You are currently viewing সরিষার তেলের উপকারিতা, সরিষার তেল কেন ব্যবহার করবেন?

সরিষার তেলের উপকারিতা, সরিষার তেল কেন ব্যবহার করবেন?

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই, তবে রান্নায় এবং অ-ভোজ্য উদ্দেশ্যে সরিষার তেল ব্যবহার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আশ্চর্যজনকভাবে কাজ করে। এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আদিকাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে সরিষার তেলের নাম। স্বাস্থ্যসম্মত পূর্ণ ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে এই তেল। তাই আজ আমরা জানব সরিষার তেলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে। 

সরিষার তেলের নানান গুন

  • মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (এমইউএফএ) দেহে স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য খুব দরকারি। আর সরিষার তেলে রয়েছে আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড, যা আমাদের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে।
  • সরিষার তেল শরীরের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • গবেষনায় দেখা যায়, সরিষার তেলে থাকা ওমেগা ৩, ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 
  • প্রতিদিনের যে কোন রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা প্রচুর রয়েছে। এই তেল রান্নার উপকরন হিসাবে ব্যবহার করলে অনেক মারাত্মক রোগ থেকে মুক্ত ও সুস্থ থাকা যায়।
  • অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য সরিষার তেলে থাকায় এই তেল ক্ষতিকারক সংক্রমণ থেকে হজম শক্তিকে রক্ষা করে।
  • সরিষার তেলে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • এই তেলের অনেক উপকারিতা রয়েছে যা মধ্যে রয়েছে ত্বকের তামাটে ভাব দূর, প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন, চুলের যত্নে ও বৃদ্ধি করতে, চুল পাকা রোধ, মাথা ব্যাথা দূর করতে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো, ঠোঁটফাটা রোধ, কার্ডিওভাসকুলার উপকারিতা, কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে, অ্যাজমা রোগে, ওজন কমাতে, পেটের সমস্যা দূর, গ্যাস্টিক সমস্যা কমানো, ত্বক যত্নে ইত্যাদির ক্ষেত্রে অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। 
sorisar tel

ত্বক, চুল, এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেল – প্রাকৃতিক সমাধান

  • প্রতি ১ চা চামচ সরিসার তেলে রয়েছে ১২৬ ক্যালরি। এছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম সরিষার তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ১২ মিঃ গ্রাম,পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ২১ মিঃ গ্রাম এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ৫৯ মিঃ গ্রাম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম সরিষার তেলে ৮৮৪ ক্যালোরি থাকে যা কাজ করে শক্তিবর্ধক হিসাবে। 
  • বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মোক পয়েন্টে পৌঁছালে তেলের গুণাগুণ হারাতে শুরু করে এবং বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে তেল স্মোক পয়েন্টে পৌঁছানোর আগেই তাতে রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত এবং ওই তেল একাধিক বার ব্যবহার করা সম্ভব। যে তেলের স্মোক পয়েন্ট বেশি, সেটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি নিরাপদ বলেও মনে করেন তারা। সেই অনুযায়ী যদি সরিষার তেলের স্মোক পয়েন্ট চিন্তা করা যায় তবে এটি স্বাস্থ্যসম্মত ও ভালো। 
  • মাস্টারক্লাস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পরিশোধিত সূর্যমুখীর তেলের ২২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, সয়াবিনের স্মোক পয়েন্ট ২৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, পরিশোধিত অলিভ অয়েলের ২৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং ঘির স্মোক পয়েন্ট হলো ২৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট। আর সরিষার তেলের স্মোক পয়েন্ট হলো ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
  • সরিষার তেল শরীরের টিউমার হওয়ার আশঙ্কা শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ কমায়। 
  • শ্বাসনালী, মুত্রনালী, ব্রমকাইটিস ও কোলন ইনফেশন সারাতেও কার্যকর সরিষার তেল। মুত্রাশয়ের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা শতকরা প্রায় ৩৪ ভাগ কমাতে ভূমিকা রাখে এই তেল। 
  • সরিষার তেল আর্থ্রাইটিস রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকায় দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে সরিষার তেল।
মাইগ্রেনের কষ্ট কমাতে
  • মাইগ্রেনের কষ্ট কমাতে ম্যাগনেশিয়াম দারুন কাজ করে। আর সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকায় এটি মাইগ্রেন এর কষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
  • সরিষার তেলে গ্লুকোসিনোলেট (Glucosinolate) নামক উপাদান থাকে।  যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই এটি ক্যানসার বিরোধী বৈশিষ্ট্য হিসাবে কাজ করে। তাই সরিষার তেল মলাশয়ের ক্যান্সার ও অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং প্রায় ৭০% হাড়ের ও হৃদরোগের ঝুকি কমায়।
  • শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। তাই ঠান্ডা জনিত সমস্যা খুব বেশি হয় না আবার যদি ঠান্ডা সর্দি জনিত সমস্যা হলেও তা সমাধানের কাজ করে।
  • সরিষার তেলে গ্লুকোসাইনোলেট রাসায়নিক উপাদান থাকে যা ব্যাক্টেরিয়া এবং মাইক্রোব কে নির্মূল করে। তাই সরিষার তেল সর্দি–কাশি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে । নিয়মিত নাকে এক ফোটা সরিষার তেল দিলে শ্বাসনালী পরিষ্কার হয় ও শ্বাস চলাচলে সুবিধা হয়।
  • এটি শরীরের ঘাম বের হওয়ার গ্রন্থিকে সচল রাখতে সাহায্য করে। ফলে সহজেই শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায় ও শরীর কে সুস্থ্য রাখতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। 
  • গ্যাস বা বদহজম জনিত পেটের ব্যথা অনুভব হলে অনেক সময় সরিষার তেল মালিশে অনেক আরামবোধ হয় ও সেরে যায়। 
  • এটি তেল জাতীয় ফসল হিসাবে পরিচিত। যাতে শতকরা প্রায় ৩৮ শতাংশ তেল থাকে আর প্রায় ২৫ শতাংশ থাকে খৈল। বাংলাদেশের ভৈজ্য তেলের প্রায় ৬০ ভাগই আসে ঘানি ভাংগা সরিষার তেল থেকে। যে কোন ভার্তা সুস্বাদু করা ছাড়াও নানা রকম তরকারীর স্বাদ কে অতুলনীয় করতে ব্যবহার করা হয় সরিষার তেল। 
  • এক গবেষণায় বলা হয়েছে, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ফোলেট, পাইরিডক্সিনও পলিকুইননের মতো ভিটামিন রয়েছে সরিষার তেলে।
  • রিবোফ্ল্যাভিন (Riboflavin) ও নায়াসিন (Niacin) যুক্ত সরিষার তেল শরীরে মেটাবলিজম বাড়ায় ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
  • বেশি যন্ত্রনা কমানোর পাশাপাশি, ঠান্ডা লাগা, কাশি, ব্যাথা, পিঠে ব্যাথা, এমন কি জরের প্রকোপ কমাতেও কাজ করে সরিষার তেল। 
  • এটিতে অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট এন্টিফাংগাল উপাদান থাকে যা ছত্রাকের অ্যান্টিফাংগাল নিরাময়ের কাজ করে। 
  • সিলেনিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে এই তেলে যা হারের রোগ ও আর্থ্রাইটিস নিরাময়ে ভালো কাজ করে।
  • এই তেলে লুকোসুনোলেট ও মিরোশিস নামক উপাদান থাকে বলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। এই উপাদানগুলো ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট  কলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের মতো ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়।
  • সরিষার তেল ব্যবহারে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে বলে হৃদ্​রোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। এতে থাকা মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ৭০% কমায়। 
  • ভালো খাটি সরিষার তেল রক্তের এইচডিএল অর্থাৎ শরীরের জন্য উপকারী ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। কারো শরীরে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল বেশি থাকলে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটা হৃদরোগ ও রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয় ও লিভার সচল রাখে।
  • সুস্থ দাঁত ও জিঞ্জাভাইটিস ও পেরিওডন্টাইটিস রোগ প্রতিরোধে সরিষার তেল সহায়ক। যেহেতু সরিষার তেলে ক্যালশিয়াম থাকে তাই দাঁত মজবুত সুস্থ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই হাফ চা চামচ সরিষার তেলের সাথে ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়ার সাথে হাফ চা চামচ লবন একত্রে মিশিয়ে  হালকা করে দাঁত ও মাড়িতে দুইবেলা মাজলে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
  • পুষ্টি উপাদান, প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল চুলের অকালপক্বতা রোধ করে থাকে সরিষার তেল। চুল বৃদ্ধিতে এবং অকালে চুল সাদা হওয়া থেকে রোধ করে ও চুল পড়া কমায় এই তেল। 

বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন ও খনিজ থাকে এতে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিনে রূপান্তরিত হয়ে চুল বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও অজানা ১৪ টি সরিষার তেলের উপকারিতা আরো জানতে আপনি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিতে পারেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে ৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতার তথ্য প্রকাশ

৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতার তথ্য প্রকাশ

সরিষার তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে ৫ টি তথ্য প্রকাশ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া। 

ইমিউনিটি বুস্টার হিসাবে সরিষার তেল

সরিষার তেলে যে ঝাঁঝালো উপাদান থাকে তা শ্লেষ্মা এবং অবরুদ্ধ সাইনাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সরিষার তেল গরম করে রসুন ও লবঙ্গ মিক্স করে পা এবং বুকে মালিশ করলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

লোহিত রক্তকণিকা শক্তিশালী করে

সরিষার তেলে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের কারনে নানা রোগ প্রতিরোধ কার্যকর। এই তেল কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে এবং লোহিত রক্তকণিকার ঝিল্লি গঠনের উন্নতি করে।

কার্ডিওপ্রোটেক্টিভ প্রভাব

গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরিষার তেল খাওয়ার ফলে অ্যারিথমিয়াস, হার্ট ফেইলিও এবং এনজাইনা ইত্যাদি রোগ হ্রাস পেয়েছে। কার্ডিওভাসকুলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ও ট্রাইগ্লিসারাইড, রক্তচাপ এবং প্রদাহ কমাতে সরিষার তেল স্বাস্থ্যকরী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

কাশি এবং সর্দি হ্রাস করে

সরিষার তেল দিয়ে স্টিম নিলে তা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এছড়াও প্রাচীনকাল থেকে সরিষার তেল সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য শ্বাস প্রশ্বাসের অ্যালার্জি জাতীয় সমস্যায় আরাম অনুভূতি ও রক্ষা করতে সাহায্য করে।

জয়েন্টে ব্যথা এবং বাত থেকে মুক্তি দেয়

স্বাস্থ্যকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হিসাবে পরিচিত সরিষার তেল। এতে থাকা ওমেগা ৩ আর্থ্রাইটিস থাকে, যে কারণে ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করলে পেশী এবং জয়েন্টের ব্যথা ভালো হয়। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.