You are currently viewing বাচ্চার জন্য ৭ টি নরম খাবারের রেসিপি 
বাচ্চার জন্য ৭ টি নরম খাবারের রেসিপি 

বাচ্চার জন্য ৭ টি নরম খাবারের রেসিপি 

সাধারণত বাচ্চার ৬ মাস বয়সের পর থেকে ডাক্তার টা বাড়তি খাবারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এসময় শিশুর স্বাস্থ্যকর বিকাশের জন্য পুষ্টিকর এবং সেই সাথে সহজপাচ্য খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার শিশুদের হজমে সহায়ক এবং এটি শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। 

তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মায়েরা সবসময় বাড়তি একটা চিন্তায় থাকেন যে বাচ্চার জন্য কোণ খাবার গুলো ভালো হবে। একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে , শিশুকে সবসময় নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন যাতে তারা এটি সহজে খেতে ও হজম করতে পারে। আজকের এই লেখার মাধ্যমে আমি আপনাদের বাচ্চার জন্য সহজ ও নরম ৭ টি চমৎকার রেসিপি সম্পর্কে জানাবো। আশা করছি এরপর থেকে বাচ্চাকে কি খাওয়াবেন সেটি নিয়ে আর বাড়তি টেনশনের কারন থাকবে না। 

৭ টি নরম খাবারের রেসিপি  

মিক্সড সবজি খিচুড়ি

উপকরণ

  • চাল-২ টেবিল চামচ
  • ২ রকমের মিক্সড ডাল-১ টেবিল চামচ
  • সবজি( মিষ্টিকুমড়া, পালং শাক)- পরিমাণ মতো

প্রস্তুতপ্রনালী

প্রথমে চাল ও ডাল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর এতে ছোট ছোট করে কেটে রাখা সবজি ও পানি মিশিয়ে খুব ভালো করে রান্না করে নিতে হবে। রান্না শেষে একটি চামচের সাহায্য খিচুড়ি গুলোকে মিহি করে নিতে হবে। এতে করে বাচ্চার খাবার টি খেতে সুবিধা হবে। 

উপকারিতা

এই মিক্সড সবজি টি বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী। বাচ্চাকে সলিদ খাবার দেওয়া শুরুর পর থেকেই আপনি এই খিচুড়ি খাওয়াতে পারবেন। ডাল এ রয়েছে প্রোটিন এছাড়া শাক ও সবজি তে পাবেন বিভিন্ন ভিটামিন যা শিশুর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। তবে প্রথমেই বাচ্চার খাবারে মরিচ , লবণ অথবা তেল ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। প্রথম অবস্থায় খিচুড়ি রান্নার সময় খুব বেশি সবজি বা ডাল এক সাথে ব্যবহার করবেন না। বরং একটি বা দুইটি ডাল দিয়ে রান্না করে বাচ্চাকে খাওয়াবেন। যদি বাচ্চা খেতে পছন্দ করে বা সেই খাবারে বাচ্চার কোণোরুপ সমস্যা দেখা না যায় তাহলে ধীরে ধীরে আরও কিছু সবজি এড করতে পারেন। 

আপেলের পিউরি

আপেলের পিউরি

উপকরণ

  • আপেল- মাঝারি সাইজের ১ টি।
  • পানি-পরিমানমতো
  • বুকের দুধ- পরিমাণ মতো।

প্রস্তুতপ্রনালী

প্রথম আপেল ভালো ভাবে ধুয়ে নিবেন এবং আপেলের খোসা ছাড়িয়ে নিবেন। এরপর আপেল টি ছোট ছোট সাইজে কেটে এটিকে ভালো করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। কিছুটা ঠান্ডা হয়ে এলে এরপর  ব্লেন্ড করে নিবেন। যদি পিউরি খুব বেশ গাঢ় মনে হয় তাহলে এতে সামান্য পরিমাণে বুকের দুধ বা বাচ্চা যদি ফর্মুলা মিল্ক খেয়ে থাকে সেটি মেশাতে পারেন। এতে কিছুটা পাতলা ঘনত্বের পিউরি  তৈরি হবে। 

উপকারিতা

বাচ্চার দৈনিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য খাবারের তালিকা তে একটি ফল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চারা কাচা ফল খেতে চায় না। এবং শিশুর দাঁত না থাকলে আপেলের মতো ফলগুলো তারা সহজে চিবিয়ে খেতে পারে না। তবে এইভাবে ফলের পিউরি বানিয়ে দিলে তারা খুব সহজেই খেতে পারবে। আপেল বাচ্চাদের অন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। 

মিষ্টি কুমড়ার পিউরি

উপকরণ

  • মিষ্টিকুমড়া-১ কাপ
  • পানি-পরিমানমতো
  • মধু-( বাচ্চার বয়স দেড় বছর হলে)

প্রস্তুতপ্রনালী

প্রথমে মিষ্টি কুমড়া ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর কেটে সেটি পানির সাথে মিশিয়ে ভালো ভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ হয়ে এলে চামচের সাহায্য মিশিয়ে নিতে পারেন অথবা ব্লেন্ড ও করে নিতে পারেন। মিষ্টি কুমড়ার স্বাদ এমনিতেই মিষ্টি তবে বাচ্চা যদি কিছুটা মিষ্টি খাবার খেতে পছন্দ করে তাহলে সামান্য পরিমাণে মধু মেশাতে পারেন। তবে দেড় বছরের নিচের বাচ্চাদের চিনি বা মধু না খাওয়ানোর পরামর্শ রইলো। 

কলা ও ডিমের প্যানকেক

উপকরণ

  • পাকা কলা- ১ টি
  • ডিম-১ টি
  • বাটার-খুবই সামান্য 

প্রস্তুতপ্রনালী

প্রথমে একটি পাত্রে পাকা কলা কে খুব ভাল ভাবে হাত অথবা চামচের সাহায্য চটকে নিতে হবে। এরপর এতে ডিম দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে কলার সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এটা কিছুটা পাতলা ঘনত্বের হবে। এরপর একটি প্যানে সামান্য বাটার দিতে হবে। এরপর প্যান গরম হলে কলা ও ডিমের মিশ্রন অল্প অল্প করে ঢেলে নিতে হবে ঠিক যেভাবে ধোসা তৈরি করা হয়। এরপর ১ মিনিট প্যানকেক টি ঢেকে রাখবেন এবং বাদামি হয়ে এলেই নামিয়ে ফেলবেন। 

উপকারিতা

কলা ও ডিম বাচ্চার শরীরের জন্য খুব উপকারী। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা বাচ্চার শরীরের বৃদ্ধির জন্য সাহায্য করে থাকে। এছাড়া কলাতে থাকা কার্বোহাইড্রেট বাচাদের এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। যেহেতু ৬ মাসের পর থেকে বাচ্চারা দ্রুত বাড়তে থাকে তাই তাদের শরীরের পুষ্টি  ঘাটটি দূর করার জন্য সপ্তাহে ২ দিন এমন কলা ও ডিমের প্যানকেক বানাতে পারেন। 

সুজির পায়েস

উপকরণ

  • সুজি-হাফ কাপ
  • পানি- পরিমাণমতো
  • কিছু ফল-( আপেল, নাশপাতি বা খেজুর)

প্রস্তুতপ্রনালি 

 প্রথমে একটি প্যানে সুজি নিয়ে এটি হালকা আচে কিছুক্ষণ ভেজে নিন। এরপর এতে পানি এড করুন এবং পর্যাপ্ত সময় নিয়ে রান্না করুন। সুজি ফুটতে শুরু করলে এটি ছোট ছোট করে কেটে রাখা আপেল ও খেজুর এড করে নিন। সুজি একেবারে সিদ্ধ হয়ে এলে  চামচের সাহায্য ভালো করে নেড়ে নিন । সাধারণত রান্নার পর আপেল ও খেজুর একেবারেই সুজির সাথে মিশে যায় তবে কোনো কারণে না মিশলে সেটি অবশ্যই সুজির সাথে ম্যাশ করে নিবেন। এতে করে বাচ্চার খাবার টি খেতে সুবিধা হবে। 

উপকারিতা

সুজি একটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যা বাচ্চাদের হৃদযন্তের জন্য উপকারী। এছাড়া সুজি দ্রুত হজমে সাহায্য করে এবং এতে থাকা ভিটামিন ও কার্বোহাইড্রেট বাচ্চাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। অন্যদিকে সুজি তৈরির সময় এতে খেজুর বা আপেলের মতো ফল যোগ করার ফলে খাবারের পুষ্টিগুন ও বেড়ে যায়। 

গাজর ও মিষ্টি আলুর পিউরি 

গাজর ও মিষ্টি আলুর পিউরি 

উপকরণ

  • গাজর-১ টি
  • মিষ্টি আলু-১ টি
  • পানি- পরিমাণ মতো

প্রস্তুতপ্রনালী

গাজর ও মিষ্টিকুমড়া  একসাথে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ছোট কিউব করে কেটে নিতে হবে। এরপরে এতে পানি এড করে ভালো করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সবশেষে চামচ বা ব্লেন্ডারের সাহায্য ব্লেন্ড করে নিবেন এবং ঠান্ডা করে বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য  পরিবেশন করবেন। 

 উপকারিতা

গাজর ও মিষ্টিকুমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে এবং সেই সাথে শিশুর চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়া বাচ্চার ত্বক মোলায়েম ও সুন্দর রাখতেও এগুলো বেশ উপকারী। তাই বাচ্চাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর জন্য এমন পিউরি বানিয়ে দিতে ভুলবেন না। 

ডালের স্যুপ

উপকরণ

  • মিক্সড ডাল-১ কাপ
  • পানি- পরিমাণমতো

প্রস্ততপ্রনালী

ডাল গুলোকে ভালো ভাবে ধুয়ে নিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর একটি পাত্রে পরিমাণ মতো পানি ও ডাল মিশিয়ে ভালো করে রান্না করে নিতে হবে । ডাল গুলো পুরোপুরি সিদ্ধ হয়ে এলে খুব ভালো করে ডাল গুলো পানির সাথে মিশিয়ে নিন। চাইলে এই ডালের সাথে সামান্য ভাতের মাড় ও এড করে নিতে পারেন। 

উপকারিতা

ডাল হলো ফাইবারের একটি বড় উৎস। এটি দ্রুত খাবার হজমের পাশাপাশি শিশুর হাড় ও পেশি গঠনে সাহায্য করবে। এছাড়া ডাল খেলে এটি বাচ্চার শরীরের পর্যাপ্ত শক্তির নিশ্চয়তা দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য এবং সুস্থ থাকার জন্য তাকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ন। যেহেতু ৬ মাসের পর থেকে শিশূ বাড়তি খাবার খেতে শুরু করে তাই তাকে শুরুতেই খুব ভারি খাবার খাওয়ানো উচিত না। এতে করে এটি বাচ্চা হজমে অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে। তাই যতটা সম্ভব নরম ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বাচ্চাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। আজকের এই লেখায় বাচ্চার জন্য ৭ টি নরম খাবারের রেসিপি জানানো হয়েছে। সবাই সুস্থ্য থাকুন। নিজের ও পরিবারের যত্ন নিন।