You are currently viewing চালের আটার তৈরি নানান রেসিপি এবং প্রতিটি রেসিপির পুষ্টিগুণ
চালের আটার তৈরি নানান রেসিপি

চালের আটার তৈরি নানান রেসিপি এবং প্রতিটি রেসিপির পুষ্টিগুণ

চালের আটা, যাকে ইংরেজিতে “Rice Flour” বলা হয়, আমাদের দৈনন্দিন রান্নায় একটি বহুমুখী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন-মুক্ত এবং বহুমুখী ব্যবহারের কারণে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে চালের আটার তৈরি নানান রেসিপি যেমন পিঠা, রুটি, এবং নানান প্রকার মিষ্টি প্রায় সকলের কাছে প্রিয় খাবার।

চালের আটা শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী রান্নায় নয়, আধুনিক খাদ্য রেসিপিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই আর্টিকেলে আমরা চালের আটার তৈরি বিভিন্ন রেসিপি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। প্রতিটি রেসিপি স্বাস্থ্য উপকারিতা বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে প্রস্তুত করা যাবে। তাই বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন। 

চালের আটার তৈরি নানান রেসিপি

চালের আটা দিয়ে তৈরি করা যায় বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর রেসিপি, যা ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক উভয় ধরনের রান্নায় ব্যবহৃত হয়। চালের আটার রেসিপিগুলো সাধারণত সহজে প্রস্তুত করা যায় এবং এগুলোতে প্রয়োজনীয় উপকরণও সহজলভ্য। নিচে চালের আটার তৈরি নানান রেসিপির বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলো:

চালের আটার রুটি

উপকরণ:

  • ১ কাপ চালের আটা
  • ১/৪ চা চামচ লবণ
  • ১ টেবিল চামচ তেল (ঐচ্ছিক)
  • প্রয়োজন মতো গরম পানি

প্রস্তুত প্রণালি:

প্রথমে একটি বড় পাত্রে চালের আটা নিন। এর মধ্যে লবণ মিশিয়ে নিন। তেল যোগ করতে চাইলে তেল মিশিয়ে নিন। আস্তে আস্তে গরম পানি যোগ করে মাখতে থাকুন। একবারে বেশি পানি না দিয়ে, অল্প অল্প করে দিন। হাত দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিন, যতক্ষণ না মাখনির মতো মসৃণ এবং নরম একটি ডো তৈরি হয়। ডো থেকে ছোট ছোট গোল বল তৈরি করুন। প্রতিটি বলকে হালকাভাবে চাপ দিয়ে পাতলা করে নিন। পাতলা করে বেলে নিন, যেন এটি রুটির আকার ধারণ করে। আপনি চাইলে রুটি বেলন করার আগে সামান্য চালের আটা ছিটিয়ে নিতে পারেন। একটি তাওয়া গরম করুন এবং রুটি তাওয়ায় রেখে হালকা আঁচে সেঁকে নিন। একপাশ সেঁকে গেলে উল্টে অন্য পাশও সেঁকে নিন। প্রতিটি রুটি তৈরি হয়ে গেলে তাওয়া থেকে তুলে নিন।

আটার তৈরি নানান রেসিপি

পুষ্টিগুণাগুণ:

  • ক্যালোরি: ১টি রুটি প্রায় ১০০-১২০ ক্যালোরি।
  • কার্বোহাইড্রেট: প্রায় ২০-২৫ গ্রাম।
  • প্রোটিন: প্রায় ২ গ্রাম।
  • ফাইবার: প্রায় ১-২ গ্রাম।
  • চর্বি: তেল ছাড়া তৈরি করলে প্রায় ০.৫ গ্রাম, তেল দিয়ে তৈরি করলে ৩-৪ গ্রাম।

চালের আটার পিঠা

উপকরণ:

  • ২ কাপ চালের আটা
  • ১/২ কাপ গুড় (বা চিনি)
  • ১/২ কাপ নারকেলের কুরা
  • ১/২ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো
  • প্রয়োজন মতো পানি
  • ২ টেবিল চামচ ঘি বা তেল

প্রস্তুত প্রণালি:

প্রথমে চালের আটা এবং সামান্য লবণ মিশিয়ে নিন। গরম পানি দিয়ে ডো তৈরি করুন, যেন এটি মসৃণ এবং নরম হয়। একটি পাত্রে নারকেলের কুরা, গুড় এবং এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। মাঝারি আঁচে পুর তৈরি করুন এবং এটিকে ঠাণ্ডা হতে দিন। ডো থেকে ছোট ছোট গোল বল তৈরি করুন এবং প্রতিটি বলকে পাতলা করে বেলে নিন। 

বেলা করা ডোয়ের মধ্যে ১ চা চামচ পুর রেখে দিন এবং সেটিকে ভাঁজ করে বন্ধ করে দিন। প্রতিটি পিঠার কানা ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে যাতে পুর বেরিয়ে না আসে। একটি তাওয়ায় ঘি বা তেল গরম করুন। পিঠাগুলি তাওয়ায় দিয়ে মাঝারি আঁচে সোনালী রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। একবার ভাজা হয়ে গেলে পিঠাগুলি তুলে রাখুন এবং গরম গরম পরিবেশন করুন।

পুষ্টিগুণাগুণ:

  • ক্যালোরি: ১টি পিঠা প্রায় ১৫০-২০০ ক্যালোরি।
  • কার্বোহাইড্রেট: প্রায় ৩০-৩৫ গ্রাম।
  • প্রোটিন: প্রায় ২-৩ গ্রাম।
  • ফাইবার: প্রায় ২-৩ গ্রাম।
  • চর্বি: প্রায় ৫-৭ গ্রাম।

আতপ চালের আটা কিভাবে প্রস্তুত করা হয়, গুনাবলি ও ব্যবহার

চালের আটার ডিম পিঠা:

উপকরণ:

  • ১ কাপ চালের আটা
  • ২টি ডিম
  • ১/৪ কাপ দুধ
  • ১ চা চামচ চিনি
  • ১ চিমটি লবণ
  • ১/২ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স (ঐচ্ছিক)
  • ২ টেবিল চামচ তেল বা ঘি

প্রস্তুত প্রণালি:

প্রথমে চালের আটা, চিনি, এবং লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। তারপর দুধ এবং ডিম যোগ করে ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি করুন। যদি ভ্যানিলা এসেন্স ব্যবহার করতে চান, তাহলে তা মিশ্রণটি তে যোগ করুন। মিশ্রণটি থেকে ছোট ছোট গোল বল তৈরি করুন। প্রতিটি বলকে হাত দিয়ে চেপে পাতলা করে নিন। একটি তাওয়া গরম করুন এবং এতে সামান্য তেল বা ঘি দিয়ে প্রতিটি পিঠা সোনালী রঙ হওয়া পর্যন্ত মাঝারি আঁচে ভাজুন। উভয় পাশ ভালোভাবে ভাজা হলে তাওয়া থেকে তুলে নিন। ডিম পিঠাগুলি গরম গরম পরিবেশন করুন। ইচ্ছা হলে পিঠার ওপর মধু বা মিষ্টি সিরাপ দিয়ে পরিবেশন করা যেতে পারে।

পুষ্টিগুণাগুণ:

  • ক্যালোরি: ১টি ডিম পিঠা প্রায় ১৫০-১৮০ ক্যালোরি।
  • কার্বোহাইড্রেট: প্রায় ২০-২৫ গ্রাম।
  • প্রোটিন: প্রায় ৪-৫ গ্রাম।
  • ফাইবার: প্রায় ১-২ গ্রাম।
  • চর্বি: প্রায় ৫-৬ গ্রাম।

চালের আটার দোসা

উপকরণ:

  • ২ কাপ চালের আটা
  • ১ কাপ সাদা মাষকলাই ডাল (উড়দ ডাল)
  • ১/৪ চা চামচ লবণ
  • প্রয়োজন মতো পানি
  • সামান্য তেল (দোসা ভাজার জন্য)
প্রস্তুত প্রণালি:

প্রস্তুত প্রণালি:

প্রথমে মাষকলাই ডাল ৪-৫ ঘণ্টা বা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এটি ভালোভাবে পেস্ট করে নিন। চালের আটা, পেস্ট করা ডাল, এবং লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি পাতলা করার জন্য সামান্য পানি যোগ করুন, তবে মিশ্রণটি বেশি পাতলা করবেন না। একটি তাওয়া গরম করুন এবং তাতে সামান্য তেল দিন। মিশ্রণটি তাওয়ার মাঝখানে দিয়ে চামচ দিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পাতলা করে দিন। মাঝারি আঁচে দোসাটি সোনালী রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। একপাশ সেঁকা হলে উল্টে অন্য পাশও সেঁকে নিন। প্রতিটি দোসা এভাবে তৈরি করুন। দোসা গরম গরম পরিবেশন করুন নারকেল চাটনি বা সাম্বারের সাথে।

পুষ্টিগুণাগুণ:

  • ক্যালোরি: ১টি দোসা প্রায় ৭০-৮০ ক্যালোরি।
  • কার্বোহাইড্রেট: প্রায় ১৫-২০ গ্রাম।
  • প্রোটিন: প্রায় ৩-৪ গ্রাম।
  • ফাইবার: প্রায় ১-২ গ্রাম।
  • চর্বি: প্রায় ২-৩ গ্রাম (তেল সহ)।

চালের আটার পুডিং:

উপকরণ:

  • ১ কাপ চালের আটা
  • ২ কাপ দুধ
  • ১/২ কাপ চিনি
  • ১/৪ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো
  • ২ টেবিল চামচ কিশমিশ (ঐচ্ছিক)
  • ২ টেবিল চামচ কাজু (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালি:

প্রথমে দুধ একটি পাত্রে ফুটিয়ে নিন। চালের আটা সামান্য পানিতে মিশিয়ে পাতলা পেস্ট তৈরি করুন। ফুটন্ত দুধের মধ্যে চালের আটা পেস্ট আস্তে আস্তে যোগ করে নাড়তে থাকুন, যাতে দলা না হয়। এরপর চিনি এবং এলাচ গুঁড়ো যোগ করে নাড়তে থাকুন। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে পুডিং তৈরি হয়ে যাবে। শেষে কিশমিশ এবং কাজু যোগ করুন, যদি ব্যবহার করতে চান। পুডিং ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পরিবেশন করুন।

পুষ্টিগুণাগুণ:

  • ক্যালোরি: ১ কাপ পুডিং প্রায় ২৫০-৩০০ ক্যালোরি।
  • কার্বোহাইড্রেট: প্রায় ৪০-৫০ গ্রাম।
  • প্রোটিন: প্রায় ৬-৮ গ্রাম।
  • ফাইবার: প্রায় ১-২ গ্রাম।
  • চর্বি: প্রায় ৫-৬ গ্রাম (দুধের চর্বি সহ)।

চালের আটা দিয়ে তৈরি এই রেসিপিগুলো কেবল সুস্বাদু নয়, স্বাস্থ্যকরও বটে। প্রতিটি রেসিপি সহজে তৈরি করা যায় এবং আপনার পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।

উপসংহার

চালের আটার তৈরি নানান রেসিপি কেবলমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অত্যন্ত উপকারী। গ্লুটেনমুক্ত এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগী থেকে শুরু করে সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত। 

এছাড়া, চালের আটা বিভিন্ন রকমের ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক খাবার তৈরির উপকরণ হিসেবে এর বহুমুখীতা প্রমাণ করেছে। চালের আটা দিয়ে তৈরি রেসিপিগুলি সহজ, দ্রুত প্রস্তুতযোগ্য এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। আশা করি, এই রেসিপিগুলি আপনার প্রতিদিনের রান্নায় নতুন একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর সংযোজন হিসেবে স্থান পাবে।