You are currently viewing আচার খাওয়ার উপকারিতা, প্রকারভেদ ও অতিরিক্ত খাওয়ার সতর্কতা 
আচার খাওয়ার উপকারিতা

আচার খাওয়ার উপকারিতা, প্রকারভেদ ও অতিরিক্ত খাওয়ার সতর্কতা 

আচার শুধু মাত্র মুখরোচক খাবারই নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের নানান স্মৃতি। ছোট বেলায় আচার চুরি করে ধরা খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের আছে। বিভিন্ন সিজনের ফল দিয়ে তৈরি করা হয় টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের হরেক পদের আচার। এসব আচার আমাদের মা চাচীরা নিজের হাতে যত্ন সহকারে তৈরি করতেন। 

সময়ের অভাবে এখন এই সকল আচারের স্বাদ থেকে আমরা প্রায়শ বঞ্চিত হই। আচারের গুনাবলি বলে আসলে শেষ করা যাবে না তবে আমাদের আজকের লেখায় আমরা এমন কিছু আচার খাওয়ার উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি যা না জানলেই নয়। কথা না বারিয়ে চলুন মুল আলোচনায় যাওয়া যাক। 

আচারের প্রকারভেদ

আচার বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আমের আচার, তেঁতুলের আচার, বড়ই আচার, জলপাই আচার। এছাড়াও রয়েছে, রসুনের আচার, গরুর মাংসের আচার, আলু বোখারার আচার ইত্যাদি। এসব আচারের স্বাদ অতুলনীয়।

আচারের প্রকারভেদ

আচার খাওয়ার উপকারিতা

খাঁটি সরিষার তেল ও বিভিন্ন রকম মসলা যোগ করে আচারের স্বাদকে আরও সুস্বাদু করে তোলে। আচার স্বাদে যেমন অনন্য, তেমনি রয়েছে বহুগুণ উপকারিতা। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

হজমশক্তি বাড়ায়

অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার খাওয়া ফলে গ্যাস্ট্রিকের বা অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীতে মাস জুড়ে খেতে হয় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ। এছাড়াও আমরা মনে করি ভারি খাবার খাওয়ার পরে কোমল পানীয় খেলে সহজেই হজম হয়ে যায়। 

কিন্তু এটিও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। সেক্ষেত্রে আমরা টক জাতীয় কিছু খেতে পারি। যেমন- আচার। কারণ আচার তৈরিতে যে সকল উপাদান ও মসলা ব্যবহার করা হয় তা হজমের এনজাইম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ফলে হজর শক্তি বাড়ে ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রুচি বৃদ্ধি করে

অনেক সময় বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে খাবারের প্রতি অরুচি দেখা যায়। ফলে কম খাবার খাওয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। পরবর্তীতে সহজেই দেহে নানান রোগের সংক্রমণ হয়। তাই যাদের রুচির সমস্যা আছে তারা এই আচার খেতে পারেন। এটি রুচি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

খাবারের স্বাদ বাড়াতে

আচার একটি মুখরোচক খাবার যা সাধানত টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। এটি খাবারের স্বাদকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে। খিচুড়ি, গরম ভাত বা পোলাও এর সাথে আচার খাওয়ার মজাই আলাদা।

মরনিং সিকনেস দূর করতে

সকালে ঘুম থেকে উঠলেই শরীরে দুর্বলতা কাজ করে সাথে বমি বমি ভাব পায়। এই সমস্যার দূর করতে নিয়মিত আচার খাওয়া যেতে পারে।

সুস্বাদু আচার খাওয়ার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে

আচার তৈরিতে তেল ও মসলা যেমন- হলুদ, মরিচ, লবণ ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে আচারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট যোগ হয়। ফলে নিয়মিত আচার খেলে মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়। অর্থাৎ আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে মজবুত করে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে

অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন অনেকে। তারা চাইলে নিয়মিত আচার খেতে পারেন। এটি শরীরের চর্বি বার্ন করতে সাহায্য করে থাকে।

রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিসের এক জার্নালের মতে, আচার খেলে শরীরের রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কার্যকরী। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়ক।

লিভার ভালো রাখে

যকৃতের সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আচার। এটি পিত্তরসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রে থাকা জীবাণু সংক্রমণ ঘটাতে পারেনা।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে 

ক্ষতিকর কোলেস্টেরল রক্তে থাকা শর্করা বৃদ্ধি করে যা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগ সৃষ্টির কারণ। আচার রক্তের এই ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে 

আচারে বিদ্যমান আয়রন যা রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ও রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে এবং হার্টের রক্ত সঞ্চালিত হয়। ফলে মানব দেহের হার্ট সুরক্ষিত থাকে।

আচার খাওয়ার সর্তকতা

অতিরিক্ত আচার খাওয়ার ফলে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। নিচে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

খাওয়ার পরিমান 

যেকোনো খাবার যতই উপকারী হোক না কেনো, তা যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি খাওয়া হয় তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সুখকর বয়ে আনবে না। তই সকল ধরনের খাবারই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত । আচার ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। তাই আচার পরিমিত খেতে হবে। বেশি খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যেমন গ্যাস, আলসার, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এবং যারা ডাক্তারের নির্দেশনায় আছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আচার খাবেন।

বাজারের কেনা আচার

বাজারে আচার কিনতে পাওয়া যায়। এসকল আচার খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কারণ আচারের আচারে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে। এতে রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলে ও শরীরে পানি আসে। আচারের প্রচুর পরিমাণে তেল ব্যবহার করা হয়। যা খাওয়ার ফলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। 

এত হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও আচারের মধ্যে থাকা উপাদান কিডনিকে ইরিটেট করে। এবং হজমে সমস্যা তৈরি করে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বাজারের আচার না কিনে, ঘরোয়া তৈরিকৃত আচার খাওয়া উচিত।

আচার খাওয়ার সর্তকতা

কম ক্যালরি সম্পন্ন 

আচারে খুব অল্প পরিমানে ক্যালরি থাকে। অন্যদিকে এটি মুখের রুচি বৃদ্ধি করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যে কারণে আপনি যখন বেশি পরিমানে আচার খাবেন তখন আপনার বেশি বেশি খিদে পাবে। এতে না চাইলেও আপনার দেহের ওজন বেরে যাবে। এই ক্ষেত্রে আপনি আচার খাওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন জাতে অল্প পরিমানে খেতে পারেন। 

খালি পেটে না খাওয়া 

খালি পেটে আচার খাওয়া একটি বদ অভ্যাস। যদিও এই অবস্থায় আচার খেলে অনেক মজা পাওয়া যায় তবে এর অনেক ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। বিশেষ করে পেটে জ্বালাপোড়া, অ্যাসিডিটি, বদ হজম ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই কারণে ছোট থেকে বড় সকল বয়সের জন্য খালি পেটে টক-ঝাল-মিস্টি আচার না খাওয়া উত্তম। আপনি ভরা পেটে অথবা কোন খাবারের সাথে খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই পরিমানের থেকে বেশি খাওয়া উচিত নয়। 

পানি শূন্যতার সৃষ্টি করে

অতিরিক্ত পরিমানে আচার খেলে তা দেহে পানি শূন্যতার সৃষ্টি করে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে আচার খাওয়ার সময় আপনার গলা শুঁকিয়ে আসচে এবং প্রচুর পানি পিপাসা পাচ্ছে। এটি সাধারনত হয় শরীরে যখন পানির অভাব দেখা দেয় এবং সোডিয়ামের মাত্রায় হেরফের হয়। আচার দেহের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করলেও অতিরিক্ত খেলে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। 

গর্ভাবস্থায় 

গর্ভাবস্থায় শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই অনেক ক্ষতিকারক। এই কারণে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সবসময় সতর্ক থাকতে বলে। বিশেষ করে এই সময় আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হয়। শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন হওয়ার কারণে এই সময় টক জাতিয় খাবার খাওয়ার একটি প্রবণতা দেখা দেয়। যদিও পরিমিত মাত্রায় আচার খাওয়া যায় তবে অতিরিক্ত পরিমানে খেলে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। যেমন- 

  • পানি শূন্যতার সৃষ্টি হয় 
  • অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক চাপ তৈরি হয়
  • কোস্টকাথিন্নতার সৃষ্টি হয় 
  • দেহে সোডিয়ামের মাত্রায় হেরফের হয় 
  • আচারে থাকা লিস্টারিয়া ব্যাকটেরিয়া গর্ভাবস্থায় সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে
  • ওজন বৃদ্ধি করে

এগুলো বাদেও গর্ভাবস্থায় আচার খেলে অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

উপরিউক্ত আলোচনায় আচার কত প্রকার, এর উপকারিতা ও অতিরিক্ত আচার খাওয়ার সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ মুক্ত আচার পেতে আমাদের হাতে তৈরি আচার সংরহ দেখতে পারেন। আশাকরি এই টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের আচার গুলো আপনার রুচি বৃদ্ধি করার সাথে সাথে মনের ভেতরে অনাবিল আনন্দের সৃষ্টি করবে। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.