোলাও রান্না করতে সমস্যায় পরেন। কারণ পোলাও রান্নার সময় পরিমাণ মতো পানি দেওয়ার পরেও চুলার তাপমাত্রা কমবেশী হওয়ার কারণে পোলাও নরম হয়ে যায়। এতে পোলাও ঠিক মতো টেস্টি হয়না। এই সমস্যার সহজ একটি সমাধান হলো রাইস কুকার। আপনি আপনার পোলাও ঝরঝরে করতে চাইলে রান্না করতে পারেন রাইস কুকারে।
রান্না করার পদ্ধতি
রাইস কুকারের ঢাকনা খুলে রেখে রাইস কুকারের প্যানে তেল দিয়ে সুইচ অন করে দিন। তেল গরম হলে তাতে প্রয়োজনীয় মশলা দিয়ে ভেজে নিন। এরপর চাল দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভাজুন। পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে দিন। এর পরে পোলাও ঝরঝরা হয়ে একা একা রান্না শেষ হয়ে যাবে। পোলাও হয়ে এলে রাইস কুকারের সুইচ বন্ধ করুন।
ভাপানো সবজি
রাইস কুকারে সবজি সিদ্ধ করে রান্না করা স্বাস্থ্যকর এবং সহজ উপায়গুলির মধ্যে একটি। এখানে আপনি আপনার পছন্দমতো যে কোন সবজি সিদ্ধ করতে পারবেন। এমনকি তেল মশলা দিয়ে রান্নাও করতে পারবেন।
রান্না করার পদ্ধতি
প্রথমে রাইস কুকারে পানি যোগ করুন, রাইস কুকারের পাত্রে শাকসবজি রাখুন এবং কুকারটিকে ‘কুক’ সেটিংয়ে সেট করুন। ফুটন্ত পানি থেকে উৎপন্ন বাষ্প শাকসবজিকে পরিপূণ ভাবে রান্না করে, তাদের পুষ্টি ও প্রাণবন্ত রং সংরক্ষণ করে।
ওটমিল এবং Porridge
রাইস কুকারে অনায়াসে রান্না করা ওটমিল দিয়ে আপনার দিনটি শুরু করতে পারবেন। এতে অধিক সময় ধরে রান্না করার ভয় কমে যাবে। নিখুঁতভাবে ওটমিল রান্না করতে ফল, বাদাম বা এক ফোঁটা মধু ইউজ করতে পারেন।
রান্না করার পদ্ধতি
রাইস কুকারে প্রথমে রোলড ওটস,পানি বা দুধ এবং আপনার পছন্দ মতো মিষ্টি ও মশলা একত্রিত করে নিন। এর পরে রাইস কুকার চালু করে দিন। এতে নির্দিষ্ট সময় পরে ওটমিল বা Porridge তৈরী হয়ে যাবে তার পরে আপনার পছন্দে ফল যোগ করে পরিবেশন করুন ।
স্যুপ এবং স্টু
যদি স্যুপ বা স্টু তৈরী করতে চান তাহলে রাইস কুকার দারুন কার্যকরী হতে পারে। এর পরিমিত তাপ উৎপন্ন হওয়ার কারণে উপাদানগুলি অনেক সুন্দর করে সিদ্ধ হয়। মজাদার মুরগির স্যুপ, উদ্ভিজ্জ স্টু, বা অন্যান্য যেকোনো ধরণে স্যুপ বা স্টু প্রস্তুত করতে পারেন।
রান্না করার পদ্ধতি
প্রথমে কুকার চালু করে কুকারের প্যানে প্রয়োজন মতো শাকসবজি এবং মাংস ভাজতে শুরু করুন। এরপরে ভেজে নেওয়া মাংস এবং সবজিতে ঝোল ও মশলা যোগ করুন এরপরে সম্পূর্ণরূপে রান্না এবং স্বাদযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধ হতে দিন।
রাইস পুডিং
রাইস পুডিং একটি সাধারণ একটি মিষ্টি বলা যাই, যা সহজেই রাইস কুকারে তৈরি করা সম্ভব। কিভাবে রাইস কুকারে রাইস পুডিং তৈরী করা যায় সেই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
রান্না করার পদ্ধতি
চাল, দুধ, চিনি এবং দারুচিনি ও যেকোন ধরণে স্বাদ মতো ভ্যানিলা ফ্লেবার একত্রিত করুন। এরপরে কুকার চালু করে কুকারে পাত্রে মিশ্রিত করা উপাদানটি দিয়ে দিন। এরপর নির্দিষ্ট সময় পযন্ত অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ পরেই একটি ক্রিমি ও সুস্বাদু পুডিং পেয়ে যাবেন।
পাস্তা এবং ম্যাকারনি
আপনি কুকারে আপনার পছন্দের পাস্তা রান্না করতে পারবেন। পাশাপাশি আপনার ফেভারিট ম্যাকারনিও তৈরী করে নিতে পারবেন। নিচে পাস্তা ও ম্যাকারনি রান্না করার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
রান্না করার পদ্ধতি
প্রথমে রাইস কুকারে পাস্তাগুলো সিদ্ধ করে নিন। পাস্তা সিদ্ধ হয়ে গেলে পানি ঝরিয়ে নিন এবং তারপর পাস্তার ভিতরে যেসব উপাদান দিতে চান সেগুলো রাইসকুকারে পাত্রে ভেজে নিন। সিদ্ধ করা পাস্তা দিয়ে আরো কিছুক্ষন ভেজে নিন। এভাবেই আপনার পছন্দের খাবার টি তৈরী করা সম্ভব।
মাছ বা তরকারি
আপনি চুলাতে যেভাবে মাছ, তরকারি রান্না করেন ঠিক একই ভাবে অল্প সময়ে রাইস কুকারে রান্না করতে পারেন। যদি আপনার সময় খুব কম থাকে অথচ আপনার রান্না করা প্রয়োজন হয় সেই ক্ষেত্রে রাইস কুকার আপনাকে খুবই কাজে দিবে।
রান্না করার পদ্ধতি
চুলাতে যেভাবে তরকারি বা মাছ রান্না করা হয় ঠিক একই নিয়মে রাইস কুকারের পাত্রে রান্না করতে পারেন ।
বিভিন্ন ধরণে বৈচিত্র্যময় খাবার রান্নার জন্য রাইস কুকার ব্যবহার করা অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি শুধুমাত্র সময়ই সাশ্রয় করে না বরং আপনার ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় রান্নার উপকরণের পরিমাণও কমিয়ে দেয়। যার ফলে অতিরিক্ত জিনিসপত্র পরিষ্কার করা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি কেবল মাত্র ভাত রান্নার জন্যই নয় বরং বিভিন্ন ধরনের রান্না তৈরী করার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।