You are currently viewing দাঁতের যত্ন, দাঁতের যত্ন কিভাবে নিতে হয় ও দাঁতের যত্নে উপকারী খাবার
দাঁতের যত্ন

দাঁতের যত্ন, দাঁতের যত্ন কিভাবে নিতে হয় ও দাঁতের যত্নে উপকারী খাবার

সুন্দর ও প্রাণবন্তর হাসি কার না পছন্দ! সুন্দর হাসি অনেকটা নির্ভর করে আমাদের দাঁতের ওপরে।  এছাড়াও আমরা প্রতিদিনের খাবার দাঁতের সাহায্যে চিবিয়ে খেয়ে থাকি। তাই মজবুত ও সুন্দর দাঁতের জন্য প্রয়োজন সঠিক যত্ন।  রোজ রোজ দাঁত ব্রাশ করার পরেও দাঁতের সমস্যাগুলো দেখা যায়। এর কারণ হলো দাঁতের সঠিক যত্নের অভাব।

আমরা বেশিভাগ সময় দাঁতের স্বাস্থ্যসেবা ও যত্ন নিয়ে অবহেলা করে থাকি। দাঁতের সমস্যাগুলোকে অগ্রাধিকার হিসেবে রাখিনা। ফলে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা যেমন দাঁতের ক্ষয়, দাঁতের ব্যাথা, মাড়িতে রক্ত, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ ইত্যাদি হতে মুখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত দাঁতের স্বাস্থ্য ও যত্নে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা। আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা দাঁতের স্বাস্থ্যের সঠিক যত্ন সম্পর্কে জানবো। 

দাঁতের যত্ন যেভাবে নিতে হয় 

”দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না” বলে একটা প্রবাদ রয়েছে। অর্থাৎ শিরশির করা, দাঁতের ক্ষয়, মাড়িতে রক্তপাত ইত্যাদি আমরা অনেক সময় দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা  না নেওয়ার ফলে পরবর্তীতে মুখে জটিলতা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় দাঁত তুলে ফেলতে হয়। পরবর্তীতে খাবার খেতে কষ্ট হয়। তাই আমাদের সকলের উচিত সময় থাকতে সঠিক ভাবে দাঁতের যত্ন নেওয়া। চলুন দাঁতের যত্নে করনীয় বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক- 

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ  

প্রতিদিন দু’বার ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। সুস্থ দাঁতের জন্য নিয়মিত সকালে নাস্তার পরে ও রাতে খাবারের পরে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশ করার সময় আলতো করে সার্কুলার মোশনে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। অবশ্যই ব্রাশটি যেনো ভালো মানের ও নরম হয় সেই দিকটি লক্ষ্য রাখতে হবে। এবং প্রতি ৩ মাস পর পর ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে।  

দাঁতের যত্ন

চিকিৎসকের পরামর্শ 

দাঁতের কিংবা মুখের যেকোনো সমস্যা হলে অবহেলা করা উচিত নয়। যতটা সম্ভব দ্রুত ডেন্টিস্ট এর কাছে যাওয়া উচিত। কারণ দাঁতের সমস্যাগুলো সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে পরবর্তীতে দাঁত উঠিয়ে ফেলা ছাড়া উপায় থাকেনা। তাই একজন ভালো ডেন্টাল এর কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিতে হবে। বছরে ২ বার ডেন্টিস্ট এর কাছে গিয়ে দাঁতের চেকআপ করাতে হবে। 

মাউথ ওয়াশ ব্যবহার 

নিয়মিত দাঁত ব্রাশের পাশাপাশি মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। মুখের মধ্যে একটা ফ্রেশনেস ভাব দিবে। ব্যবহারের আগে বোতলে থাকা নির্দেশনা কিংবা ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী ভালো একটি ফ্লোরাইড মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে মুখের দুর্গন্ধ নিরাময় হয়। এছাড়াও দাঁতের ক্ষয় ও মাড়িরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

দাঁতে ফ্লশ ব্যবহার  

দাঁতের মাঝে  খাবার আটকে যাওয়া একটা কমন বিষয়।  অনেক সময় মাংস, চকলেট, বাদাম  ইত্যাদি খাবার খেতে গিয়ে আমাদের দাঁতের মাঝে আটকে যায়। দাঁত ব্রাশ করার পরেও সেগুলো পরিষ্কার হয়না। এক্ষেত্রে সহজ একটি উপায় হলো দাঁতে ফ্লশ ব্যবহার করা। অনেকেই হয়তো দাঁতের ফ্লশ বিষয়টির সাথে একেবারেই নতুন। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারগুলো খুব সহজেই ফ্লশ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিষ্কার করা যায়। নিয়মিত ব্রাশ করার পাশাপাশি দাঁতে ফ্লশ ব্যবহার করলে আপনার দাঁত থাকবে ‍সুস্থ। দিনে একবার ফ্লশ করা যেতে পারে। ফলে দাঁতের ফাকে খাবার জমে মুখে দুর্গন্ধ হবে না। 

জিহ্বা পরিষ্কার 

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার সময় আমাদের জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে। জিহ্বা পরিষ্কার রাখলে মুখের দুর্গন্ধ হয়না। শুধু তাই নয় মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। টুথব্রাশ ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই পরিষ্কার রাখতে পারি। এছাড়াও জিহ্বা পরিষ্কার করার টুলস বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কেউ চাইলে সেটা দিয়েও পরিষ্কার করতে পারবে।

ফ্লোরাইড টুথপেস্ট 

কেনো আমরা ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করবো?  ফ্লোরাইড হলো একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ক্যাভিটি এজেন্ট যা আমাদের দাঁতকে ডিমিনারিলাইজেশন থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের মুখের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট অ্যাসিডের বিরুদ্ধে দাঁতের এনামেলকে শক্ত করে। আপনার ব্যবহৃত টুথপেস্টি ফ্লোরাইড সম্পন্ন কিনা তা আজই যাচাই করুন। এবং নিয়মিত ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজুন। যা আপনার দাঁতকে সুরক্ষা করবে। 

তামাক পরিহার করুন 

অনেকেই তামাক, পান, জর্দা খেতে অভ্যস্ত। মূলত তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ, মুখের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন দাঁতের সমস্যা হতে পারে। তাই দাঁতকে সুস্থ রাখতে তামাক পরিহার করা অন্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

ধূমপান ত্যাগ করুন  

সিগারেটে থাকা নিকোটিনের প্রভাবে দাঁতের অ্যানামেল ক্ষয় হতে থাকে। এতে দাঁতে কালো দাগ দেখা যায়। ধূমপান যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনি দাঁতের জন্য অনেক ক্ষতিকর। দাঁত সুন্দর ও সুস্থ রাখতে হলে ধূমপান ত্যাগ করা অপরিহার্য। 

দাঁতের যত্নে উপকারী খাবার

আমাদের দাঁতকে সুস্থ রাখার জন্য সঠিক যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন খাবার। যেমন ভিটামিন ডি, আয়োডিন, ফ্লোরিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি দাঁত সুস্থতায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

ক্যালসিয়াম : দাঁত ও মাড়িতে মজবুত রাখতে প্রয়োজন হয়ে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার। যেমন দুধ, দই, পনির, শিমের বীজ ইত্যাদি 

ভিটামিন সি: মাড়িতে রক্তপাত হলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে। যেমন- আমলকি, পেয়ারা, লেবুজাতীয় ফল, মাল্টা ইত্যাদি। যা রক্তপাত হওয়া কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও মুখের ঘা যেমন স্কার্ভিয়া সাড়িয়ে তুলতেও ভিটামিন সি বেশ উপকারী। 

আয়োডিনযুক্ত খাবার: সামুদ্রিক মাছ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, আয়োডিনযুক্ত শাকসবকজি ইত্যাদি এই ধরনের খাবার খেলে দাঁত সুস্থ থাকবে। 

ভিটামিন বি১ জাতীয় খাবার: অনেক সময় দাঁতের ব্যথা অনুভব করে থাকি। সেক্ষেত্রে ডিমের কুমুস, মাছ, চিনাবাদাম ইত্যাদি ভিটামিন বি১ জাতীয় খাবারগুলো বেশ উপকারী। 

মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দাঁতের যত্ন টিপস

মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দাঁতের যত্ন টিপস

  • শুষ্ক মুখ দাঁতের ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। যা আমাদের মুখকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে। 
  • দাঁত ব্রাশের জন্য সঠিক টুথব্রাশ বাছায় করুন। শক্ত টুথব্রাশ ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষতি হয়। তাই আপনার ব্যবহৃত ব্রাশটি যেনো নরম হয় সেদিকটি খেয়াল রাখুন। 
  • আমাদের খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি জাতীয় খাবারগুলো রাখতে হবে। আমরা সকলেই জানি ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার দাঁতকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। 
  • অতিরিক্ত টকজাতীয় ও মিষ্টিজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এই ধরনের খাবার আমাদের দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টি করে। 
  • অনেকের ধারণা অতিরিক্ত ব্রাশ করলে বা খুব জোরে জোরে ব্রাশ করলে হয়তো দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার হয়। কিন্তু তা সঠিক নয়। সাধারণত নিয়মে ২ মিনিট ব্রাশ করাই যথেষ্ট। জোরালোভাবে ব্রাশ করা এড়িয়ে চলতে হবে। খুব জোরালোভাবে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের মাড়ির ক্ষতি হতে পারে। 
  • এক গ্লাস কুমুস গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে মুখ কুলিকুচি করা যেতে পারে। এতে দাঁতের ক্ষয় রোগ ও মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করা যায়। 
  • বাঁকা দাঁতে বেশি ময়লা জমে। তাই দাঁত ব্রাশ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে সবগুলো দাঁত যেনো পরিষ্কার হয়। 
  • দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবারগুলো দাঁতকে দ্রুত ক্ষয় করে। তাই প্রতিবার খাবারের পরে ভালোভাবে কুলি করতে হবে। 
  • দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে থাকলে আমরা টুথপিক দিয়ে তা বের করার চেষ্টা করি। তবে টুথপিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। টুথপিক ব্যবহারে অনেক সময় মাড়িতে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্খা থাকতে পারে। 
  • আদীম কালে  মানুষ দাঁত পরিষ্কার করার জন্য কয়লা, ছাই, মাটি, গাছের ডাল ইত্যাদি ব্যবহার করতো। গ্রামাঞ্চলের কিছু মানুষ এখনো কয়লা ও ছাই দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করেন। যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এগুলোর ফলে দাঁতের ক্ষতি হয়। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে। 
  • বিভিন্ন জাঙ্ক ফুড খেলে ক্যাভিটি হওয়ার আশঙ্খা বাড়ে এছাড়াও নিয়মিত কোল্ড ড্রিংক দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে থাকে।  
  • বাড়ির ছোটদেরকে দাঁতের প্রতি যত্নবার হওয়া শেখাতে হবে। নিয়মিত দু’বেলা ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।  
  • বয়স বাড়ার সাথে সাথে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে শুরু করে এবং দাঁতের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। এই সময়েও ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী টুথপেস্ট দিয়ে নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে।

উপসংহার 

সঠিক নিয়ম মেনে দাঁতের যত্ন নিলে আমাদের দাঁতের মাড়ি সুন্দর ও মজবুত থাকবে। আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস সারা দিন সতেজ থাকবে। যা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। দাঁতের সুস্থতার জন্য  আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়া। ফলে দাঁত থাকবে সুস্থ ও মাড়ির ক্ষতি হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। এতে দাঁতের সাথে আমাদের মুখের স্বাস্থ্য ও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।