বালাচাও আমাদের কাছে একটি নতুন শব্দ হলেও এই বার্মিজ খাবার আইটেম বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। নতুন খাবার রেসিপি জন্য আমাদের সকলের এটি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নেই। আমাদের আজকের লেখায় আমরা বালাচাও কি, চিংড়ি বালাচাও তৈরি করার পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
বালাচাও কি?
বালাচাও একটি রেডি ফুড। সাম্প্রতিক সময়ে এই খাবার আইটেম বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মূলত এটি একটি বার্মিজ খাবার। আমাদের দেশে বালাচাও প্রবেশ করে কক্সবাজারের বার্মিজ মার্কেটের মাধ্যমে। উক্ত মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বার্মা থেকে বিভিন্ন আচারের সাথে এই রেডি ফুড আমাদের দেশে নিয়ে আসে।
সেখানকার চিনা এবং থাই পর্যটকের কাছে এই খাবারের কদর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বালাচাও সাধারণত তৈরি করা হয় শুঁটকি, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও লবণ ব্যবহার করে। এটি দেখতে অনেকটা শুঁটকি ভর্তার মত। এই কারণে বালাচাও কে শুঁটকি ভর্তা নামেও অনেকেই চিনে থাকে।
যাইহোক, বালাচাও একটি ভর্তা জাতীয় খাবার যা প্রধানত চিংড়ি শুঁটকি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এটি স্বাদে এবং গন্ধে অনন্য। আমাদের দেশে বালাচাও এখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় এই খাবারের জনপ্রিয়তা ব্যাপক আকৃতি ধারণ করেছে। অন্যদিকে অনলাইন শপগুলোতে রেডি ফুড হিসেবে এই পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। শৌখিন মানুষগুলো এই প্যাকেটজাত খাবার অনলাইনে অর্ডার করে সংগ্রহ করে।
গরম ভাতের সাথে বালাচাও খেতে সব থেকে বেশি মজা লাগে। তবে পোলাও, খিচুড়ি, মুড়ি মাখা ইত্যাদির সাথে এই আইটেম খাওয়া যায়। তাছাড়া বালাচাও তৈরি করার জন্য চিংড়ি বাদেও অন্যান্য সুস্বাদু শুঁটকি ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ আপনার যদি চিংড়িতে অ্যালার্জি থাকে বা কম পছন্দ করেন তাহলে লাইট্টা, ছুরি ইত্যাদি মাছের শুঁটকির বালাচাও খেতে পারবেন।
বালাচাও খাওয়ার উপকারিতা
আমরা জানি বালাচাও তৈরি করা হয় শুঁটকি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন ও লবণ মিশ্রিত করে। আর পুরো মিশ্রণটি সরিষার তেলে ভাজা হয়। বালাচাও এ ব্যবহৃত প্রতিটি উপাদানের রয়েছে আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণ। সেই দিকগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় যে বালাচাও অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম বালাচাও এ মোট ক্যালরি থাকে ৭৫, কার্বোহাইড্রেট থাকে ৫.৫ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ২.৮ গ্রাম, প্রোটিন থাকে ৬.২ গ্রাম। এগুলোর পাশাপাশি আরও থাকে ভিটামিন বি৬, বি১২, সি এবং নিয়াসিন।
শুঁটকির মধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী সব ধরনের উপাদান পাওয়া যায়। যখন শুঁটকির সাথে পেঁয়াজ, রসুন ও মশলা মিশিয়ে বালাচাও তৈরি করা হয় তখন তা স্বাদে এবং পুষ্টিতে অনন্য হয়ে ওঠে। তাছার উপরে বর্ণিত পুষ্টি উপাদান আমাদের দেহের বিভিন্ন উপকারে প্রয়োজন পরে।
বালাচাও রেসিপি
আমাদের দেশে বালাচাও বাণিজ্যিক ভাবে প্রস্তুত করা হয় না। তবে বর্তমানে অনেক উদ্যোক্তা ঘরোয়াভাবে বালাচাও তৈরি করে অনলাইন ও অফলাইনে বিক্রি করে আসছে। বালাচাও তৈরি করা অনেক সহজ এবং অনেক কম উপাদানেই তৈরি করা যায়। নিচে বালাচাও তৈরি করার রেসিপি বর্ণনা করা হল।
উপকরণ
পেঁয়াজ কুঁচি, ছেঁচা রসুন, শুকনা মরিচ, লবণ, ধনেপাতা, সরিষার তেল ও শুঁটকি। এখানে অরিজিনাল বালাচাও তৈরি করতে চিংড়ি মাছের শুঁটকি ব্যবহার করা হয়। তবে লাইট্টা, ছুরি সহ সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি ব্যবহার করেও এই শুকনো খাবার রান্না করা যায়।
রান্নার পদ্ধতি
প্রথমে কড়াইয়ে পরিমাণ মত সরিষার তেল দিতে হবে। সরিষার তেল গরম হওয়ার সময় তাতে পেঁয়াজ কুচি ছেড়ে দিয়ে হালকা আঁচে ভেজে নিতে হবে। পেঁয়াজ কুচি বেরেস্তা হওয়ার আগ পর্যন্ত ভেজে নিয়ে তা তুলে রাখতে হবে। এরপর উক্ত গরম তেলে আধাভাঙ্গা রসুন ছেড়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন রসুনের কালার বাদামি হওয়ার আগে পর্যন্ত ভেজে নিতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে শুকনা মরিচ এবং তারপর শুঁটকি ভেজে নিতে হবে।
এখানে পরিমাণমতো লবণ দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি ভাজা না হয়ে যায়। কারণ বেশি ভাজা হয়ে গেলে খেতে তেতো ভাব লাগতে পারে। যাইহোক যখন সব আইটেম ভাঁজা হয়ে যাবে তখন পেঁয়াজ বেরেস্তা, রসুন, শুকনা মরিচ, ধনে পাতা ও শুঁটকি এক সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। সকল উপাদান মিশ্রিত করার পর যে অবস্থার সৃষ্টি হবে তাকেই বালাচাও বলে। এখন আপনি এই বালাচাও সংরক্ষণ করার জন্য কাচের বয়াম অথবা প্যাকেটে রাখতে পারবেন। অন্যদিকে গরম ভাতের সাথে খাওয়া শুরু করে দিতে পারবেন।
চিংড়ি বালাচাও খাওয়ার নিয়ম
আমরা পূর্বে জেনেছি যে বালাচাও একটি শুকনো খাবার যা ভর্তা হিসেবে খাবারের সাথে গ্রহণ করা হয়। এখানে চিংড়ি বালাচাও খাওয়ার নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
- সবজি খিচুড়ি অথবা ভুনা খিচুড়ির সাথে চাটনি হিসেবে অথবা ভাজি হিসেবে বালাচাও খাওয়া যায়।
- গরম ভাতের সাথে ভর্তা হিসেবে খাওয়া যায়।
- চানাচুরের মত করে খাওয়া যায়।
- রান্না করা বা ভাঁজা শাকের সাথে বালাচাও অনেক সুস্বাদু লাগে।
- থানকুনি পাতার সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- আড্ডা দেওয়ার সময় খাওয়া যায়।
- টিভি দেখার সময় খাওয়া যায়।
- শুকনো খাবার হিসেবে খাওয়া যায়।
- বিকেলের নাস্তার সময় খাওয়া যায়।
- মুড়ি মাখার সাথে খাওয়া যায়।
- আলু ভর্তার সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
এগুলো ছাড়াও আপনি বিভিন্ন খাবারের সাথে যোগ করে বালাচাও খেতে পারবেন। অন্যদিকে এই খাবারের সাথে পেঁয়াজ, ধনেপাতা বেশি করে যোগ করে সালাদের মত করেও খাওয়া যেতে পারে। মোটকথা বালাচাও আমাদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় পুষ্টিকর খাদ্য।