শীতকালীন সময়ে গাজর পাওয়া যায়। মূলত সবজি হিসেবে আমরা রান্না করে খেয়ে থাকি। গাজর শুধু সবজি নয় কাচা খেতেও বেশ ভালো লাগে, এছাড়াও সালাতেও ব্যবহার করা হয়। তবে এটি দিয়েও বিভিন্ন ডেজার্ট আইটেম তৈরি করা যায়। আর গাজরের হালুয়া অনেকেরই পছন্দের একটি খাবার।
গাজরের হালুয়া একধরনের মিষ্টি জাতীয় আইটেম। এটি দেখতে যেমন কালারফুল খেতেও অনেক সুস্বাদু। যেহেতু শীতের মৌসুমে পাওয়া যায়। সাধারণত বাজারে গাজরের দামটাও বেশ সহজলভ্য। ফলে অল্প খরচে কয়েক কেজি গাজর কিনে ঘরে থাকা উপকরণ দিয়ে সহজে তৈরি করা যায়। এছাড়াও যেহেতু এটি কম বেশি সকলেই পছন্দ করে থাকেন। তাই বাসায় একবার হলেও তৈরি করে নিতে পারেন। স্বাদে ও গন্ধে এই হালুয়া সবাইকে মুগ্ধ করে। আজকের আর্টিকেলে গাজরের হালুয়ার রেসিপি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
গাজরের হালুয়ার রেসিপি
গাজর দিয়ে খুবই মজার একটি ডেজার্ট তৈরি করা হয়, যার নাম গাজরের হালুয়া। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের হালুয়া বেশ জনপ্রিয়্ এরমধ্যে গাজরের হালুয়া অন্যতম। যাদের হালুয়া পছন্দ তারাও একবার হলেও বাসায় তৈরি করে দেখতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক তৈরি করতে কি কি উপকরণ লাগছে এবং সম্পূর্ণ প্রস্তুতপ্রণালী।
রেসিপি ১
উপকরণ
- ৪ কাপ পরিমাণ গাজর কুচি (গ্রেড করা)
- ৩ টেবিল চামচ ঘি/বাটার
- ৪টি ছোট এলাচ
- ৪টি দারুচিনি
- ১ কাপ জ্বাল করা তরল দুধ
- ১ কাপ চিনি
- পেস্তা বাদাম কুচি
- ১ কাপ পরিমাণ গুড়ো দুধ
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি প্যানে ২ টেবিল চামচ ঘি/বাটার দিতে হবে। ঘিয়ের মধ্যে ছোট এলাচ ও দারুচিনি দিয়ে হালকা একটু ভেজে নিতে হবে। এরপরে কুচি করা গাজর দিয়ে আবারও হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপরে একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। তরল দুধ দিয়ে একটু নেড়ে দিতে হবে। তারপরে সেদ্ধ করার জন্য প্রায় ১০ মিনিটের জন্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে চিনি দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাদ অনুযায়ী চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে নেওয়া যাবে। চিনি থেকে পানি বের হলে মিডিয়াম আচে শুকিয়ে নিয়ে গুড়ো দুধ দিতে হবে। গুড়ো দুধের পরিবর্তে মাওয়া ব্যবহার করা যাবে। কিছু পরিমাণ পেস্তা বাদাম কুচি ও ১ টেবিল চামচ ঘি দিতে মিশিয়ে নিতে হবে। শুকনো বা একটু ভেজা ভেজা যেমনটা পছন্দ করেন তেমনটি পেয়ে যাবেন।
রেসিপি ২
উপকরণ
- ১ কেজি গাজর
গাজর ভালোভাবে ধুয়ে সুন্দর করে ছিলে নিতে হবে। গ্রেটারের চিকন ছিদ্র বিশিষ্ট অংশ দিয়ে গ্রেট করে নিতে হবে। আর গ্রেট করা গাজর সাথে সাথে রান্না করতে হবে। বেশি সময় রাখলে গাজরের কালার নষ্ট হয়ে যাবে।
- পানি দেড় কাপ
- পনে ১ কাপ গুড়ো দুধ
এবার পানির মধ্যে গুড়ো দুধ দিয়ে জ্বাল করে ঘন করে নিতে হবে। কেউ চাইলে গুড়ো দুধের পরিবর্তে তরল দুধ ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ এই রেসিপিতে অবশ্যই ঘন দুধটাই ব্যবহার করতে হবে।
- ৬ টেবিল চামচ ঘি
- কিছু বাদাম কুচি
- ১ মুঠো কিসমিস
- ৩টি এলাচ
- সোয়া ১ কাপ দুধ
- ১ কাপ চিনি
- ১ চিমটি লবন
- ১ কাপ গুড়ো দুধ
- হাফ চা চামচ এলাচগুড়ো
প্রস্তুতপ্রণালী
চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে ৩ টেবিল চামচ ঘি ও কিছু বাদাম কুচি দিয়ে ভেজে নিতে হবে। তারপরে কিসমিস দিয়ে আবারও একটু নেড়ে নিতে হবে। খুব বেশি ভাজা যাবে না, হালকা করে ভেজে নিতে হবে। বেশি ভাজা হলে খেতে তিতা লাগবে। হালকা রং ও কিসমিস ফুলে উঠলে তারপরে অন্য পাত্রে তুলে নিতে হবে।
টিপস সহ তেল ছাড়া সবজি রান্নার রেসিপি ও স্বাস্থ্যউপকারিতা
একই তেলের মধ্যে এলাচ ও গাজর কুচি দিয়ে ২ মিনিটের মতো ঘিয়ের সাথে ভেজে নিতে হবে। তারপরে জ্বাল করা ঘন তরল দুধ, চিনি ও লবন দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। বলক আসা অব্দি চুলার আঁচ বাড়িয়ে রাখতে হবে। তারপরে মিডিয়াম আচেঁ রান্না করতে হবে। বেশি পরিমাণে দুধের মধ্যে এই হালুয়া অল্প আঁচে রান্না করলে গাজরের টেস্ট নষ্ট হয়ে যাবে। তাই অভার কুক করা যাবেনা । দুধ টেনে গেলে গুড়ো দুধ দিতে হবে। এই গুড়ো দুধ মাওয়ার কাজ করে। যদি হাতের কাছে মাওয়া না থাকে তাহলে গুড়ো দুধ ব্যবহার করা যাবে। এরপরে ভেজে রাখা বাদাম কুচি ও কিসমিস দিতে হবে। চুলার আঁচ এই পর্যায়ে কমিয়ে রাখতে হবে। এরপরে সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এলাচগুড়ো ও ঘি ৩ টেবিল চামচ দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
দুড়ো দুধ দিলে ক্রিমি একটা ভাব আসবে। ঘি দেওয়ার ফলে শাহী ভাব পাওয়া যায়। ঘি দেওয়ার পরে বেশি সময় আর রান্না করা যাবেনা। তাহলে ঘি এর ঘ্রাণ চলে যাবে। তাই ঘি দেওয়ার পরে মিশিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। যাদের গরম গরম খেতে ভালো লাগে তারা চাইলে চুলা থেকে নামিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। এবং যাদের ঠান্ডা খেতে পছন্দ তারা ফ্রিজে রেখে তারপরে পরিবেশন করতে পারেন।
রেসিপি ৩
উপকরণ
- ১ কেজি গাজর
গাজর পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপরে পটেটো পিলার দিয়ে পাতলা করে ছাল ছিলে নিতে হবে। কেউ চাইলে বটি বা কাচু দিয়েও ছিলে নিতে পারেন। প্রতিটি গাজরের শেষের অংশটি কেটে দিতে হবে। এবার গাজরগুলো একটু গ্রেটারের সাহায্যে কুচি করে নিতে হবে। ধৈর্য্য সহকারে সবগুলো গাজর কুচি করে নিতে হবে। এবং মাথার সবুজ অংশ ফেলে দিতে হবে। এই হালুয়া তৈরিতে গাজর মিহি কুচি হলে খেতে বেশ ভালো লাগে।
- ২ কাপ দুধ
- ১ চিমটি জাফরান
অন্যদিকে দুই কাপ পরিমাণ দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে ১ কাপ করে নিতে হবে। কুমুস গরম থাকা অবস্থায় জাফরান দিতে হবে।
- ২ টেবিল চামচ ঘি
- ৩টি এলাচ
- ১ চিমটি লবন
- ১ কাপ চিনি
- আধা কাপ গুড়ো দুধ
- কয়েকটি কিসমিস ও বাদাম
প্রস্তুতপ্রণালী
হালুয়া তৈরিতে ঘি ব্যবহার করলে শাহী ভাব আসবে খেতেও মজাদার। তেল দিয়ে করলে সুন্দর ঘ্রাণ আসবেনা । চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে ঘি ও এলাচ একটু ফেটিয়ে দিতে হবে। একটু ঘ্রাণ আসা অব্দি অপেক্ষা করতে হবে। তারপরে কুচি করে রাখা গাজর দিয়ে একটু ভেজে নিতে হবে। এতে কাচা গন্ধ যেনো চলে যায়।
গাজর থেকে এক্সট্রা পানি শুকিয়ে গেলে জাফরান দুধের মিশ্রণ ও লবন দিতে হবে।এবার একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলার আচঁ মিডিয়াম টু লো হিটে রাখতে হবে। ৫ মিনিট জ্বাল দিলেই গাজর সেদ্ধ হয়ে যাবে। তারপরে চিনি ব্যবহার করতে হবে। অবশ্যই গাজর সেদ্ধ হওয়ার পরেই চিনি ব্যবহার করতে হবে। আগেই চিনি ব্যবহার করলে গাজর সেদ্ধ হতে অনেক সময় লাগবে। টেস্ট অনুযায়ী চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেওয়া যাবে। চিনি দেওয়ার পর পরই চিনি থেকে পানি বের হতে শুরু করবে। তারপরে জ্বাল দিয়ে চিনির পানি শুকিয়ে নিতে হবে। তারপরে গুড়ো দুধ, কিসমিস ও বাদাম দিয়ে একটু নেড়ে নিতে হবে। চুলা থেকে নামানোর আগেই ঘি ব্যবহার করতে হবে। একটু নরম নরম অবস্থায় নেমে নিতে হবে। ঠান্ডা হলে একটু শক্ত হয়ে যাবে।
উপরোক্ত আলোচনায় গাজরের হালুয়ার রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। পছন্দের রেসিপি অনুসারে বাসায় পারফেক্টভাবে এই হালুয়া তৈরি করা যাবে। শীতের এই সবজি দিয়ে মজাদার হালুয়া তৈরি করে নিতে পারেন খুব সহজেই। ডেজার্ট হিসেবে বেশ ভালো একটি উপায় হলো এই হালুয়া। এছাড়াও বিকেলের নাশতায় খেলেও মন্দ হয়না।