সুস্থ ও সুন্দর চুল একজন মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। ঠিক এই কারনেই হয়তো সবাই সুন্দর ও উজ্জ্বল চুলের পাওয়ার আশা করেন। তবে সময়ের সাথে সাথে বয়সের মতোই আমাদের চুলের আয়ু এবং সৌন্দর্য দুটোই যেন কমতে থাকে ।
সুন্দর চুলের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। আপনার শরীর যখন ভেতর থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে তখন আপনার শরীর এবং চুল সুন্দর হতে থাকবে। খাবারের সঠিক পুষ্টি আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে, চুল মজবুদ রাখতে এবং চুলের উজ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনাদের জানাবো চুলের জন্য পুষ্টিকর সকল খাবার সম্পর্কে।
চুলের জন্য পুষ্টিকর খাবার
সঠিক পুষ্টিকর খাবার খেলে আমাদের চুল পড়া রোধ হয়, সেই সাথে চুল আগের চেয়েও অনেক বেশী মজবুত হয়ে উঠে।এমনকি আমাদের চুলের স্কাল্পের স্বাস্থ্য ও নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই প্রয়োজন। নিজের চুল গুলোকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে দৈনিক খাবার তালিকায় রাখবেন এমন কিছু খাবার হলো-
পালং শাক
চুলের যত্নে পালং শাক অনেক কার্যকরী একটি খাবার। আয়রনে ভরপুর এই পালং শাক খেলে এটি আমাদের চুলের গোড়া মজবুত রাখতে সাহায্য করে ফলে সহজেই চুল পড়া রোধ হয়। এছাড়াও পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন A,ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। আপনি চাইলে পালং শাক রান্না করে অথবা পালং শাকের জুস বা স্মুদি বানিয়েও খেতে পারেন। এটি আপনার চুলের পাশাপাশি ত্বক কেউ সুন্দর রাখবে।
ডিম
ডিম হলো প্রোটিনের সেরা একটু উৎস। অনেকেই চুলের যত্নে ডিমের হেয়ার প্যাক ব্যবহার করে থাকেন। তবে চুলে ডিম ব্যবহারের চেয়ে খাবার হিসেবে দৈনিক ডিম খেলে এটি আপনার চুল ও স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখবে। ডিমে থাকা প্রোটিন আমাদের চুলকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ডিমে রয়েছে বায়োটিন যা আমাদের চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং চুল ঘন রাখে।
সামুদ্রিক মাছ
টুনা, স্যামন, কোরাল ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি- যা আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করে এবং মাথার স্কাল্পের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে।
বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার
বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট।বিশেষ করে কাঠবাদাম ,কাজুবাদাম, আখরোট ও চিনাবাদাম আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও বীজ জাতীয় খাবার যেমন সূর্যমুখী ফুলের বীজ, চিয়াসিড, কুমড়া বীজ ইত্যাদি আমাদের চুল কে মজবুত রাখে। সেই সাথে মাথার স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এতে করে চুল অনেক মজবুত , ঘন ও সিল্কি হয়।
গাজর
শীতকালীন একটি জনপ্রিয় সবজি হলো গাজর। অনেকে রান্না করে অথবা সালাদ হিসেবে এই গাজর খেয়ে থাকে। গাজরে রয়েছে ভিটামিন A, অ্যান্টিওক্সিডেন্ট ও বিটা- ক্যারেটিন। বিটা- ক্যারেটিন আমাদের চুলের শুষ্কতা দূর করে সেই সাথে মাথার স্কাল্পের সুরক্ষা প্রদান করে। আপনার ত্বক ও চুল সুন্দর রাখার জন্য দৈনিক গাজর খেতে পারেন।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও মিষ্টি আলুতে রয়েছে বিটা- ক্যারেটিন। এটি আমাদের চুলের শুষ্কতা দূর করে, চুলের গোড়া মজবুত রাখে সেই সাথে আমাদের চুলের কোষকে ক্ষতিকর সূর্যরশ্নির হাত থেকে রক্ষা করে। চুলের অকালপক্কতা রোধ করার জন্যও খাবার তালিকা তে মিষ্টি আলু রাখতে পারেন।
লাল মাংস
লাল মাংস বা মুরগির মাংসতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন , ভিটামিন এবং জিংক। খাবার তালিকা তে মাংস রাখলে এটি আমাদের চুলের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে থাকে সেই সাথে চুলের গোড়া মজবুত রাখে। এছাড়া মাংস তে থাকা ভিটামিন বি ১২ আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে সর্বাধিক কার্যকরী। তাই চুলের যত্নে সপ্তাহে ১-২ দিন পরিমিত পরিমাণে লাল মাংস খেতে পারেন।
অ্যাভোকাডো
ভিটামিন ই, বায়োটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাাসিডে ভরপুর হলো অ্যাভোকাডো। এটি আমাদের চুলের উজ্বলতা বাড়াতে, চুল পড়া কমাতে এবং চুলকে ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এছাড়া এতে উপস্থিত বায়োটিন আমাদের নতুন চুল গজাতে ও চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ব্রকলি
ব্রকলি আমাদের কাছে বেশ পরিচিত একটি সবজি। ব্রকলি তে রয়েছে ভিটামিন, জিংক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। জিংক আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে কাজ করে। অন্যদিকে ব্রকলি তে থাকা ভিটামিন A এবং ভিটামিন সি আমাদের চুলের কোলাজিনের উৎপাদন মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এতে করে চুল আরও মজবুত ও সুন্দর হয় সেই সাথে চুলের বৃদ্ধি ও নিশ্চিত হয়।
মটর শুঁটি
প্রাকৃতিক পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাবার হলো মটরশুঁটি। মটর শুটিতে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন, প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। মটর শুঁটি তে থাকা ভিটামিন সি আমাদের চুলের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে, সেই সাথে চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এছাড়া এতে থাকা আয়রন ও প্রোটিন আমাদের চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
আমলকি
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটু ফল হলো আমলকি। এছাড়াও আমলকি তে আরও রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম যা আমাদের চুলের স্কাল্পের স্বাস্থ্যকে উন্নত রাখে এবং চুলের উজ্জলতা বজায় রাখে। চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিলে দৈনিক ২-৩ টি পরিমানে আমলকি খেতে পারেন। আমলকির আচার ও কিন্তু বেশ জনপ্রিয়। এটি চুলকে সুন্দর রাখার পাশাপাশী মুখের রুচি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে।
পানি
বিশুদ্ধ পানি আমাদের জীবনের জন্য অনেক অপরিহার্য একটি বিষয়। বলতে পারেন আমাদের চুলের জন্য মৌলিক একটি উপাদান হলো পানি। অথচ আমরা অনেকেই এই পানি খাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন। তবে দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করার ফলে আপনার চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বেড়ে যাবে। পানি খেলে এটি আমাদের মাথার স্কাল্পকে পর্যাপ্ত হাইড্রেশন এর যোগান দেয়। এতে করে চুলের রুক্ষতা দূর হয়। এছাড়া চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করার জন্যও পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
ডাল
বাঙালিদের অন্যতম পছন্দের খাবার হলো ডাল। মসুর ডাল, ছোলার ডাল, মুগ ডাল ইত্যাদি তে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন, এবং বায়োটিন। খাবার তালিকায় ডাল রাখলে এটি আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সেই সাথে চুল পড়া রোধ করতে এবং চুলের উজ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে উপকারি টিপস
চুলের যত্নে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশী যত্ন নেওয়াটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেকেই না জেনে অনেক কিছু করে ফেলি যা আমাদের চুল কে ড্যামেজ করে ফেলে। তাই চুলকে সুস্থ ও সুন্দ রাখার কিছু টিপস শেয়ার করবো
- চুল সবসময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন। বাহিরের পলিউশন এর কারনে আমাদের শখের চুল গুলো ক্রমশঈ নষ্ট হতে শুরু করে। তাই চুল কে সুন্দর রাখার জন্য সপ্তাহে অন্তত ২দিন ভালো মানের মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করবেন।
- এছাড়া আমাদের চুলের জন্য হাইড্রেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই চুল শ্যাম্পু করার পরেই চুলের শুষ্কতা প্রতিরোধের জন্য ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
- চুলের বাড়তি যত্নের জন্য প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি তেল এবং হেয়ার প্যাকের ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত একদিন ব্যবহারেই আপনি উজ্জ্বল ও ঝলমলে চুল পাবেন।
- আজকাল চুলে আমরা হেয়ারড্রায়ার, স্ট্রেইটনার , কার্লার সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে থাকি। তবে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে আমাদের চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং কি চুল নষ্ট হওয়ার ও সম্ভাবনা থাকে। তাই যতটা সম্ভব কম সরঞ্জামাদি ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
- এছাড়াও চুলের যত্নে প্রতি ২-৩ মাস পর পর চুলে ট্রিম করতে পারেন। এতে করে চুলের আগা ফেটে যাবার সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়
- সর্বশেষ টিপস হলো মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন। পর্যাপ্ত সময় ঘুমান, মাঝে মাঝে বাহিরে ঘুরতে যান, কিছুটা সময় ব্যায়াম করুন। দেখবেন শরীর মন দুটোই ভালো থাকবে।
সুন্দর চুল আমাদের সকলেরই ভীষণ পছন্দের। কিন্তু নানা অযত্ন ও অবহেলায় আমরা এই সৌন্দর্য কে হারিয়ে ফেলি। তবে আজকের এই লেখায় আমি চুলের যত্নে কি খাবেন ও কি কর বেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি।আশা করছি আপনারা কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। নিজের যত্ন নিন। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।