নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় রান্নার সঙ্গী হলো কাঁচা মরিচ। সহজলভ্য এটি কাচা মরিচ ছাড়া তরকারির স্বাদ যেনো অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। রান্নার কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি পান্তা ভাত, ভর্তা ভাতের সাথেও কাচা মরিচ মেখে অনেকেই খেয়েছি।
খাবারের স্বাদ বাড়াতে আচারের জুড়ি নেই বললেই চলে। নানারকম উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা হয় মুখোরোচক আচার। কাচা মরিচের আচারের কথা হয়তো অনেকেই শুনেছেন। যারা কখনো টেস্ট করেননি। তারা হয়তো ভাবছেন হয়তো অনেক ঝাল হবে। কিন্তু এই আচারটি তেমন একটি ঝাল হয়না খেতে। অবশ্য যারা ঝাল পছন্দ করেন তাদের জন্য এই আচারটি হতে পারে অমৃত। শুধু তাই নয় যেকেউ আচারটি খেতে পারবেন।
কাঁচা মরিচের আচার
আমাদের দেশে বর্ষা ও শীতকালে যে মরিচ পাওয়া যায়, সাধারণত সেই মরিচে তেমন ঝাল থাকেনা। মরিচের আচার তৈরির জন্য এই দুই ঋতু বেস্ট। যারা ঝাল কম পছন্দ করেন তারা চাইলে এইসময়ে আচারটি তৈরি করে নিতে পারেন। এতে আচারটি খেতে ঝাল লাগবে না এবং সুঘ্রাণও পাওয়া যাবে। পরিবেশনের জন্য ভাত পোলাও খিচুড়ির পাশাপাশি ছোলাবুট পুড়ি ও রুটি পরোটা দিয়েও খাওয়া যায়। আজকে আমরা কাচা মরিচের আচার তৈরির সম্পূর্ন প্রসেস সম্পর্কে জানবো। চলুন আর দেরি না করে ঝটপট শিখে নেই।
উপকরণ
- কাচা মরিচ ২৫০ গ্রাম
- সরিষার তেল ১ কাপ
- পাঁচফোড়ন ১ চা চামচ
- রসুনের কোয়া ১৫/২০টি
- শুকনো মরিচের গুড়ো ১ টেবিল চামচ
- হলুদের গুড়েরা ১ চিমটি
- লবন ১ চা চামচ
- সরিষার বাটা ২ টেবিল চামচ
- ভিনেগার হাফ কাপ
- আদা বাটা হাফ চা চামচ
- রসুন বাটা হাফ চা চামচ
- জিরা গুড়ো হাফ চা চামচ
- চিনি ২ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী
১) ফ্রেশ বড় ও পুরোট কাচা মরিচ নিতে হবে। কাচা মরিচের বোটা ফেলে দিতে হবে। এবং আগা একটু ভেঙ্গে দিতে হবে। যদি কোনো মরিচের আগা ভাঙা না হয় তাহলে আচার তৈরি করার সময় মরিচ ফুটে তেল গায়ে ছিটতে পারে। তাই অবশ্যই আগা ভেঙ্গে নিতে হবে।
২) এবার কাচা মরিচ খুব ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে। পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। মরিচের গায়ে যেনো কোনো পানি লেগে না থাকে সেই দিকটি নিশ্চিত থাকতে হবে।
৩) আচারের জন্য স্পেশাল মসলা তৈরি করে নিতে হবে। একটা বাটিতে মরিচের গুড়ো, হলুদের গুড়ো, লবন, রসুন বাটা, আদা বাটা, ভাজা জিরা গুড়ো, সরিষার বাটা (অবশ্যই সাদা সরিষার বাটা ব্যবহার করতে হবে), ভিনেগারসহ এই সবগুলো উপকরণ খুব ভালো করে চামচের সাহায্যে মিশিয়ে নিতে হবে। হাত ব্যবহার করা যাবেনা। কেউ চাইলে হলুদের গুড়ো ব্যবহার নাও করতে পারেন। এতে কালারটি একটু উনিশ বিশ হতে পারে।
মুখরোচক আচার তৈরিতে প্রয়োজনীয় আচার তৈরির মসলা ও এর ব্যবহার
৪) চুলায় একটি প্যান বসিয়ে সরিষার তেল গরম করতে দিতে হবে। তেল গরম হয়ে গেলে আধা চা চামচ পরিমাণ পাঁচফোড়ন দিতে হবে। একটু ভেজে নিতে হবে খুব সুন্দর একটি ঘ্রাণ পাওয়া পর্যন্ত। এরপরে রসুনের কোয়া দিয়ে দিতে হবে। এরপরে মিক্স করা মসলা দিতে হবে। একটু নেড়ে নেওয়ার পরে কাচা মরিচগুলো দিতে মিশিয়ে নিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে মরিচের কালার চেঞ্জ হয়ে আসবে। ঠিক সেই মুহূর্তে চিনি দিতে হবে। চিনি গলে যাওয়ার পরে সরিষার বাটা ১ চা চামচ। এবার ৪-৫ মিনিটের মতো রান্না করে চুলা থেকেই নামিয়ে নিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সবগুলো মরিচের কালারও এক হয়ে যাবে।
৫) চুলা বন্ধ করে আচার অন্য পাত্রে ঢেলে নিতে হবে। এই আচারটি তৈরি করার সাথে সাথে খেলে কিন্তু খেতে ভালো লাগবেনা। তাই ৭ দিন পর্যন্ত রোদে দিতে হবে। এতে মরিচগুলো ভীষণ সফট হয়ে যাবে। ভুলেরও আচারটি ফ্রিজে রাখা যাবেনা। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এটি ৫-৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষন করা যাবে।
কাচা মরিচের গুণাগুণ
কাচা মরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। কিন্তু জেনে অবার হবেন এতে প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। এছাড়াও প্রচুর পরিমানে আয়রন রয়েছে। যা আমাদের দেহের রোগের সাথে মোকাবিলা করতে পারে।
কাচা মরিচের আচারের উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
কাচা মরিচে প্রচুর ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অনেক শক্তিশালী করে তোলে, এতে কোনো রোগ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারেনা। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধকে বাড়াতে প্রতিদিন কাচা মরিচের আচারটি খেতে পারেন।
চোখের সুরক্ষায়
আমরা সকলেই জানি ভিটামিন এ আমাদের চোখকে ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাচা মরিচে ভিটামিন এ রয়েছে, ফলে এই আচারটি খেলে সব বয়সী ব্যাক্তির দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়ক হবে।
রক্তশুন্যতার ঘাটতি পূরণে
আয়রণের অভাব হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আয়রনের ঘাটতি পূণের প্রাকৃতিক উৎস হলো কাচা মরিচ। যাদের আয়রনের ঘাটতি রয়েছে বা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তারা চাইলে এই আচারটি খেতে পারেন।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
কাচা মরিচ শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যারা কোলেস্টেরলে ভুগছেন তারা কাচা মরিচের আচারটি নিয়ম করে খেতে পারবেন। এতে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়।
স্ট্রেস কমাতে
অনেকেই বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যান। কাচা মরিচ খাওয়ার ফলে এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। মনকে আনন্দ ও প্রফুল্ল রাখে। অর্থাৎ মন মেজাজ চাঙ্গা হয়ে উঠে। তাই আপনার যদি মন খারাপ থাকে তাহলে এই আচারটি খেতে পারেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
কাচা মরিচ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার এটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে, এবং শরীরের ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলো বের করে দেয়। ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এই আচার নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যেতে পারে।
হজমশক্তি বাড়াতে
খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে কাচা মরিচ। যাদের হজমের সমস্যা আছে, তারা চাইলে পরিমিত পরিমাণে কাচা মরিচের আচারটি খেতে পারেন। এতে খুব সহজেই হজম শক্তি বেড়ে যাবে।
হৃৎপিন্ডের সমস্যা দূর করতে
কাচা মরিচে ভিটামিন এ, বি, সি, আয়রন ও পটাশিয়াম রয়েছে। যা আমাদের হৃৎপিন্ডের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সমস্যা দূর করতে কাচা মরিচের আচারটি নিয়মিত খেতে পারেন।
হাড় মজবুত করতে
হাড়কে সুস্থ ও শক্তিশালী করতে এই আচার বেশ উপকারী। এটি টিস্যু পুর্নগঠন করে, নতুন রক্তকোষ তৈরি করে। ফলে আমাদের শরীরের হাড়কে আরও মজবুত করে তোলে। এছাড়াও হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা থেকেও রক্ষা করতে সহায়ক।
ওজন কমায়
বাড়তি ওজন নিয়ে অনেকে খুব বেশি চিন্তিত থাকেন। তাদের জন্য কাচা মরিচের আচারটি দারুণ উপকারী হতে পারে। কারণ এতে থাকা পুষ্টিগুণ মেটাবলিজম বাড়িয়ে, অতিরিক্ত ক্যালোরি বা ফ্যাট বার্ন করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
জ্বর, সর্দি কাশি দূর করতে
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনেকসময় আমরা জ্বর সর্দি কাশিতে ভুগতে থাকি। যেহেতু কাচা মরিচে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে। তাই আচারটি খাওয়ার ফলে এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে ইনসুলিনের ঘাটতি দেখা দেয়। যারা ডায়াবেটিস রোগী আছেন তারা কাচা মরিচ খেতে পারেন। এতে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
কাঁচা মরিচের আচার ও সর্তকতা
যারা খুব বেশি ঝাল পছন্দ করেন। তারা অতিরিক্ত মাত্রায় ঝাল জাতীয় খাবার খান। এতে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে। ঝাল জাতীয় খাবারের মধ্যে কাচা মরিচ ও এই আচারটি অন্যতম। কাঁচা মরিচের আচারের উপকারিতা অনেক বেশি তবে পরিমাণের অধিক খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দেয়। যেমন-
- অন্ত্রে ব্যথা
- উচ্চ রক্তচাপ
- গ্যাসের সমস্যা
- নিদ্রাহীনতা
উপরোক্ত আলোচনায় কাচা মরিচের আচার কি, কিভাবে তৈরি করা হয়, উপকারীতা ও সর্তকতা সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। এই লেখাটি পড়ে কাচা মরিচের আচার তৈরির সহজ রেসিপি অনুযায়ী ঘরোয়া ভাবে তৈরি করে সুস্বাদু এই আচারটি পরিবারসহ খেতে পারবেন অনায়েসে।