You are currently viewing খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে ঘি দিয়ে রান্না ও রেসিপি 
ঘি দিয়ে রান্না

খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে ঘি দিয়ে রান্না ও রেসিপি 

ঘি হলো একটি পুষ্টিকর মুখরোচক খাবার। গরম গরম ভাত ঘি দিয়ে মাখালে যে ঘ্রাণ ও সুস্বাদ পাওয়া যায় এটা ভাবতেই যেনো জিহ্বায় পানি চলে আসে। সাথে যদি একটু ঘিয়ে ভাজা ডিম ভাজি, বেগুন ভাজি বা আলু ভর্তা হয় তাহলে তো দিন টায় আপনার। 

শুধু শীত বা গ্রীষ্ম কালই নয় বরং সব ঋতু তেই ঘি খাওয়া অনেক ভালো। অনেকেই খালি মুখে ঘি খেয়ে থাকে। তবে যেকোনো খাবারের স্বাদ এবং ঘ্রান বৃদ্ধি এর জন্যই সাধারনত ঘি এর ব্যবহার করা হয়। চলুন আজকের আর্টিকেলে ঘি দিয়ে তৈরি মজার সব রেসিপি গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক চলুন! 

ঘি দিয়ে বেগুন ভাজা

আমরা সাধারণত বেগুন তেলে ভেজে খেয়ে থাকি, কিন্তু তেলে প্রচুর স্যাচুরেটড ফ্যাট রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। তাই যতোটা সম্ভব আমাদের তেল এড়িয়ে চলা উচিত। তবে তেলের পরিবর্তে কীভাবে খুব সহজে ঘি দিয়ে বেগুন ভাজবেন? 

প্রস্তুতপ্রনালি

প্রথমে বেগুন কেটে পানি ঝরিয়ে লবন, হলুদ, মরিচ মাখিয়ে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিবেন। এরপর একটি কড়াইয়ে ঘি দিয়ে এতে বেগুন গুলো বেশ ভালো ভাবে ভেজে নিবেন। চুলার আঁচ খুব বেশি রাখবেন না এতে বেগুন ভাজা পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ব্যাস রেডি মজার বেগুন ভাজা। বেগুন ভাজার ঘ্রানেই আপনার মন মাতোয়ারা হয়ে উঠবে। 

ঘি এ ভাজা সুজির হালুয়া

মিস্টি জাতীয় খাবার আমাদের সবার খুব পছন্দ। সেইটা যদি হালুয়া হয় আর সাথে রুটি তাহলে তো কোনো কথায় নেই। ঘি দিয়ে সুজির হালুয়াতে আলাদা স্বাদ ও সুঘ্রাণ দুইটাই এক সাথে পাওয়া যায়।

প্রস্তুতপ্রনালী 

সুজি গুলো প্রথমে তেল বা ঘি ছাড়াই একটি শুকনো প্যানে ভেজে নিতে হবে। যতক্ষন পর্যন্ত না হালকা বাদামী রঙ ধারন করে। তারপর একটি প্যানে ঘি দিয়ে এর মাঝে এলাচ, দারুচিনি ও তেজপাতা দিয়ে সামান্য নাড়াচাড়া করে ভেজে রাখা সুজি দিয়ে আরো কিছুক্ষন ভাজতে হবে। এখন চিনি এড করে নিতে হবে এবং ঘি উপরে উঠে আসা পর্যন্ত নাড়তে হবে কারণ এই সুজি পাতিলের নিচে লেগে যেতে পারে।  এইবার রান্না করা সুজি গুলো একটি ট্রে তে ঢেলে ভালো ভাবে সেট করে নিতে হবে। এবার একটি চাকুর সাহায্যে আপনার পছন্দমতো সাইজে সুজি গুলো কেটে ডিজাইন করে নিতে পারে। 

ঘি মাখানো আলু ভর্তা

ঘি মাখানো আলু ভর্তা

কথায় আছে বাঙালি মানেই গরম ভাত সাথে ঘি হলে আর লাগে কি? আর তার সাথে যদি হয় গরম গরম ঘি দিয়ে বানানো আলু ভর্তা তাহলে তো আর কথায় নাই। দেরি কিসের? ঘি দিয়ে আলু ভর্তা বানিয়ে ফেলি চলুন।

প্রস্তুতপ্রনালী

আলু সিদ্ধ করার পর ম্যাশ করে রাখতে হবে। কড়াই বা প্যানে ঘি গলিয়ে নিয়ে শুকনো মরিচ, পেয়াজ ভেজে নিতে হবে। তারপর মরিচ, স্বাদ মতো মবণ, পেয়াজ, কাচা ধনিয়া পাতা আর ম্যাশ করা আলু ঘি দিয়ে মাখালেই হয়ে যাবে ঘিয়ে মাখালো আলু ভর্তা।  

ঘিয়ে সেমাই রান্না

বাঙ্গালির যেকোনো অনুষ্ঠানে মিষ্টি জাতীয় আইটেম খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে মুসলিমদের পবিত্র দুই ঈদের প্রধান খাবার ই হলো সেমাই। দুধে ভেজানো লাচ্চা সেমাই আমার মতো নিশ্চয় আপনাদেরও অনেক পছন্দের। তবে সেমাই রান্নায় ঘি এর ব্যবহার যেনো সেমাই এর স্বাদ কে আরও দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। 

প্রস্তুতপ্রনালী

প্রথমে একটি পাতিলে দুধ ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার এই জ্বাল করা দুধের মাঝে দারচিনি, এলাচ, তেজপাতা দিয়ে জ্বাল করে নিতে হবে। এইবার একটি আলাদা পাত্রে ঘি দিয়ে এর মাঝে ২/৩ মিনিট সময় নিয়ে সেমাই ভেজে নিতে হবে। এবার সেমাই এর মাঝে ফুটিয়ে রাখা দুধ দিয়ে সেমাই গুলোকে ৫ মিনিট ঢেকে রাখলেই এটা একদম তৈরি হইয়ে যাবে। পরিবেশন এর জন্য সেমাই এর উপরে কিসমিস, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, খেজুর ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। 

ঘিয়ে রান্না মুরগির রোস্ট 

রোস্ট বাঙ্গালিদের অন্যতম পছন্দের খাবার। বিশেষ করে শাহী রোস্টের স্বাদ টা অসাধারন।  বিয়ে বাড়িয়ে সকলের পছন্দের খাবার হলো এই রোস্ট। ঘি দিয়ে তৈরি শাহী রোস্ট আপনার খাবারে একতি আলাদা স্বাদের মাত্রা যোগ করবে।

প্রস্তুতপ্রনালী

সবার আগে রোস্টের জন্য রোস্টের মশলা বানাতে হবে । দারুচিনি, সবুজ এলাচ, লবঙ্গ, জয়ত্রি, জয়ফল, শাহি জিরা, পোস্তদানা, সাদা গোল মরিচ, কাঠবাদাম ও টক দই বা সাদা দই দিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুরগির মাংস মাখিয়ে রেস্টের জন্য ৩০ মিনিটের রাখতে হবে। তারপর কড়ায় বা প্যানে ১ টেবিল চামচ ঘি ও ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে মশলায় মাখানো মুরগি ভেজে নিতে হবে। ভাজার পর মুরগি উঠিয়ে নিয়ে আরো ২ টেবিল চামচ ঘি দিন। এখন এলাচ, দারুচিনি ও তেজপাতা সামান্য পেয়াজ  দিয়ে ভেজে নিন হালকা ব্রাউন হওয়া পর্যন্ত। 

এবার পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা, ধনিয়ার গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, টমেটো সস, টক দই, মিষ্টি দই ও ব্লেন্ড করা রোস্টের মসলা দিয়ে ভালো ভাবে কষিয়ে নিতে হবে। ৮ থেকে ১০ মিনিট কষানোর পর ২ কাপ পানি দিয়ে পানির বলক উঠলে ভেজে রাখা মুরগি দিয়ে নেড়েচেড়ে আরো ৮ থেকে ১০ মিনিট রান্না করতে হবে। চিকেন পুরোপরি সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন পেয়াজ বেরেস্তা, আস্ত কাঁচা মরিচ, গুঁড়া দুধ, আলুবোখরা ও গোলাপজল দিয়ে আল্প আচে কিছুক্ষণ রেখে নামিয়ে নিন এবং পরিবেশন করুন। 

ঘি এর তৈরি সেমাই নাড়ু 

ঘিয়ে ভাজা সেমায়ের নাড়ু কখনো কি খেয়েছেন? না খেয়ে থাকলে অনেক কিছু মিস করেছেন আপনি।

 প্রস্তুতপ্রনালী
সেমাই নাড়ু বানাতে, সেমাই ভেঙ্গে ছোট বা ঝুরা করে নিতে হবে। এবার কড়ায় বা  প্যানে ১ টেবিল পরিমানে ঘি গরম করে সেমাই ভেজে  নিতে হবে। । অন্য প্যানে আরো ১ চামচ ঘি দিয়ে এলাচ, তেজপাতা, নারিকেল, বাদাম হালকা ভেজে  এর মাঝে  সেমাই দিয়ে কনডেন্স মিল্ক (কেউ মিস্টি বেশি পছন্দ করলে চিনি) দিয়ে আঠালো হলে চুলা বন্ধ করতে হবে।  কিছুটা ঠান্ডা হয়ে এলে হাতে ঘি মাখিয়ে নাড়ু বানিয়ে  নিলেই হয়ে যাবে মজাদার সেমাই নাড়ু। 

বিরিয়ানি 

বিরিয়ানি পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুসকিল।  তবে বিরিয়ানি রান্নাতে একটু ঘি এর ব্যবহার ঘি এর স্বাদ ও ঘ্রান টাকে আরও বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। চলুন  খুব সহজে বিরিয়ানি রান্না পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।

প্রস্তুতপ্রনালী

প্রস্তুতপ্রনালী 

বিরিয়ানির জণ্য প্রথমে মাংশ রেডি করে নিতে হবে। এজন্য  মাংসের সাথে দারুচিনি, তেজপাতা, এলাচ, লবঙ্গ, আদা বাটা, রসুন বাটা, মরিচ গুরা, ধনিয়া গুরা, ভাজা জিরা গুরা, বিরিয়ানির মশলা, স্বাদ মতো লবন, তেল দিয়ে, পেয়াজ বেরেস্তা ও টকদই দিয়ে মাখিয়ে  ১০/১৫ মিনিটের জন্য ঢেকে রাখতে হবে।  এরপর একটি পাত্রে  মাখিয়ে রাখা মাংশ গুলোকে দিয়ে ভালো ভাবে কষিয়ে রান্না করে নিতে হবে। মাংস টা ভালোভাবে সিদ্ধ করে এলে মাংস গুলোকে আলদা ভাবে তুলে রেখে , ঐ পাত্রেই পানি ঝড়িয়ে রাখা পোলাও এর চাল দিয়ে ভালো ভাবে ভেজে নিতে হবে। এইবার পরিমান মতো পানি এড করে রান্না করে নিতে হবে। চাল সিদ্ধ হয়ে এলে এতে রান্না করে রাখা মাংস, সামান্য পেয়াজ বেরেস্তা এবং ২ চা চামচ খাটি ঘি মিশিয়ে ঢেকে রাখবেন। বঅ্যাস এই বিরিয়ানির স্বাদ ও ঘ্রানে আপনি পাগল হতে বাদ্ধ।

ঘিয়ে ভাজা পরোটা

পরোটা তো সবাই তেলে ভেজে খেয়েছেন, কখনও কি ঘিয়ে ভেজে খেয়েছেন?? তেলে ভাজা পরোটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক, কেননা তেলে থাকে প্রচুর পরিমানে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। তাই যতটা সম্ভব তেল এভয়েট করাই উচিত। চলুন এখন ঘিয়ে পরোটা ভেজে আসি।  

ঘি কত প্রকার হয় ও কোন ঘি সবথেকে ভালো ও সুস্বাদু? 

প্রস্তুতপ্রনালী 

ময়দায় চিনি ও নুন দিয়ে ভালোভাবে মাখাতে হবে। এরপর দুধ ও পানি দিয়ে মিশিয়ে ডো বা খামির বানিয়ে তেল মাখিয়ে ১০ মিনিট রেস্টে রাখতে হবে। তারপর রুটি বানিয়ে ঘি দিয়ে ভেজে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ঘিয়ে ভাজা পরোটা। আপনি চাইলে শুকনো রুটি ঘি দিয়ে মাখিয়ে খেতে পারবেন।    

খাসির মাংসের কোলাপুরি 

প্রস্তুতপ্রনালী

কোলাপুরী তৈরির জণ্য প্রথমে খাসির মাংস কে ভালো ভাবে ধুয়ে নিয়ে পানি ঝরিয়ে এর সাথে রসুন বাটা, পেয়াজ বাটা, আদা বাটা, জিরা বাটা, মরিচ গুড়া, লবন, হলুদ গুড়া, ধনিয়া গুড়া, গরম মশলা গুড়া ইত্যাদি ভালো ভাবে মীশিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে।  এইবার একটি  সসপ্যানে ঘি দিয়ে গরম মশলা ফোড়ন দিন। এরপর টমেট কুচি দিয়ে হালকা নেড়ে মাখিয়ে রাখা খাশির মাংশ দিয়ে ভালো ভাবে কষিয়ে রান্না করে করে নিন।  রান্নার সময় পরিমান মতো গরম পানির ব্যবহার করবেন।  মাংস রান্না শেষে একটু পেয়াজ বেরেস্তা এবং ধনিয়া পাতা এড করে নিতে পারেন। 

মনসুর মিষ্টি

প্রথমে ঘি জ্বাল দিয়ে আলাদা রাখতে হবে । এরপর সসপ্যানে চিনি ও পানি দিয়ে জ্বাল দিন, সিরা তৈরি হওয়া পর্যন্ত। অল্প অল্প বেসন দিয়ে নাড়তে হবে কিছুক্ষণ।এবার গরম ঘি থেকে ১ টেবিল চামচ করে বেসনের মধ্য দিয়ে নাড়াচারা করুন ঘন ঘন। একই পদ্ধতিতে ৪ বার ৪ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করুন। এরপর ঢেলে নিয়ে ঠান্ডা হওয়ার পর নিজেস্ব পছন্দ মতো আকৃতিতে কেটে নিন । ওপরে কাজু বাদাম, কিসমিস , থাই বাদাম দিয়ে পরিবেশন করুন। 

পায়েস

পায়েস 

দুধ প্রথমে জ্বাল করে নিতে হবে। তারপর সসপ্যান বা কড়ায়ে ঘি সাথে তেজপাতা ও এলাচ দিয়ে হালকা টেলে বা ভেজে নিয়ে আতব বা সুগন্ধি চাল ঘিয়ের সাথে মিশিয়ে জ্বাল করে নেওয়া দুধের সাথে মিশাতে হবে। হালকা আচে চিনি দিয়ে  চাল টা ফুটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে নামিয়ে  নিতে হবে। সব শেষে কাজু, কিসমিস দিয়ে পরিবেশন করুন। 

ঘিয়ের লাড্ডু 

লাড্ডু ছোট হক বা বড় সবার জন্য পছন্দে খাবার। ছোট বেলার অনেক স্মৃতি জরিত এই লাড্ডুর সাথে। স্নাক্স বা ক্ষুধা নিবারণের জন্য খেয়ে থাকি আর এইটা বানানো খুবই সহজ ও খুব কম সময় লাগে।

বেসণ ভালোভাবে ছাকুনি দিয়ে চেলে নিন। খাবার সোডা ও চাইলে ফুড কালার দিয়ে অল্প অল্প পানি দিয়ে ব্যাটার তৈরি করতে হবে। 

এবার সাদা তেল ও ঘি দিয়ে ব্যাসনের বুন্দি গুলো ভেজে নিতে হবে। একটু হালকা করে ভেজে উঠায় নিতে হবে। অন্য পাত্রে চিনির সিরা তৈরি করে ভাজা বুন্দিয়া ও এলাচ দিয়ে ১ ঘন্টার জন্য ভিজিয়ে রাখতে হবে। অবশেষে ঘি ও গুড়ো দুধ দিয়ে হাতের সাহায্যে গোলাকৃতি করলেই তৈরি হয়ে যাবে স্বাস্থ্যকর ও মজার স্বাদের লাড্ডু। 

উপরিউক্ত আলোচনায় ঘি দিয়ে রান্না করার বিভিন্ন রেসিপি ও খাবারের নাম দেওয়া হয়েছে। আশা করি লেখাটি পরে আপনারা ঘি দিয়ে তৈরি অনেক রেসিপি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.