You are currently viewing অচেনা দশ ফল- যে ফলগুলোর পুষ্টিগুণ আপনাকে অবাক করবে!
অচেনা দশ ফল

অচেনা দশ ফল- যে ফলগুলোর পুষ্টিগুণ আপনাকে অবাক করবে!

আমাদের চারপাশে প্রকৃতি নানা রকম অপূর্ব সৃষ্টি নিয়ে বিরাজমান। এর মধ্যে ফলের জগৎ একটি বিস্ময়কর অধ্যায়। আমরা প্রতিদিন যেসব পরিচিত ফল খাই, তার বাইরেও রয়েছে এমন অনেক ফল যা আমাদের কাছে অপরিচিত। এই অচেনা ফলগুলি কেবল স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও অনন্য। আজ আমরা আলোচনা করব এমন অচেনা দশ ফল সম্পর্কে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব একটা দেখা যায় না, কিন্তু যাদের গুণাগুণ জানলে আমরা বিস্মিত হব। 

এই ফলগুলি শুধু তাদের অসাধারণ স্বাদের জন্যই নয়, বরং তাদের পুষ্টিগুণ, ঔষধি গুণাবলী এবং পরিবেশগত গুরুত্বের জন্যও উল্লেখযোগ্য। আসুন জেনে নেই এই দশটি অচেনা ফল সম্পর্কে, যা আমাদের খাদ্যতালিকায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

অচেনা দশ ফল এর উপকারিতা ও চাষাবাদ পদ্ধতি

আলবেযিয়া (Albizia lebbeck)

আলবেযিয়া গাছের ফল ছোট ও বাদামি রঙের, যা প্রায় ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এটি শুষ্ক ও উষ্ণ অঞ্চলে ভালোভাবে জন্মে। আলবেযিয়ার গাছ প্রধানত ঔষধি গুণাগুণের জন্য পরিচিত, তবে এর ফল এবং বীজও কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আলবেযিয়া ফল ও এর বীজ অ্যান্টি-অ্যাস্থমাটিক, অ্যান্টি-ডায়ারিয়াল, এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন একজিমা এবং চর্মরোগ নিরাময়ে কার্যকর। এছাড়া, এটি শ্বাসকষ্ট, কাশি, এবং হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
আলবেযিয়া গাছ সাধারণত শুষ্ক ও উষ্ণ অঞ্চলে ভালো জন্মায়। বীজ বা কাটিং এর মাধ্যমে এই গাছ চাষ করা যায়। এটি চাষে খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না এবং প্রায় সব ধরনের মাটিতে এটি জন্মাতে পারে। তবে, পূর্ণবয়স্ক হতে ৫-৬ বছর সময় লাগে।

তালমাকনা (Diospyros blancoi)

তালমাকনা (Diospyros blancoi)

তালমাকনা বা “লাক্ষা ফল” একটি ছোট ও গোলাকার ফল, যার রঙ কালচে বাদামি। এটি সাধারণত আর্দ্র ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়। ফলটি দেখতে ছোট কিন্তু এর ঔষধি গুণাবলী অনেক। তালমাকনা পেটের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ডায়রিয়া ও আমাশয় নিরাময়ে। এছাড়া এটি শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় উপকারী।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
তালমাকনা গাছ সাধারণত বীজের মাধ্যমে চাষ করা হয়। এটি উচ্চ আর্দ্রতা ও ভালো পানি নিষ্কাশন সম্পন্ন মাটিতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। গাছটি সাধারণত পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।

গরান ফল (Ceriops decandra)

গরান ফল ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে পাওয়া যায়, বিশেষ করে সুন্দরবনে। এই ফলটি ছোট, গোলাকার ও শক্ত খোসাযুক্ত। এটি মূলত এর বীজ ও তেলের জন্য পরিচিত। গরান ফলের বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তা চুলের খুশকি দূর করতে, চুল পড়া রোধ করতে এবং ত্বকের সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এটি ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক এবং রক্তের সঞ্চালন উন্নত করে।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
গরান গাছ সাধারণত বীজের মাধ্যমে চাষ করা হয়। এটি জলাভূমি বা ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে জন্মে এবং বিশেষত লবণাক্ত মাটিতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। এটি চাষে নির্দিষ্ট কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না, তবে প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছটি ভালো জন্মায়।

মেহগনি ফল (Swietenia mahagoni)

মেহগনি গাছের ফল লম্বা, ডিম্বাকৃতি এবং এর ভেতরে ছোট ছোট বীজ থাকে। মেহগনি গাছের কাঠ যেমন মূল্যবান, তেমনি এর ফল ও বীজও ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। মেহগনি বীজের তেল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় এবং যকৃতের রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এটি রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
মেহগনি গাছ বীজের মাধ্যমে চাষ করা হয় এবং এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ভালোভাবে জন্মে। গাছটি সাধারণত পুষ্ট মাটি ও পর্যাপ্ত জলাধারে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বীজ থেকে গাছ জন্মাতে প্রায় ৮-১০ বছর সময় লাগে, এবং তখন থেকে ফল ধরতে শুরু করে।

বিভিন্ন ফলের পুষ্টি উপাদান, কোন ফল কোন রোগের জন্য উপকারী?

ভাদালি (Artocarpus lacucha)

ভাদালি বা ভাদেল গাছের ফল হলুদাভ রঙের এবং এটি ছোট কাঁটাযুক্ত হয়। ফলটি সাধারণত ঝোপ-জঙ্গলে পাওয়া যায় এবং এটি বিভিন্ন ঔষধি গুণাবলীতে সমৃদ্ধ। ভাদালি ফল পেটের সমস্যা নিরাময়ে কার্যকর, বিশেষ করে হজম শক্তি উন্নত করতে সহায়ক। এছাড়া এটি ত্বকের রোগ এবং রক্তশূন্যতা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
ভাদালি গাছ সাধারণত বীজ বা কাটিং এর মাধ্যমে চাষ করা হয়। এটি আর্দ্র মাটিতে ভালো জন্মে এবং গ্রীষ্মকালে ফল দেয়। গাছটি সাধারণত দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।

কামরাঙ্গা (Averrhoa carambola)

কামরাঙ্গা একটি তারকা আকৃতির ফল, যা টক-মিষ্টি স্বাদের হয়। এটি সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। ফলটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ফাইবার থাকে। কামরাঙ্গা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমের প্রক্রিয়া উন্নত করে, এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
কামরাঙ্গা গাছ সাধারণত বীজ বা কলমের মাধ্যমে চাষ করা হয়। এটি আর্দ্র ও ভালো পানি নিষ্কাশন সম্পন্ন মাটিতে ভালোভাবে জন্মে। গাছটি সাধারণত তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।

রুগ্ন বীরুতাল (Borassus flabellifer)

রুগ্ন বীরুতাল (Borassus flabellifer)

রুগ্ন বীরুতাল বা তাল একটি বিশাল আকৃতির ফল, যার ভেতরে নরম শাঁস থাকে। তাল ফল মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে প্রচলিত এবং পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাল ফলের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন, এবং খনিজ উপাদান থাকে যা শরীরে দ্রুত শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
তাল গাছ বীজের মাধ্যমে চাষ করা হয় এবং এটি সাধারণত শুষ্ক মাটিতে ভালোভাবে জন্মায়। গাছটি বেশ ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং ফল দিতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। তবে একবার ফল দিতে শুরু করলে এটি নিয়মিত ফল দেয়।

লেবিচুরি (Nephelium lappaceum)

লেবিচুরি একটি ছোট, গোলাকার ফল, যার খোসায় ছোট ছোট কাঁটা থাকে এবং ভেতরে একটি ছোট বীজ থাকে। ফলটি লাল রঙের এবং খেতে মিষ্টি ও রসালো। লেবিচুরি ফল ভিটামিন সি, আয়রন, এবং ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ, যা রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং হজমের প্রক্রিয়া উন্নত করে।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
লেবিচুরি গাছ বীজ বা কাটিং এর মাধ্যমে চাষ করা যায়। এটি আর্দ্র ও উষ্ণ অঞ্চলে ভালোভাবে জন্মায়। গাছটি সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।

বেদানা (Punica granatum)

বেদানা একটি গোলাকার ফল, যার ভেতরে ছোট ছোট রসালো বীজ থাকে। ফলটি সাধারণত টক-মিষ্টি স্বাদের হয় এবং এটি উচ্চ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। বেদানা রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়া এটি হজমের সমস্যায় উপকারী এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
বেদানা গাছ সাধারণত বীজের মাধ্যমে চাষ করা হয়। এটি শুষ্ক ও আর্দ্র মাটিতে ভালোভাবে জন্মায়। গাছটি সাধারণত দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।

আঁশফল (Annona squamosa)

আঁশফল (Annona squamosa)

আঁশফল বা কাস্টার্ড আপেল একটি সবুজ রঙের ফল, যার গায়ে আঁশের মতো অংশ থাকে। ফলটি মিষ্টি এবং ক্রীমি স্বাদের। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। আঁশফল ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, এবং ডায়েটারি ফাইবারে সমৃদ্ধ। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এছাড়া এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

চাষাবাদ পদ্ধতি:
আঁশফল গাছ বীজ বা কাটিং এর মাধ্যমে চাষ করা যায়। এটি উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে ভালোভাবে জন্মে এবং সব ধরনের মাটিতে সহজে বৃদ্ধি পায়। গাছটি তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।

উপসংহার

অচেনা দশ ফল নামক এই আর্টিকেল থেকে আমরা দেখতে পেলাম যে, প্রকৃতি কত বৈচিত্র্যময় এবং অজানা সম্পদে ভরপুর। এই ফলগুলি শুধু তাদের অনন্য স্বাদ ও গন্ধের জন্যই নয়, বরং তাদের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যও উল্লেখযোগ্য। এই ফলগুলি আমাদের খাদ্যতালিকায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে এবং আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এই ফলগুলি খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন স্বাস্থ্য পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি কারও কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে। আমাদের উচিত এই ধরনের অচেনা ফলগুলির সংরক্ষণ ও চাষাবাদে আরো উৎসাহী হওয়া।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.