You are currently viewing পনির কি, কিভাবে খায় ও তৈরি হয়? পনির খাওয়ার উপকারিতা

পনির কি, কিভাবে খায় ও তৈরি হয়? পনির খাওয়ার উপকারিতা

আপাত দৃষ্টিতে পনিরকে একটি ভারতীয় খাবার মনে হলেও এটি মূলত দক্ষিণ এশিয়ার খাবার। বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্নার পাশাপাশি পনির খালি হিসেবেও খাওয়া যায়। এতে রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ যা শরীরের গঠনগত উন্নয়নে সহায়তা করে। আমাদের আজকের লেখায় আমরা পনির কি, কীভাবে তৈরি করে এবং এর উপকারী দিক গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। 

পনির কি?

পনির একটি দুগ্ধজাত খাবার। সাধারণত দুধের ছানা থেকে পনির তৈরি করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই খাবারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পনির একটি ভারতীয় খাবার যাকে কটেজ চিজ নামে সবাই চেনে। সাধারণত গরু, ছাগল এবং ভেড়ার দুধ থেকে সুস্বাদু পনির তৈরি করা হয়। 

প্রথমে দুধ গরম করে সেখানে অম্লজাতীয় পদার্থ যেমন লেবুর রস অথবা ভিনেগার দেওয়া হয়। এতে দুধ ফেটে তা ছানায় পরিণত হয়। সেই ছানা দুধ থেকে আলাদা করে তা থেকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পানি নিঃসরণ করা হয়। সবশেষে সেই জমাট বাঁধা দুধের প্রোটিন ও চর্বির সমন্বয়ে যে সুস্বাদু খাবার তৈরি হয় তাকে পনির বলে। 

পনির কিভাবে খায়?

পনির একটি সর্বজনীন খাবার অর্থাৎ একে বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। নিচে পনির কোন কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় তা দেওয়া হলো। 

স্যান্ডউইচের সাথে 

রেস্টুরেন্টে একটা বিষয় খেয়াল করবেন সেখানে ক্যাটাগরি হিসেবে অন্যান্য স্যান্ডউইচের সাথে চিজ স্যান্ডউইচ রাখে। অনেক মানুষ স্যান্ডউইচের সাথে চিজ খেতে পছন্দ করে। তাছাড়া একটি সাধারণ স্যান্ডউইচের থেকে চিজ স্যান্ডউইচে বেশি পুষ্টিগুণ থাকে এবং অনেক সুস্বাদু হয়। 

র হিসেবে 

আপনি কোন খাবারের সাথে না মিশিয়ে র হিসেবে পনির খেতে পারবেন। আপনার যদি দুগ্ধজাত পণ্যে কোন সমস্যা না থাকে অথবা ডাক্তারের যদি মানা না থাকে তবে চিজ খেতে পারবেন। এই খাবারের সব থেকে ভালো গুন হল এটি দেহের প্রতিনের চাহিদা পূরণ করে যে কারণে ছোট থেকে বড় সবাই এই খাবার খেতে পারে। 

বার্গারের সাথে 

বার্গারের সাথে চিজ খাওয়া একটি অনেক সাধারণ বিষয়। সাধারণত বার্গারকে আরও চমকপ্রদ, সুস্বাদু ও রসালো করে তৈরি করার জন্য পনির ব্যবহার করা হয়। এটি একাধারে বার্গারের স্বাদ বৃদ্ধি করে এবং খাদ্য মান বৃদ্ধি করে। 

বিস্কিটের সাথে 

লবণাক্ত বিস্কুটের সাথে পনির মিশিয়ে খাওয়া অনেক প্রচলিত পদ্ধতি। এতে বিস্কুটের স্বাদ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি তা বেশি করে প্রোটিনের এবং ক্যালোরির সরবরাহ করে। 

পিজ্জার সাথে 

পনির পিজ্জা তৈরি একটি কমন উপাদান। বিশ্বব্যাপী পিজ্জার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে যা প্রায় সকল বয়সি মানুষের কাছেই পছন্দের। অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য চিজ পিজ্জা পছন্দ করে না। তবে বেশিরভাগ পিজ্জা এক্সট্রা চিজ সহ বিক্রি হয়। 

রুটির সাথে 

রুটি অথবা টোস্টের সাথে চিজ মিশিয়ে খাওয়া অনেক পুরাতন একটি ট্রেন্ড। সভ্যতার শুরুর দিক থেকেই রুটি খাওয়ার জন্য তাতে সুস্বাদু চিজ ব্যবহার করা হয়। এটি যেমন রুটির স্বাদ বৃদ্ধি করে তেমনি এর পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে তোলে। 

ফলের সাথে 

বিভিন্ন ফলের সালাদ অথবা সরাসরি ফলের সাথে খাওয়ার জন্য পনির একটি অন্যতম উপাদান। বিশেষ করে আঙ্গুরের সাথে পনির খেতে অনেক সুস্বাদু লাগে। তাছার বিভিন্ন ফল সংমিশ্রণ করে তাতে পনির মিশিয়ে নিলে যেমন পুষ্টিগুণ পারে তেমনি স্বাদ পরিবর্তন হয়। 

রান্না করে 

সরাসরি পনির খণ্ড খণ্ড করে তা তেলে ভেজে পিঠার মত করে খাওয়া যায়। এতে স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য চিনি অথবা লবণ এবং ঝাল যোগ করা যায়। তবে আপনি আপনার পছন্দমতো করে পনির ভাজি তৈরি করতে পারবেন। যা বিকেলের নাস্তা অথবা সকারের নাস্তার সাথে খেতে পারবেন। 

পনির খাওয়ার উপকারিতা

পনির খাওয়ার উপকারিতা

পনির হলো একটি দুগ্ধজাত পণ্য। এতে দুধে পাওয়া যায় এমন সকল উপাদান নিহিত থাকে। অর্থাৎ দুধের পুষ্টিগুণ এবং পনিরের পুষ্টিগুণ একই প্রকৃতির। নিচে পনির খাওয়ার উপকারী দিক গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। 

প্রোটিন সমৃদ্ধ 

পনির একটি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এতে প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া অন্যান্য খাবারের থেকে বেশি পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। এই উপাদান শরীরের বিভিন্ন উপকার যেমন মাংসপেশি মজবুত ও দেহের সার্বজনীন গঠন নিশ্চিত করে। পনিরে প্রোটিন সহ ক্যালসিয়াম, ফ্যাট, ফলেট ও ফসফরাস সহ আরও অনেক খনিজ উপাদান থাকে। 

হাড় শক্ত করে 

হাড় একটি শরীরের অবকাঠামো ধরে রাখে এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখে। যেমন যদি পায়ের হাড় ভেঙে যায় তবে আমরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবো না। অন্যদিকে হারে কোনো সমস্যা হলে তা থেকে যে পরিমাণ ব্যথা হয় তা সহ্য করা যায় না। মূলত দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে হাড়ের গঠন দুর্বল হয়। এই কারণে বেশি বেশি প্রকৃতি থেকে ক্যালসিয়াম শরীরে প্রবেশ করাতে হয়। আমরা জানি দুধ প্রাকৃতিক ক্যালসিয়ামের অনেক বড় একটি উৎস। আর দুধ থেকে যেহেতু পনির তৈরি করা হয় সেহেতু এটিও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম উপাদান সরবরাহ করে। 

সুগার নিয়ন্ত্রণ করে

গবেষণায় দেখা গেছে দিনে ৫০ গ্রাম পনির খেলে তা ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। এছাড়া পনির দেহের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তের সুগার লেভেল স্বাভাবিক রাখে। যেহেতু ইনসুলিন স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলে সুগার নিয়ন্ত্রিত থাকে সেহেতু এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমায়। অন্যদিকে রক্তে সুগার থাকলে তা থেকে ডায়াবেটিস সহ আরও অনেক রোগ সৃষ্টি হয়।  

হার্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করে 

আমরা জানি হার্টের খাদ্য হচ্ছে রক্ত এবং তা প্রতি সেকেন্ডে একবার করে কাঁপুনি দেয়। এতে হার্টের পেশি দ্বারা সৃষ্ট প্রেশারে পুরো দেহে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। মূলত ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল হার্টের পেশি দুর্বল করে এতে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। পনিরে থাকা পুষ্টি উপাদান এবং প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া এই ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল দূর করে যা হার্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। 

গর্ভবতী মহিলার জন্য উপকারী 

গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার শরীরে রক্তস্বল্পতা থেকে শুরু করে ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের অভাব দেখা দেয়। এই উপাদান গুলো বাচ্চার ও মায়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য অনেক জরুরি। এই উপাদানগুলোর সমতা বজায় রাখার জন্য গর্ভবতী মহিলাদের পনির খাওয়া অনেক উপকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত পরিমাণে এই দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা ও ছোট বাচ্চাদের অতিরিক্ত পনির খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

Ghee

ঘি তে রয়েছে পনিরের মতোই পুষ্টি যা প্রতিদিনের জন্য আদর্শ খাবার।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

পনির ক্যানসারের ভাইরাস বংশবৃদ্ধি রোধ করে। নিয়মিত পরিমাণমতো পনির খেলে তা ক্যানসার ও ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। 

ওজন কমাতে সাহায্য করে 

পনিরে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে যা ক্ষুধার উদ্রেক কমায়। এতে অনেক লম্বা সময় পর পর খাওয়া যায় যা ওজন বৃদ্ধি করা রোধ করে। তবে মনে রাখতে হবে যে এতে ফ্যাট থাকে যা অতিরিক্ত শরীরে প্রবেশ করলে পুনরায় ওজন বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি রোগা পাতলা হয়ে থাকেন তবে নিয়মিত পনির খেতে পারেন। 

ত্বকের যত্ন নেয় 

পনিরের এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দেহের বিভিন্ন বাহ্যিক সমস্যা প্রতিরোধ করে। বিশেষ করে নিয়মিত পনির খেলে তা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। 

পনির কি দিয়ে তৈরি হয়?

পনির তৈরি করা হয় দুধ থেকে। অর্থাৎ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার দুধ সংগ্রহ করে তা প্রথমে জ্বাল দেওয়া হয়। পরে উক্ত গরম দুধে লেবুর রস বা ভিনেগার ঢেলে দেওয়া হয়। এতে দুধের অ্যাটমিক বন্ধন ভেঙে যায় এবং ছানা তৈরি হয়।পরবর্তীতে এই ছানা থেকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পানি নিঃসরণ করে নেওয়া হয়। সব পানি ঝরিয়ে নেওয়ার পর ছানা যে শক্ত আঁকার ধারণ করে তাকে পনির বলে। মোটকথা, পনির একটি দুগ্ধজাত খাবার যা দুধের ছানা থেকে তৈরি করা হয়। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.