বাঙালিদের কাছে তেল ছাড়া রান্নার করা প্রায় অসম্ভব। তাদের ধারণা রান্নায় তেলের পরিমাণ বেশি হলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়। ধারণাটি আসলে পুরোপুরি সঠিক নয়। অন্যদিকে খাবার তেলের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। গরিব ও মধ্যবিত্তরা পরেছেন বিপাকে। শুধু তাই নয় ধনীরাও উপায় খুঁজছেন তেল ছাড়া কোন কোন খাবারগুলো রান্নার করা যায়।
এছাড়াও আজকাল অনেকেই রান্নায় তেল ব্যবহার করেন না। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান তারা যতটা সম্ভব তেল ছাড়া খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে অল্প তেলে রান্না করলে বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি কমে যায়। আজকের আর্টিকেলে তেল ছাড়া সবজি রান্নার রেসিপি ও তেল ছাড়া রান্না করা খাবার খাওয়ার স্বাস্থ্যউপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
তেল ছাড়া সবজি রান্নার রেসিপি
দৈনন্দির জীবনে খাবারের তালিকায় ভাতের সাথে সবজি ডাল বা মাছ মাংসের বিভিন্ন পদের তরকারি থাকে। তেল ছাড়া প্রায় সকল ধরনের সবজি রান্না করা যায়। ভর্তা করে বা অল্প তাপে ভাপে সেদ্ধ করা একটি অভিনব উপায়। শুধু তাই নয় শাকসবজি ছাড়াও ছোট মাছ থেকে শুরু করে বড় মাছ রান্না করা যায় তেল ছাড়াই। আবার মুরগির ও গরুর মাংস তেল ছাড়া রান্না করা সম্ভব। সবজি বা মাংসের স্যুপ তৈরি করা যায় খুব সহজেই। যারা বিষয়টির সম্পর্কে অবগত ছিলেন না তারাও হয়তো জেনে অনেকটা অবাক হতে পারেন। আবার অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে তেল ছাড়া রান্নার স্বাদ কেমন হবে? আসলে রান্না করার পরে বোঝায় যায়না যে তেল ছাড়া রান্না করা হয়েছে। খেতেও বেশ সুস্বাদু হয়। চলুন কয়েকটি রেসিপি জেনে নেওয়া যাক-
মিক্সড সবজি রান্নার রেসিপি
গাজর,পটল, লাউ, পেটে, ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়ো, ঝিঙ্গা, সিম সবগুলো সবজি ১ কাপ পরিমাণ নিতে হবে। এই রেসিপি তৈরির জন্য বেশ কয়েক রকম পছন্দের সবজি নিতে পারেন। অথবা ঘরে থাকা যেকোনো ধরনের সবজি ব্যবহার করা যাবে।
মসলার উপকরণ
- পেয়াজ বাটা ১/৩ কাপ
- কাচা মরিচ ৪টি
- আদা বাটা ও রসুন বাটা ১ চা চামচ
- জিরা বাটা ১ চা চামচ
- তেল পাতা ১টি
- পাঁচফোড়ন আধা চা চামচ
- আধা চা চামচ মরিচের গুড়ো
- ধনিয়ার গুড়ো ১ চা চামচ
- হলুদের গুড়ো আধা চা চামচ
- লবন স্বাদমতো
- ধনিয়া পাতা কুচি
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি ফুটন্ত গরম পানিতে যেসকল সবজি বেশি শক্ত যেগুলা দিতে হবে। পাঁচ মিনিট পরে অন্য সবজি গুলো দিতে হবে। প্রায় ৩ মিনিট পরে লাস্ট এ মিষ্টি কুমড়ো দিতে হবে। সবগুলো সবজি ছেকে নিতে হবে। রয়ে যাওয়া পানি আবারও রান্নায় ব্যবহার করতে হবে। তাই ফেলে দেওয়া যাবেনা।
এবার ফ্রাই প্যান চুলায় বসিয়ে প্রথমে পাঁচফোড়ন ও তেজপাতা দিতে হবে। এবং যেহেতু তেল ছাড়া তাই একদম লো আঁচে ভাজতে হবে। সুন্দর ঘ্রাণ বের হলে পেয়াজ বাটা দিয়ে নাড়তে হবে। পেয়াজ থেকে পানি বের হলে আদা বাটা দিতে হবে। মিডিয়াম টু লো আঁচে এই মসলা কষিয়ে নিতে হবে। এরমধ্যে ১ চা চামচ পরিমাণ পানি দিয়ে একটু নেড়ে নিতে হবে। তারপরে জিরা বাটা, লাল মরিচের গুড়ো ধনিয়া ও হলুদের গুড়ো স্বাদমতো লবন দিয়ে প্রায় ২ টেবিল পরিমাণ পানি দিয়ে সবগুলো মসলা নেড়ে নিতে হবে। একটু একটু করে পানি এড করে মসলা সুন্দর ভাবে কষিয়ে নিতে হবে। যাতে কাচা গন্ধ চলে যায়। এরমধ্যে সেদ্ধ করা সবজি দিতে হবে। কিছুক্ষণ নেড়ে সেদ্ধ করা পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। এই পর্যায়ে চুলার আঁচ বাড়িয়ে দিতে হবে। পাঁচ মিনিট পরে ঢাকনা তুলে ১ চা চামচ পরিমাণ সরিষা ও ১ চা চামচ পরিমাণ পোস্তদানা পানি দিয়ে বেটে নিয়ে তরকারির মধ্যে দিতে হবে। সাথে আস্ত কাচা মরিচ ও ধনিয়া কুচি দিতে হবে।
পেঁপের ডাল তেল ছাড়া সুস্বাদু সবজি রান্নার রেসিপি
উপকরণ
- একটি পেপে টুকরো করে কেটে ধুয়ে নিতে হবে।
- মসুর ডাল দেড় কাপ
- রসুন ১ টি কুচি করে নেওয়া
- পেয়াজ ৩টি
- হলুদ গুড়ো ১ চা চামচ
- জিরা গুড়ো ১ টেবিল চামচ
- ধনিয়া গুড়ো ১ টেবিল চামচ
- তেজপাতা ২টি
- ফালি করা কাচা মরিচ ১০/১২টি
- পাঁচফোড়ন ১ চামচ
- লবন স্বাদমতো
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি পাত্রে সবগুলো উপকরণ দিয়ে হাত দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে। এবার পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে। চুলার আঁচ প্রথমে হাই হিটে রাখতে হবে। একটু পর পর নেড়ে দিতে হবে। পানি প্রায় শুকিয়ে গেলে ও ডাল সিদ্ধ হয়ে গেলে চুলার আঁচ কমিয়ে দিতে হবে। তারপরে আবারও কিছুক্ষণ পর পর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে তেল ছাড়া এই রান্নাটি করা যাবে।
তেল ছাড়া মাছের ঝোল রান্নার রেসিপি
উপকরণ
- টুকরো করে কেটে নেওয়া আলু ও টমেটো একটি পাত্রে নিতে হবে
- ১ চা চামচ মরিচের গুড়ো
- ১ চা চামচ ধনিয়ার গুড়ো
- ১/৪ চা চামচ হলুদের গুড়ো
- ১ চামচ লবণ
- পছন্দের ছোট মাছ
- ১ কাপ পানি
সবগুলো হাত দিয়ে মেখে নিতে হবে। চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে নিয়ে আলু ও টমেটো কষিয়ে নিতে হবে। কষানো হয়ে গেলে দেড় কাপ পানি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। ঝোল ঘন হয়ে এলে চুলা থেকে নামানো সময় ১/৪ চা চামচ রাধুনী মসলা দিতে হবে। এতে এই ঝোল খেতে অনেক মজাদার হয়ে থাকে।
তেল ছাড়া রান্না কি স্বাস্থ্যসম্মত?
তেল ছাড়াও রান্নার করা যায়। তবে একেবারেও তেল ছাড়া রান্না করা খাবার খাওয়া ঠিক না। অল্প পরিমাণে তেল বা প্রয়োজন মতো তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। পুষ্টিবিদগণ বলেছেন, আমাদের দুই ধরনের ভিটামিন আছে। ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন হলো এ, ডি, কে। এগুলো অ্যাবজরবেশনের জন্য অবশ্যই তেল প্রয়োজন। অর্থাৎ সুষম খাদ্যের মধ্যে তেল চর্বি অন্তর্ভু্ক্ত রয়েছে। আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় তেল চর্বির চাহিদা মেটাতে তেলযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় তেল চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।
সহজ কথায়, খাবারে তেল ব্যবহার না করলে তেলের পুষ্টিগুণ আমরা পাবো না। অর্থাৎ ভিটামিনগুলো শরীরে কনজিউম হবে না সেই সাথে শরীরেরও চর্বি হবেনা। সুতরাং যেসকল ভোজ্যতেল ভালো সেগুলো দিয়ে কম পরিমাণ ব্যবহার করে রান্নার করা উচিত। এতে তেলের সকল পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরে থাকবে।
তেল ছাড়া রান্নার কিছু টিপস
তেল ছাড়া রান্নার কিছু টিপস সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক-
ভাপ দিয়ে রান্না
তেল ভাজা রান্নার সহজ একটি চিপস হলো ভাপে রান্না করা। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্টিমার পাওয়া যায়। এই ধরনের স্টিমার দিয়ে সহজেই রান্না করা যাবে। অথবা প্রায় সবার ঘরেই রাইকুরার থাকে। সেখানেও স্টিম করে রান্না করা যেতে পারে। শাকসবজিসহ যেকোনো খাবার ভাপে রান্না করলে তেলের প্রয়োজন পরবে না।
বেক বা রোস্ট করে রান্না
এই পদ্ধতিতেওে সুন্দর করে খাবার রান্না করা যায়। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে বেকিং বা রোস্ট করার সময় বেকিং ট্রের নীচে পার্চমেন্ট পেপার দিতে হবে। এতে খাবার নিচে লেগে যাবেনা। এক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
দই দিয়ে রান্না
খাবারের টক দইয়ের ব্যবহার খাবারকে যেমন সুস্বাদু করে তেমননি তাড়াতাড়ি রান্না করতেও সাহায্য করে। বিশেষ করে মাছ মাংষ রান্নার সময় দই দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখলে তেলের প্রয়োজন হয়না।
উপরোক্ত আলোচনায় টিপসসহ তেল ছাড়া সবজি রান্নার সহজ রেসিপি তুলে ধরা হয়েছে। তাই তেল ছাড়াও আমরা সবজি বাসায় রান্না করে খেতে পারবো। তাই তেল নিয়ে আর কোনো চিন্তার কারণ নেই। পছন্দের রেসেপি অনুযায়ী বানিয়ে খেতে পারবেন। যারা ডায়েট করেন তাদের জন্য অসাধারণ আইডিয়া হতে পারে।