সরিষার তেল শুধুমাত্র রান্নার কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও ঠান্ডার চিকিৎসা, ত্বক মসৃণ, শরীরের ইমিউনিটি বাড়ানো সহ চুলের বিভিন্ন উপকারে আসে। লম্বা চুল দেখতে সকলেরই ভালো লাগে আর সেটি যদি আপনার নিজের হয় তবে তো আর কথাই নেই। দৈনন্দিন জীবনে অনেক কারণেই যেমন দূষিত পানি, রাসায়নিক ইত্যাদির প্রভাবে প্রতিদিনই চুল শুষ্ক, জট ও রুক্ষ হয়ে যায়। যার জন্য আমরা অনেকেই টেনশনে পরে যাই এবং সমাধানের জন্য নানা ধরণের কাজ করতে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন খাঁটি সরিষার তেলই এর সমাধান হতে পারে?
এইসব সমস্যা সরিষার তেল নিয়মিত ব্যবহার করে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আজকের এই লেখায় আমরা সরিষার তেলের উপাদান ও গুনাগুন সহ চুলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক সরিষার তেলের উপাদানের সাথে চুলের উপকারিতা সম্পর্কে।
সরিষার তেলের যে সব উপাদান থাকে সেই সকল উপাদান চুলকে করে তোলে মসৃণ, স্বাস্থ্যজ্বল এবং সুন্দর। চুলের কোন ক্ষতি হবে এই ভেবে অনেকেই চুলে সরিষার তেল ব্যবহার করতে ভয় পান। জানলে অবাক হবেন এই সরিষার তেলে রয়েছে মিনারেল, আয়রন,ক্যালসিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন ই যা চুল পড়া রোধ করে।
সরিষার তেলে জিঙ্ক, বিটা ক্যারোটিন, সেলেনিয়াম ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান থাকায় চুল লম্বা হতে সাহায্য করে। এছাড়াও সরিষার তেলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান থাকে যা চুলের খুশকি দূর করে ও চুলকানি থেকে রক্ষা করে। ফাঙ্গাশের কারনে চুলের গোড়া বুজে গিয়ে চুল পাতলা হয়ে যায়। যা এই তেলে ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের স্ক্যাল্পে সরিষার তেল ব্যবহার করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও চুলের গোড়া মজবুত হয়।
চুলে সরিষার তেল মাখলে যেসব সমস্যা থেকি মুক্তি পাবেন
আমরা অনেকেই জানি না চুলের যত্নে সরিষার তেল কতটা উপকারী। অধিকাংশ সময়ে আমরা চুলের যত্নে নারিকেলের তেল বেশী ব্যবহার করে থাকি। নারিকেল তেলের পাশাপাশি মাঝে মাঝে মাথার তালুতে সরিষার তেল ম্যাসাজ করে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে সরিষার তেল মাথায় দেয়ার পর চুল ভালো ভাবে সুগন্ধযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে যেন তেলের গন্ধ ও ঝাঁজ না থাকে।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার
আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড সরিষার তেলে থাকে বিধায় চুল সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে। এছাড়া এই উপাদান দারুণ কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে। ফলে চুল দ্রুত বাড়ে এবং চুল মজবুত করতে সাহায্য করে।
নারিশ বা চুল পড়া বন্ধ করে
চুল পরা আজকাল চুলের খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এই চুল বেশী পড়ে যাওয়ার কারনে অনেক সময় চুলের ফলিকল দূর্বল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। সরিষার তেল চুলে নিয়মিত মালিশ করলে ফলিকল মজবুত হয় ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
চুল লম্বা হতে সাহায্য করে
এই তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
সরিষার তেল – রান্নার সেরা সহযোগী এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প
রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে
যদি আপনার চুল শুষ্ক, রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায় তবে মাথার তালুতে নিয়মিত এই সরিষার তেল মালিশ করুন। যার ফলে মাথার তালুতে রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে হবে এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়ে চুল পড়া বন্ধ হবে।
অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান বিদ্যমান
সরিষার তেলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান বিদ্যমান থাকে ফলে চুলের খুশকি ও চুলকানি দূর করে। যদি ফাঙ্গাসে চুলের গোড়া বুজে গিয়ে চুল পাতলা হয় তবে এই ধরনের সমস্যা সমাধান করে সরিষার তেল। এছাড়াও সরিষার তেল ব্যবহারে চুল পাকা রোধ করে। তাই অকালে যদি আপনার চুলকে পাকার হাত থেকে রক্ষা করতে চান তবে নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।
চুল বৃদ্ধি
সরিষার তেল ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ এবং বিশেষ করে এতে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। যা এই বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়ে চুল বাড়তে সাহায্য করে। চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি সরিষার তেল অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে। তাই প্রতিরাতে চুলে সরিষার তেল মালিশ করে লাগালে চুল কালো হবে।
কীভাবে চুলে সরিষার তেল ব্যবহার করবেন?
দূষণের কারনে বা গরমে মাথার ত্বক ঘেমে অনেকের চুল অনেক নোংরা হয়ে যায়। অপরদিকে শীতকালে এই সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। তবে শীতের ঠান্ডা আবহাওর কারনে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় । তাই চুলের আর্দ্রভাব বজায় রাখার জন্য সবাই কোনো না কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন যা অনেক টাই ব্যয় বহুল হয়।
তবে আপনি চাইলে সরিষার তেল ও অ্যালোভেরা জেল একটি পাত্রে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ভালোভাবে এই মিশ্রনটি ম্যাসাজ করে আধা ঘণ্টা থেকে ১ ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে অর্থের যেমন অনেক টাই সেভ হবে এবং চুলের সঠিক যত্ন নিতেও উপকার লাভ করতে পারবেন।
আবার অনেকেই শীতে চুল আর্দ্র রাখার জন্য বিভিন্ন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করেন। তবে সব ধরনের হেয়ার মাস্ক সবার চুলের জন্য দরকার হয় না। সরিষার তেল, লেবুর রস ও ধনে গুঁড়া একসঙ্গে একটি পাত্রে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে সপ্তাহে তিনদিন মাস্ক হিসেবে চুলে ব্যবহার করুন। আধা ঘণ্টার মতো এই মাস্ক রেখে চুল ভালো ভাবে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতে চুল মজবুত, কন্ডিশন এবং খুশকি মুক্ত হবে। পাশাপাশি চুল পড়া রোধ হবে।
টক দইয়ের সাথে সরিষার তেল একসাথে মিশিয়ে মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগানোর পর হালকা উষ্ণ গরম পানি দিয়ে তোয়ালা ভিজানোর পর একটু চিপে নিয়ে তা মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার বা দুইবার ব্যবহার করে চুলের যত্ন নিতে পারেন। এতে চুল অনেক মজবুত হবে। এছাড়াও আপনি চাইলে সরিষার তেল খাবারের পাশাপাশি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন এবং সরিষার তেলের সাথে ফেসপ্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন। অর্গানিক খাবার খান, সুস্থ থাকুন নিরাপদ যত্নে শরীরকে ভালো রাখুন।