আমরা সকলেই জানি ঘি একটি স্বাস্থ্যকর চর্বি যুক্ত খাবার। ঘি খেলে রয়েছে কতশত স্বাস্থ্য উপকারিতা। তবে আপনি কি জানেন সঠিক নিয়মে এবং সঠিক সময়ে ঘি না খেলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপকার না বরং মারাত্নক ক্ষতি সাধন করবে। কি অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন এতো টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাবেন অথচ সেটি আপনার জন্য ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে! এটি আসলে প্রকৃতির নিয়ম।
আমাদের আসে পাশে যা কিছু দেখছেন সব কিছুর দুইটা পার্ট বা অংশ রয়েছে। পজেটিভ এবং নেগেটিভ। এই যেমন ধরুন নদী। কি সুন্দর দেখতে তাই না! বিকেলে নদীর ধারে বসে শীতল বাতাস খেতে কার না ভালো লাগে। তবে সুন্দর এই নদী কেউ কিন্তু বলা হয় সর্বনাশা নদী। আজকের এই লেখার মাধ্যমে আমি আপনাদের ঘি খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং সময় সম্পর্কে জানাবো। এতে করে সঠিক নিয়মে ঘি খেলে আপনারা পাবেন সঠিক পুষ্টির নিশ্চয়তা।
ঘি খাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয় মানতে হবে
ঘি হলো দুধ থেকে তৈরি করা একটি উচ্চ ফ্যাট যুক্ত খাবার। যদিও এই ফ্যাট কে বলা হয় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। তবে সঠিক নিয়মে ঘি না খাওয়ার ফলে অনেকেই সমস্যায় পড়ে থাকেন। ঘি খাওয়ায় ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে।
সঠিক সময়
ঘি খাওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয় টা মেনে চলা খুব বেশী প্রয়োজন। ঘি আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে ঘি খেলে সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া যায়। রোজ সকালে এক চামচ পরিমানে ঘি খেতে পারেন। আবার দুপুরেও আপনি ভাতের সাথে ঘি মিশিয়ে খেয়ে পারেন। রাতে ঘি খাওয়া যাবে তবে অবশ্যই ঘুমানোর ২/৩ ঘন্টা পুর্বে খাবেন। রাতের বেলা ঘি খাওয়ার সেরা উপায় হলো গরম দুধের সাথে ঘি মিশিয়ে।
ধরণ, এলাকা ও কোম্পানিভেদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘি এর দাম
এটা খেতেও মজার সেই সাথে ভালো ঘুম হতেও সাহায্য করবে। তবে ঘি খেয়েই যদি সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরেন তাহলে এটি হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে। দিনের শেষ দিকে আমাদের শরীরে মেটাবলিজম এর মাত্রা কমতে থাকে। এতে করে শরীরের যেই এক্সট্রা ক্যালরি এটি বার্ন হতে পারে না। ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সুস্থ্য ও ফিট থাকতে একেবারে ঘুমানোর আগে ঘি কখনোই খাবেন না।
সঠিক পরিমান
কথায় বলে “ লেবু অতিরিক্ত চিপলে সেটি তিতা লাগে”। ঘি খেলে অনেক উপকার এটি আমরা জানি। তবে অধিক উপকারিতার কথা ভেবে আপনি যদি বেশী পরিমানে ঘি খেয়ে থাকেন এটি এটি আপনার উপকার না অপকারের কারন হবে।ঘি খাওয়ার সঠিক পরিমান টা নির্ভর করে মুলত ব্যক্তির বয়স এবং কায়িক শ্রমের উপর।
- বয়সঃ বয়স ভেদে সকলের শরীরে খাবারের চাহিদা ও আলাদা আলাদা। আমাদের সকলের বয়স হিসেবে ক্যালরি নির্ধারন করে খাবার খাওয়া উচিত । ঘি তে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ক্যালরি।
- প্রাপ্তবয়স্ক মানুষঃ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হিসেবে আপনি দৈনিক ১ -২ চা চামচ ঘি খেতে পারেন। তবে আপনার ওজন যদি বেশী হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে শুধু এক চা চামুচ ঘি ই যঠেষ্ট। এর বেশি ঘি খাওয়া যাবে না।
- শিশুদের ঘি এর চাহিদাঃ ঘি কিন্তু বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারি। ঘি শিশুদের ব্রেইন ডেভেলোপ করতে সাহায্য করে। এছাড়া ঘি তে থাকা অ্যান্টিওক্সিডেন্ট বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই নিয়মিত শিশুর খাবারের তালিকায় ঘি রাখা উচিত। শিশুকে ঘি খাওয়াবেন তার বয়স ও ওজন অনুযায়ী।
আপনার বাচ্চার বয়স যদি ৬ মাসের বেশি হয়ে থাকে এবং সে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার খেয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তাকে ৩-৪ ফোটা ঘি খাওয়াবেন। কারন এই সময় বাচ্চারা হামাগুড়ি দেওয়া শেখে, দাড়ানোর চেষ্টা করে। এককথায় এটা তাদের বাড়ন্ত বয়স। এই সময়ে বাচ্চারা তাদের ক্যালরি বার্ন করার সক্ষমতা লাভ করে। তাই তাদের এই বাড়ন্ত বয়সে তাদের শরীরে এক্সট্রা এনার্জি ও পুষ্টির নিশ্চয়তা দিতে পারেন ঘি এর মাধ্যমে।
ঘি দিয়ে খিচুরি, ঘি দিয়ে ডিম ওমলেট, ঘি এর তৈরি পায়েশ ইত্যাদি খাবার খাওয়াতে পারেন আপনার সোনামুনিকে। ঘি বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই আপনার বাচ্চার ওজন যদি কিছুটা বেশি হয়ে থাকে তাহলে তাকে ২-৩ ফোটা ঘি খাওয়াতে পারেন। বয়স অনুযায়ী পরিমানে বেশী ঘি খাওয়ালে এটি বাচ্চার হজমে সমস্যা করে এবং ওজন বাড়িয়ে দেয়। আর বাচ্চার বয়স ১ বছরের বেশী হলে তার দৈনিক খাবারে ১ চা চামচ ঘি রাখবেন। কারন এ সময় বাচ্চারা প্রচুর একটিভ থাকে। তাই খাবারে এক চামচ ঘি তাদের শরীর কে আরও ভালো রাখবে। বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
তবে বাচ্চাকে শুধু ঘি না বরং অন্য যেকোনো খাবার খাওয়ানোর সময় অবশ্যই চেক করে নিবেন এটি বাচ্চার শরীরে সহজে মানিয়ে যাচ্ছে কিনা বা বাচ্চা সহজে হজম করতে পারছে কিনা। অনেক শিশুদের হজম ক্ষমতা কম থাকে, তারা সহ ধরনের খাবার খেতে পারে না। তাই যেকোনো নতুন খাবার বাচ্চাকে প্রথমে খুব অল্প পরিমানে খাওয়াবেন। এরপর যদি বাচ্চার হজমে সমস্যা না হয় তাহলে তাকে নিয়মিত সেই খাবার টি খাওয়াতে পারেন।
পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করে শরীরে ঘিয়ের চাহিদা
পরিশ্রম বা কায়িকশ্রমের উপর ভিত্তি করে আমাদের সকলের ঘি খাওয়া উচিত। আগেই বলেছি ঘি হলো ফ্যাট বা চর্বি যুক্ত খাবার। আর অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত খাবার খেয়ে যদি আপনি সেগুলো ক্যালরি তে বার্ন করতে না পারেন তাহলে সেটি আপনি শরিরে এক্সট্রা ফ্যাট হিসেবে জমা হবে। এতে করে শরীরে মেদ জমে যাবে।
ঘি খাওয়ার উপযুক্ত সময়, কখন এবং কীভাবে ঘি খাবেন!
তাই আপনি যদি শরীর চর্চা না করে থাকেন অথবা দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা বসে সময় কাটান সেক্ষেত্রে ঘি খাওয়াটা আপনার জন্য উচিত না বলেই বিশেষজ্ঞ রা মনে করছেন। আপনি যদি ঘি খেতে চান ও ঘি এর সঠিক উপকারিতা পেতে চান সেক্ষেত্রে দৈনিক শরীরচর্চা বা অন্তত ৩০ মিনিট হাটার অভ্যাস করুন। এতে আপনার শরীর ও মন দুইটাই ভালো থাকবে।
ঘি খেলে হতে পারে যে মারাত্নক ক্ষতি
চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ঘি এর ক্ষতি কর দিক গুলো সম্পর্কে-
- অতিরিক্ত ঘি খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
- পরিশ্রমের চেয়ে বা দৈনিক যে পরিমান ক্যালরি ব্যায় হয় তার চেয়ে অধিক অধিক ঘি খেলে এটি ওজন বাড়িয়ে তোলে।
- অতিরিক্ত ঘি ডায়াবেটিকস এর মাত্রা বাড়াতে পারে।
- ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু ব্যাক্তি অর্থাৎ যারা দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেতে পারে না তারা ঘি খাওয়া এড়িয়ে চলবেন।
- গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঘি খাওয়া উচিত না। গর্ভাবস্তায় ঘি খেলে এটি ওজন বাড়িয়ে দেওয়া ও হজমের সমস্যায় ফেলতে পারে।
- অতিরিক্ত ঘি খেলে হজমে সমস্যা হয় হলে কোষ্টকাঠিন্য, পেটে পিড়া সহ আরও নানা সমস্যা দেখা যেতে পারে।
- যারা অল্পতেই হজমের সমস্যায় ভোগেন। তারা অতিরিক্ত ঘি খাবেন না।
- জ্বর বা ঠান্ডা কাশি তে ভুগছেন, এমন অবস্থায় ঘি খাওয়া এড়িয়ে চলবেন।
- আপনি যদি লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে ঘি খাওয়া যাবে না।
- নকল ঘি কে “না” বলুন। বাজারের অধিকাংশ ঘি তৈরি করা হয় রিফাইন্ড বনস্পতি (ডালডা) অথবা পাম ওয়েলের মিশ্রনে। এই ভেজালমিশ্রিত ঘি খেলে এটি আপনার ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে, তাই ঘি কেনার আগে অবশ্যই যাচাই বাছাই করে খাটি ঘি নিবেন।
রুপচর্চায় ঘি এর ভুল ব্যবহার
ঘি খাওয়ার পাশাপাশি আমরা রুপচর্চা তেও ব্যবহার করে থাকি। তবে রুপচর্চা তে ঘি এর ব্যবহার করার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
- তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারি রা ঘি ব্যবহার করবেন না।
- যাদের ঘি তে এলার্জি রয়েছে তারা কখনোই ত্বকে ঘি ব্যবহার করবেন না।
- স্কিনে ঘি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন।
- চুলে ঘি ব্যবহার করে থাকলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো মানেই শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন।
আশা করছি আজকের লেখাটি পড়ে আপনারা ঘি খাওয়ার ক্ষতিকর দিক এবং কীভাবে সেই ক্ষতিকর দিক গুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন ও সঠিক নিয়মে ঘি খাবেন সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেয়েছেন।