You are currently viewing জ্বর সর্দি হলে কি খাওয়া উচিৎ এবং কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন
জ্বর সর্দি হলে কি খাওয়া উচিৎ

জ্বর সর্দি হলে কি খাওয়া উচিৎ এবং কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন

জ্বর ও সর্দি – এমন দুটি অসুস্থতা যা প্রায়শই আমাদের জীবনে আসে-যায়। এই সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি যখন আমাদের আক্রমণ করে, তখন আমরা প্রায়শই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি যে জ্বর সর্দি হলে কি খাওয়া উচিৎ আর কি এড়িয়ে চলা দরকার। সঠিক খাবার নির্বাচন শুধু আমাদের সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে না, বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করতে পারে। আর এর ফলে পরবর্তীতে জ্বর সর্দির মত অসুখ সহজে আঘাত হানতে পারে না। 

এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব জ্বর ও সর্দির সময় কোন খাবারগুলি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে এবং কোনগুলি এড়িয়ে চলা উচিত। আমাদের লক্ষ্য হল আপনাকে এমন তথ্য প্রদান করা যা আপনাকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে এবং আপনার সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখবে।

জ্বর সর্দি হলে কি খাওয়া উচিৎ?

জ্বর এবং সর্দি হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, তাই এই সময়ে সঠিক খাবার গ্রহণ করা খুবই জরুরি। নিচে এমন কিছু খাবারের বর্ণনা দেয়া হলো যেগুলো গ্রহণ করলে আপনার জ্বর সর্দি দ্রুত সেরে যাবে এবং পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বহুগুণে বেড়ে যাবে বলে আশা করা যায়। 

পানি

পানির প্রয়োজনীয়তা জ্বর এবং সর্দির সময় আরো বৃদ্ধি পায়। শরীরে পানির অভাব হলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। গরম পানি গলা এবং নাকের ভেতরের মিউকাস পাতলা করে দেয়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসকে সহজ করে তোলে। এছাড়া, পানি শরীরের কোষগুলোকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে এবং রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখে। নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে শরীর দ্রুত সুস্থ হতে পারে।

ডাবের পানি

ডাবের পানি

ডাবের পানি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট এবং মিনারেলে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। জ্বর এবং সর্দির সময় শরীর ইলেক্ট্রোলাইটস হারায়, যা ডাবের পানির মাধ্যমে সহজেই পূরণ করা যায়। এটি অতি সহজে হজম হয় এবং গ্লুকোজের প্রাকৃতিক উৎস হওয়ায় এটি শরীরকে দ্রুত এনার্জি প্রদান করে। ডাবের পানিতে থাকা সাইটোকাইনিনস শরীরের কোষগুলির বার্ধক্য রোধ করে এবং ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।

গরম স্যুপ

গরম স্যুপ, বিশেষ করে মুরগির স্যুপ, দীর্ঘদিন ধরে জ্বর এবং সর্দির জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুরগির স্যুপে থাকা প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, এবং মিনারেলস শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। গরম স্যুপ খেলে গলা এবং নাকের মিউকাস পাতলা হয়ে যায়, যা শ্বাস নিতে সহজ করে তোলে। এছাড়া, স্যুপের গরম ধোঁয়া গলা এবং শ্বাসনালীকে আরাম দেয়। এতে থাকা সবজিগুলো ভিটামিন, মিনারেল, এবং ফাইবার সরবরাহ করে, যা শরীরকে শক্তিশালী এবং রোগ প্রতিরোধী করে তোলে।

হারবাল চা

হারবাল চা, বিশেষ করে আদা, তুলসী, লেবু, এবং মধু দিয়ে তৈরি চা, জ্বর এবং সর্দির উপসর্গ হ্রাস করতে সাহায্য করে। আদা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে, যা শরীরের প্রদাহ কমায়। তুলসী জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এবং লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মধু গলা এবং শ্বাসনালীকে শান্ত করে, যার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা কমে যায়। হারবাল চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল

ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমলা, মাল্টা, লেবু, এবং আমলকি হলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, যা সর্দি এবং জ্বরের সময় শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক। ভিটামিন সি সাদা রক্তকণিকার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা শরীরের সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, এটি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

ব্রকলি

ব্রকলি হলো এক ধরনের সবুজ সবজি, যা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। ব্রকলি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস থাকে যা শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক। ব্রকলি সহজে হজমযোগ্য এবং এটি খেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।

পালং শাক

পালং শাক একটি সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, যা ভিটামিন সি, আয়রন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পালং শাক খেলে শরীরের এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় থাকে, যা জ্বরের সময় বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। এতে থাকা ভিটামিন এ শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর। পালং শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।

গাজর

গাজর হলো একটি পুষ্টিকর সবজি, যা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং বিটা-ক্যারোটিন ধারণ করে। এই উপাদানগুলো শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক এবং চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। গাজর খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে, যা জ্বর এবং সর্দির সময় শরীরের প্রদাহ কমায়। গাজর রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং শরীরের কোষগুলিকে সঠিকভাবে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে, যা শরীরকে সুস্থ করে তোলে।

জ্বর সর্দি হলে কি খাওয়া যাবে না?

 জ্বর সর্দি হলে কি খাওয়া যাবে না?

জ্বর ও সর্দির সময় কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এগুলো শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে এবং অসুস্থতার সময় উপসর্গগুলো আরও খারাপ করতে পারে। নিচে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা জ্বর ও সর্দির সময় এড়িয়ে চলা উচিত:

দুগ্ধজাত পণ্য

দুধ, চিজ, দই ইত্যাদি দুগ্ধজাত পণ্য সর্দি এবং কাশির উপসর্গ বাড়াতে পারে। এসব পণ্য গলা এবং নাকের মিউকাস ঘন করে দিতে পারে, যা শ্বাস নিতে কষ্ট বাড়ায়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই উপকারী হতে পারে, তবে শরীরের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে এটি খাওয়া উচিত।

চিনি সমৃদ্ধ খাবার

মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন কেক, পেস্ট্রি এবং চকলেট, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে। চিনি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরের প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে, যা সর্দি এবং জ্বরের সময় শরীরের পরিস্থিতি খারাপ করতে পারে।

ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার

ভাজা এবং তৈলাক্ত খাবার, যেমন ফাস্ট ফুড, চিপস এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, শরীরের জন্য হজম করা কঠিন এবং এগুলো শরীরের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া, এসব খাবারে থাকা ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

সুস্থাস্থ্যের জন্য দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা 

মসলাদার খাবার

মসলাদার খাবার গলা এবং শ্বাসনালীকে আরও বেশি জ্বালাপোড়া করতে পারে এবং সর্দির উপসর্গকে বাড়িয়ে দিতে পারে। যাদের সংবেদনশীল গলা রয়েছে, তাদের জন্য মসলাদার খাবার খেলে গলাব্যথা এবং কাশি বেড়ে যেতে পারে।

ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয়

আইসক্রিম, ঠাণ্ডা পানীয় এবং রেফ্রিজারেটেড খাবার গলা এবং নাকের মিউকাস ঘন করে দিতে পারে, যা শ্বাস নেওয়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ঠাণ্ডা খাবার গলার সংক্রমণও বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

প্রসেসড এবং প্রিজারভেটিভ সমৃদ্ধ খাবার

প্রসেসড ফুড, যেমন প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, এবং প্রিজারভেটিভ সমৃদ্ধ খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এসব খাবারে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম এবং কেমিক্যাল শরীরের প্রদাহ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে। জ্বর ও সর্দির সময় এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এসব খাবার আপনার অসুস্থতার উপসর্গ আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

উপসংহার

জ্বর সর্দি হলে কি খাওয়া উচিৎ তা জানার মাধ্যমে আমরা বুঝলাম যে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পুষ্টিকর, সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করা এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে। 

মনে রাখবেন, প্রতিটি ব্যক্তির শরীর আলাদা, তাই নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে এবং নিজের যত্ন নিয়ে, আপনি জ্বর ও সর্দির মত সাধারণ অসুস্থতাগুলি থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে পারেন।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.