You are currently viewing বিশুদ্ধ পানি পান করার গুরুত্ব ও পানি বিশুদ্ধ করার উপায়
পানি বিশুদ্ধ করার উপায়

বিশুদ্ধ পানি পান করার গুরুত্ব ও পানি বিশুদ্ধ করার উপায়

পানির ওপর নাম জীবন। পানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারিনা। তবে বিশুদ্ধ পানির অভাবে নানা রোগবালাই দেখা যায়। মূলত দূষিত পানি পান করার ফলে পানিবাহিত রোগ যেমন কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস ইত্যাদি হয়ে থাকে। এসব পানিবাহিত রোগের নামের সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। ছোট বেলার পাঠ্য বইয়ে আমরা প্রায় সকলেই পড়েছি।

পানিবাহিত মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ করতে সঠিক নিয়মে পানি বিশুদ্ধ করে পানি পান করা একান্ত জরুরি। পানি কিভাবে বিশুদ্ধ করতে হয় তা কম বেশি সকলের জানা আছে। আজকের আর্টিকেলে পানি বিশুদ্ধ করার সঠিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন যেনে নেওয়া যাক- 

পানি বিশুদ্ধকরণ 

যে প্রকিয়ার মাধ্যমে পানি থেকে রাসায়নিক পদার্থ, জৈব সংক্রামক পদার্থ ও ক্ষতিকর গ্যাসীয় পদার্থ দূর করা হয় তাকে পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া বলে। এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য পানিকে বিশুদ্ধ করা। আবার পানি বিশুদ্ধকরণের কয়েক ধরনের প্রক্রিয়া রয়েছে। যেমন জৈব প্রক্রিয়া, শারীরিক প্রক্রিয়া, রাসায়িনিক প্রক্রিয়া ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়ারগুলোর মাধ্যমে পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী, ভাইরাস, ছত্রাকগুলো জীবিত থাকেনা। ফলে এই পানি পান করলে রোগ হওয়ার আশংক্ষা থাকেনা।

পানি বিশুদ্ধ করার উপায় 

পানি বিশুদ্ধকরণ

আপনি কি জানেন পানি দূষণের অন্যতম একটি কারণ হলো পানি সরবারহ পাইপলাইন। বর্তমানে শহরের প্রতিটি বাড়িতে পাইপলাইন রয়েছে। আর এই পাইপলাইন পুরানো হয়ে গেলে বা লিকেজ হয়ে গেলে পানি দূষিত হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, বাড়িতে থাকা পানির ট্যাংকগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। না হলে পানিতে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধে। আর দিনের পর দিন এই দূষিত পানি পান করার ফলে আমরা অসুস্থ হয়ে পরি। তাই পানি জীবাণুমুক্ত করে পান করা উচিত। চলুন পানি বিশুদ্ধ করার উপায়সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো- 

পানি ফুটানো 

সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো পানি ফুটিয়ে নেওয়া। একটি পাত্রে পানি নিয়ে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০ মিনিট ধরে ফুটাতে হবে। তারপরে ফুটানো হয়ে গেলে পানি ঠান্ডা করে পরিষ্কার পাত্রে ঢেকে রেখে দিতে হবে। বেশিদিন ফুটন্ত পানি পাত্রে রাখা যাবেনা। এতে করে আবার জীবানু পানিতে আক্রমণ করতে পারে। 

জিরা পানি কেন খাবেন- জেনে নিন কিছু অসাধারণ গুণ!

তাই প্রতিদিনের ফুটানো পানি রেখে না দিয়ে পান করাই উত্তম। পানি বিশুদ্ধকরণের এই সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে পানিতে থাকা পরজীবী, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার ডিম ও লার্ভাসহ সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। পানিতে থাকা রাসায়নিক উপাদান নষ্ট হয়ে যায়, এবং খনিজ উপাদানের কারণে ফুটানো পানি দেখতে ঘোলাটে লাগতে পারে। তাই পানি ফুটিয়ে ছেকে নেওয়া যেতে পারে। 

ফিল্টার বা ছাকন 

পানি বিশুদ্ধকরণের আর একটি উপায় হলো ফিল্টার বা ছাকন। ফিল্টার করলে পানিতে থাকা সকল জীবাণু দূর হয়ে যায়। এমনকি পানির স্বাদ ও গন্ধকে উন্নত করতে সাহায্য করে। যেহেতু, পানির সকল খনিজ লবন দূরীভূত হয়না। তাই বলা যায়, অন্যান্য পদ্ধতির চাইতে পানি ফিল্টার পদ্ধতি বেশ স্বাস্থ্যকর।

এছাড়াও পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ফিল্টার সকলের কাছেই বেশ জনপ্রিয়। অনেকের বাসায় গ্যাসের সংকট থাকে, তাদের জন্য ফিল্টারিং করা সহজ একটি উপায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার পাওয়া যায়। যেই ফিল্টার ব্যবহার করুন না কেনো, অবশ্যই নিয়মিতি ফিল্টারটি পরিষ্কার করতে হবে। 

ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং 

বহুল ব্যবহুত একটি রাসয়নিক হলো ক্লোরিন ট্যাবলেট যা পানির জীবাণুকে ধ্বংস করে ফেলে। এই পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধ করা যদিও নিরাপদ নয়। দুযোর্গপূর্ণ সময়কালীন পানি ফুটানো বা ফিল্টার করার কোনো উপায় থাকেনা। তাই জরুরী অবস্থায় এই ট্যাবলেটের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা যেতে পারে। এটি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সতেচন হতে হবে। 

অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে। সাধারণত তিন লিটার পানির মধ্যে একটি ট্যাবলেট দিলেই যথেষ্ট। যদিও এই পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধ করলে পানিতে একটু গন্ধ পাওয়া যায়। তবে খোলা জায়গায় রাখলে বা পরিষ্কার কাঠি চামুচ দিয়ে নাড়ানাড়া করলে গন্ধটি বাাতাসের সাথে মিশে যায়। এটি ব্যবহারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। 

ফিটকিরি বা পটাশ

সোডিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের একটি যৌগ লবণকে ফিককিরি বলা হয়। আর পটাশ হচ্ছে ফিককিরির রাসায়নিক নাম। মূলত এটি জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। পানি পরিশোধিত করার অন্যতম একটি উপায় হলো ফিটকিরির ব্যবহার। একটি পানির কলসিতে সামান্য পরিমাণে ফিটকিটি মিশিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রেখে দিলে পানির ভেতরে থাকা ময়লাগুলো তলানিতে জমা হয়। এক্ষেত্রে উপরের পানি সংগ্রহ করে তলানির পানি ফেলে দিতে হবে। 

সৌর পদ্ধতি 

দূষিত পানিকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য তীব্র সূর্যের তাপ ও আলোতে রেখে দিতে হবে। যেখানে একেবারেরই পানি পরিশোধিত করার কোনো উপায় থাকবে না। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় এই সৌর পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। অর্থাৎ বিশেষ জরুরি অবস্থায় পানিবাহিত রোগ ঠেকাতে এই পদ্ধতি বেশ কার্যকরী। এতে পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যাবে। 

আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি 

অতিবেগুণি বিকিরণ পদ্ধতির মাধ্যমে পানি জীবাণুমুক্ত করা যায়। বাজারের আধুনিক ফিল্টার এই প্রযুক্তি রয়েছে। তবে এটি ঘোলা পানিতে এই পদ্ধতি খুব একটা কার্যকর হবে না। শুধু মাত্র পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানির জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পানিতে থাকা সকল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। যদিও এই পদ্ধতি কিছুটা ব্যয়বহুলও বটে। 

আয়োডিন 

পানি পরিশোধিত করার আরও একটি উপায় হলো আয়োডিন। এই পদ্ধতিতে পানি ও আয়োডিনের মাত্রা সঠিক হতে হবে। অন্যথায় এই পানি পান করলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে দক্ষ ব্যক্তি দ্বারা এই কাজটি করাতে হবে। সাধারণত এক লিটার পানির মধ্যে দুই শতাংশ আয়োডিনের দ্রবণ মিশিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিতে হবে। তাহলেই পানিতে থাকা জীবণু ধ্বংস হয়ে পানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। 

তাপপ্রবাহে সুস্থ থাকতে খেতে পারেন ৫/১০ খাবার

আমাদের দেশে প্রতিবছরই ভয়াবহ বন্যা দেখা যায়। বন্যাজনিত এলাকায় পানি চারিদিকে প্লাবিত হতে থাকে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা যায়। বন্যায় আটকে থাকা মানুষগুলো কোনো উপায় না পেয়ে দূষিত পানি পান করে থাকে। এতে করে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। তাই এই পরিস্থিতিতে দূষিত পানিকে জীবানূমুক্ত করার কয়েকটি উপায় আমাদের সকলের জেনে রাখা প্রয়োজন। ফিটকিরি, ক্লোরিন ট্যাবলেট, আয়োডিন, হ্যালোজেন, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, সূর্যের আলোর ব্যবহার। 

বিশুদ্ধ পানি পান করার প্রয়োজনীতা ও গুরুত্ব

বিশুদ্ধ পানি পান করার প্রয়োজনীতা ও গুরুত্ব

বিশুদ্ধ পানি পান করা আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। আমাদের শরীরের বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া, বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি ও সুস্থ্য থাকতে বিশুদ্ধ পানি পান করা অত্যন্ত প্রয়োজন। চলূন সংক্ষেপে কিছু প্রয়োজনীতা জেনে নেওয়া যাক – 

  • আমাদের শরীরের  তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। 
  • খাবার হজম হতে সহায়ক। 
  • ত্বক সুস্থ্য ও উজ্জ্বল করতে উপকারী। 
  • আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শোষন করে থাকে। 
  • দেহের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • পানিবাহিত রোগ করে রক্ষা পাওয়া যায়। 

উপসংহার 

বিশুদ্ধ পানি পান করাটা একান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ পরিশোধিত পানি পান করলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। তাই পানি পান করার ক্ষেত্রে অব্যশ্যই সর্তক হতে হবে। সবসময় বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। পানি বিশুদ্ধ করার উপায়গুলো মধ্যে আপনার কাছে যেটা সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি মনে হবে। সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে খুব সহজেই পানিকে জীবাণুুমুক্ত করে ফেলতে পারেন। নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি পাান করার অভ্যাস করুন, নিজের পরিবার সদস্যদেরকে অভ্যস্ত করার। পরিবারকে নিয়ে সুস্থ থাকুন।  

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.