You are currently viewing হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে যা খাবেন এবং যে বিষয় গুলো এড়িয়ে চলবেন
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে যা খাবেন

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে যা খাবেন এবং যে বিষয় গুলো এড়িয়ে চলবেন

হার্ট বা হৃদয় হলো আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তবে বিভিন্ন কারণে আমরা অনেক সময় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি।  হৃদরোগ বা Heart disease এর কারনে সারা বিশ্বে প্রতিবছর বহু মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করে। হৃদরোগ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের মাধ্যমে আপনি এটি থেকে রক্ষা পেতে পারেন। 

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর  খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই লেখার মাধ্যমে আমরা জানবো  সুস্থ থাকতে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কোন খাবার গুলো খাওয়ার উচিত।

হৃদরোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাবার

হৃদরোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে আমরা প্রায় সকলেই বাহিরের প্রক্তিয়াজাত  খাবার গুলো বেশী খেয়ে থাকি যা আমাদের স্বাস্থ্য এর জন্য ক্ষতিকর। তাই স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তি হিসেবে আপনার অবশ্যই খাবারের গুনাবলি  সম্পর্কে জানা উচিত। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এমন বেশ কিছু খাবার রয়েছে। 

সবুজ শাকসবজি

প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর খাবার হলো সবুজ শাকসবজি। এছাড়াও সবুজ শাকসবজি তে  রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডায়েটারি ফাইবার যা আমাদের হ্রদপিন্ড কে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। পালং শাক, লেটুস, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ শাক,বিটরুট, গাজর  টমেটো ইত্যাদি আমাদের হ্রদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

ফলমূল

শরীর সুস্থ রাখতে ও হৃদরোগ প্রতিরোধে ফল অন্যতম কার্যকরী একটি খাবার।  বিশের করে ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল আমাদের শরীরে জন্য অনেক উপকারী। হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য আপনি কমলা, লেবু বা জাতীয় সাইট্রাস ফল খেতে পারেন । এটি আপনার রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সাথে ডালিম ও আপেল আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে করে হ্রদযন্ত্রে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায় ফলে হার্ট সুস্থ  থাকে।

সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের হার্টের জন্য অনেক উপকারি। এছাড়াও সামুদ্রিক মাছে রয়েছে আয়োডিন, জিংক, এবং ভিটামিন বি ১২। তাই হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে বেশী বেশী সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, রুপচাঁদা,টুনা, হেরিং, রুপসা ইত্যাদি মাছ কে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাতে রাখুন। 

বাদাম 

বাদাম 

বাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে। বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। নিয়মিত বাদাম খেলে এটি আমাদের হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সাথে বাদাম খেলে এটি আমাদের শরীর থেকে ব্যাড কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে । তাই হৃদয় কে সুস্থ রাখতে রোজকার খাবারে এক মুঠ বাদাম রাখতে পারেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং উপকারী বাদাম হলো চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম এবং আখরোট। তবে হ্যাঁ অতিরিক্ত বাদাম খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য  দৈনিক ২০-৩০ গ্রাম বাদাম খাওয়ায় যথেষ্ট।

গ্রিন টি

প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি খাবার হলো গ্রিন টি। এছাড়া গ্রিন টি তে রয়েছে ক্যাচেটিন (Catechin) এবং EGCG, আমাদের হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। গ্রিন টি তে আরও রয়েছে থিয়ানিন( Theanine) যা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে । ফলে মনের সাথে সাথে হৃদয় ও ভালো থাকে। 

যেসব চা আপনার হার্ট ভালো রাখবে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে?

ডার্ক চকলেট

চকলেট আমাদের প্রায় সকলেরই বেশ পছন্দের একটি খাবার। চকোলেট খেলে দাঁতে পোকা হয় এই কথাটি ছোট বেলায় আমরা প্রায় সবাই শুনেছি। তবে মজার বিষয় হলো এই চকলেট ই আপনার হার্টের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সক্ষম। চকলেট খাওয়ার সময় সবসময় ডার্ক চকলেট খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সাধারনত  যেই চকলেটে কোকোয়া এর মাত্রা ৭০% এর বেশি হয়ে থাকে সেই চকলেট টিই আমাদের স্বাস্থ্য এর জন্য উপকারি। ৭০% এর নিচে থাকা চকলেট গুলো খেলে আমাদের শরীরের উপকারের চেয়ে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা টাই সবচেয়ে বেশি।  ডার্ক চকলেটে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি  আমাদের রক্তের ব্যাড কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল ( HDL) এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

শস্যজাতীয় খাবার

শস্যজাতীয় খাবার যেমন ওটস, বার্লি অথবা সম্পূর্ণ শস্যের জাতীয় খাবার যেমন লাল আটা ইত্যাদি আআদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই খাবার গুলো ফাইবার সমৃদ্ধ যা আমাদের রক্তের ব্যাড কোলেস্টেরল   দূর করতে সাহায্য করে সেই সাথে শরীরের শক্তি সরবরাহ করে এবং হৃৎপিণ্ড কে  সুস্থ রাখে। 

হৃদরোগ প্রতিরোধে যে খাবার গুলো খাওয়া যাবে না

অতিরিক্ত লবণ

অতিরিক্ত লবণ আমাদের হৃদপিন্ডের জন্য অনেক ক্ষতিকর। অতিরিক্ত লবণ খেলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় এতে  করে হৃদরোগের ঝুঁকি ও বেড়ে যায়। তাই হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। বিশেষ করে আমরা অনেকেই ভাত কিংবা বিভিন্ন খাবারের সাথে কাচা লবণ খেয়ে থাকি এটি আমাদের শরীরের জন্য আরও বেশী ক্ষতিকর।  অধিক পরিমানে লবণ ব্যবহৃত হয় এমন প্যাকেটজাত স্ন্যাকস আইটেম  খাওয়া থেকেও  বিরত থাকুন। 

চিনি

সাদা চিনি কে বলা হয় সাদা বিষ। চিনি আমাদের রক্তে শর্করা এর মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এতে করে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের অতিরিক্ত মেদের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকির মাত্রা ও বেড়ে যায়। তাই সুস্থ থাকলে অতিরিক্ত চিনি খাওয়া কে না বলুন। 

ক্যাফেইন যুক্ত খাবার

উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন আমাদের শরীরের রক্তচাপ কে বাড়িয়ে তোলে। এতে করে আমাদের হ্রদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার 

বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষই রেডী টু ইট খাবার গুলোর বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠছেন। তবে প্রক্তিয়াজাত এই খাবার গুলো আমাদের সময় কে বাচালেও আমাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এই খাবার গুলোকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ এর জন্য বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ  ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয়ে থাকে যা আমাদের হ্রদযন্ত্রের  জন্য ক্ষতিকর। 

ধূমপান ও অ্যালকোহল

ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে এটি আমাদের শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে । এতে করে হৃদপিন্ডের উপরে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়। 

হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর ৫ টি উপায়

হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর ৫ টি উপায়

 সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। তবে সঠিক খাবার গ্রহণের পাশাপাশি  হৃদপিন্ড কে সুস্থ রাখার আরও কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি।

১) নিয়মিত শরীর চর্চা করুন। এটি আপনার শরীরের বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। সেই সাথে আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ও উন্নতি ঘটাবে। সঠিক পরিমাণে ক্যালরি বার্ন না করলে এটি আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে ফেলে। তাই দৈনিক অন্তত ২০-২৫ মিনিট শরীরচর্চা করুন। 

২) প্রতিদিন অন্তত ৬ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। রাত জাগার অভ্যাস থাকলে সেটি পরিবর্তন করুন। প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর ঘুম আপনার হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং আপনার কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। 

৩) মানসিক ভাবে সুস্থ বা শান্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। মানসিক ভাবে যদি আপনি অশান্ত থাকেন তাহলে এটি আপনার হৃদযন্তের উপরে প্রভাব ফেলবে। তাই স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন। কাজের স্ট্রেস কমানোর জন্য ব্যায়াম করতে  পারেন। প্রতিদিন কিছু সময় যোগব্যায়াম করলে এটি আপনার মানসিক স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে। 

৪) স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত ওজনের কারণে হৃদ্‌যন্ত্রের উপরে চাপের সৃষ্টি হয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর ডায়েটের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা ও করতে পারেন।

৫) প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করুন। এটি আপনার শরীরের দূষিত পদার্থ গুলো দূর  করতে সাহায্য করবে সেই সাথে শরীরের রক্তপ্রবাহ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। এতে করে হৃদ্‌যন্ত্র ও ভালো থাকবে।

 বর্তমান সময়ে হৃদরোগ মহামারি আকার ধারণ করছে। প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে নানা বয়সি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমাদের সকলের হৃদরোগ প্রতিরোধের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।স্বাস্থ্যকর  খাবার গ্রহণ এবং সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই আমার হার্ট কে  সুরক্ষিত রাখতে পারি।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.