ইসবগুল একটি গুল্ম জাতীয় উদ্দিদ।ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে এর আদি বাসস্থল। ইসবগুলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো (Plantago Ovata)। ইসবগুলের ভূষি মূলত এক ধরনের রবিশস্য। ভারতীয় উপমহাদেশে এটি বহুল পরিচিত।তবে শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয় বরং পুরো পৃথিবিতেই এটি এখন বহুল জনপ্রিয়। বিদেশি বাজারে এই ইসবগুল সিলিয়াম হাস্ক (Phyllium Husk) নামে পরিচিত। সিলা (Phyllia) অর্থ ডানা হিন ফ্লি মাছি। ইসবগুলের ভুষির আকৃতি কিছুটা এই ফ্লি মাছিস মতোই। তাই বিদেশি বাজারগুলোকে এটি সিলিয়াম হাস্ক নামেই পরিচিতি লাভ করেছে।ধারনা করা হয় ভারতীয় উপমহাদেশে এই ইসবগুলের ভুষি প্রবেশ করেছে ষোড়শ শতকে বা মোগল আমলে। সাধারনত পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা এই ভুষি খেয়ে থাকি। তবে এটি শুধু পেটের সমস্যা কমাতেই নাহ, আমাদের শরীরের জন্য আরও অনেক উপকারি এই ইসবগুলের ভুষি। এটি মূলত একধরনের ডায়েটারি ফাইবার,যার কিছু অংশ পানিতে দ্রবীভূত হয় আবার কিছু অংশ পানিতে দ্রবীভূত হয় নাহ।
ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
কোষ্টকাঠিন্য প্রতিরোধেঃ অনেক সময় পানি কম খাওয়া, অতিরিক্ত মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া, কিংবা দীর্ঘক্ষন যাবত বসে থাকার ফলে অর্থাৎ কোনো শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলে আমাদের অনেকের ই কোষ্টকাঠিন্য এর সমস্যা দেখা যায়। এটি একটি বিরক্তিকর এবং যন্ত্রনাদায়ক সমস্যা।ইসবগুলের ভুষি এই কোষ্টকাঠিন্য প্রতিরোধে দারুন কাজ করে।
হজমে সাহায্য করেঃ ইসবগুলে থাকা ফাইবার খাবার হজমে সাহায্য করে সেই সাথে পেটের স্বাস্থ্য ও ভালো রাখতে সাহায্য করে ।
ডায়রিয়া প্রতিরোধেঃ ইসবগুলের ভূষি ডাইরিয়া প্রতিরোধে চমৎকার টনিক হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় বদহজমের কারনে অনেকের ডায়রিয়া সমস্যা দেখা যায়। এসময় এক গ্লাস পানিতে ইসবগুল মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার পাবেন।
পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করেঃ প্রচন্ড গরমে কিংবা পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের সময় খেতে পারেন এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখা ইসবগুলের ভুষি। এটি আপনার পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে, সেই সাথে আপনার শরীর কে রাখবে ফ্রেশ এবং সতেজ!
রক্তে কোলেস্টেরল কমায়ঃ নিয়মিত ইসবগুলের ভুষি খেলে এটি আমাদের অন্ত্রে একটি স্তর তৈরী করে। এই স্তর কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দিয়ে থাকে, ফলে রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
আমাশয় জীবানূ থেকে রক্ষা করেঃ ইসবগুলের ভূষি খেলে এটি আমাশয় এর জীবানু থেকে আমাদের রক্ষা করবে। আমাশয় মূলত মানব অন্ত্রে রোগজীবানুর সংক্রমিত রোগ।শিগেলা (Shigella) গণভুক্ত ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে প্রবেশ করলে এই আমাশয় হয়ে থাকে। তবে ইসবগুলের ভুষি আমাদের শরীর থেকে এই শিগেলা ব্যাকটেরিয়া দমনে সাহায্য করে। তাই শীতকালে অথবা রমজান মাসে নিজেদের খাবার তালিকায় রাখুন এই দারুন উপকারি ইসবগুলের ভুষি।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ইসবগুলের ভুষিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। এটি আমাদের পেট কে যেমন একদিকে ঠাণ্ডা রাখে,সেই সাথে দীর্ঘক্ষন আমাদের পেট ভরা রাখতেও সাহায্য করে। এর ফলে ক্ষুধা ভাব কিছুটা কম মনে হয়।তার আপনারা যারা ওজন নিয়ে সমসায় ভুগছেন, তারা নিজেদের ডায়েট খাবার লিস্টে রাখতে পারেন এই ইসবগুলের ভুষি।
ইউরিনের সমস্যা কমাতেঃ যাদের ইউরিন ইনফেকশন সমস্যা আছে তাদের জণ্য এই ইসবগুল্কের ভুষি অনেক বেশি উপকারি। ইউরিনের জ্বালাপড়া সমস্যা কমাতে রোজ সকালে এক গ্লাস পানিতে এই ভুষি মিশিয়ে খেলে অনেক উপকৃত হবেন, সেই সাথে মাথা ঘোরা বা মর্নিং সিকনেস কমাতেও আপনি এক গ্লাস পানিতে কিছু আখের গুড় এবং এই ভুষি মিশিয়ে খেতে পারেন
ডায়েবেটিকস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করেঃ ইসবগুলের ভুষি কিন্তু ডায়েবেটিকস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। এই ভুষি গ্লাইসেমিক ইনডেস্ককে কন্ট্রোল করতে পারে। ফলে এটি রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কে কমিয়ে ডায়েবেটিকস কমাতে সাহায্য করবে।
আইবিএস চিকিৎসায়ঃ আমারা অনেকেই আইবিএস সমস্যায় ভূগে থাকি। আইবিএস সমস্যা হলো পরিপানালিরএকটি ক্রিয়ামূলক ব্যাধি। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যাক্তিদের রেগুলার পায়খান কখনো কষা কখনো বা পাতলা হয়ে থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করুন সেই সাথে রোজ সকালে ইসবলের ভুষি খেলেও বেশ উপকার পাবেন।
কীভাবে খাবেন এই ভুষি?
- যেকোণো খাবার ই আপনাকে পরিমিত পরিমানে খেতে হবে। বেশ কিছু জানার্লের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ গ্রাম ইসবগুলের ভুষি খাওয়াই যথেষ্ট। সাধারন। খাওয়ার আগে অথবা খাওয়ার পরে আপনি এক গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ ভুষি ভিজিয়ে রেখে,আপনার টেস্ট অনুযায়ী এটা লবন অথবা গুড় মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে চেষ্টা করবেন সুগার বা চিনি এভোয়েড করার জন্য।
- যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন , তারা খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এই ইসবগুলের ভুষি খাবেন। এতে করে এতে থাকা ফাইবার আপনার পেট ভরা রাখবে, এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে আপনাকে সাহায্য করবে।
- যাদের কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা তার ইসবগুলের ভুষি এবং দই খেলে উপকৃত হবেন। সাই সাথে এটি পেট এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।
- যেকোনো ভাড়ি খাবার বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পর এই ভুষি খেলে মিলবে দারুন উপকার। কারন ভুষি আমাদের খাদ্যনালী থেকে চর্বি বা কোলেস্টেরল স্পঞ্জের মতো শুষে নেই, এতে করে আপনার শরিরে কোনো এক্সট্রা ফ্যাট বা চর্বি জমা হবে নাহ। যা আপনাকে একটা হেলদি এবং ফিট শরীর বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
সর্তকতা
ইসবগুলের ভূষি আমাদের দেশে এখন বেশ সহজলব্য। এবং হাতের নাগালেই পাওয়া যায় জন্য অনেকেই এখন নিজেদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রাখছেন এই ভুষি। তবে বাজার থেকে কেনা ইসবগুলের ভুষি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত! আপনি কি এটা একবার ভেবে দেখেছেন?চলুন জেনে নেওয়া যাক ইসবগুলের ভুষি কেনার আগে আমাদের কোণ কোণ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, এবং কীভবে সঠিক নিয়মে এই ভুষি খেতে হবে-
- বাজারে বিভিন্ন ধরনের কৃত্তিম স্বাদ বা কালারের ইসবগুলের ভূষি ও কিনতে পাওয়া যায়, ভূলেও এসব ভুষি কিনবেন নাহ। মনে রাখবেন অর্জিনাল ইসবগুলের ভুষি এর কোনো নিজস্ব স্বাদ থাকে নাহ। তাই চেষ্টা করবেন সম্পুর্ন ফ্রেশ এবং অর্জিনাল ইসবগুল ক্রয় করার জণ্য।
- ইসবগুলের ভূষি বেশি পরিমানে খাওয়া ঠিক নাহ। ডাক্তারের পরামর্শ অনু্যায়ী দৈনিক ৫ থেকে ১০ গ্রাম, এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া দৈনিক ৫ গ্রাম পরিমান খেলেই যঠেষ্ট।
- ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার পর প্রচুর পরিমানে পানি পান করবেন। কারন ইসবগুলের ভূষি খাওয়ার পর এটি পেটের মাঝেই প্রায় ১০ গুন পরিমান ফুলে ঊঠতে পারে।
- দীর্ঘক্ষন ভিজিয়ে রাখা ইসবগুলের ভুষি না খাওয়ায় উত্তম। চেষ্টা করবেন ভুষি ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলার জণ্য। এবং এই এই ভুষি খাওয়ার পর প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়ার জন্য।তাহলে এটি আপনার শরীরে ভালো ভাবে কাজ করবে।
- যাদের বিশেষ স্বাস্থ্যসমস্যা রয়েছে, বা জটিল কোণো রোগে ভুগছেন, তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ইসবগুলের ভূষি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
বিন্নি ফুডের ইসবগুলের ভুষি কেন খাবেন?
- আমাদের ইসবগুলের ভূষিতে কোনো রকম ভেজাল মীশ্রন নেই। এবং আপনাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার কথা ভেবে এতে কোনো রকম কৃত্তিম স্বাদ বা কালার ও এড করা নেই।
- বিন্নি ফুড আপনাকে দিচ্ছে সম্পুর্ন ফ্রেশ এবং ভেজালমুক্ত প্রিমিয়াম মানের প্রডাক্টের ১০০% নিশ্চয়তা।
- সম্পুর্ন নিজস্ব তত্বাবধানে প্যাকেজিং করে গ্রাহক অব্দি পৌছানোর দায়িত্ব।