You are currently viewing মুন্সিগঞ্জ ভাগ্যকুলের মিষ্টির ইতিহাস, কেন বিখ্যাত ও রেসিপি

মুন্সিগঞ্জ ভাগ্যকুলের মিষ্টির ইতিহাস, কেন বিখ্যাত ও রেসিপি

বলা হয়ে থাকে ভাগ্যকুলে গেলে সবার ভাগ্য খুলে যায়। জনশ্রুতি যাই থাকুক তবে এই ভাগ্যকুলে কিন্তু ঐতিহ্যবাহী ভাগ্যকুল মিষ্টির ভাগ্য খুলে গেছে। পদ্মার পার ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা বিখ্যাত এই ভাগ্যকুল বাজারে তৈরি হয় ঐতিহাসিক ঘোল এবং মিষ্টির। 

স্বাদে অনন্য ও নাগালের মধ্যে থাকা এই ঘোল ও মিষ্টির স্বাদ নিতে অনেকেই ঢাকা তথা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সেখানে যায়। আমাদের আজকের আলোচনায় আমরা ভাগ্যকুলের মিষ্টির ইতিহাস ও তৈরির রেসিপি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবো। 

ভাগ্যকুলের মিষ্টি কেন বিখ্যাত?

বর্তমান সময় মিষ্টি সকল জেলায় বরং প্রায় সব বাজারেই তৈরি হয়। কিন্তু সব মিষ্টি সকলের কাছে জনপ্রিয়তা পায় না। কারণ মিষ্টি তথা যে কোন খাদ্য মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেতে হলে তাকে অনন্য এবং সবার থেকে আলাদা হতে হবে। সেই দিক থেকে ভাগ্যকুলের মিষ্টি তার অনন্য স্বাদের কারণে সারা দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই মিষ্টির বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এতে গাভীর খাঁটি দুধ ব্যবহার করা হয়। এমনকি এই দুধে কোন প্রকারের পাউডার দুধ ব্যবহার করা হয় না। 

অন্যদিকে, পদ্মার পানি এবং মাটির চুলায় দুধ জ্বাল দেওয়া হয়। যা মিষ্টির স্বাদে ভিন্নতা আনে। প্রথম দিকে যখন জমিদারেরা এই মিষ্টি পছন্দ করা শুরু করে তখন অল্প সময়ের মধ্যেই এই জনপদের সকল জমিদার তাদের খাদ্য তালিকায় এই মিষ্টি যোগ করে। এর অনন্য স্বাদের কারণে তারা অতিথি আপ্যায়নের জন্য ভাগ্যকুলের মিষ্টি ব্যবহার করতো। খাঁটি দুধের মিষ্টি হওয়ায় লম্বা সময় সতেজ ও খাদ্য উপযোগী থাকে। যা এর সুনাম বৃদ্ধিতে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। 

জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ভাগ্যকুল শুধু মিষ্টির জন্যই বিখ্যাত নয়। এখানে পাওয়া যায় জননন্দিত এবং বিখ্যাত ঘোল। এই ঘোলের স্বাদ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোজন রসিক মানুষ ভাগ্যকুলে ভ্রমণ করে। মূলত এই জনপদ মিষ্টি এবং ঘোলের জন্য এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাদের এলাকায় স্থাপিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ডেইরী ফার্মের জন্য। অর্থাৎ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডেইরী ফার্ম ভাগ্যকুলে অবস্থিত। যা থেকে উক্ত এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুধ সাপ্লাই হয়। 

মুন্সিগঞ্জ ভাগ্যকুলের মিষ্টির ইতিহাস

মুন্সিগঞ্জ ভাগ্যকুলের মিষ্টির ইতিহাস

জনশ্রুতি আছে ভাগ্যকুলে ১৩ জন জমিদারের বসতি ছিল। জমিদার গণ এই এলাকায় বাড়ি তৈরি করে থাকতে পছন্দ করতো। কারণ এই এলাকা পদ্মা নদীর পাশেই অবস্থিত এই জন্য ব্যাবসায়িক সুবিধার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সাৌন্দর্য সমৃদ্ধ ছিল। তো মানুষ একটা সময় মনে করতো এখানে বসতি স্থাপন করলে ভাগ্য খুলে যায়। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে সেই ব্রিটিশ আমলের পূর্বে যখন জমিদারি প্রথা প্রচলিত ছিল তখন পূর্বের নাম পরিবর্তন করে এই এলাকার নাম ভাগ্যকুল হয়ে যায়।

যাইহোক, পূর্ব থেকেই চর এলাকায় অনেক বেশি গরু প্রতিপালিত হতো। এই জন্য উক্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাওয়া জেত। তৎকালীন জমিদার গণ ছিলেন অনেক ভোজন রসিক। বর্তমানে বাংলাদেশে যত ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার আছে তার বেশিরভাগ সৃষ্টি হয়েছে জমিদার আমলে। এর থেকে বোঝা যায় তারা মিষ্টি খেতে অনেক পছন্দ করতো। এর ধারাবাহিকতায় গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার তাদের চতুর্থ জেনারেশন থেকে মিষ্টি তৈরি করে আসছে।

শুরুর দিকে এই দোকানের মালিক গোবিন্দ দে তৎকালীন জমিদারদের জন্য মিষ্টি তৈরি করা শুরু করেন। একটা দীর্ঘ সময় জমিদারদের বাইরে কোন সাধারণ মানুষের কাছে কোন মিষ্টি বিক্রি করার সুযোগ ছিল না। কারণ জমিদারগণ তাদের সকল ধরনের অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে সব থেকে ভালো ও ইউনিক জিনিস পরিবেশ করা পছন্দ করতো। সময়ের সাথে সাথে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হয় এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। 

এর সাথে সাথে পদ্মার পারের মানুষের ভাগ্য পাল্টে এই জনপদের নাম ভাগ্যকুল হয়ে যায়। যাইহোক, যখন সাধারণ মানুষের কাছে এই সুস্বাদু মিষ্টি চলে আসে তখন তা উক্ত অঞ্চল থেকে দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে আসে এবং মিষ্টি খেতে শুরু করে। এভাবে ভাগ্যকুলের মিষ্টি ইতিহাস রচনা করে। 

ভাগ্যকুলের মিষ্টি কিভাবে তৈরি করে?

ভাগ্যকুলের মিষ্টি কিভাবে তৈরি করে?

প্রতিটি জেলা ও অঞ্চল ভিত্তিক বিখ্যাত কিছু খাবার, জিনিস কিংবা জায়গা থাকে। যা ঐ জেলার বিখ্যাত বা ফেমাস। যেমন বগুড়া দই মিষ্টির জন্য, গাইবান্ধা রসমঞ্জুরি, পাবনার ঘি, প্যারা সন্দেস, নওগা জেলার প্যারা সন্দেস, পোড়াবাড়ির চমচম, খুলনার চুইঝাল ইত্যাদি। মুন্সিগঞ্জ ভাগ্যকুল মিষ্টি ও এর বিপরীত নয়।

এর তৈরির প্রসেস কিছু টা সাধারন মিষ্টির মতো মনে হলেও অসাধারন টেষ্ট রয়েছে। আর তৈরি দক্ষতার কৌশল এর স্বাদকে করেছে বিখ্যাত ও সবার কাছেই প্রিয়। ভাগ্যকুলের মিষ্টি (Bhagyakul Misty) তৈরির প্রক্রিয়া অন্যান্য সাধারণ মিষ্টির মতই। তবে তাদের মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়ায় কিছু গোপনীয়তা আছে। এখানে কীভাবে ভাগ্যকুলের মিষ্টি তৈরি করা হয় সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো। 

উপকরণঃ খাঁটি দুধ, ছানা, এলাচ, ময়দা

মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া

সাধারণত ভাগ্যকুলের মিষ্টি তৈরি করার জন্য সবার প্রথমে দুধ ভালো করে ছেঁকে নিয়ে তা প্রায় ২০ মিনিটের মত জ্বাল করে নিতে হয়। দুধ গাঢ় রঙের হলে তাতে পরিমাণ মত ভিনেগার দিয়ে নিতে হবে। ভিনেগার দেওয়ার কিছুক্ষণ পর সেই দুধ ছানায় পরিণত হবে। এখন ছানা সেই পাত্র থেকে তুলে সুতি কাপড়ের মধ্যে নিয়ে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে।

শুকনো ছানা অন্য একটি পাত্রে নিয়ে তাতে পরিমাণ মত চিনি, ময়দা ও এলাচের গুঁড়া দিয়ে তা ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। মেশানো হয়ে গেলে ছানা গুলো থেকে হাতের সাহায্যে গোল গোল মিষ্টির দানা তৈরি করে নিতে হবে। দানা তৈরি হয়ে গেলে এখন বড় একটি কড়াইয়ে চিনি জ্বাল করে তা সিরা তৈরি করতে হবে।

সিরা হয়ে গেলে সেই গরম সিরায় মিষ্টির দানা ছেড়ে দিতে হবে। দানা গুলো লালচে বাদামি কালার ধারণ করা পর্যন্ত চিনির রসে ভেজে নিতে হবে। ভাঁজা শেষ হলে তা অনেকটা ফুলে উঠবে। এমন সময় সেই মিষ্টি গুলো গরম সিরা থেকে তুলে ঠান্ডা শিরার মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে। কিছু সময় ডুবে থাকার পর তা খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে যাবে। 

মূলত এই সকল পদ্ধতি অনুসরণ করে সহজেই ভাগ্যকুলের মিষ্টি তৈরি করা যাবে। তবে মনে রাখতে হবে পদ্মার পানি এবং মাটির চুলা থাকা একটি অতি আবশ্যকীয় বিষয়। অর্থাৎ ভাগ্যকুলের মিষ্টির স্বাদ পেতে আপনাকে এগুলো অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.