You are currently viewing ব্যায়ামের উপকারিতা ও ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি
ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি

ব্যায়ামের উপকারিতা ও ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি

ব্যায়াম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বিশাল প্রভাব ফেলে। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা অপরিহার্য। তবে, অনেকেই মনে করেন যে ব্যায়াম জিমে গিয়ে কঠিন অনুশীলন করার মাধ্যমে করতে হয়। এই ধারণাটি মোটেও সঠিক নয়। প্রতিদিনের সহজ কিছু অনুশীলনই শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। 

আর সেজন্য প্রয়োজন ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানা। এমনকি যারা ব্যস্ত জীবনে সময় বের করতে পারেন না, তাদের জন্যও কিছু সহজ উপায়ে ব্যায়াম করা সম্ভব। এই আর্টিকেলে, আমরা এমন কিছু ব্যায়ামের সহজ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো, যা যে কেউ ঘরে বসে করতে পারেন এবং এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরও সঠিক অনুশীলন হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি

ব্যায়াম করা আমাদের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম না করলে তা উপকারের বদলে ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেকেরই সময়ের অভাব কিংবা জিমে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও ঘরে বসে কিছু সহজ পদ্ধতিতে ব্যায়াম করা সম্ভব। আসুন, আমরা এমন কয়েকটি সহজ ব্যায়ামের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি, যা সবাই করতে পারেন এবং প্রতিদিনকার জীবনের অংশ বানিয়ে নিলে সুফল পাওয়া যায়।

ওয়ার্ম আপ (Warm-up)

ব্যায়ামের আগে শরীরকে প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ার্ম আপের মাধ্যমে শরীরের পেশি ও জয়েন্টগুলোতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা পেশিগুলোর নমনীয়তা বাড়ায় এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, জগিং বা হাঁটা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। এছাড়া, হাত-পা স্ট্রেচিং বা সহজ কিছু যোগ ব্যায়াম যেমন- তাড়াসন বা আদো মুখ শ্বানাসন (Downward Dog) করতে পারেন, যা পেশির নমনীয়তা বাড়ায়। ৫-১০ মিনিটের ওয়ার্ম আপ আপনার ব্যায়ামের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক হবে এবং শরীরকে কার্যক্ষম রাখবে।

হাঁটা (Walking)

হাঁটা (Walking)

হাঁটা একটি সহজ, কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। এটি শুধু ওজন কমাতেই সাহায্য করে না, হার্ট ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও বাড়ায়। যেকোনো বয়সের লোকের জন্যই হাঁটা খুবই স্বাস্থ্যকর। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা করলে ক্যালরি পোড়ানোর পাশাপাশি রক্তচাপ এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়। যারা শুরু করতে চান, তারা দিনে ১০-১৫ মিনিট ধীরে ধীরে হাঁটা দিয়ে শুরু করে পরিমাণ বাড়াতে পারেন। যাদের চলাফেরায় সমস্যা রয়েছে, তারা ঘরের ভিতরে বা ছাদে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।

স্কোয়াট জাম্প(Squat Jump)

স্কোয়াট হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম যা মূলত পায়ের পেশিগুলোকে মজবুত করে, তবে এটি কোমর ও নিতম্বের পেশিগুলোকেও শক্তিশালী করে। সঠিকভাবে স্কোয়াট করতে হলে পা দুটি কাঁধের সমানভাবে দূরে রেখে, বসার মতো করে নিচে নামতে হবে। নিচে নামার সময় হাঁটু এবং কোমরের মাঝে ৯০ ডিগ্রি কোণ রাখার চেষ্টা করতে হবে। একবার নিচু হওয়ার পর আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। প্রতিদিন ১০-১৫টি স্কোয়াট শুরু করলে পায়ের শক্তি ও স্থিতিশীলতা বাড়বে।

পুশ আপ (Push-up)

পুশ আপ হলো একটি পুরোনো এবং কার্যকরী ব্যায়াম, যা উপরের অংশের পেশি যেমন- হাত, কাঁধ, বুক এবং পেটের পেশিগুলোকে মজবুত করে। এটি করার জন্য পেটের ওপর ভর দিয়ে মাটিতে শুয়ে, হাত দু’টি সামনে রেখে শরীরকে মাটি থেকে তুলতে হবে। তারপর হাত ভাঁজ করে শরীরকে ধীরে ধীরে নিচে নামিয়ে আবার তুলতে হবে। যারা পুশ আপ করতে শুরু করছেন, তারা প্রথমে ৫-১০টি দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়াতে পারেন। যারা পুরো পুশ আপ করতে পারছেন না, তারা প্রথমে হাঁটু মাটি রেখে ‘নিয়মিত পুশ আপ’-এর মতো শুরু করতে পারেন।

লাঞ্চ (Lunges)

লাঞ্চ হলো এমন একটি ব্যায়াম যা শরীরের নিচের অংশের পেশিগুলোকে মজবুত করে এবং ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি মূলত পায়ের পেশিগুলোকে স্থিতিশীল করে। লাঞ্চ করার জন্য প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং এক পা সামনের দিকে বাড়িয়ে নিচু হয়ে বসতে হবে। এক পা সামনে রেখে ধীরে ধীরে নিচে নামবেন এবং আবার উঠে আসবেন। একবার একটি পা দিয়ে করলে অন্য পায়ের পালা। প্রতিদিন ১০-১২টি লাঞ্চ করা পায়ের পেশিগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়াবে এবং শরীরের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা উন্নত করবে।

দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকতে যেসব খাবার খাবেন

প্ল্যাঙ্ক (Plank)

প্ল্যাঙ্ক একটি ব্যায়াম যা শরীরের কেন্দ্রীয় পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে। এটি মূলত পেটের পেশি এবং মেরুদণ্ডের সমর্থনকারী পেশিগুলোকে সক্রিয় রাখে। প্ল্যাঙ্ক করার জন্য পুশ আপের মতো করে হাত এবং পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে শরীরকে সোজা রাখতে হবে। শরীর যেন সোজা থাকে এবং পেটের পেশি যেন টানটান থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখা শুরু করে ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো যেতে পারে। প্ল্যাঙ্ক প্রতিদিন ১-২ মিনিট করলেই পেশি শক্তিশালী হয় এবং শরীরের শক্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

জাম্পিং জ্যাক (Jumping Jacks)

জাম্পিং জ্যাক হলো একটি উচ্চ-তীব্রতা সম্পন্ন কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম, যা শরীরে দ্রুত রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। এটি করার জন্য প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত দু’টি উপরে তুলতে হবে এবং দুই পা একসাথে লাফিয়ে দুদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। তারপর আবার লাফিয়ে হাত এবং পা একসাথে এনে মাটি স্পর্শ করাতে হবে। এটি দ্রুত করা হলে শরীরে দ্রুত রক্ত সঞ্চালন ঘটে এবং ক্যালরি পোড়ে। দিনে ১০-১৫টি জাম্পিং জ্যাক করার মাধ্যমে শরীরে উদ্দীপনা তৈরি হয় এবং দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করে।

যোগব্যায়াম (Yoga)

যোগব্যায়াম হলো এমন এক ধরনের অনুশীলন যা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত উপকারী। সহজ কিছু যোগ ব্যায়াম যেমন- সূর্য নমস্কার, ভুজঙ্গাসন, তাড়াসন ইত্যাদি শরীরের পেশিগুলোকে সক্রিয় রাখে এবং শরীরে নমনীয়তা আনে। এর পাশাপাশি যোগব্যায়াম মানসিক শান্তি এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। যারা প্রতিদিন ব্যায়াম করতে চান, কিন্তু জিমে যাওয়ার সময় পান না, তারা যোগব্যায়াম শুরু করতে পারেন। এটি ঘরে বসে করা যায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে উন্নতি লক্ষ্য করা যায়।

ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন

ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন

  • নিয়মিততা: ব্যায়ামের সর্বোত্তম ফল পেতে ধৈর্য ধরে নিয়মিতভাবে অনুশীলন করুন। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন ব্যায়াম করার লক্ষ্য রাখুন। অনিয়মিত ব্যায়াম দীর্ঘমেয়াদে তেমন কার্যকরী নয়।
  • ওয়ার্ম আপ: প্রতিটি ব্যায়ামের আগে ৫-১০ মিনিট ওয়ার্ম আপ করুন। এটি পেশির নমনীয়তা বাড়ায় এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়। যেমন হালকা জগিং বা স্ট্রেচিং করা যেতে পারে।
  • কুল ডাউন: ব্যায়ামের পরে পেশি শিথিল করতে ৫ মিনিট কুল ডাউন করতে ভুলবেন না। এটি শরীরকে ধীরে ধীরে শিথিল করে এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে। স্ট্রেচিং কুল ডাউনের ভালো উপায়।
  • সঠিক পোশাক ও জুতা: আরামদায়ক ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়ক পোশাক পরিধান করুন। সঠিক জুতা পায়ের সাপোর্ট বাড়ায় এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়। কঠোর মেঝেতে অনুশীলনের সময় জুতার বিশেষ ভূমিকা থাকে।
  • জল পান: ব্যায়ামের সময় ও পরে শরীর হাইড্রেট রাখা জরুরি। পর্যাপ্ত জলপান শরীরের তরল সমতা বজায় রাখে। ব্যায়ামের সময়ে শরীর থেকে প্রচুর তরল বের হয়ে যায়, যা পূরণ করতে হবে।
  • ব্যক্তিগত সীমা জানুন: প্রথমে নিজস্ব সীমা অনুযায়ী ব্যায়াম শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে সময় ও ইনটেনসিটি বাড়ান। অতিরিক্ত চাপ দিলে পেশিতে আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। শরীরের কথা শুনুন এবং ধীরে ধীরে উন্নতি করুন।
  • সঠিক ভঙ্গিমা: প্রতিটি ব্যায়ামের সময় শরীরের সঠিক ভঙ্গিমা বজায় রাখুন। ভুল ভঙ্গিমায় ব্যায়াম করলে পেশিতে আঘাত লাগতে পারে। একজন প্রশিক্ষকের সাহায্য নিয়ে শিখতে পারেন।
  • ব্যথা হলে থামুন: ব্যায়ামের সময় যদি অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভব করেন, তবে থামুন। এটি শরীরের বার্তা যে আপনার শরীরের সেই অংশ বিশ্রাম প্রয়োজন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম: ব্যায়ামের পরে পেশিগুলোর পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। বিশ্রাম না দিলে পেশির ক্ষতি হতে পারে এবং উন্নতি ধীর হয়।
  • উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন: ব্যায়ামের শুরুতে একটি স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, যেমন ওজন কমানো, পেশি শক্ত করা, বা কার্ডিও ফিটনেস। লক্ষ্য নির্ধারণ করলে অনুপ্রাণিত থাকা সহজ হয় এবং ফলাফল দ্রুত আসে।

উপসংহার

ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পর নিয়মিত ব্যায়াম করা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের মূল চাবিকাঠি হতে পারে। কঠিন ও জটিল ব্যায়াম না করেও ঘরে বসে কিছু সহজ পদ্ধতিতে শরীরকে সক্রিয় রাখা সম্ভব। এই ধরনের সহজ ব্যায়াম শুধু শারীরিক শক্তি বাড়ায় না, বরং মানসিক প্রশান্তি আনে এবং প্রতিদিনের জীবনে শক্তি ও উদ্দীপনা যোগায়। সময়ের অভাব কিংবা জিমে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও, এই প্রয়োজনীয় অভ্যাসটি ধরে রাখা যেতে পারে। তাই, স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়মিত কিছু সহজ ব্যায়ামকে জীবনের অংশ করে তোলা উচিত।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.