You are currently viewing যেসব কারণে এলাচ খাবেন এবং কাদের জন্য এলাচ খাওয়া নিষেধ?
যেসব কারণে এলাচ খাবেন

যেসব কারণে এলাচ খাবেন এবং কাদের জন্য এলাচ খাওয়া নিষেধ?

প্রাচীনকাল থেকেই মসলা হিসেবে এলাচের ব্যবহার চলে আসছে। এর সুগন্ধ এবং স্বাদ যেমন খাবারকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়, তেমনি এর চিকিৎসাগত গুণাবলীও রয়েছে অসংখ্য। আয়ুর্বেদ থেকে শুরু করে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান পর্যন্ত, সবাই স্বীকার করে এলাচের বহুমুখী উপকারিতা। আর তাই যেসব কারণে এলাচ খাবেন তা বলে শেষ করার মত নয়। কিন্তু প্রতিটি খাদ্যের মতোই, এলাচের ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু সতর্কতা। 

কারও কারও জন্য এটি যেমন অমৃত, আবার কারও কারও জন্য এটি বিষতুল্য হতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব এলাচ খাওয়ার উপকারিতা এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। কোন কোন ক্ষেত্রে এলাচ খাওয়া উচিত এবং কাদের জন্য এটি নিষিদ্ধ, তা জানার মাধ্যমে আমরা এই গুণকারী মসলাটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব।

যেসব কারণে এলাচ খাবেন

এলাচ (Cardamom) এক বিশেষ সুগন্ধি মসলা যা প্রাচীনকাল থেকে ঔষধি ও খাদ্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। নিচে এলাচ খাওয়ার কিছু উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

হজমশক্তি উন্নত করে

এলাচের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো এর হজম সহায়ক গুণ। এলাচের মধ্যে থাকা ভোলাটাইল অয়েলগুলি হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। এটি পাকস্থলীতে বাইল উৎপাদনকে উৎসাহিত করে, যা খাবারের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া দ্রুত করে। এছাড়া, এলাচ পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়। যারা হজমের সমস্যা, পেট ফাঁপা বা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন তারা এলাচ খেলে উপকার পেতে পারেন।

বুক জ্বালাপোড়া কমায়

এলাচ বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা নিরসনে কার্যকরী। এর মধ্যে থাকা এনজাইমগুলি পাকস্থলীর গ্যাসের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং বুক জ্বালা ও অস্বস্তি কমায়। এলাচের গুণাগুণ গ্যাসের ফলে উদ্ভূত অস্বস্তি ও ব্যথা দূর করে এবং পাকস্থলীতে আরাম দেয়। তাই যারা প্রায়ই বুক জ্বালাপোড়ায় ভোগেন, তারা প্রতিদিন এলাচ খেতে পারেন।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

এলাচের সুগন্ধি গুণের কারণে এটি প্রাকৃতিক মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে কাজ করে। এলাচের ভোলাটাইল অয়েলগুলি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। এছাড়াও, এলাচ মুখের লালাগ্রন্থি উদ্দীপিত করে, যা মুখের ভেতরে নিঃসৃত এনজাইমগুলির মাধ্যমে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। যারা মুখের দুর্গন্ধে ভোগেন, তারা খাওয়ার পর একটি এলাচ চিবিয়ে খেতে পারেন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

এলাচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। পটাসিয়াম রক্তচাপ কমায় এবং রক্তনালী শিথিল করে, যা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এলাচের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী রক্তনালীর সংকোচন কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত এলাচ খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।

ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত করে

এলাচের ডাইইউরেটিক গুণাগুণ শরীরের অতিরিক্ত তরল ও বর্জ্য পদার্থ নির্গত করতে সাহায্য করে। এটি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্ত থেকে টক্সিন অপসারণে সহায়ক। এলাচের মধ্যে থাকা মেটাবলিক বুস্টিং উপাদানগুলি শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং শরীরকে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রাখে। যারা প্রায়ই ডিটক্সিফিকেশন ডায়েট অনুসরণ করেন, তারা তাদের ডায়েটে এলাচ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির সমস্যা কমায়

এলাচের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ শ্বাসনালী শিথিল করে এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে সহায়ক। এটি ফুসফুসের কফ অপসারণে সাহায্য করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। হাঁপানি রোগীরা এলাচের গুণাগুণ থেকে উপকৃত হতে পারেন, কারণ এটি শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এলাচের তেলে সেঁকা নিলে বা এলাচ চা খেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমে।

মশলা খাঁটি কিনা যেভাবে বুঝবেন- দেখে নিন কিছু অসাধারণ টিপস!

মানসিক চাপ কমায়

এলাচে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভোলাটাইল অয়েলগুলি মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এটি নার্ভস সিস্টেমকে প্রশান্তি দেয় এবং মানসিক উদ্বেগ কমায়। এলাচের নিয়মিত ব্যবহার মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের উৎপাদন বাড়িয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এলাচ চা বা এলাচ দুধ মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুমের সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।

ত্বকের জন্য উপকারী

এলাচের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। এলাচ ত্বকের দাগ, ফুসকুড়ি এবং ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এলাচের তেল ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালা ও প্রদাহ কমে এবং ত্বক সজীব থাকে। এলাচের ভেতরের বীজগুলির পেস্ট ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।

এছাড়াও, এলাচ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, ইনফেকশন প্রতিরোধ করে, ওজন কমাতে সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এলাচের এসব গুণাগুণ আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

এলাচ খাওয়া কাদের জন্য নিষেধ?

এলাচ সাধারণত অনেকের জন্য উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি কিছু মানুষের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা

গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য এলাচ খাওয়া নিয়ে মিশ্র মতামত রয়েছে। কিছু গবেষণায় এলাচকে নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও অতিরিক্ত এলাচ গ্রহণ গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এলাচের ভেতরের কিছু উপাদান জরায়ুর সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

অম্লতা (Acidity) বা গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীরা

এলাচ সাধারণত হজম সহায়ক হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে, যারা অম্লতা বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এলাচ খাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে। এলাচ পাকস্থলীতে অ্যাসিডের নিঃসরণ বাড়াতে পারে, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) রোগী

হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) রোগী

এলাচ সাধারণত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও, কিছু ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য অতিরিক্ত এলাচ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এলাচের মধ্যে রয়েছে কিছু উপাদান যা রক্তচাপের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে। যারা ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এলাচ খাওয়া রক্তচাপের মাত্রা অতিরিক্তভাবে কমিয়ে দিতে পারে, যা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

যাদের এলার্জি রয়েছে

কিছু মানুষের এলাচের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে। এলাচ খেলে তাদের ক্ষেত্রে ত্বকের ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, বা মুখে ফোলা দেখা দিতে পারে। এমনকি, এলাচ খেলে গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে যা এনাফাইল্যাক্সিসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। যদি কেউ এলাচের প্রতি সংবেদনশীল হয়, তাহলে তাদের এলাচ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

পিত্তথলির পাথর

যাদের পিত্তথলির পাথর রয়েছে, তাদের জন্য এলাচ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এলাচের মধ্যে থাকা শক্তিশালী উপাদানগুলি পিত্তথলির সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে, যা পাথরকে সরানোর প্রচেষ্টা করতে পারে এবং এর ফলে তীব্র ব্যথা বা অসুবিধা হতে পারে। তাই পিত্তথলির পাথরের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের এলাচ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

যাদের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বা হতে যাচ্ছে

অস্ত্রোপচার করার আগে বা পরে এলাচ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এলাচ রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে কারণ এটি রক্তের পাতলা হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। বিশেষত, যারা অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা সদ্য অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, তাদের জন্য এলাচ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

মেটাবলিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা

এলাচের মেটাবলিজম বুস্টিং প্রভাব থাকার কারণে কিছু মানুষের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে। বিশেষত, যারা মেটাবলিক বা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এলাচ খাওয়া শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

যদিও এলাচ সাধারণত নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর, তবুও যারা উপরে উল্লেখিত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন, তাদের জন্য এলাচ খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসংহার

যেসব কারণে এলাচ খাবেন এবং এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই মসলাটি যেমন অনেকের জন্য স্বাস্থ্যকর, তেমনি কিছু মানুষের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এলাচ খাওয়ার আগে নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। 

যাঁরা এলাচের উপকারিতা উপভোগ করতে চান, তাঁদের উচিত নিয়মিত কিন্তু পরিমিত পরিমাণে এটি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, যাঁদের জন্য এলাচ নিষিদ্ধ, তাঁরা বিকল্প উপায়ে স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারেন। সর্বোপরি, কোনো খাদ্য বা মসলা গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবসময় বুদ্ধিমানের কাজ।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.