গরমে ঠান্ডা ফালুদা বেশ আরামদায়ক একটি ডেজার্ট। এটি খেতে যেমন মজাদার। স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটি খেলে নিমেষেই আমাদের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে সতেজ ও তরতাজা করে তোলে। আমাদের দেশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট কিংবা হোটেলে ফালুদা পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় অনেকে পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সাবুদানা, ঘন দুধ, নুডলস, বাদাম কুচি, বিভিন্ন ধরনের ফল, জেলি ও বরফের টুকরো। অর্থাৎ ঘরে সহজ উপায়ে ফালুদা তৈরি করা যায়। প্রাণ জুড়াতে ইফতারের আয়োজনেও অনেকেই ফালুদা রাখেন। এই ধরনের খাবার আমাদের শরীরে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে। আজকের আর্টিকেলে ফালুদা রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ফালুদা রেসিপি
ফালুদা প্রায় ছোট বড় সকলের পছন্দের একটি ডেজার্ট। বিশেষ করে গরমে ঠান্ডা ঠান্ডা ফালুদা খাওয়ার মজাই আলাদা। এটি তৈরি করার উপকরণ কম বেশি সকলের ঘরেই থাকে। তাই যেকোনো সময় বাসায় খুব সহজেই তৈরি করা হয়। চলুন এটি তৈরির রেসিপ জেনে নেওয়া যাক-
রেসিপি ১
উপকরণ
- তরল দুধ ১ লিটার
- ৩/৪ কাপ গুড়ো
- ৪ টেবিল চামচ কাস্টার্ড পাউডার
- হাফ কাপ পানি
- ১/৩ কাপ চিনি
- ফল
- নুডলস
- জেলো
- সাবুদানা
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি প্যানে চুলা হাই হিটে রেখে তরল দুধ জ্বাল করে নিতে হবে। দুধ গরম হয়ে গেলে ৩/৪ কাপ গুড়ো দুধ দিতে হবে। জ্বাল করে কিছুটা ঘন করে হলে ১/৩ কাপ চিনি দিতে হবে। চিনি দেওয়ার পরে আরও কিছুক্ষণ জ্বাল করার পরে পানি ও কাস্টার্ড পাউডারের মিশ্রণটি দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। অবশ্যই ঢেলে দেওয়ার সাথে সাথে নাড়তে হবে। আবারও ভালো করে জ্বাল দিতে হবে। এবার চুলা বন্ধ করে সার্ভিং ডিসে নামিয়ে নিতে হবে। ঠান্ডা করে পছন্দের ফল, নুডলস ও জেলো দিতে হবে। তারপরে সাবুদানা সেদ্ধ দিতে হবে।
রেসিপি ২
জেলো তৈরির নিয়ম
- দুই ধরনের ফ্লেভারের জেলো পাউডার
- পর্যাপ্ত পানি
প্রথমেই চুলার পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গরম হয়ে এলে পাউডার দিতে হবে। এবং কিছুক্ষণ নেড়ে নামিয়ে নিতে হবে। একটি সমান পাত্রে রাখতে হবে। রান্না করে সেট করে নিতে হবে। নাড়াচাড়া করা যাবে না। পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেলে নরমাল ফ্রিজে ১ ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে।
সাবুদানা তৈরির জন্য
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি
- আধা কাপ সাবুদানা
চুলার পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ফুটে আসলে সাবুদানা দিতে হবে। পুরোপুরি সেদ্ধ করে নিতে হবে। পুরোপুরি সেদ্ধ করে নিতে হবে। যাতে সাবুদানার ভেতরের সাদা ভাব না থাকে। দেখতে সচ্ছ হবে। তারপরে পানি ঝরিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
নুডলস তৈরির জন্য
- রাইস নুডলস
- লবন ও পানি
চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে পানি ফুটে গেলে নুডলস দিতে হবে এবং সামান্য পরিমাণে লবন দিতে হবে। পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে গেলে পানি ঝারিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
- ৩ কাপ ফুল ক্রিম দুধ
- ১/৩ কাপ চিনি
- আধা কাপ ফুল ক্রিম গুড়ো দুধ
একটি পাত্রে সবগুলো উপকরণ মিশিয়ে নিতে হবে। তারপরে জ্বাল করে ঘন করে নিতে হবে। দুধ যত ঘন হবে খেতেও তত মজার হয়। ঘন করে ঠান্ডা করে নিতে হবে।
প্রস্তুপ্রণালী
জেলিগুলো ঠান্ডা করার পরে চামচ দিয়ে কুচি করে নিতে হবে। আপেল ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে, কলা , স্ট্রোবেরি কেটে কুচি করে নিতে হবে। এছাড়ও আপনার পছন্দের যেকোনো ফল ব্যবহার করতে পারবেন। সাথে মধু ও রোজ সিরাপ বা রুহআফজা পরিমাণমতো ফলে সাথে মিশিয়ে নেওয়া যাবে। সব শেষে আইক্রিম দেওয়া যেতে পারে।
রেসিপি ৩
উপকরণ
- ১ লিটার দুধ
- ২ টেবিল চামচ চিয়াসিড
- হাফ কাপ কর্ণফ্লাওয়ার
- হাফ কাপ পানি
- প্রয়োজনমতো বরফ
- জেলো পাউডার
- কিছু ফল
- বাদাম কুচি
প্রস্তুতপ্রণালী
প্রথমে দুধ জ্বাল করে ঘন করে নিতে হবে। অনবরত নাড়তে হবে। এরপরে চিয়াসিড পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। প্রায় ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে চিয়াসিড ফুলে উঠবে। তারপরে একটি প্যানে কর্নফ্লাওয়ার ও পানি দিয়ে ভালোকরে মিশিয়ে নিতে হবে। মেশানো হয়ে গেলে চুলার আঁচ মিডিয়াম আচে রাখতে হবে। তারপরে ঘন হলে গেলে একটি জিপলক ব্যাকে নিয়ে তারপরে একটি বাটিতে ঠান্ডা পানি নিতে হবে। তারপরে আরও কিছু বরফ দিতে হবে। এবার একটি কোনা কেটে দিয়ে নুডুলসগুলো তৈরি হয়ে যাবে।
জেলো পাউডার কেনার সময় হালাল কিনা তা দেখে কিনতে হবে। প্যাকেটের নিদের্শনা অনুযায়ী জেলো তৈরি করে নিতে হবে। জেলো তৈরি হয়ে গেলে একটি বাটিতে সেট করে নিতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে ফ্রিজে রাখতে হবে। পছন্দ অ্নুযায়ী কিছু ফল টুকরো করে কেটে নিতে হবে। তারপরে কিছু বাদাম কুচি দিতে হবে। এরপরে একটি গ্লাসে পছন্দমতো লেয়ারে করে একে একে দিতে হবে। ব্যস হয়ে গেলো খুব সহজেই মজাদার ফালুদা রেসিপি।
ফালুদা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
একটু ভেবে দেখুন তো ফালুদা থেকে আমরা কি কি পুষ্টিগুণ পাচ্ছি। মূলত ফালুদা তৈরিতে যেসকল উপকরণ ব্যবহার করা হয় সেগুলো উপকারী। তাই একে উৎকৃষ্ট খাবারও বলা যায়। চলুন ফালুদা খাওয়ার উপকারিতা সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক-
হাড় ও দাঁত মজমুত
ফালুদায় ঘন দুধ ব্যবহার করা হয়। যা ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে হাড় ও দাতঁ মজবুত রাখতে সাহায্য করে। অনেক বাচ্চারা দুধ খেতে চায় না তাদেরকে বাসায় ফালুদা তৈরি করে খাওয়ানো যেতে পারে। এতে খুব সহজেই দুধের পুষ্টি চাহিদা মেটানো সম্ভব।
পানিশূন্যতা দূর করতে
অতিরিক্ত গরমে আমাদের দেহে পানিশূন্যতা দেখা যায়। ফালুদা পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। এমনকি আমাদের ক্লান্তিভাব দূর করতে সাহায্য করে। এবং শরীর রিফ্রেশ করে দেয়।
প্রোটিনের চাহিদা পূরণে
ফালুদায় ব্যবহৃত দুধ, বাদাম থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের প্রোটিনের চাহিদা মিটাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। এবং ভিটামিন ও খনিজের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
ফালুদা বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন কাঠ, পেস্তা, কাজু ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। যা খেতে সুস্বাদু হয়। এবং বাদামে অনেকপুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও মস্তিষ্কের বিকাশে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিনে ঘাটতি পূরণে
ফালুদা তৈরিতে পছন্দের মতো ফল ব্যবহার করে থাকি। যেমন আপেল, কলা, আনার, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। ফল আমাদের শরীরের বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। এছাড়াও প্রাকৃতিক শর্করা হিসেবে কাজ করে থাকে।
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
ফালুদায় সাবুদানা ব্যবহার করা হয়। এটি শারীরিক কর্মক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। মূলত সাবুদানা আমাদের দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
শক্তি জোগাতে
ফালুদায় নুডলস ব্যবহার করা হয়। এটি উচ্চ প্রোটিন ও খাদ্য আঁশসমৃদ্ধ খাবার। এমনকি শর্করা ও কার্বোহাউড্রেটের একটি ভালো উৎস হচ্ছে নুডলস । যা আমাদের শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। এমনকি ফল বাদাম থেকেও প্রাকৃতিক শর্করা পেয়ে থাকি। একই সাথে চিয়াসিডে থাকা ওমেগা-৩ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
উপরোক্ত আলোচনায় ফালুদা তৈরির সহজ রেসিপি ও ফালুদার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। বাসায় ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে খুব সহজেই তৈরি করে নিতে পারবেন। গরমে বা ইফরাতে এই ফালুদা বেশ মজাদার, প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও বাসায় অতিথি আপ্যায়নে ঝটপট ফালুদা বানিয়ে পরিবেশন করানো যাবে। বিভিন্ন ডেজার্ট তৈরিতে ফালুদা মেন্যুতে রাখা যেতে পারে।