সরিষার দানা কাচ্চি ঘানি (Cold pressed) প্রক্রিয়ায় সরাসরি পিষে তেল বের করা হয়। যা খুব ঘন এবং ঝাঁঝযুক্ত হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশী স্বাস্থ্য উপকারী হিসাবে পরিচিত এই তেল। হজম শক্তি বৃদ্ধি, হৃদপিন্ড ভাল রাখতে, চুলের যত্নে এবং শরীরের মাংশ শক্ত হয়ে যাওয়া (muscle stiffness) ইত্যাদি থেকে রোধ করে থাকে সরিষার তেল। নানা গুণে ভরপুর সরিষার তেল। এর মধ্যে সরিষার তেলের জানা-অজানা উপকারিতা গুলোর মধ্যে আজকে আমরা অজানা ১৪ টি সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
হজম প্রক্রিয়া
সরিষার তেল হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে ও মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি করে। যে কারনে হজম জনিত সমস্যা থেকে শুরু করে পেটের পীড়া ও গ্যাস্টিক সমস্যা কমাতে সহায়ক।
সরিষার তেল ব্যথা কমায়
জয়েন্টের ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, আর্থ্রাইটিস (বাত) সহ রিউম্যাটিকের ব্যথাও দূর করে সরিষার তেল। প্রদাহ বিরোধী (Anti-inflammatory) উপাদান সরিষার তেলে থাকায় এই ধরনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার রোধ
গ্লুকোসিনোলেট (Glucosinolate) নামক উপাদান এই তেলে রিয়েছে তাই মলাশয় ক্যান্সার এবং অন্ত্রের ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে। এই তেলে লুকোসুনোলেট ও মিরোশিস নামক উপাদান থাকে বলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। এই উপাদানগুলো ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের মতো ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়।
ফুসফুস পরিষ্কার রাখে
সরিষার তেল এক ধরণের ডিকঞ্জেস্টেন্ট বা শ্বাসতন্ত্র পরিষ্কারক। কফ জনিত সমস্যায় সরিষার তেলের সাথে রসুন মিশিয়ে বুকে ও পিঠে লাগালে সমাধান হয়।
হৃদিপিন্ড সুস্থ রাখতে
সরিষার তেলে থাকা মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ৭০% কমায়।
এজমা রোগে
এজমা এটাক (Asthma attack) সমস্যা হলে সরিষার তেল বুকে ঘষলে শ্বাস নেয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
চুল ও ত্বকের যত্নে
সরিষার তেলের ব্যাক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাস বিরোধী গুণাগুণ ত্বক ও চুলকে উজ্জ্বল করে। শীতের সময় ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় এবং শরীর গরম থাকে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে এতে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিনে রূপান্তরিত হয়ে চুল বৃদ্ধি করে।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নাভিতে কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল দিলে সুফল পাওয়া যায়। অনেক সময় পেটে ব্যাথা অনুভব হলেও সরিষার তেল মালিশ করলে আরাম বোধ হয়।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি ও চেতনার উন্নয়ন
সরিষার তেল নিয়মিত রান্নায় ব্যবহারে করলে এর পুষ্টিগুন স্মরণশক্তি বাড়াতে ও চেতনার উন্নয়ন করতে সাহায্য করে।
পোকামাকড় এবং মশা তাড়াতে
পোকামাকড় এবং মশা তাড়ানোর জন্য অনেক ধরনের ঔষধ হিসাবে সরিষার তেল ব্যবহার হয়ে থাকে। এর গন্ধে পোকামাকড় কাছে ঘেঁষে না।
ওজন কমাতে
এই তেলে রিবোফ্ল্যাভিন (Riboflavin) ও নায়াসিন (Niacin) থাকে। যা শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায়
সুস্থ দাঁত ও জিঞ্জাভাইটিস ও পেরিওডন্টাইটিস রোগ প্রতিরোধে সরিষার তেল সহায়ক। যেহেতু সরিষার তেলে ক্যালশিয়াম থাকে তাই দাঁত মজবুত সুস্থ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। হাফ চা চামচ সরিষার তেলের সাথে ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়া ও হাফ চা চামচ লবন এক সাথে মিশিয়ে দাঁত ও মাড়িতে হালকা করে দুইবেলা মাজলে উপকার পাওয়া যায়।
পেটের ব্যথা
গ্যাস বা বদহজম জনিত পেটের ব্যথা সহ মেয়েদের মাসিকের ব্যথা হলে সরিষার তেল পেটে মালিশ করলে সুফল পাওয়া যায়।
মাইগ্রেনের কষ্ট কমায়
মাইগ্রেনের কষ্ট কমাতে ম্যাগনেশিয়াম দারুন কাজ করে। আর সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকায় এটি মাইগ্রেন এর কষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
এই ছিল কারো কাছে জানা ও কারো কাছে অজানা ১৪ টি সরিষার তেলের উপকারিতা। এছাড়াও সরিষার তেলের ব্যপক পুষ্টিগুন ও সবাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে। যার ফলে প্রতিদিনের রান্নায় খাটি সরিষার তেল ব্যবহারে যেমন অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় তেমন শরীরের জন্য স্বাস্থ্যসম্মতও। তাই প্রতিটি রান্না ঘরে শুরু রাখার জন্য বা নাম মাত্র সরিষার তেলের পরিবর্তে রান্নায় ব্যবহার হোক খাটি সরিষার তেল। খাটি সরিষার তেল খান, সুস্বাস্থ্য বিদ্যমান।