মধু হলো একটি মিষ্টি, তরল এবং ঘন পদার্থ। যা সাধারনত মোমাছিরা বিভিন্ন ফুলের নির্যাস থেকে সংগ্রহ করে। পবিত্রগ্রন্থ কুরআন মাজিদ এ মধু সম্পর্কে প্রচুর তেলাওয়াত আছে। যেমন বলা হয়েছে জান্নাতে স্বচ্ছ মধুর নহর প্রবাহিত হবে। বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মতে সকল পানীয় উপাদানের মধ্যে মধু সর্বোৎকৃষ্ট। মধু ৯৯ প্রকার রোগের প্রতিশেধক। মধু সকল দিক থেকেই উপকারী এর উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করতে হলে আমাদের নির্দিষ্ট বিষয় থেকে ছিটকে পরা হবে।
মধু সকলের কাছে এমনভাবে গেথে রয়েছে যে মধু মানেই সেরা, মিষ্টি, ভালো এমন কিছুই বোঝায়। অনেকেই তাদের সন্তানের নাম ভালোবেসে মধু এবং হানি (Honey) রাখে। নাম না রাখলেও ভালোবেসে ডাকে মধু বলে। আবার কেউ রাগী হলে তাকে বলা হয় এর মুখে হয়তো ছোটোতে মধু দেওয়া হয়নি তাই এমন ব্যাবহার কথাবার্তা। আবার কারো কথা ভালো হলে ব্যাবহার ভালো হলে বলা হয় আহা মধুর মতো কথা বার্তা। এই যে এসকল থেকেই বোঝা যায় আসলে মধু কেমন বা কি জিনিস।
মধু যে শুধু ছেলেদের জন্যেই আলাদা উপকারী অন্যদের জন্যে নয় এমন কিন্তু না। মধু সকলের জন্যেই সমান উপকারী তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশু, যুবক-যুবতী, বয়ষ্কদের উপর আলাদা আলাদা উপকার করে বা প্রভাব ফেলে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারীতা সম্পর্কে। আমরা জানবো ছেলেদের শিশু- বৃদ্ধ অবস্থা অবধি মধু সেবনের উপকারিতা সম্পর্কে-
ছেলে শিশুদের মধু খাওয়ার উপকারিতা
মধু তো সকলেই ভালোবাসে! বাচ্চা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে এটি একটি বেশ পুরোনো আচরন, মধু সবার মেজাজকে উন্নত করে এবং আনন্দদায়ক অনুষ্ঠানের জন্যেও ব্যাবহার করা হয়। তবে বাচ্চা শিশুদের মধু খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তা না হলে আপনার পিচ্চির উপর মারাত্নক প্রভাব ফেলতে পারে। বাচ্চাদের বয়স ১২ মাস তথা ১ বছর হওয়ার পরেই মধু সেবন করানো উচিত এবং ১৮ মাসের বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো নিরাপদ।
চলুন এবারে বাচ্চাদের মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-
- সর্দি, ফ্লু এবং কাশি থেকে তাৎক্ষণিক আরাম দেয়।
- রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা শক্তিশালী করে।
- ঘুম এবং একজিমার প্রাকৃতিক সহায়তা হিসাবে কাজ করে।
- পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- সমৃদ্ধ অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যযুক্ত, যা তারাতাড়ি ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে।
- জ্ঞানীয় বিকাশ এবং মেজাজের স্তর উন্নত করে।
- ফ্রুক্টোজ সামগ্রীর কারণে দিন জুড়ে শক্তির স্তর বাড়িয়ে তোলে।
কিশোর অবস্থায় মধুর উপকারিতা
কিশোর বয়স হলো মূলত ১০-১৯ বছরের সময়কাল। এসময় একজন ছেলের দৈহিক-মানসিক পরিবর্তন ঘটে এবং বয়ঃসন্ধিকাল আসার সময়। এই সময়ে ছেলেদের এক্সট্রা খেয়াল রাখা উচিত কেননা এসময় ছেলেরা নানা ধরণের অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে। আবার যেহেতু এ সময় ছেলেদের দৈহিক মানসিক পরিবর্তন আসে তাই তাদের নিয়মিত মধু সেবন করা হলে এটি তাদের জন্যে অনেক বড় একটি নিয়ামক হবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কিশোর অবস্থায় মধু সেবনের উপকারিতা-
- মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
- হাড়ের গঠন দৃঢ় করে।
- শক্তি বাড়ায় এবং শক্তি ধরে রাখতে সহায়তা করে।
- এসময় তাদের খাবারের তালিকায় দুধের সাথে মধু দেওয়া উচিত এতে তারা একসাথে ২ সুষম খাবারের উপকারিতা পাবে।
- নিয়মিত মধু সেবনের ফলে ত্বকের সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পাবে। যেমন, চুল্কানি, ব্রণ, অথবা ছত্রাক জনিত সমস্যা।
- শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখবে।
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
যুবক বয়সে মধু খাওয়ার উপকারিতা
যুবক বয়স হলো ১৮ থেকে ৩৫ বছর অবধি। ছেলেদের এ সময়ে দৈহিক মানসিক চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। তাদের ঘাড়ে নানা ধরনের দায়িত্ত্ব থাকে। এ সময় অনেকে মাদকাসক্ত হয়। নিয়মিত সঠিক সময়ে খাবার খায় না ফলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুক্ষীন হয়। এ সময়ে ছেলেদের নিজের প্রতি খেয়াল থাকে না। তাই এসময় যতটুকু পারা যায় নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত এবং যত্ন নেওয়া উচিত। এসময় খাবার এর পাশে নিয়মিত মধু রাখা হলে ব্যাপক সুফল পাওয়া যায়।
মধুর গুনাগুন, প্রকারভেদ, উপকারিতা ও খাটি মধু চেনার উপায়
চলুন জেনে নেওয়া যাক ছেলেদের যুবক বয়সে মধু সেবনের উপকারিতা সমন্ধে-
- টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- মাদকাসক্ত এবং নিয়মিত ঠিকভাবে না ঘুমানোর কারনে শুক্রানুর পরিমান কমতে থাকে এবং মিলনের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এসময় মধুর সাথে কালোজিরা মিক্স করে খেলে ব্যাপক উপকার পাওয়া যায়। নতুন শুক্রানু উৎপাদন হয় এবং শুক্রানুর মান উন্নত ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- যৌনাঙ্গে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়।
- শরীরের ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ বাড়ায়।
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখে।
- দৈহিক সমস্যা থাকলে নিয়মিত মধু সেবন করলে শক্তি পাওয়া যায় এবং দেহকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।
- এ সময় মধুর সাথে রসুন, কালোজিরা, লবঙ্গ মিশ্রন করে খেলে এক্সট্রা উপকারিতা পাওয়া যায়।
- নিয়মিত মধু সেবনের ফলে শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘ সময় শক্তি ধরে রাখতে পারে।
- ঘুমের সমস্যা দূর করে।
- হাড়ক্ষয় রোধ করে।
সকল বিষয় এবং উপকারি দিকগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় যুবক বয়সে মধু সকল ছেলেদের জরুরি এটি নিয়মিত সেবন করা উচিত।
বৃদ্ধ বয়সে মধু খাওয়ার উপকারিতা
বৃদ্ধ বয়সকে আসলে সকলেই করুণার চোখে দেখে থাকে। এসময় দেহ যেনো আমাদের লিমিট দিয়ে দেয় বা দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোকে শক্তিহীন করে দেয়। সামান্য কিছু করতে খুব কষ্ট হয় অথচ আগে সেই কাজ চোখ বন্ধ করেই সম্পন্ন করা যেতো। এ অবস্থায় অবশ্য নিজেকেও করুন লাগে। যদিও এ অবস্থা থেকে মুক্তি কারো নেই সকলকেই একদিন এই বয়সের স্বাদ নিতে হবে।
তবে সেই শৈশব বা কিশোর বয়স থেকে নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে এ সময় অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।পূর্বের নিয়মিত মধু সেবন এবং বৃদ্ধাবস্থায় মধু খেলে অন্তত নিজের কাজগুলো নিজেই করতে পারবেন এবং বৃদ্ধাবস্থায় নানা রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাবেন।
চলুন জেনে নেয়া যাক বৃদ্ধাবস্থায় মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
এ সময় প্রধান রোগগুলোর মধ্যে একটি হলো বাতজ্বর যার ফলে কোমরে ব্যাথা হয়। শুধু কোমরে নয় হাড় ক্ষয়ের ফলে সকল জোড়ায় জোড়ায় ব্যাথা হয়ে থাকে যা অসহ্য যন্ত্রনার। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মধুর সাথে কালোজিরা মিশিয়ে সেবন করতে হবে। এসময় অনেকেই ডায়াবেটিস এ ভোগেন।
পূর্বে নিয়মিত মধু খেলে এ বয়সে এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। আপনি বৃদ্ধাবস্থায় হওয়া রোগগুলো ইগনোর করতে পারবেন না তবে সেগুলো থেকে আরাম পাওয়ার ব্যাবস্থা করতে পারবেন এজন্যে অবশ্যই অন্যান্য উপাদানের সাহায্যে মধু রাখতে হবে ।
উপরিউক্ত আলোচনায় মধু কি এবং ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণত বিভিন্ন বয়সে মধু খাওয়ার নানা রকমের উপকারিতা রয়েছে। পরিমাণ মতো মধু খাওয়া হলে তা স্বাস্থ্যের অনেক উপকার করে।