You are currently viewing দোকানের মতো পারফেক্ট সেরা স্বাদের রাজভোগ মিষ্টি রেসিপি 
রাজভোগ মিষ্টি রেসিপি

দোকানের মতো পারফেক্ট সেরা স্বাদের রাজভোগ মিষ্টি রেসিপি 

খুবই জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মিষ্টি রাজভোগ যদি ঘরে বসেই দোকানের মতো মজাদার বানানো যায় তাহলে আর দোকান থেকেই কেনান প্রয়োজন পরবেনা। বাড়িতে মিষ্টি তৈরি করলে যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তেমনটি খেতেও অনেক মজাদার। হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন জাতে পারে দোকানের মতো আদৌ স্বাদ পাওয়া যাবে কিনা।

রাজভোগ মিষ্টি রেসিপি খুব কম সময়ে তৈরি করা যায়। এবং এটি দেখতে রসগোল্লার মতো হলেও ভিতরের মাওয়ার পুর দেওয়ার কারণে এর স্বাদ আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। মূলত এই মিষ্টি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ভিতরের পুর। আরেকটি অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো রসগোল্লার সাইজের চেয়ে একটু বড় হবে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে রসগোল্লা থেকে আলাদা করেছে। রাজভোগ মিষ্টি তৈরির রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। 

রাজভোগ মিষ্টি রেসিপি 

খুশির সংবাদে মিষ্টি থাকবে না তা কখনও হয়। মিষ্টি পছন্দ করুক বা না করুক শুভকাজে বা  আনন্দের দিনে মিষ্টি ছাড়া চলেই না। এখন তো দোকানে হরেক পদের মিষ্টি আমাদের চোখে পরে। আর এইসকল মিষ্টির মধ্যে অন্যতম হলো রাজভোগ মিষ্টি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে মিষ্টি তৈরি করা যায়। 

উপকরণ 

  • ছানা ২ কাপ 
  • ময়দা ৩ চা চামচ 
  • সুজি ৪ চা চামচ 
  • বেকিং পাউডার ৪ চিমটি 
  • চিনি ২ টেবিল চামচ 
  • গুড়ো দুধ ২ চা চামচ 
  • রান্নার তেল ২ চা চামচ 
  • এলাচ গুড়ো ১ চিমটি 

মাওয়া তৈরির জন্য 

  • মাওয়া ৩ টেবিল চামচ 
  • চিনি ১ টেবিল চামচ 
  • ছানা ১ টেবিল চামচ 
  • এলাচ গুড়ো হাফ চিমটি 

ছানা তৈরির রেসিপি 

 রাজভোগ মিষ্টি রেসিপির ছানা কাটার পদ্ধতি

যেকোনো মিষ্টি তৈরির প্রধান উপাদান হলো ছানা। আর মিষ্টির স্বাদ ও পারফেক্ট করার জন্য ছানা পারফেক্টভাবে তৈরি করা খুবই জরুরী। 

প্রথমে চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে ১ লিটারের মতো ফুল ক্রিম দুধ দিতে হবে। প্যাকেটজাত বা গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে বানানো যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে দুধ যেনো পূর্ণ ননিযুক্ত বা ফুল ক্রিম হয়। অর্থাৎ যে দুধ আগে থেকে জ্বাল করে সর বা ক্রিম তুলে নেওয়া হয়নি সেই দুধ ব্যবহার করতে হবে। 

চুলার মিডিয়াম আঁচে দুধ অনবরত নাড়তে হবে, যেনো নিচে লেগে না যায় আবার উপরে সর না বাঁধে। দুধ ঘন করার প্রয়োজন নেই। একটা বলক চলে আসলেই ৩ টেবিল চামচ লেবুর রস অল্প অল্প করে মিশিয়ে নিতে হবে। আর প্রতিবার নেড়ে নিতে হবে। লেবুর রস ছাড়াও ভিনেগার দিয়েও ছানা কাটা যাবে, এক্ষেত্রে ২ টেবিল চামচ ভিনেগারের সাথে ১ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও টক দই দিয়েও ছানা কাটা যায়। যেক্ষেত্রে আধা কাপ টক দই পানিসহ একটু ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে লেবুর রসের মতো একই ভাবে ব্যবহার করতে হবে। 

১ দেড় মিনিটের মধ্যেই ছানা ও সবুজ পানি আলাদা হয়ে যাবে। তখন একটি স্টেইনারের ওপরে সুতি কাপড় বিছিয়ে চুলার থেকে নামিয়ে ছানার পানিগুলো ছেকে নিতে হবে। অনেকে মনে করেন ছানা আরও বেশি জমতে থাকুন। এটা মোটেও করা যাবেনা। এতে ছানা অভার কুক হয়ে যেতে পারে। এবং ছানা শক্ত হয়ে যাবে। ফলে মিষ্টি একদমই পারফেক্ট হবেনা। এবার ছাকা হয়ে গেলে ওই কাপড় দিয়ে ছানার ওপরে মুড়িয়ে আধা ঘন্টা বা ১ ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে। চাইলে উঁচু জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা যাবে। এতে ছানার পানি ঝড়িয়ে যাবে। লেবুর রস বা টক দই দিয়ে ছানা তৈরি করলে পানি দিয়ে না ধুলেও চলবে, তবে ভিনেগার ব্যবহার করলে চুলা থেকে নামানোর সাথে সাথে একটু ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুতে হবে। 

সিরার তৈরির উপকরণ 

  • চিনি সাড়ে ৪ কাপ 
  • পানি আড়াই কাপ  

সিরা তৈরি পদ্ধতি

রাজভোগের সিরা ঘন করেই তৈরি করা হয় যেহেতু মিষ্টির মধ্যে পুর দেওয়া হয়। যদি পাতলা সিরার মধ্যে এই মিষ্টি তৈরি করা হয় তাহলে ভিতরের পুর বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে চিনি ও পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিতে হবে। সিরার বলক আসা অব্দি ছানা দিয়ে মিষ্টি তৈরি করে নিতে হবে। 

প্রস্তুতপ্রণালী  

একটি বাটিতে সুজি, ময়দা, এলাচ গুড়ো, গুড়ো দুধ, বেকিং পাউডার, চিনি, রান্নার তেল দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশানো হয়ে গেলে অন্য সাইডে রেখে দিতে হবে। 

এরপরে, মাওয়া, চিনি ও হাফ চিমটি এলাচ গুড়ো, ও ছানা দিয়ে হাত দিয়ে মথে নিতে হবে। 

ছানা আলতো করে হাত দিয়ে ভালো করে মথে নিতে হবে। ক্রিমি হয়ে গেলে একটা বল তৈরি করে দেখতে হবে বলের  গায় স্মুথ হয়েছে কিনা। স্মুথ হয়ে গেলে বুঝতে হবে পারফেক্টভাবে ছানা  মথে নেওয়া হয়েছে। আগে থেকে মেখে নেওয়া শুকনো উপকরণ গুলো ছানার সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। মাখানো হয়ে গেলে মাঝারি আকারের বল তৈরির জন্য ভাগ করে নিতে হবে।

তারপরে মাওয়ার মিশ্রণ থেকেও ছোট ছোট বল তৈরি করে নিতে হবে। এবার ছানার বল তৈরি করার সময় প্রতিটি বলের মাঝে আঙ্গুল দিয়ে একটু গর্ত করে মাওয়ার বল ভিতরে দিতে হবে। তারপরে হাত দিয়ে মসৃণ করে মিষ্টি তৈরি করে নিতে হবে। 

গরম সিরার মধ্যে একে একে দিয়ে দিতে হবে। একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এবং চুলার আঁচ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হাই হিটে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে আলতো হাতে মিষ্টি গুলো নেড়ে দিতে হবে। সিরা ঘন হয়ে এলে আধা কাপের মতো ফুটন্ত গরম পানি দিতে হবে। সিরা ঘন হওয়ার কারণে মিষ্টি রঙ কিছুটা বাদামী রঙ চলে আসে। 

নতুন স্বাদের রাজভোগ মিষ্টি/ কেশর রসগোল্লা 

আগের দিনে রাজা বাদশাদের খুশি করার জন্য হরেক রকম মিষ্টি তৈরি করা হতো। বুদ্ধিমান কারিগর রসগোল্লাকে একটু ভিন্ন ভাবে তৈরি করে। যার নাম দেওয়া হয়েছে রাজভোগ মিষ্টি। একে কেশর রসগোল্লাও বলা যায়। একটু ভিন্নভাবে নতুন স্বাদের এই রেসিপি তুলে ধরা হলো।

উপকরণ

  • জাফরান
  • কাজু বাদাম ৪ টা 
  • কাঠ বাদাম ৩টি

সবগুলোকে একসাথে আধা ভাঙা করে নিতে হবে। 

  • গ্রেড করা মাওয়া ২ টেবিল চামচ 
  • এলাচ গুড়ো ১/৪ চা চামচ 

সিরা তৈরির জন্য 

  • পানি ৭ কাপ 
  • চিনি আড়াই কাপ 

প্রস্তুতপ্রণালী 

১ চিমটি জাফরান নিয়ে একটু গরম দুধের মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে হবে। 

একটি বাটিতে মাওয়া, সাথে মিক্সড বাদামের গুড়ো ও এলাচ গুড়ো, জাফরান ভেজানো দুধ দিতে হবে একটু একটু করে দিতে হবে। (মাওয়ার পরিবর্তে গুড়ো দুধ ও ঘি ব্যবহার করা যাবে) আঠালো একটা পুর তৈরি করে নিতে হবে। হাতে ঘি মেখে ছোট ছোট করে বল বানিয়ে নিতে হবে। এবার ছানার ডো নিয়ে থেকে মাঝারি আকৃতির মিষ্টি তৈরির জন্য ভাগ করে নিতে হবে। 

সিরা তৈরির জন্য চিনি ও পানি দিতে হবে। মিষ্টির মধ্যে সুগন্ধ ও হালকা একটা কালার আনার জন্য এক চিমটি জাফরান দিতে হবে। কেউ চাইলে ফুড কালার ব্যবহার করতে পারেন তবে আসল রাজভোগের মতো স্বাদ আসবে না, খেতে রসগোল্লার মতোই লাগবে।  

একেকটা ভাগ হাতে নিয়ে একটু হাত দিয়ে চাপ দিয়ে চ্যাপ্টা করে মাওয়ার বল দিয়ে চারপাশে মুরিড়ে দিতে হবে, হাত দিয়ে সুন্দর করে মিষ্টি সেইপ দিয়ে গোল করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কোনো ধরনের ফাটা যেন না থাকে। 

ফুটন্ত সিরার মধ্যে সবগুলো মিষ্টি দিতে হবে। এভাবে হাই হিটে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে পাঁচ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। অল্প পানিতে দুই টেবিল চামচ ময়দা দিয়ে সিরার মধ্যে দিতে হবে। তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢাকতে হবে।  এতে উপর থেকে মিষ্টিগুলো সিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রায় পনেরো মিনিট জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। মাঝারি আঁচে আরও পনেরো মিনিট জ্বাল দেওয়ার পরে আবার ৫ মিনিট লো হিটে জ্বাল দিতে হবে। তারপর চুলা বন্ধ করে ঠান্ডা করতে হবে। এভাবে প্রায় কয়েক ঘন্টা রেস্ট এ রাখতে হবে। এতে আসল মিষ্টির স্বাদ পাওয়া যাবে। 

সহজ উপায়ে রাজভোগ মিষ্টির রেসিপি 

সহজ উপায়ে রাজভোগ মিষ্টির রেসিপি 

উপকরণ  

  • প্রায় ২৫০ গ্রাম ছানা 
  • ৪ চা চামচ ময়দা 
  • ২ চা চামচ গুড়ো দুধ
  • হাফ চা চামচ তেল চিনি 
  • হাফ টেবিল চামচ 
  • বেকিং পাউডার ২ চিমটি।  

ঘন সিরা তৈরির জন্য 

  • ৩ কাপ চিনি
  • ২ কাপ পানি 
  • ২টি এলাচ 

পুর তৈরির জন্য 

  • দুই টেবিল চামচ মাওয়া 
  •  হাফ টেবিল চামচ ছানা  
  • ১ চিমটি এলাচ গুড়ো  
  • হাফ টেবিল চামচ চিনি 

এবার সবগুলো উপকরণ দিয়ে ছোট বল তৈরি করে নিতে হবে।

প্রস্তুতপ্রণালী 

এবার ছানা সুন্দর করে মথে নিতে হবে। শুকনো মিশ্রিণগুলো ছানার মধ্যে দিতে হবে। কেউ চাইলে বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন, ২৫০ গ্রাম ছানার জন্য হাফ চিমটি যথেষ্ট। সবগুলো সুন্দর করে মাখিয়ে নিতে হবে। ক্রিমের মতো হয়ে গেলে বুঝতে হবে ছানা মাখা হয়ে গিয়েছে। 

ছানা মাখা হয়ে গেলে লেচি কেটে নিতে হবে। প্রতিটি ছানার বলের মধ্যে পুর দিয়ে গোল সেইপ করে নিতে হবে। সবগুলো বানানো হয়ে গেলে সিরার মধ্যে দিতে হবে। সিরার মধ্যে ফেনা তৈরির জন্য মসলা ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে সবগুলো মিষ্টি সমান ভাবে সিদ্ধ হয়ে যাবে। সিরা  ঘন হয়ে এলে ফুটন্ত গরম পানি হাফ কাপের মতো দিতে হবে। রাজভোগ সাধারণত রসগোল্লার চেয়ে বড় হয়। পরপর তিনবার গরম পানি সিরার মধ্যে দিতে হবে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত চুলার আঁচ হাই হিটে থাকবে। 

একটি বাটিতে পানি নিয়ে এরমধ্যে একটা মিষ্টি দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। মিষ্টি পানির মধ্যে ডুবে গেলে বুঝতে হবে মিষ্টি পারফেক্টভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছে। এবার মিষ্টিগুলো সারারাত রেখে দিতে হবে। মিষ্টির মধ্যে সিরা ঢুকে ফুলে টয়টুম্ব হয়ে যাবে। 

উপরোক্ত আলোচনায় রাজকীয় স্বাদের রাজভোগ মিষ্টি তৈরির রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা  করা হয়েছে। তাই দোকান থেকে ভেজালযুক্ত মিষ্টি না কিনে ঘরে থাকা উপকরণ দিয়ে এই মিষ্টি তৈরি করে নিতে পারবেন খুব সহজেই। আপনার পছন্দের রেসেপি অনুসারে তৈরি করে নিন এবং পরিবারসহ হাশি খুশিতে মেতে উঠুন। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.