You are currently viewing লিচু ফুলের মধু উপকারিতা, চেনার উপায় ও কিভাবে খাবেন?

লিচু ফুলের মধু উপকারিতা, চেনার উপায় ও কিভাবে খাবেন?

লিচু অনেক সুস্বাদু ও টক মিষ্টি ফল। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এই ফল সব থেকে বেশি উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে দিনাজপুর অঞ্চলে সব থেকে বেশি লিচুর আবাদ হয়। লিচু যেমন খেতে অনেক সুস্বাদু তেমনি এর ফুল থেকে তৈরি হওয়া মধু স্বাদে গুনে অনন্য। 

অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি এই মধু পুষ্টিগুণ সম্পন্না যা দেহের অনেক উপকার করে। নিচে লিচু ফুলের মধুর উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, চেনার উপায় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

লিচু ফুলের মধু উপকারিতা

মধু সৃষ্টিকর্তার একটি অনবদ্য সৃষ্টি। প্রকৃতিতে পাওয়া সম্ভব এমন সকল ধরনের পুষ্টিগুণের সমস্থি হলো মধু। বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশের সাথে প্রাকৃতিক ভাবে মধু উৎপাদন হওয়ার এক বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এই কারণে এই অঞ্চলে বিভিন্ন মৌসুমি ফুলের মধু পাওয়া যায়। 

বাংলাদেশে মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে গরম পরা শুরু হয় এবং এই সময় লিচুর মৌসুম শুরু হয়। এই লিচুর ফুল থেকে পাওয়া মধু অনেক উৎকৃষ্ট মানের হয়ে থাকে। তাছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যা দেহ ও মন সুস্থ রাখে। নিচে লিচু ফুলের মধুর উপকারিতা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

অনিদ্রা দূর করেঃ অনিদ্রা একটি মনস্তাত্ত্বিক রোগ। এটি একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন নষ্ট করে দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই সমস্যা দূর করার অনেক পদ্ধতি থাকলেও প্রাকৃতিক পদ্ধতি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই অনেক ভালো কাজ করে। লিচু ফুলের মধুতে থাকা পুষ্টি উপাদান মানুষের শরীরে সেরেটোনিন ও মেলাটোনিন উৎপাদন করতে সহায়তা করে। এই দুইটি উপাদান একজন মানুষের অবসাদ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে মনের ফুর্তি বৃদ্ধি পায় যা অনিদ্রা দূর করে।  

ঠান্ডা ও কফ দূর করেঃ ঠান্ডা এবং কফ অনেক মারাত্মক একটি সমস্যা। বিশেষ করে বয়স্ক ও ছোট বাচ্চারা এই সমস্যায় সব থেকে বেশি ভুগে থাকে। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় প্রতি বছর শিত আসলে মানুষের মধ্যে এই সমস্যা বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান হল লিচু ফুলের মধু। এই মধুতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরী উপাদান যা সকল ধরনের ঠান্ডা, কফ, সর্দি, বুকের প্রদাহ, হাড়জোড়ের প্রদাহ ইত্যাদি দূর করতে সহায়তা করে। 

হাড় ও দাঁত মজবুত করেঃ দাঁত ও হাড়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে লিচু ফুলের মধু অনেক ভালো কাজ করে। কারণ এই মধুতে পরিমাণ মত ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এই উপাদান গুলো হাড় মজবুত করার পাশাপাশি দাঁত সুগঠিত করে ও মাড়ির সুসাথ নিশ্চিত করে। 

ত্বকের যত্ন নেয়ঃ ত্বকের যত্নে লিচু ফুলের মধু প্রাকৃতিকভাবে অনেক ভালো কাজ করে। নিয়মিত লিচু ফুলের মধু খেলে অথবা ত্বকে মাখলে ব্রণ,  একনি, একজিমার সাথে সাথে তেল চিটচিটে ভাব এবং ত্বকের রুক্ষতা পুরোপুরিভাবে দূর করতে সহায়তা করে। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ লিচু ফুলের মধু প্রকৃতি থেকে সরাসরি পাওয়া যায়। যেখানে কোন প্রকারের কেমিক্যাল সংমিশ্রণ থাকে না। এছাড়া এই মধুতে নির্দিষ্ট পরিমাণে ফেনোলিক অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিএনফ্ল্যেমেটরী ইত্যাদি উপকারী উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলো থাকার ফলে মানবদেহের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হওয়ার পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের সমস্যা দূর হয়। 

অ্যান্টিআক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ লিচু ফুলের মধুতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিআক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো দেহের মেটাবোলিজম শক্তিশালী করার পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। সর্বোপরি লিচু ফুলের মধু খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি অনেক উপকারী বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। 

লিচু ফুলের মধু চেনার উপায় – Litchi Flower Honey

লিচু ফুলের মধু চেনার উপায়

লিচু ফুলের মধু ঘন, পাতলা ও মাঝারি ঘন এই তিন অবস্থাতেই পাওয়া যায়। সাধারণত এই মধুর রং ঘনত্বের উপর নির্ভর করে হলুদ, হালকা হলুদ, ফ্যাকাশে সোনা, অ্যাম্বার ইত্যাদি রঙের হয়ে থাকে। এখানে মধুর রং অনেকগুলো বিষয় যেমন মৌসুম, নেকটার কাউন্ট, খামারি, প্রাকৃতিক ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। 

এতে বিভিন্ন এনজাইম থাকার কারণে লিচু ফুলের মধুতে ফেনা হতে পারে অথবা ঝাঁকি দিলে সাদা ফেনার আস্তরণ পরতে পারে। অনেক সময় পাত্রে রাখলে এই মধু থেকে হালকা পরিমাণ গ্যাস তৈরি হতে পারে তবে সেখানে চিন্তার কোন বিষয় নেই। 

খাঁটি মধু থেকে অনেক সুন্দর লিচুর সুগন্ধ আসার পাশাপাশি এটি খেতে অনেক মজা লাগে। অন্যদিকে, শীতকালে খাঁটি লিচুর মধু হালকা অথবা পুরোপুরি জমে যেতে পারে। অনেকে মনে করে জমে গেলে মনে হয় তাতে চিনি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন খাঁটি মধু শীতকালে কিঞ্চিৎ অথবা অনেকাংশ জমে যায়। 

লিচু ফুলের মধুতে যে সকল পুষ্টি উপাদান থাকে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মিনারেল, এনজাইম, ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, অল্প পরিমাণে ভিটামিন সি, থায়ামিন, নিয়াসিন,  শর্করা, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ। 

এই সকল উপাদান সমৃদ্ধ মধুর pH মান যদি ৩.৪ থেকে ৬.১ এর মধ্যে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে এটি পিওর অন্যথায় তাতে ভেজাল মেশানো আছে। যাইহোক, আমরা বাজারে দুই ধরনের মধু দেখতে পাই। এদের মধ্যে প্রাকৃতিক মধুর দাম বেশি কারণ এটি সচরাচর পাওয়া যায় না। অন্যদিকে খামারি দ্বারা সংরক্ষিত মধুর মান একটু কম হওয়ায় তা কম দামে বিক্রি করা হয়। 

লিচু ফুলের মধু কি তেতো হয়? 

সাধারণত অনেকেই এই অভিযোগ করেন যে লিচু ফুলের মধুতে একটি তেতো ভাব আছে। আসলে কোন কোন ক্ষেত্রে নিম্ন মানের ভেজাল যুক্ত তৃতীয় গ্রেডের লিচু ফুলের মধু খেতে হালকা তেতো লাগে। যদিও খাওয়া চলাকালীন কোন পার্থক্য বোঝা না গেলেও খাওয়ার পর গলায় হালকা তেতো ভাব লাগতে পারে। তবে বি গ্রেডের মধ্যেও হালকা তেতো ভাব থাকে যা এ গ্রেডের মধুতে একটুও থাকে না। অর্থাৎ যখন মধু কিনতে যাবেন তখন এই সকল বিষয়ে ভালো করে খেয়াল করবেন। না হলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। 

লিচু ফুলের মধু কিভাবে খাবেন?

যে কোনো মধু সকালে এবং রাতে উভয় সময় খাওয়া যায়। তবে সকালে খালি পেতে এবং রাতে খাওয়ার ১ ঘণ্টা পর মধু খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। খালি মধু খাওয়ার পাশাপাশি তাতে যদি বিভিন্ন বাদামসহ ড্রাই ফুড যোগ করা যায় তবে উক্ত মধুর পুষ্টিগুণ আরও বৃদ্ধি পায়। 

লিচু ফুলের মধু রুটির সাথে, পায়েস রান্না করে, পানীয় তৈরি করে অথবা সরাসরি খাওয়া যায়। অনেকেই অন্য খাবারের সাথে এটি গ্রহণ করে আবার কেউ কেউ রুটিন মোতাবেক সকালে এবং রাতে খায়। যে যেভাবে ইচ্ছা খেতে পারবে এবং এতে পুষ্টিগুণের কোনো হেরফের হবে না।  

কোন মধু সবচেয়ে ভালো?

কোন মধু সবচেয়ে ভালো?

কোন মধু সব থেকে ভালো সে সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে বলতে হয় যে সকল খাঁটি মধুই ভালো। তবে এদের মধ্যে কিছু মতভেদ আছে। সাধারণত বাংলাদেশে সুন্দরবনের বিশেষ মধু খলিশা ফুলের মধুকে সব থেকে ভালো ও সম্মানের স্থান দেওয়া হয়েছে। 

ধারণা করা হয় এই ফুলের মধু সব থেকে বেশি সুঘ্রাণ যুক্ত এবং সুস্বাদু। তবে আমাদের দেশে অনেক ধরনের মৌসুমি ফুলের মধু পাওয়া যায় যা পুষ্টিগুণ, স্বাদ এবং গন্ধে অতুলনীয়। এই সব কিছু বিবেচনা করলে দেখা যাবে এই মতভেদের বাইরে প্রকৃতিতে পাওয়া সকল ধরনের খাঁটি মধু হচ্ছে ভালো মধু। 

উপরিউক্ত আলোচনায় লিচু ফুলের মধু কি, কীভাবে খায়, চেনার উপায় সহ এই মধু খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যাবে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে যে সকল মৌসুমি মধু পাওয়া যায় তাদের মধ্যে লিচু ফুলের মধু অন্যতম। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.