You are currently viewing সুষম খাদ্য কি? এর গুরুত্ব ও সুষম খাবারের তালিকা
সুষম খাবারের তালিকা

সুষম খাদ্য কি? এর গুরুত্ব ও সুষম খাবারের তালিকা

দেহের বৃদ্ধি,ক্ষয়পূরণ, তাপ উৎপাদন ও কর্মক্ষম রাখতে সুষম খাবারের কোনো ‍বিকল্প নেই। তাই সুস্থ থাকতে অবশ্যই সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব দূর করে। শরীরকে সুস্থ  ও রোগমুক্ত রাখে। এবং শরীর সুস্থ থাকলে আমাদের মনও ভালো থাকে। 

সুষম খাবার গ্রহনের জন্য প্রয়োজন একটি খাদ্য তালিকা। এই তালিকায় সুষম খাবারের প্রতিটি উপাদান বিদ্যমান থাকবে। যা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিউপাদান সরবরাহ করে থাকে। সুষম খাবারের তালিকা গ্রহনের আগে সুষম খাদ্য সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। আজকের আর্টিকেলে আমরা সুষম খাদ্য ও সুষম খাবারের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

সুষম খাদ্য কি 

যেসকল খাদ্যে সকল প্রকার খাদ্য উপাদান একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ও সঠিক অনুপাতে থাকে এবং মানবদেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে তাকে সুষম খাদ্য বলে। মূলত সুষম খাদ্যে বলতে খাবারের মধ্যে শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবন ও পানি এই ছয়টি উপাদান উপস্থিত থাকে। 

মানব দেহের জন্য সুষম খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। এতে মানব দেহের প্রয়োজনীয় সকল উপাদান সঠিক মাত্রায় থাকে। সুষম খাদ্য গ্রহনের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য রাখা প্রয়োজন যা শরীরের পুষ্টিহীনতা দূর করতে সাহায্য করবে। 

সুষম খাদ্যের উপাদান 

সুষম খাদ্য তালিকা করার নিয়ম 

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট 

আমাদের শরীরের প্রধান শক্তির উৎস হলো শর্করা। যা দেহের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং শরীরে তাপ শক্তি উৎপাদন করে। সাধারণত ভাত, গম, ভুট্টা, রুটি, ওটস, আলু ইত্যাদি খাবার থেকে শর্করা পাওয়া যায়। এই খাবার থেকে প্রতিদিন ৬০-৭০শতাংশ  শক্তির চাহিদা পেয়ে থাকি। শর্করা দুই ধরনের। জটিল শর্করা ও সরল শর্করার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি শরীরের দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করে থাকে।

আমিষ 

আমাদের দেহের বৃদ্ধি ও গঠন সাধনে আমিষ জাতীয় খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। আমিষকে দুই ভাবে ভাগ করা হয়। প্রাণিজ আমিষ ও উদ্ভিজ্জ আমিষ। সাধারণত প্রানী থেকে যেসকল খাবার পাওয়া যায় তাকে প্রাণিজ আমিষ বলা হয়। যেমন মাছ, মাংস, দুধ ডিম ইত্যাদি খাবারগুলো প্রাণিজ আমিষের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। 

যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। উদ্ভিজ্জ আমিষ বলতে যেসকল খাবার উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় তাকে উদ্ভিজ্জ আমিষ বলে। যেমন বিভিন্ন ধরনের ডাল, বাদাম, সীমের বীট ইত্যাদি। আমিষ জাতীয় খাদ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। 

স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার 

ঘি, মাখন ও তেল এই শ্রেণীর খাদ্রগুলোকে স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার বলা হয়। প্রতিদিনের চর্বিজাতীয় খাবার থেকে প্রায় ২০-২৪% শক্তি সরবরাহ করে থাকে। 

ভিটামিন 

ভিটামিন অনেক প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। কারণ ভিটামিনের অভাবে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এবং বিভিন্ন রোগ শরীরে দ্রুত বাসা বাধে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য রাখা প্রয়োজন। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। 

খনিজ 

খনিজ বলতে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদিকে বোঝায়। সুস্থ থাকার জন্য খনিজ ও মিনারেল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সবুজ শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাংস ইত্যাদি থেকে মিনারেল পাওয়া যায়। শুকনো ফল ও খাবার, ছোট মাছ, কাঁচকলা থেকে খনিজ পাওয়া যায়। এই উপাদান হাড় ও দাঁঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। 

পানি 

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস বা ৩-৩.৫ লিটার পানি পান করা উচিত। সাধারণত একজন মানুষ কি পরিমাণে  প্রতিদিন পানি পান করবে তা নির্ভর করবে বয়স, ওজন, পরিশ্রম ও ভৌগলিক আবহাওয়ার উপরে।  

সুষম খাদ্যের গুরুত্ব 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি 

সুষম খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। এতে ভাইরাসজনিত রোগ সহজে বাসা বাধতে পারেনা। 

কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে 

আমরা প্রতিদিন কাজ করি। আর কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় শক্তি। মূলত খাবার থেকেই শক্তি পেয়ে থাকে। সুষম খাদ্য নিয়মিত গ্রহণের ফলে আমাদের দেহে শক্তি সঞ্চয় হয় যার ফলে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নতি 

সুষম খাদ্যে থাকা ভিটামিন ও খনিজ আমাদের ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নতি করতে সাহায্য করে। 

স্ট্রেস কমায় 

সাধারণত ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি সুষম খাদ্যে পাওয়া যায়। যা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। যাদের স্ট্রেসে ভুগছেন তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য রাখা জরুরী। 

মানসিক ও দেহ গঠন বৃদ্ধি করে 

আমাদের দেহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঠিক ভাবে বৃদ্ধি ও বিকাশ করতে সাহায্য করে সুষম খাদ্য। এছাড়াও মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে বেশ কার্যকরী। 

হজম শক্তি বৃদ্ধি 

সুষম খাবারে ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 

সুষম খাদ্যের রুপরেখা বা খাদ্য পিরামিড 

খাদ্য পিরামিড বলতে একটি পিরামিড সদৃশ চিত্র যেখানে আমাদের সুষম খাদ্য গ্রহনের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে। 

সর্বনিম্ন স্তরে

এই স্তরে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার থাকে। যেমন ভাত, রুটি, নুডলস, ওটস, আলু, চিড়া ইত্যাদি। এই ধরনের খাবার আমাদের দেহের শক্তি জোগান দিয়ে থাকে। তাই সবচেয়ে বেশি এই খাবার গ্রহণ করা উচিত। 

দ্বিতীয় স্তরে 

শাক সবজি ও ফলমূলের স্থান হলো খাদ্য পিরামিডের দ্বিতীয় স্তরে। এই ধরনের খাবারের প্রচুর পরিামণে ভিটামিন পাওয়া যায়। তাই বেশি করে খেতে হবে। 

বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী খাদ্য তালিকা ও পুষ্টিকর খাবারের তালিকা

তৃতীয় স্তরে

মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ও দুগ্ধজাত খাবার সমূহ পিরামিডের তৃতীয় স্থানে অবস্থান করে। এই সমস্ত খাবার থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পেয়ে থাকি। যা আমাদের দেহ গঠন, বিকাশ ও মাংস পেশী বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই স্তরের খাবার আমাদের পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।  

পিরামিডের র্শীষে 

তেল, চর্বি, লবন ও মিষ্টি জাতীয় খাবার পিরামিডের র্শীষে অবস্থান পায়। আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এগুলো খাবার কম করে খেতে হবে।  

সুষম খাদ্য

সুষম খাদ্য তালিকা করার নিয়ম 

  • ব্যক্তির বয়স, ওজন, কর্ম এই বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। 
  • দৈহিক প্রয়োজন অনুযায়ী কতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন হয় তা খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করার সময় নিশ্চিত করতে হবে। 
  • দেহ গঠন ও ক্ষয়পূরণে আমিষ সরবরাহ করে এমন খাবার তালিকায় রাখতে হবে। 
  • খাদ্য তালিকায় ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানির ‍উপস্থিতি থাকতে হবে। 
  • খাদ্য তালিকায় গঠন করার সময়ে অবশ্যই ব্যক্তির রুচি ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। 
  • খাদ্য তালিকা প্রস্তুতের সময় ব্যক্তির অর্থনৈতিক বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। 
  • আবহাওয়া ও ঋতুর কথা চিন্তা করে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। 

সুষম খাবারের রুটিন 

সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাবার গ্রহনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। বয়স, ওজন ও রুচির ওপর নির্ভর করে সুষম খাবারের তালিকা আলাদা হয়ে থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সুষম খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিত তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক- 

সকালে 

সকালের খাবার পুষ্টিকর ও ভারী হওয়া দরকার। কারণ সারাদিন বিভিন্ন কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যদি সকালের খাবার অপুষ্টিকর বা হালকা হয় তাহলে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যাবেনা। এবং অল্পতে দুর্বল ও কান্তি লাগতে শুরু করবে। তাই সকালের নাসতায় পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। সুষম খাদ্য খুব সহজেই পুষ্টির অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ডিম, সবজি, ফলমূল, পরোটা বা ভাত খাওয়া যেতে পারে। যা আপনাকে প্রোটিন, শর্করা ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে। 

দুপুরে 

দুপুর ১ টা থেকে ২টার মধ্যে দুপুরের খাবার সেরে ফেলা উচিত। মেন্যুতে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখার চেষ্টা করুন। যা শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আঁশজাতীয় শাকসবজি খেতে হবে। আমিষকে বাদ দেওয়া যাবেনা। সহজ একটি উপায় হলো, দুপুরের খাবারের অর্ধেক পরিমাণে শাকসবজি ও এক-চতুর্থাংশ শর্করা এবং এক-চতুর্থাংশ কার্বোহাইড্রেট রাখতে হবে। 

সন্ধ্যায় 

সন্ধ্যায় তেলজাতীয় ভাজা পোড়া খাবার পরিহার করতে হবে। স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস আইটেমগুলো রাখা যাবে। 

রাতে 

রাতের খাবার একটু কম খাওয়া ভালো। এবং তাড়াতাড়ি খেতে হবে। এতে হজমপ্রক্রিয়া ভালো কাজ করে। রাতেও শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডাল খাওয়া খেতে হবে। যাদের অতিরিক্ত ওজন তারা চাইলে ভাতের পরিবর্তে রুটি খেতে পারেন। 

উপরোক্ত আলোচনায় সুষম খাদ্য কি, সুষম খাদ্যের গুরুত্ব, কিভাবে সুষম খাবারের তালিকা গঠন করতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই দৈনিক খাবারগুলো সুষম খাদ্যের অর্ন্তভুক্ত হতে হবে। এতে শরীর থাকবে সতেজ ও রোগহীন মুক্ত। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.