আমের মৌসুমে কাঁচা আম পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কাচা আমের টক ঝাল মিষ্টি ভর্তা মাখা আমরা সকলেই বাসায় খেয়ে থাকি। এছাড়াও লবন মরিচের গুড়ো দিয়েও খাওয়া যায়। কাচা আমের ভর্তার কথা শুনতেই মুখে পানি চলে এলে। স্বাভাবিকভাবেই টক জাতীয় যেকোনো খাবারের কথা উঠলেও আমাদের জিভে পানি চলে আসে। কাচা টক আমে এর ব্যতিক্রম নয়।
সাধারণত আমরা পাকা আম দিয়ে আমসত্ব তৈরি করে খাই। টক মিষ্টি ও টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের আমসত্ব খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। বিশেষ করে শিশুদের কাছে এটি অনেক প্রিয় একটি খাবার। তবে শুধু পাকা আম দিয়ে নয় কাচা আম দিয়েও তৈরি করা যায় মজাদার আমসত্ব।
কাচা আমের আমসত্ব
কাচা আমের তৈরি বিভিন্ন স্বাদের আচার কম বেশি আমরা সকলেই খেয়েছি। আচারের পাশাপাশি আমসত্ব অনেকের কাছে খুব পছন্দের একটি খাবার। কাচা আম ফুড়িয়ে যাওয়ার আগে কাচা আমের স্বাদ ধরে রাখতে আমসত্ব বেশ দারুন একটি উপায়। যেহেতু এটি তৈরি করা সহজ, তাই কাচা আম দিয়ে আমসত্ব বানিয়ে সারা বছর খাওয়া যাবে।
কাচা আমের ঝাল টক মিষ্টি আমসত্ব
রেসিপি ১
উপকারণ
- ১ কেজি কাচা আম
- ১ কাপ পরিমাণ চিনি
- হাফ চা চামচ বিটলবন
- হাফ চা চামচ সাধারণ লবন
- হাফ চা চামচ পাঁচফোড়ন
- হাফ চা চামচ টেলে নেওয়া জিরা গুড়ো
- হাফ চা চামচ লাল মরিচের গুড়ো
- টেলে নেওয়া শুকনো মরিচের গুড়ো হাফ চা চামচ
- সামান্য একটু গোল মরিচে গুড়ো
প্রস্তুতিপ্রণালী
প্রথমে কাচা আমের খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপরে টুকরো করে নিতে হবে। একটি কড়াইয়ে আম ও পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ১০-১৫ মিনিটের মতো সেদ্ধ করে নিতে হবে। সম্পূর্ণ আম সেদ্ধ হয়ে গলে গেলে একটি চালনিতে চেলে নিতে হবে।
একটি পাত্রে আমের গলানো রস ঢেলে নিয়ে এর মধ্যে চিনি, বিটলবন, সাধারণ লবন দিতে, লাল মরিচের গুড়ো, জিরা গুড়ো ও শুকনো মরিচের গুড়ো দিয়ে চুলার আঁচ মিডিয়ামে রেখে জ্বাল দিতে হবে। তারপরে অনবরত নাড়তে হবে। ঘন হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
একটি সমান পাত্রে আমসত্ব ঢেলে নিতে হবে। তারপরে শুকাতে হবে। আপনার বাসায় যদি রোদে শুকানোর ব্যবস্থা থাকে তাহলে চেষ্টা করবেন কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে। রোদে দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে চুলার পাশে অথবা ওভেনের মাধ্যমে আমসত্ব শুকিয়ে নিতে হবে।
কাচা আমের মশলা আমসত্ব
রেসিপি ২
উপকারণ
- কাচা আম মাঝারি সাইজের ৪ টি
- চিনি ৩ টেবিল চামচ
- লবন আধা চা চামচ
- বিটলবন ১/৪ চা চামচ
মসলা তৈরির জন্য
- মৌরি ১ চা চামচ,
- মেথি ১ চা চামচ,
- ১চা চামচ কালো জিরা,
- ১ চা চামচ কালো সরিষা,
- ১ চা চামচ আজওয়ান/ রাধুনী,
- ৬/৭টি লাল শুকনো মরিচ নিতে হবে
কাচা আমের ছাল ছিলে ভিতরের আটি ফেলে দিতে হবে। এরপরে কিউব করে কেটে নিতে হবে। তারপরে একটি পাত্রে দিয়ে মিডিয়াম টু লো আঁচে রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ভালো করে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে ম্যাস করে নিতে হবে। অথবা আপনি চাইলে একটি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে পারেন।
টক ঝাল মিষ্টি শুকনো আমসত্ব রেসিপি ও খাওয়ার উপকারিতা
তবে ঠান্ডা করে তারপরে ব্লেন্ড করতে হবে। না হলে ব্লেন্ডার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একটি স্টিলের ছাকনির ওপর ম্যাস করা আম নিয়ে ডলে ডলে চেলে নিতে হবে। এতে আমের গায়ে আশঁ থাকলে আলাদা করে নিতে হবে। এরপরে একটি প্যানে মসলার তৈরি উপকরণগুলো নিয়ে একটু ভেজে টেলে নিতে হবে। মিহি করে গুড়ো করার প্রয়োজন নেই।
আমের পিউরি বা আমের কাথে চিনি দিতে হবে। চিনির পরিমাণটি নির্ভর করবে আম কতটা টক। লবন, বিটলবন ও ১ চা চামচ তৈরি করে রাখা মসলা দিতে হবে। মিডিয়াম টু লো আচেঁ জ্বাল দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। এরপরে চিনির পানি শুকিয়ে আসবে, আমসত্ব ঘন হয়ে এলে একটি ট্রেতে সরিষার তেল একটু ব্রাশ করে নিয়ে ঢেলে দিতে হবে। সমান ভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে নিতে হবে। যাতে কোথাও বেশি মোটা বা পাতলা না হয়। তারপরে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
কাচা আমের টক মিষ্টি আমসত্ব
রেসিপি ৩
উপকারণ
- কাচা আম হাফ কেজি
- চিনি দেড় কাপ
- বিটলবন ১ চা চামচ
- ফুডকালার সামান্য পরিমাণে (অপশনাল)
- পানি ৩ কাপ
প্রস্তুতপ্রণালী
প্রথমে কাচা আমগুলোকে পিলারের সাহায্যে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। গ্রেটারের সাহায্যে কুচি করে নিতে হবে। গ্রেট করা হয়ে গেলে চুলায় একটি প্যান বসিয়ে এর মধ্যে ৩ কাপ পানি দিতে হবে। চুলার আঁচ মিডিয়াম টু লো হিটে রেখে জ্বাল দিতে হবে। মাঝে মাঝে একটু নেড়ে নিতে হবে। ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে এলে একটি ডাল ঘুটনি দিয়ে ঘেটে দিতে হবে। এতে আমের পিউরি স্মুদ হবে। এবার ছাকনিতে ছেকে নিতে হবে। বাড়তি আঁশগুলো ফেলে দিতে হবে।
এবার একটি প্যানের মধ্যে পিউরি দিয়ে চিনি ও বিটলবন, হলুদ ফুডকালার (কেউ যদি ফুডকালার ব্যবহার করতে না চান তাহলে এটি স্কিপ করতে পারেন)। এরপরে চিনি গলে গিয়ে পানি শুকিয়ে যাওয়ার আগ পযন্ত ভালোভাবে জ্বাল দিতে হবে। একটি প্লেটে একফোঁটা আমের রস দিয়ে প্লেট বাঁকা করে একটু উঁচু করে ধরতে হবে। এবার যদি রস একই জায়গায় থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আমসত্ব বানানোর জন্য পারফেক্ট জ্বাল হয়েছে। এবার ছড়ানো প্লেটে সরিষার তেল ব্রাশ করে জ্বাল করে রাখা আমের রস ঢেলে দিতে হবে। তারপরে পুরো প্লেটে ছড়িয়ে দিতে হবে। এবার কড়া রোদে দুই দিন শুকিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ভিন্ন স্বাদের আমসত্ব।
আমসত্ব নিয়ে কিছু তথ্য
আম নির্বাচন
আমসত্ব তৈরিতে ব্যবহৃত আমগুলো বাছাইকৃত ও ফ্রেশ হতে হবে। কাচা আম অনেক সময় হলুদ ভাব চলে আসে, এই আম দিয়েও তৈরি করা যাবে আমসত্ব। এতে কোনো সমস্যা নেই। এবং পাকা আমের আমসত্ব তৈরিতে পাকা বা বেশি পাকা আম ব্যবহার করা যাবে।
আমসত্বের স্বাদ
আমসত্ব তৈরির সবগুলো প্রসেস একই, শুধু আমসত্ব তৈরিতে ব্যবহৃত মসলার উপাদানগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। এতে আমসত্বের স্বাদ আলাদা হয়।
আমসত্বের রং
আমসত্ব তৈরি করলে শুকানোর পরে এর রং বিভিন্ন রকম হয়ে যায়। যেমন কালো, হলুদ বা খয়েরি। এটি নির্ভর করে আমসত্ব তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণের ওপরে। অনেকে আমসত্বের রং একেবারে সবুজ করতে সামান্য পরিমাণে ফুডকালার ব্যবহারের করে থাকেন।
শুকানো পদ্ধতি
আমসত্ব রোদে দিয়ে, চুলায় ও ওভেনে বেক করে এই তিন ভাবে শুকানো যায়। গ্রামে রোদে দেওয়ার তেমন ঝামেলা না থাকলেও শহরে রোদে দেওয়ার ব্যবস্থা বা সুযোগ থাকেনা। সেক্ষেত্রে সুবিধা অনুযায়ী চুলায় অথবা ওভেনে গরম করে নেওয়া যাবে।
চিনির পরিমাণ
আমসত্ব তৈরিতে চিনির পরিমাণটি নির্ভর করবে আম কতটা টক ও আপনি মিষ্টি কেমন পছন্দ করেন এটার ওপর।
আমসত্ব তৈরীতে সর্তকতা
আমসত্ব তৈরির জন্য জ্বাল দেওয়া হলে গায়ে ছিটে আসার সম্ভাবনা থাকে। তাই খুব সাবধানের সাথে জ্বাল দিতে হবে। এবং জ্বাল দিয়ে নাড়ার সময় অবশ্যই বড় খুন্তি বা স্পেচুলার দিয়ে নাড়তে হবে। তাহলে গায়ে ছিটে আসবে না।
উপরিউক্ত আলোচনায় কাচা আমের আমসত্ব কি, তৈরির পদ্ধতি ও সর্তকতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই লেখাটি পড়ার পরে ঘরে বসেই তৈরি করতে পারবেন সুস্বাদু আমসত্ব। তাই দেরি না করে আমের সিজনে কাচা আমের স্বাদ পেতে চাইলে আপনার পছন্দের রেসিপিটি ফোলো করে ঝটপট তৈরি করে ফেলতে পারেন।