You are currently viewing অসাধারণ স্বাদের ঐতীহ্যবাহি চমচম মিষ্টি তৈরির রেসিপি 
চমচম তৈরির রেসিপি

অসাধারণ স্বাদের ঐতীহ্যবাহি চমচম মিষ্টি তৈরির রেসিপি 

বাঙালি মিষ্টি খেতে বেশ পছন্দ করেন। আর মিষ্টি খাওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই দোকান থেকে মিষ্টি কেনার কথা চলে আসে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেকেই দোকানের মতো বাড়িতে তৈরি করছেন মিষ্টি। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের লোভীয়ন মিষ্টি রয়েছে। এরমধ্যে চমচম অনেক সুস্বাদু ও ঐতীহ্যবাহি একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার। যা টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম নামে বিখ্যাত।  

চমচম একটি মুখরোচক ও রসালো মিষ্টান্ন। উপরের অংশ পুরু ও কিছুটা শক্ত আর ভিতরের অংশ রসে ভরা তুলতুলে নরম। যা বেশ জনপ্রিয়, তাই চমচমের কথা শুনলেই আমাদের মুখে পানি চলে আসে। এই চমচম বাসায় তৈরি করতে পারেন খুব সহজেই। আজকের আর্টিকেলে আমরা চমচম তৈরির রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 

পোড়াবাড়ির চমচম তৈরির রেসিপি  

চমচম তৈরির জন্য খাঁটি গরুর দুধ নিতে হবে। কারণ দেশি গরুর দুধ অনেক সুস্বাদু হয় সাথে গুণগত মানেও অন্যান্য। আজকের আর্টিকেলে সহজ রেসিপি তুলে ধরা হলো। চলুন জেনে নেওয়া যাক-  

উপকরণ  

১) দুধ ২ লিটার 

২) টক দই পরিমাণ মতো 

৩) সুজি ১/৪ চা চামচ 

৪) বেকিং পাউডার ১/৮ চা চামচ 

৫) চিনি ২ কাপ 

প্রস্তুত প্রণালী 

চমচম তৈরির রেসিপি প্রস্তুত প্রণালী 
  • ২ লিটার দুধ থেকে ২ কাপের মতো ছানা পাওয়া যাবে। টক দই দিয়ে ছানা কাটার সুবিধা হলো ছানার পরিমাণ বেশি হয় এবং কোনো গন্ধ থাকেনা। টক দইয়ে যে ফ্যাট থাকে তা দুধের সাথে মিশে যাওয়ায় ছানা অনেক ক্রিমি ও সফট হয়। তবে কেউ চাইলে ভিনেগার বা সিরকা দিয়েও ছানা তৈরি করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ২ লিটার দুধে ১ টেবিল চামচ পরিমাণ ঘি বা বাটার মিশিয়ে নিলে ছানা সফট হবে। 
  • এবার ছানা মাখিয়ে নিতে হবে। অনেকটা ভর্তা মাখানোর মতো করে রাখতে হবে। আসতে আসতে নমর হয়ে আসবে। এরপরে কাচা সুজি ও বেকিং পাউডার  দিয়ে সবগুলো একসাথে ভালোকরে মিশিয়ে নিতে হবে। একটি ডো করে সমান ভাবে ভাগ করে হাতের তলার মাধ্যমে চমচমের সেইপ নিতে হবে। হাতে সামান্য পরিমাণে ঘি বা তেল মাখিয়ে নেওয়া যেতে পারে। 
  • চিনির মধ্যে ৩ কাপ পানি দিয়ে চিনি গলিয়ে নিতে হবে। তারপরে চুলার আঁচ হাই  হিটে রেখে সিরা তৈরি করে নিতে হবে। খুব বেশি ঘন করার দরকার নেই। বোলক চলে এলে মিষ্টিগুলো সিরার মধ্যে দিয়ে ঢাকনা ঢেকে রাখতে হবে। তারপরে ১৫/২০ মিনিটের জন্য ভালো করে জাল দিতে হবে। আবারও ২০-২৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। সিরা ঘন সিরায় হলদে ভাব চলে এলে গরম পানি কিছুক্ষণ পর পরে পরিমাণ মতো দিতে হবে। ৩ ঘন্টা যাবৎ জ্বাল দিতে হবে। তারপরে ঘন্টাখানিক রেখে দিতে হবে। ব্যাস হয়ে গেলো দোকানের মতো লোভনীয় চমচম মিষ্টি। 

সাদা চমচম মিষ্টির রেসিপি 

সাদা দেখতে হলেও খেতে রসগোল্লা বা সাধারণত মিষ্টির মতো নয়। এটি তৈরি করতে হয় একটু ভিন্নভাবে। মুখে নেওয়ার সাথে সাথে একদম মিলিয়ে যায়। 

উপকরণ 

১) ফুল ক্রিম দুধ ৪ লিটার 

২) ভিনেগার ৮ টেবিল চামচ 

৩) ময়দা ২ টেবিল চামচ 

৪) চিনি ২ টেবিল চামচ 

সিরা তৈরির জন্য 

১) চিনি ১০ কাপ 

২) পানি ২০ কাপ

প্রস্তুতপ্রণালী 

  • দুধ একটি প্যানের মধ্যে দিয়ে চুলার আঁচ বাড়িয়ে দিতে হবে। একটি কাঠের চামচ দিয়ে নাড়তে হবে যেনো তলায় লেগে না যায়। সফট ছানা বানানোর জন্য ‍দুধে বলক আসার সাথেই চুলার আঁচ বন্ধ করতে হবে। এবার দুধের মধ্যে আঙ্গুর ডুবিয়ে ১-২ সেকেন্ড পর্যন্ত রাখা যায় ঠিক তেমন পরিমাণ ঠান্ডা করে নিতে হবে।  
  • ছানার কাটার জন্য ৮ টেবিল চামচ ভিনেগারের সাথে ৮ টেবিল চামচ পাানি মিশিয়ে দিতে হবে। এই মিশ্রণটি দুধের মধ্যে আসতে আসতে ঢালতে হবে এবং চামচ দিয়ে নাড়াতে হবে ( প্রতি লিটার দুধের জন্য ২ টেবিল চামচ ভিনেগার যথেষ্ট) । ছানা আর সবুজ পানি আলাদা হয়ে গেলে সবুজ পানি দিয়ে ছেকে ফেলতে হবে। একটি ছাকটির মধ্যে সুতি নরম ঘন বুননের কাপড় বিছিয়ে নিতে হবে। তারপরে ছানার অংশটি পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। যাতে গরম ভাব না থাকে। কিছুক্ষণ সময় নিতে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। চাইলে ঝুলে রাখতে পারেন ঘন্টাখানিকের জন্য। এতেও পানি খুব সুন্দর করে ঝরে যায়। 
  • এবার ছানা একটি ট্রেতে বিছিয়ে ময়দা ও চিনি দিতে হবে (প্রতি লিটার ‍দুধের জন্য আধা টেবিল চামচ ময়দা ও আধা টেবিল চামচ চিনি)। খুব ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। কেউ চাইলে মিটবলার দিয়ে ভাগ করে নিতে পারেন। অথবা সমানভাবে কাজ করে চমচমের সেইপ দিয়ে নিতে হবে।  
  • সিরা তৈরির জন্য একটি প্যানে  চিনির ও পানি দিতে হবে। (প্রতি কাপ চিনির জন্য ২ কাপ করে পানি দিতে হবে।) সাথে বেশ কিছু এলাচ দিয়ে নিতে হবে। এবার চমচমগুলো গরম সিরার মধ্যে দিয়ে নিতে হবে। চুলার আঁচ বাড়িয়ে ২০ মিনিটের মতো ঢাকনা দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। তারপরে  একটা চামচ দিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে নিতে হবে। ২-৩ মিনিটের মতো জ্বাল দিয়ে চুলার আঁচ বন্ধ করে ঠান্ডা হতে দিতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে একটা স্টেইনারে সিরা ঝরিয়ে নেওয়ার জন্য চমচম রাখতে হবে। তারপরে ভালোকরে মাওয়া মাখিয়ে পরিবেশন করতে পারবেন। 

সুজির চমচম মিষ্টি তৈরির রেসিপি

যেকোনো ধরনের মিষ্টি আমরা ছোট বড় সবাই পছন্দ করি। ট্রেডিশনালি ছানা দিয়ে মিষ্টি তৈরি করা হলেও সুজি দিয়েও তৈরি করা যায় ভিন্ন স্বাদের মজাদার মচমচ মিষ্টি। চলুন রেসিপি জেনে নেওয়া যাক- 

উপকরণ 

১) দুধ পোনে ২ কাপ 

২) চিনি ১ কাপ 

৩) সুজি ১ কাপ 

৪) ময়দা ২ টেবিল চামচ 

৫) ডিম ১টা 

৬) ঘি ১ চা চামচ 

সিরার জন্য 

১) চিনি দেড় কাপ 

২) পান আড়াই কাপ 

৩) কেওড়া জল হাফ চা চামচ 

৪) গোলাপ জল হাফ চা চামচ 

প্রস্তুতপ্রণালী 

সুজির চমচম মিষ্টি তৈরির রেসিপি
  • একটি হাড়িতে দুধ দিতে হবে, তারমধ্যে চিনি দিতে হবে। দুধ একটু বলক আশা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। একটা বলক আসলে সুজি দিতে হবে। সুজি ভাজার প্রয়োজন নেই, ভাজা ছাড়াই সরাসরি ব্যবহার করতে পারবেন। চুলার আঁচ মিডিয়ামে রেখে অনবরত নাড়তে হবে। নাড়তে নাড়তে একটা কাই এর মতো হয়ে যাবে। দুধের লিকুয়িড ভাব চলে গেলে ময়দা দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। চুলা বন্ধ করে একটু ঠান্ডা করে নিতে হবে। 
  • হাত দিয়ে ধরার মতো গরম থাকলে ডিম ভেঙে দিতে হবে। ডিম অবশ্যই রুম টেমপারচারে থাকতে হবে। সাথে ঘি বা তেল দিতে পারবেন। সবগুলো ভালো করে মথে নিতে হবে। একটা স্মুথ ডো রেডি করে নিতে হবে। এবার হাতে সামান্য পরিমানে তেল মেখে নিতে হবে। এবার সুন্দর করে চমচমের সেইপ দিতে হবে। 
  • চুলার অন্য একটি পাত্রে সিরা তৈরির জন্য চিনি ও পানি দিতে হবে। চুলার আঁচ মিডিয়াম রেখে সিরা তৈরি করে নিতে হবে। খুব বেশি ঘন করা যাবেনা। না হলে মিষ্টির মধ্যে সিরা ঢুকবেনা। একটা বলক চলে আসলে কেওড়া ও গোলাপ জল দিতে হবে। এরপরে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। খুব বেশি গরম সিরা থাকা যাবেনা, তাই আগেই তৈরি করে রেখে দিতে হবে।
  • এবার মিষ্টিগুলো ভেজে নিতে হবে। মিডিয়াম আচেঁ ভেজে নিতে হবে। বেশি আঁচে ভাজলে মিষ্টিগুলো ওপর থেকে পুরে যাবে এবং ভিতরে কাচা রয়ে যাবে। মিষ্টিগুলো একটু উল্টি দিয়ে হবে যাবে সবদিকটা সমান রঙ হয়। এবং অবশ্যই হালকা হাতে উল্টাতে হবে যাতে ভেঙে না যায়। যখন বাদামী রং চলে আসবে তখন একটা ছাকনির সাহায্যে তেল ঝরিয়ে সরাসরি চিনির সিরায় দিতে হবে। সিরার মধ্যে দিয়ে আর জ্বাল করতে হবেনা। দুই থেকে তিন ঘন্টা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। তারপরে একটা চামচের সাহায্যে সিরা ঝড়িয়ে মাওয়ার মধ্যে দিতে হবে। মাওনা না থাকলে পাউডার দুধের মধ্যে গড়িয়ে নেওয়া যাবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেলো ‍সুজির চমচম মিষ্টি। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও অসাধারণ। কেউ না খেলে হয়তো এর স্বাদ বুঝবেন না। তাই আপনি ঘরেতে মুড়ি দিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারেন।

উপসংহার 

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী চমচম মিষ্টি। যারা মিষ্টি খেতে ভালোবাসের তাদের পছন্দের তালিকায় এই চমচম কিন্তু প্রথমেই দিকেই থাকে। দোকানে খুব সহজেই এই মিষ্টি কিনতে পাওয়া গেলেও নিজের হাতের তৈরির  মিষ্টি খেতে কিন্তু মজাই আলাদা। তাই পছন্দের রেসিপি অনুদযায়ী আপনিও ঘরে তৈরি করে ফেলতে পারবেন।