You are currently viewing সরিষা খেলে যেসব উপকার পাবেন এবং কখন সরিষা খাওয়া যাবে না?
সরিষা খেলে যেসব উপকার পাবেন

সরিষা খেলে যেসব উপকার পাবেন এবং কখন সরিষা খাওয়া যাবে না?

সরিষা বাঙালি রান্নায় অত্যন্ত পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয়, সরিষার রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা। সরিষার বীজ থেকে শুরু করে তেল পর্যন্ত প্রতিটি উপাদানই বিভিন্ন ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়। সরিষার পুষ্টিগুণে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার সাধন করে। সরিষা খেলে যেসব উপকার পাবেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এটি আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্য এবং পেটের জন্য ভালো। 

এছাড়াও সরিষা হজম শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। ত্বকের যত্ন এবং ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রেও সরিষা কার্যকর হতে পারে। তবে, সরিষার উপকারের পাশাপাশি কিছু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও আছে, যা জানতে এবং বুঝতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক অবস্থায় সরিষা খাওয়া নিষেধ হতে পারে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে। এসব বিষয়াদি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়তে হবে। 

সরিষা খেলে যেসব উপকার পাবেন

সরিষা খাওয়ার উপকারিতা বহুমুখী এবং এটি শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সরিষা বীজ, তেল এবং পাতা এ তিনটিই আমাদের খাদ্যাভ্যাসে ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের উপকৃত করে। নিচে সরিষা খেলে যে উপকারগুলো পাওয়া যায় তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

সরিষা খেলে যেসব উপকার

হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায়

সরিষার তেল ও বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। এর ফলে ধমনির দেয়ালে চর্বি জমার ঝুঁকি কমে এবং রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর, কারণ সরিষা রক্তনালী প্রসারিত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সরিষার তেল বিশেষভাবে উপযোগী।

হজমের উন্নতি ও পেটের সমস্যার সমাধান

সরিষার বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। ফাইবার হজম তন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে দেয় এবং খাদ্য দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে সরিষা অত্যন্ত কার্যকর। সরিষা খাওয়ার ফলে পাচনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় এনজাইম উৎপাদন বাড়ে, যা খাবার হজমে সহায়ক।

প্রদাহ ও ব্যথা উপশমে

সরিষার তেলকে প্রাচীনকাল থেকেই প্রদাহ ও ব্যথা নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা শরীরের যেকোনো প্রকারের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। যারা আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য সরিষার তেল একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে। সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে মাংসপেশি এবং জয়েন্টের ব্যথা কমে, এছাড়া এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।

ত্বক ও চুলের যত্নে

সরিষার তেল ত্বক ও চুলের জন্য বিশেষ উপকারী। সরিষার তেল ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে, যা ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখে। সরিষার তেল ত্বকের কোষ পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা ও যৌবন ধরে রাখে। এছাড়াও, সরিষা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে। চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

সরিষায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা শরীরে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সরিষার বীজ ও তেলে থাকা সেলেনিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরকে রোগমুক্ত রাখার ক্ষমতা দেয়। নিয়মিত সরিষা খেলে ঠান্ডা, ফ্লু এবং কাশি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তি বাড়ায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ওজন কমাতে সহায়ক

সরিষায় থাকা প্রোটিন এবং ফাইবার ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। সরিষা খেলে পেট ভরা অনুভূতি হয়, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন, তাদের জন্য সরিষা উপকারী হতে পারে, কারণ এটি খাবারের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমায়। সরিষার বীজ মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট পুড়িয়ে দেয়।

শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা উপশমে

সরিষার তেল শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা যেমন হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং কাশিতে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সরিষার তেল দিয়ে বুকের ম্যাসাজ করলে শ্বাসনালী পরিষ্কার হয় এবং শ্বাস নিতে সহজ হয়। সরিষার তেল কফ নির্গত করতেও সহায়ক। এতে থাকা গরম উপাদান ঠান্ডা বা কাশির সময় শরীরকে উষ্ণতা প্রদান করে, যা শ্বাসের কষ্ট লাঘব করতে সহায়ক।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

সরিষার তেলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য সরিষার তেল একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এটি রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।

রক্তসঞ্চালন বাড়ায়

সরিষার তেল রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। তেল দিয়ে শরীরের ম্যাসাজ করলে রক্তনালী সক্রিয় হয় এবং রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। এ কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেনের সরবরাহ বেড়ে যায় এবং শরীর সতেজ ও উজ্জীবিত থাকে।

সরিষার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী। তবে, পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিকভাবে গ্রহণ করলে এই উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

কখন সরিষা খাওয়া যাবে না?

কখন সরিষা খাওয়া যাবে না

যদিও সরিষার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তবে নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক অবস্থা বা অসুস্থতার সময় সরিষা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। অতিরিক্ত বা ভুল সময়ে সরিষা খেলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। নিচে উল্লেখ করা হলো কখন সরিষা খাওয়া উচিত নয়:

গ্যাস্ট্রিক সমস্যায়

যাদের গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি বা অম্লতার সমস্যা আছে, তাদের সরিষা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। সরিষার বীজ এবং তেল বেশ ঝাঁজালো, যা পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে এবং পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। এ কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় সরিষা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য

যদিও সরিষার তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের সরিষা বীজ এবং সরিষার তেল বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। সরিষায় থাকা কিছু উপাদান রক্তচাপের ওঠানামা বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে অতিরিক্ত সরিষা সেবনের ফলে রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

খাদ্য অ্যালার্জি

অনেক মানুষের সরিষার প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। যারা সরিষা বা সরিষার তেলের প্রতি অ্যালার্জিক, তাদের সরিষা খাওয়া একদম এড়িয়ে চলা উচিত। সরিষা খাওয়ার পর ত্বকে র‍্যাশ, শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, গলা ফুলে যাওয়া, অথবা বমি বমি ভাবের মতো অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যদি এমন সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সরিষা খাওয়া বন্ধ করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় সরিষা সেবন

গর্ভবতী নারীদের সরিষা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। অতিরিক্ত সরিষা খেলে তা গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সরিষার তেল গরম প্রকৃতির হওয়ায় এটি শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভাবস্থায় সরিষার তেল বা সরিষার বীজ খাওয়া উচিত নয়।

কিডনির সমস্যায়

কিডনি রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য সরিষার বীজ এবং তেল বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা ক্ষতিকর হতে পারে। সরিষার মধ্যে কিছু উপাদান থাকে, যা কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমাতে পারে। 

অতিরিক্ত সরিষা খেলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সুতরাং, সরিষার স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও, বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে সরিষা খাওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি। স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সরিষা গ্রহণ করা উচিত।

উপসংহার

আমরা জানলাম সরিষা খেলে যেসব উপকার পাবেন এবং যেকোনো খাবারের মতোই এরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরিষার নিয়মিত ও পরিমিত ব্যবহার শরীরের পুষ্টি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। সরিষার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি শুধু শরীরের অভ্যন্তরীণ পুষ্টির জন্যই নয়, এটি ত্বক, চুল এবং হজম ক্ষমতার উন্নতি সাধনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

তবে অতিরিক্ত সরিষা সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সরিষার উপকারিতা পেতে হলে সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করা উচিত এবং কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.