You are currently viewing হানি নাট কি? খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও কিভাবে তৈরি করে?

হানি নাট কি? খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও কিভাবে তৈরি করে?

হানি নাট আমাদের দেশের বর্তমান সময়ের অনেক আলোচিত একটি খাবারের নাম। বিভিন্ন অনলাইন শপ হানি নাট তৈরি করে তা সারা দেশে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে হানি নাট যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এই কারণে এই খাবার গ্রহণ করার ফলে শারীরিক দুর্বলতা দূর হয় এবং প্রফুল্লতা বৃদ্ধি পায়। নিচে হানি নাট কি, কীভাবে তৈরি করে ও এর উপকারিতা বর্ণনা করা হলো। 

হানি নাট কি?

আজকাল ফেসবুকে প্রায়শই বিভিন্ন খাবারের অ্যাডের দেখা পাওয়া যায়। এদের মধ্যে হানি নাট বা মিক্সড ড্রাই ফুড অন্যতম। আসলে কি এই ট্রেন্ডি হানি নাট? এই প্রশ্ন আর সকলের মত আপনার আমার মনেও উদয় হয়। বস্তুত প্রাচীন কাল থেকেই শরীরের জন্য উপকারী এমন খাবারের চাহিদা সব থেকে বেশি। সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মানুষ খাবারের পুষ্টিগুণ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা করে কোন খাবার আমাদের গ্রহণ করা উচিত তা নিশ্চিত করেছে। 

সচরাচর একটি খাবারের যে পরিমাণ পুষ্টি থাকে তার সাথে অন্য খাবার যোগ করলে সেখানে পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই হানি নাট বা মধুময় বাদাম ধারণার উদ্ভব হয়। আমরা জানি মধু একটি অতি উৎকৃষ্ট পুষ্টিকর খাবার। এতে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পুষ্টি উপাদান। তাছাড়া মধু খেতেও অনেক সুস্বাদু। 

অন্যদিকে বাদাম কে উপকারী পুষ্টির কারখানা বলা হয়। এতে একাধারে উপকারী ফ্যাট সহ ক্যালসিয়াম। আয়রন, শর্করা ইত্যাদি সহ সকল শক্তিবর্ধক উপাদান রয়েছে। এর সাথে যখন মধু মিশিয়ে এক সাথে খাওয়া হয় তখন পুরো মিশ্রণটি একটি সুপারফুডে পরিণত হয়। স্বাদে হানি নাট যেমন অসাধারণ হয় তেমনি পুষ্টিতেও অতুলনীয় হয়। 

প্রতিদিন নিয়ম করে এই মিশ্রণ গ্রহণ করলে শরীরের জন্য শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। যাইহোক, বিভিন্ন ফুলের মধু ও বিভিন্ন প্রকারের বাদামের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে হানি নাট মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এই মিশ্রণ তৈরি করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো একই সাথে সকল ধরনের উপকারী পুষ্টিগুণ গ্রহণ করা। সময়ের সাথে সাথে এর পপুলারিটি ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

হানি নাট খাওয়ার উপকারিতা

হানি নাট খাওয়ার উপকারিতা

হানি নাট খাওয়ার ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে। নিচে হানি নাট খাওয়ার উপকারিতা বর্ণনা করা হলো।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

আমাদের দেহ বিভিন্ন রোগের সাথে লড়াই করার শক্তি পায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দ্বারা। আমরা নিয়মিত যে খাবার গ্রহণ করি তাতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় যে হানি নাটে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে। বিশেষ করে মধু এই উপাদান সরবরাহ করার অনেক উৎকৃষ্ট মাধ্যম। তার সাথে বাদাম যোগ হলে এই পুষ্টি গুন আরও বৃদ্ধি পায়। 

প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি

শরীরের পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের এন্টিঅক্সিডেন্ট এর পাশাপাশি, শর্করা, আমিষ, ফ্যাট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি উপাদানের প্রয়োজন পড়ে। প্রতিটি হানি নাট মিশ্রণ শরীরের পুষ্টি ও শক্তি সরবরাহ করার কারখানা হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এখানে একই সাথে সকল ধরনের উপাদান পাওয়া যায়। 

স্মৃতিশক্তি ও কার্য দক্ষতা বৃদ্ধি

স্মৃতিশক্তি ও কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি হওয়ার জন্য আমাদের শরীরের সঠিক মাত্রায় উপকারী পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে হয়। সে দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় হানি নাট পর্যাপ্ত পরিমাণে সে সকল উপাদান সরবরাহ করে। এ কারণে নিয়মিত হানি নাট গ্রহণ করলে অতি দ্রুত শরীরের দুর্বলতা কেটে যায় এবং মস্তিষ্কের নিউরন সক্রিয় হয়। 

ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে

উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করার পেছনে দায়ী থাকে এলডিএল কোলেস্টেরল। হানি নাটে থাকা উপাদান গুলো রক্তের এই দূষিত কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ করে। এতে অতিরিক্ত শর্করা না জমার কারণে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকভাবে হয়। 

Modhu

খাঁটি মধু দিয়ে ঘরেই তৈরি করুন সুস্বাদু হানি নাটস!

তারুণ্য ধরে রাখে

চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ার কারণ হল দুর্বলতা। হানি নাট এই দুর্বলতা দূর করতে সহায়তা করে। নিয়ম করে নিয়মিত এই মিশ্রণ গ্রহণ করলে শরীরে থাকা দুর্বলতা দ্রুত হ্রাস পায়। অন্যদিকে চেহারায় বয়সের ছাপ কমতে থাকে এবং তরুণতা প্রজ্বলিত হয়। 

ইমিউনিটি সিস্টেম বুষ্টআপ

যখন দেহে সঠিক মাত্রায় রক্ত চলাচল হয় তখন তা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে গতিশীল করে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন কিছু কিছু খাবার গ্রহণ করার সাথে সাথে দেহে উত্তেজনা অনুভব হয় এবং হার্টবিট দ্রুত হতে থাকে। সাধারণত হানি নাট এই ধরণের একটি খাবার যা দ্রুত শরীর চাঙ্গা করে ইমিউনিটি সিস্টেম বুস্ট করে। 

বীর্য এর কোয়ালিটি বৃদ্ধি

আমরা জানি প্রজনন রক্ষা করার জন্য পুরুষের সিমেনে শুক্রাণুর সংখ্যা বেশি থাকতে হয়। অন্যদিকে সেগুলো আবার সুস্থ এবং সবল হতে হয়। নিয়মিত হানি নাট গ্রহণ করলে সিমেন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং এর কোয়ালিটি উন্নত হয়। 

ঘুমের সমস্যা দূর করে

একটা বিষয় খেয়াল করবেন যখন আপনার শরীর দুর্বল বা ক্লান্ত থাকে তখন বেশি বেশি ঘুম পায়। হানি নাট শরীরের এই ক্লান্তি ভাব দূর করে এবং মানুষিক ভাবে সুস্থ রাখে। এতে যেমন ঘুমের সমস্যা দূর হয় তেমন অতিরিক্ত ঘুম কমে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়। 

দাঁতের গোড়া শক্ত করে

দাঁতের গোঁড়া সহ হাড় মজবুত করার জন্য হানি নাটের কোন জুড়ি নেই। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান নড়বড়ে দাঁতের মাড়ি শক্ত করে এবং ব্যথা দূর করে। তাছাড়া দাঁতের সর্বাত্মক সুস্থতা নিশ্চিত করতে এই মিশ্রণ অনেক দ্রুত কাজ করে। 

রক্ত স্বল্পতা দূর করে

রক্ত স্বল্পতা একটি শরীরের জন্য অনেক বড় খারাপ খবর। কারণ এই সমস্যা দেখা দিলে শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাবে যা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে সক্ষম। সে দিক থেকে বিবেচনা করলে যে কোনো মানুষের দ্রুত এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত হানি নাট গ্রহণ করলে এই সমস্যা অনেক দ্রুত সমাধান হয়ে যায়। 

কিডনি ও লিভার সুস্থ রাখে

কিডনি ও লিভার সুস্থ রাখা অতি জরুরি। হানি নাটে থাকা উপাদান কিডনি ও লিভার সমস্যা সমাধানে কাজ করে। অর্থাৎ নিয়মিত এই মিশ্রণ গ্রহণ করলে পেটের ও কিডনির সমস্যা থেকে অনেক দূরে থাকা সম্ভব হয়। 

হানি নাট খাওয়ার নিয়ম

হানি নাট মধু সহ বিভিন্ন বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার দিয়ে তৈরি করা হয়। অতএব যদি সঠিক নিয়ম না মেনে এই খাবার গ্রহণ করা হয় তবে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদদের মতে এই খাবার খাওয়ার সব থেকে উত্তম সময় হচ্ছে খালি পেটে। অর্থাৎ পেট খালি থাকলে এই মিশ্রণ সুন্দরভাবে পাচন ক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে এবং শরীরে সঠিক মাত্রায় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। 

সাধারণ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অথবা খাবার খাওয়ার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর ১ অথবা ২ চামচ হানি নাট খাওয়া বেশি উপকারী। যদি প্রতিদিন একবেলা করে এই খাবার গ্রহণ করে চাহিদামতো ফলাফল না পান তবে প্রতিদিন রাতে একই নিয়ম মেনে খেতে পারেন। 

তবে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ১ চামচ করে হানি নাট সেবন করলেই ১৫ দিনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়। তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন যে এই মিশ্রণ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ায় পেটের জন্য হজম প্রক্রিয়ায় ঝামেলা হতে পারে। সেই সময় চিন্তিত না হয়ে কয়েকদিনের জন্য খাওয়া বন্ধ রেখে পরে আবার খাওয়া শুরু করা যেতে পারে। 

হানি নাট (honey nut) সম্পর্কে অনেকের আবার কিছু ভ্রান্ত ধারনা আবার কিছু জানার প্রশ্ন থাকে। যেমন হানি নাট খেলে ওজন বাড়ে কিনা, হানি নাট কত টা উপকার করে ইত্যাদি। তবে হানি নাট খেলে কি ওজন বাড়ে কিনা এই সম্পর্কে এই আর্টিকেল টি সুন্দর ভাবে পড়ে জেনে নিতে পারেন।

হানি নাট কিভাবে তৈরি করবেন?

হানি নাট কিভাবে তৈরি করবেন?

সাধারণত মধুর সাথে বিভিন্ন বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার দিয়ে এই হানি নাট মিশ্রণ তৈরি করা হয়। কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে এর মধ্য দেওয়া উপাদান এবং দামের মধ্যে হেরফের হয়। যাইহোক, হানি নাট তৈরি করার জন্য বিশেষ কিছু উপাদান প্রয়োজন পরে যা নিচে দেওয়া হলো। 

  • কাজু বাদাম
  • কাঠ বাদাম
  • পেস্তা বাদাম
  • চিনা বাদাম
  • আখরোট
  • কালো ও সাদা কিশমিশ
  • মিস্টি কুমড়ার বিচি
  • সূর্যমুখী ফুলের বিচি
  • মিস্টি আলুবোখারা
  • খোরমা খেজুর
  • সাদা তিল
  • কালোজিরার দানা
  • চেরি ফল
  • এপ্রিকট
  • ত্বীন ফল
  • ওয়াটার মেলন সিড
  • নারিকেল চিড়া
  • ড্রাই আনারস
  • সাকুরা
  • ড্রাই অ্যাপেল
  • থাই বাদাম
  • মধু

উপরে বর্ণিত বিভিন্ন বাদামের সাথে ড্রাই ফুড মিলিত করে যখন তা মধুর সাথে মেশানো হয় তখন তাকে হানি নাট বা মধুময় বাদাম বলে। মধুময় বাদাম অনেক সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবার। আমাদের আজকের লেখায় এই খাবার কীভাবে মানুষের উপকার করে এবং কীভাবে তা তৈরি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি লেখাটি পরে আপনি হানি নাট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেছেন। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.