You are currently viewing ফ্রিজে খাবার ভালো রাখবেন কীভাবে ও প্রয়োজনীয় টিপস
ফ্রিজে খাবার ভালো রাখবেন কীভাবে

ফ্রিজে খাবার ভালো রাখবেন কীভাবে ও প্রয়োজনীয় টিপস

প্রতিদিনের ব্যস্ততা ও সময়ের স্বল্পতার কারণে আমরা মাসের বাজার করে রাখি। রোজ রোজ বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কেনার সময় এখন কারোরই নেই। তাই সময় বাঁচানোর জন্য কাচা বাজার মাস জুড়ে সংক্ষণের অন্যতম একটি উপায় হলো ফ্রিজ। বর্তমানে সকলের ঘরে ফ্রিজ রয়েছে। যুগের সাথে সাথে ফ্রিজ আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। 

বিশেষ করে কর্মজীবি মানুষজন রোজকার রান্নার ঝক্কি এড়াতে বেশি পরিমাণে রান্না করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন। এতে কিছুটা হলেও তাদের সময় বেঁচে যায়। অনেক সময় রান্না করার পরেও কিছু খাবার বেঁচে যায়, বেচে যাওয়া খাবার গুলো আমরা ফ্রিজে রেখে দেই। তবে ফ্রিজে খাবার রাখলে বেশি দিন পর্যন্ত ভালো থাকেনা। অনেক খাবার সময়ের আগেই নষ্ট হয়ে যায়। আজকের আর্টিকেলে কীভাবে ফ্রিজে খাবার ভালো রাখবেন সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক- 

ফ্রিজে খাবার ভালো রাখবেন যেভাবে 

ফ্রিজে খাবার ভালো রাখবেন যেভাবে

ফ্রিজে খাবার রাখলে কিছুদিন পরেই স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। বেশিদিনকার ফ্রিজের খাবার খেতে তেমন ভালো লাগে না অর্থাৎ স্বাদ পাওয়া যায় না। এমনকি কাচা সবজি বা ফলমূলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এগুলো আমাদের কারোরই অজানা নয়। তবুও আমরা ফ্রিজ ছাড়া চলতেই পারিনা। আবার অনেকে ফ্রিজ ব্যবহার করলেও ফ্রিজে খাবার রাখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন। তাই আজকের আলোচনায় ফ্রিজে কিভাবে খাবার রাখলে খাবার সতেজ থাকবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 

খাবারে ঢাকনা ব্যবহার 

রান্না করা খাবার ফ্রিজে রাখার সময় অবশ্যই ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে এয়ার টাইট বক্স ব্যবহার করা সর্বোত্তম। এতে খাবারের গন্ধ বের হয়না। খাবারের নিজস্ব স্বাদ ও গন্ধ ভালো থাকে। অনেকেই রান্না করা তরকারী বা খাবার খোলা অবস্থায় ফ্রিজে রেখে দেয়। এতে অন্যসব খাবারে গন্ধ মিশে যায় ফলে সেসকল খাবারের স্বাদ ভালো লাগেনা। 

শাকসবজি ও ফলমূল 

শাকসবজি ফ্রিজে রেখে দিলে হলুদ ভাব দেখতে পাওয়া যায়। আবার বিভিন্ন শাকের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে যায়। পরবর্তীতে ফেলে দিতে হয়। তাই ফ্রিজে রাখার পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শুকিয়ে নিতে হবে। তারপরে কাগজের প্যাকেটে  এমনভাবে মুড়িয়ে রাখতে হবে যাতে ফ্রিজের বাতাস সরাসরি না লাগে। এতে শাকসবজি ও ফলমূলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকবে।  

কাঁচা মাছ-মাংস ড্রেসিং

ফ্রিজে কাাঁচ মাছ মাংস রাখার আগে ড্রেসিং করে নিতে হবে। অর্থাৎ রক্ত ময়লা ফেলে দিয়ে পলিথিনে ভালো করে মুড়িয়ে রাখতে হবে। এমনভাবে পলিথিনে রাখতে হবে যাতে মাছ মাংস থেকে রক্ত বের না হয়। অন্যথায় ফ্রিজের মধ্যে লেগে দুর্গন্ধ হতে পারে। 

মৌসুমী ফল 

মৌসুমী ফল গুলোর স্বাদ বছর জুরে পেতে অনেকেই ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখেন। তবে সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ না করলে স্বাদ হারিয়ে যেতে পারে। সাধারণত টক মিষ্টি মৌসুমী ফলগুলো একটি বাটিতে চিনির শিরায় ভিজিয়ে ডিপফ্রিজে বরফ করে নিতে হবে। এরপরে খাওয়ার আগে ফ্রিজ থেকে বের করে বরফের টুকরোগুলো ব্লেন্ডার করে জুস বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।  

রান্নার করার খাবার 

কয়েকদিনের জন্য বাহিরে বেড়াতে গেলে ঘরে থাকা বাকী সদস্যদের জন্য এক্সট্রা করে খাবার রান্না করে রেখে দিতে হয়। রান্না করার খাবারগুলো ফ্রিজে বেশি রাখলেও তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যা ‍দূর করতে প্রতি বেলার জন্য আলাদা আলাদা এয়ার টাইট বক্সে রাখতে হবে। খাবার ফ্রিজ থেকে বের করে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসার পরে চুলায় বা ওভেনে গরম করে নিতে হবে। 

সুস্থ থাকার জন্য খাবারের তালিকা – সুস্থতার অর্গানিক সমাধান 

ভর্তা সংরক্ষণ 

বিভিন্ন পদের ভর্তা তৈরি করা হলে অনেক সময় বেঁচে যায়। একসাথে এতো গুলো ভর্তা একেবারে খাওয়াও যায়না। আবার কয়েকবেলার জন্য ভর্তা তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়। তবে ফ্রিজ রাখতে চাইলে অবশ্যই কাঁচা পেঁয়াজ, মরিচ রসুন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কাঁচা পেঁয়াজ ভর্তায় ব্যবহার করলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। 

কাঁচা মাংস মেরিনেট 

ঝটপট রান্না করার জন্য মাছ মাংস মেরিনেট করে হালকা ভেজে একটি এয়ার টাইট বক্সে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। কাঁচা মাছ মাংস মেরিনেট করার সহজ একটি পদ্ধতি হলো শুধু হলুদ লবন দিয়ে মেখে নিতে হবে। এটি প্রায় ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে। 

সঠিক পাত্র ব্যবহার 

ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের জন্য বড় পাত্র ব্যবহার করতে হবে। ভেতরে যায়গা বেশি থাকলে খাবারও অনেক দিন ভালো থাকবে। অন্যদিকে ছোট পাত্রে রাখলে দ্রুত গন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

জিপলক ব্যাগ 

সবজি টুকরো করে কেটে জিপলক ব্যাগে রাখা হয়। যেমন- গাজর, ফুলকপি। আবার মটরশুঁটিও আমরা জিপলক ব্যাগে রেখে দেই। সাধারণত ভাজা বা শুকনো জাতীয় খাবার এই ব্যাগে রাখা যেতে পারে। তবে ভুলেও ঝোল জাতীয় খাবার রাখা যাবেনা। 

ফ্রিজের কোন তাকে কোন খাবার 

ফ্রিজে খাবার রাখার জন্য বিভিন্ন তাক দেখতে পাই আমরা। অনেকের ফ্রিজ ভর্তি খাবার থাকলেও তা এলোমেলো ভাবে রাখা। এতে খাবার বেশিদিন পর্যন্ত ভালো থাকেনা। তাই ফ্রিজে খাবার রাখার সময় তাকের সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। যেমন দুগ্ধজতাীয় বা মিষ্টি জাতীয় আইটেম যে তাকে রাখা হবে, সেই তাকে মাছ মাংস রাখা যাবেনা। সবগুলো একসাথে রাখলে দ্রুত খাবার গন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্খা রয়েছে। 

ফ্রিজের কোন তাকে কোন খাবার

আরও কিছু টিপস 

  • গরম খাবার ফ্রিজে রাখার আগে অবশ্যই ঠান্ডা করে তারপরে রাখতে হবে। না হলে খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।  
  • কাঁচা মরিচ ফ্রিজে সংক্ষণের জন্য মরিচের বোটাগুলো ফেলে দিতে হবে। কারণ বোটাসহ মরিচ রাখলে মরিচ পঁচে যায়।  
  • রান্না করা খাবার ও কাচা সবজি কখনই একসাথে রাখা যাবে না। 
  • সবজি পলিথিনের ব্যাগে না রাখাই ভালো, কাগজের প্যাকেটে বা খবরের কাগজে মুড়িয়ে রাখা যেতে পারে। এতে সবজি বেশি দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। পলিথিনে রাখলেও ছিদ্র করে নিতে হবে। 
  • শাক সংরক্ষণের আগে শাকের গোড়া ফেলে দিলে রাখতে হবে। 
  • ফ্রিজে খাবার এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে ফ্রিজের গাঁয়ে লেগে না থাকে। বিশেষ করে কাচা শাকসবজি ও ফলমূল। 
  • চানাচুর, বিষ্কুট, সেমাই এই ধরনের খাবারগুলো ফ্রিজে রাখা যায়। তবে এয়ার টাইট বক্সে রাখতে হবে। এতে বেশিদিন পর্যন্ত মুচমুচে থাকবে। 
  • মাছ ফ্রিজে রাখার ক্ষেত্রে ভালো করে কেটে পরিষ্কার করে লবন পানি দিয়ে ধুয়ে পলিথিনে রাখতে হবে।  
  • আটা বা চালের গুড়ো বেশি দিন সংরক্ষনের জন্য বক্সের মধ্যে ভরে ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে। 
  • ফ্রিজে একটুকরো লেবু রাখা যেতে পারে। মাঝে মধ্যে বেকিং সোডা মেশানো পানি দিয়ে ফ্রিজ মুছে নেওয়া যেতে পারে। ফলে ফ্রিজে দুর্গন্ধ হবেনা। 
  • গরমের সময় দুধ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য দুধ জ্বাল করে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখতে হবে। আবার গরম দুধ ফ্রিজে রাখা যাবেনা। 
  • শাকসবজি রাখার জন্য অনেক ফ্রিজে ছিদ্রযুক্ত আলাদা ড্রয়ার থাকে, এই ধরনের ড্রয়ারেই শাকসবজি রাখতে হবে।  
  • সিজনাল সবজি গুলো অনেকদিন পর্যন্ত সংক্ষণের জন্য আনুমানিক ৮০শতাংশের মতো সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে জিপব্যাগে রেখে ডিপফ্রিজে রাখতে হবে। 

উপসংহার 

রান্নার করা খাবার সঠিক পদ্ধতিতে ফ্রিজে সংরক্ষণ না করলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফ্রিজে খাবার সংরক্ষনের জন্য অবশ্যই নিময় মেনে চলতে হবে। রান্না করা খাবার ২-৪ দিনের বেশি কোনো ভাবেই রাখা উচিত না। ফ্রিজে খাবার ভালো ও সতেজ রাখতে উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। বেঁচে যাওয়া খাবার নষ্ট হওয়া নিয়ে বাড়তি চিন্তার কারণ নেই। সতেজ খাবার খান, সুস্থ থাকুন। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.