You are currently viewing রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা – সয়াবিন তেলের বিকল্প

রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা – সয়াবিন তেলের বিকল্প

আমরা এখনো বিভিন্ন ধরনের ভর্তা তৈরীতে, চুলের যত্নে ও সর্দি-কাশি ভালো করতে গায়ে ব্যবহার করে থাকি। তবে আমরা অনেকেই জানি না যে, রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। আবার অনেকেই রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত না। তো চলুন আজকে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে। এই তেলের সুগন্ধ ও পুষ্টিগুন রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি রান্নার গুনাগুন বজায় রাখে। এছাড়া সরিষার তেলের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরের নানা উপকার করে থাকে। এজন্য আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা রান্নায় নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

সয়াবিন তেল বাজারে আসার পর থেকে অনেকেই রান্নার জন্য খাটি সরিষার তেলের উপকারিতার কথা ভুলে গেছি। অথচ সরিষার তেলই এক সময় আমাদের রান্নার প্রধান উপকরণ ছিল। আগের দিনের ইলিশ মাছ বাজার থেকে এনে সরিষার তেলে ভাজি এবং সরিষা ইলিশ রান্নার আসল স্বাদ আমরা ভুলে গেছি। কারন আমরা সয়াবিন তেলের রান্নার প্রতি এতটাই অভ্যস্থ হয়ে গেছি যা আদি পুষ্টিকর সরিষার তেলের কথা ভুলে গেছি। 

এই তেলের কথা ভাবলেই স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে বাংলার চিরাচরিত চিত্র, তেঁতুল কাঠের ঘানিতে দুইটা গরু বাধা তারা ঘুরছে চারদিকে আর সরিষা থেকে তেল এই দিক থেকে বের হচ্ছে। ভর্তা, ভাজি, ভুনা, বিরিয়ানী, তরকারী যাই হোক না কেন এই তেল দিয়ে রান্না করা নিত্যদিনের চাহিদা ছিল। প্রাচীনকাল থেকে এই তেল তৈরি হত ঘানিতে। কিন্তু বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঘানি ভাঙা আসল খাটি সেই আদি সরিষার তেল।

বাজারে গেলেই বা বাসায় বসে রান্নার ভোজ্য তেল হিসেবে কোন তেল কিনব সেটা নিয়ে বরাবরই অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে থাকি। তেলের কথা ভাবতে গেলেই প্রথমেই মাথায় আসে, যে তেল কিনছি সেগুলো কি আসলেই খাঁটি? খাবারের টেষ্ট সহ কতটা পুষ্টিগুন বজায় থাকবে? এমন প্রশ্ন এবং কনফিউশনের মাঝে যদি আপনিও থাকেন তবে আজ আমরা একটি সঠিক এবং পারমানেট সিদ্ধান্তে আসতে পারব স্বাস্থ্যসম্মত তেল নির্বাচনে। 

রান্নার জন্য খাটি সরিষার তেলের উপকারিতা

রান্নার জন্য খাটি সরিষার তেলের উপকারিতা

রান্নায় যে কোন খাবার তৈরিতে প্রধান ও নিরাপদ উপকারি উপকরন হিসাবে আপনি নিশ্চিন্তে ঘানিভাঙ্গা সরিষার তেল (Mustard Oil) ব্যবহার করতে পারেন। কারন অন্যান্য তেল যেমন সয়াবিন, পামওয়েল এর তুলনায় সরিষার তেল আপনার স্বাস্থ্য এর জন্য উপকারী বেশী হবে। বিশেষ করে রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক।

সরিষার তেল দিয়ে প্রতিদিনের রান্না করলে কী উপকার হয়?

  • বিশ্বে প্রতিবছর হৃদরোগজনিত জটিলতায় অনেক মানুষ মারা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার তেলে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • অস্বাস্থ্যকর তেল হজমে সমস্যা, পেটের পীড়া বাড়ায়। এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্য সহ অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এতে দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হতে হয়। কয়েক দশক আগের কথা চিন্তা করলেও দেখা যায় মানুষ রান্নার তেল হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহার করতো। বিভিন্ন ভোজ্য তেলের উপর একটি তুলনামূলক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরিষার তেল ৭০ শতাংশ হৃৎপিণ্ড–সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়, যা হৃদ্​রোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।
  • সরিষার তেল হজম ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অনেক স্বাস্থ্যকর ও উপকারি। এই তেলে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যারা পেটের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন তারা প্রতিদিনের রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে অনেক ভালো উপকার পাবেন। এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না বরং রক্তে চর্বির মাত্রাও হ্রাস করে। 
  • ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়ার মতো রোগের প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে এই তেল। কারন সরিষার তেল ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। যে কারনে তেলজনিত পেটের পীড়া কমায়। 
  • সরিষার তেলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কমায়। 
  • সরিষার তেলে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়।
  • সরিষার তেল শরীরের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
  •  গ্লুকোসিনোলেটের উপস্থিতির কারণে সরিষার তেলে ক্যানসার বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকে। তাই উপাদানগুলো কলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের মতো ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
  • রান্নায় প্রতি দিন এই তেল ব্যবহার করলে শতকরা ৫০% টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক টাই কমে যায়।
  • সরিষার তেলে থাকা অ্যালিল আইসোথিয়োকানেট উপাদান মূত্রাশয়ে ক্যান্সার ৩৪% হবার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।
  • অ্যান্টিবমাইক্রোবিয়াল উপাদান সরিষার তেলে থাকার কারনে হজমশক্তি বাড়ায় ও দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
  • আমাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, রান্নায় সরিষার তেল খেলে কি সত্যিই ওজন কমে? সরিষার তেলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকে তাই ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সরিষার তেলে রিবোফ্ল্যাভিন (Riboflavin) ও নায়াসিন (Niacin) উপাদান থাকার কারনে শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
  • এই তেলে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। সেই সঙ্গে মনোযোগ বৃদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • খাটি সরিষার তেল খাবারের স্বাদ যেমন বাড়িয়ে দেয় তেমনি খাবার অনেক সুস্বাদু হয়।
  • অনেকেই মনে করে থাকেন সরিষার তেল কী ত্বকের জন্য উপকারী? আসলে সরিষার তেলে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকে যা  আমাদের ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। যা ত্বকের জন্য উপকারী হিসাবে কাজ করে।
  • অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ছত্রাক প্রতিরোধক উপাদান এই তেলে বিদ্যমান থাকায় রোগ সংক্রমনে রক্ষা করে। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ করবে সরিষার তেল। যা আমাদের জন্য অনেক জরুরী।

আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গেই যেন মিশে আছে প্রাকৃতিক সরিষা থেকে প্রাপ্ত খাটি ঘানিতে ভাংগা সরিষার তেল। প্রতিদিন এই তেল গ্রহণের অন্যতম উপায় হচ্ছে ভোজ্য তেল হিসেবে স্বাস্থ্যকর খাটি সরিষার তেল কেই নির্বাচিত করা। কালের স্রোতে ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার এই ঐতিহ্য। বাংলার প্রচলিত সেই খাঁটি সরিষার তেল রান্নায় ব্যবহার করে রোগ মুক্ত ও সুস্থ থাকতে পারেন। বাঙালীর সেই চিরায়ত ঐতিহ্য এবং আগের দিনের সেই খাবারের  স্বাদ ও ঘ্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারেন বিন্নি ফুডের ঘানিতে ভাংগা খাটি সরিষার তেল রান্নায় ব্যবহার করে।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.