নারিকেল তেল প্রাকৃতিক উপাদান থেকে পাওয়া যায়। এই তেলে রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। রান্নার কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও এর নানাবিধ ব্যবহার বিধি রয়েছে। আমাদের আজকের লেখায় আমরা নারিকেল তেলের উপকারিতা ও রূপচর্চায় এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখান থেকে আপনি নারিকেল তেল কীভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আমাদের নানান কাজে লাগে তা জানতে পারবেন।
নারিকেল তেলের উপকারিতা
নারিকেল আমাদের সবার পরিচিত একটি সুস্বাদু ফল। নারিকেল খাওয়া বাদেও এর নানাবিধ বৈচিত্র্যময় ব্যবহার রয়েছে। আমরা আজকে নারিকেল দ্বারা তৈরি তেলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
ত্বকের দাগ কমায়
বিভিন্ন কারণে আমাদের ত্বকে দাগ হয় যা সৌন্দর্যকে বিকশিত করতে বাঁধা দেয়। বাজারে দাগ দূর করার নানান রকমের ক্রিম পাওয়া গেলেও সেগুলোর নানাবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তবে ত্বকের যে কোনো দাগ দূর করার জন্য নারিকেল তেল অনেক কার্যকরী। এটি একটি প্রাকৃতিক ট্রিটমেন্ট হওয়ায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সাধারণত নিয়মিত ত্বকে নারিকেল তেল মাখলে সেটি ত্বকের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। এতে শরীরে থাকা দাগ ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে ত্বকের রং ধারণ করে।
চুল ঘন ও শক্তিশালী করে
আমরা সাধারণত নারিকেল তেল বলতে শুধু চুলে ব্যবহার করা যায় এমনটা ভাবি। তবে এই তেল চুলের পাশাপাশি আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। যাইহোক, চুল ঘন কালো ও লম্বা করতে চাইলে নারিকেল তেলের কোনো বিকল্প নেই। এই তেল প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের পুষ্টি বৃদ্ধি করে এবং পর্যাপ্ত প্রোটিন সরবরাহ করে। এতে চুলের গড়া শক্তিশালী হয়, খুশকি দূর হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। চুলের আগা ফাটার কারণে এর সিল্কি ভাব দূর হয় যা নারিকেল তেল ব্যবহার করে ফিরিয়ে আনা যায়। অর্থাৎ চুলের যত্নে নারিকেল তেল অতুলনীয়।
ঠোঁট সুন্দর করে
আমাদের অনেকের ঠোঁট সব মৌসুমেই ফেটে যায় যা দেখতে অসুন্দর ও যন্ত্রণাদায়ক হয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ এই তেল ঠোঁট আর্দ্র রাখে এবং এর টক নরম ও মসৃণ করে। এতে ঠোঁট ফাটা কমার সাথে সাথে কালো ভাব দূর হয়। অর্থাৎ নারিকেল তেল নিয়মিত ঠোঁটে ম্যাসেজ করলে ঠোঁট নরম ও মসৃণ হয়।
নখ শক্ত করে
নখ আমাদের দেহের সৌন্দর্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোনো কারণে তা ভাঙ্গা বা ফাটা থাকলে দেখতে অনেক খারাপ দেখায়। নখের যত্ন নেওয়ার জন্য নারিকেল তেলে একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক সমাধান। প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার নখে নারিকেল তেল মালিশ করে নখ অনেক শক্ত ও সুন্দর হয়। কারণ নারিকেল তেল নখের হাইড্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে তা ভাঙার হাত থেকে রক্ষা করে।
তারুণ্য বজায় রাখে
আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি কীভাবে বেশি সময় ধরে আমাদের দেহের তারুণ্য ধরে রাখা যায়। নিয়মিত নারিকেল তেলের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে শরীরে ব্যবহার করলে তা বয়স কমাতে সহায়তা করে।
নারিকেল তেলের মধ্যে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি থাকে যা সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। এতে শরীরের ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত থাকে, সে কারণে চেহারায় বয়সের ছাপ পরে না।
হজমে সাহায্য করে
সাধারণত নারিকেল তেল বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য বেশি পরিচিত হলেও রান্নার কাজে ইউজ করা যায়। নারিকেল তেল খাবারের সাথে গ্রহণ করলে তা পাকস্থলীতে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। তাছাড়া এই তেল দিয়ে তরকারি খেলে তা অন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ করে
নারিকেল তেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ নিয়মিত এই তেল খেলে তা দেহের কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে দেহের বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি সঞ্চয় হয়।
নারিকেল তেলের ব্যবহার
নারিকেল তেলের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। নিচে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
র নারিকেল তেল
সরাসরি নারিকেল থেকে তৈরি করা তেলে কোন কিছু না মিশিয়ে প্রস্তুত করাকে র নারিকেল তেল বলে। অর্থাৎ নারিকেল তেল তৈরি করার সময় এতে এক্সট্রা কোন উপাদান মেশানো হয় না। অন্যদিকে এটি ব্যবহার করার সময়ও কোনো কিছু মেশানো হয় না।
র নারিকেল তেল এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত। এই তেল প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয় এবং এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে খাবারের সাথে খেলে একাধারে চর্বি কমায় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
নারিকেল তেল ও মেথি
চুলের যত্নে নারিকেল তেলের সাথে মেথি মিশিয়ে ব্যবহার করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। সাধারণত তেলের সাথে মেথি মিশিয়ে উক্ত তেলের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা হয়। মেথিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাস থাকে যা চুলের খুশকি ও ইস্ট দমন করে। এতে চুল ঘন কালো ও মজবুত হয়।
নারিকেল তেল ও লেবুর রস
লেবুর রস এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে ত্বকের দাগ দূর করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ ত্বকের দাগ দূর করার জন্য যে যে উপাদান প্রয়োজন তার সব নারিকেল তেল ও লেবুর রসে রয়েছে। দুটি উপাদান যখন একসাথে মেশানো হয় তখন এদের পুষ্টি ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে।
নারিকেল তেল ও অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরাকে আমরা চুলের পরম বন্ধু হিসেবে চিনি। কারণ এতে রয়েছে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, সি, ই, বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিড। এই উপাদানগুলোর সাথে যখন নারিকেল তেল যোগ করা হয় তখন এদের কার্যক্ষমতা আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। যা চুলের বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করে। অন্যদিকে এই দুইটি উপাদান সম্মিলিত হয়ে চুল শক্ত করে, গোঁড়া মজবুত করে, আগা ফাটা প্রতিরোধ করে এবং চুলের সজীবতা এবং স্নিগ্ধতা নিশ্চিত করে।
এগুলো বাদেও আরও কিছু নারিকেল তেলের ব্যবহার রয়েছে যা সংক্ষেপে নিচে দেওয়া হলো।
- মেকআপ রিমুভার হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করা যায়
- নেইলপলিশ তুলতে এই তেল সাহায্য করে
- এই তেলের সাথে চিনি মিশিয়ে কার্যকরী বডি স্ক্রাব তৈরি করা যায়
- বেকিং সোডা ও কর্ণ স্টার্চ এর সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট তৈরি করা যায়
- ব্যথামুক্ত অবাঞ্ছিত লোম কেটে ফেলার আগে উক্ত স্থানে এই তেল ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়
- কনজেশন রিলিফ ক্রিম হিসেবে ব্যবহারের জন্য নারিকেল তেল অনেক কার্যকরী
- আইভ্রু কালো ও ঘন রঙের করার জন্য এই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এই তেল দিয়ে কুলকুচা করে উপকার পাওয়া যায়
- ব্যাগের চেইন, চুরি, আংটি, নাকফুল বা কানের দুল খোলার জন্য নারিকেল তেল ব্যবহার করা হয়।
রূপচর্চায় নারিকেল তেল
নারিকেল তেল খাবার থেকে রূপচর্চায় সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়। নিচে রূপচর্চায় কি কি কাজে নারিকেল তেল ব্যবহার কর হয় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
চুলের যত্নে
চুল ঘন, কালো ও মসৃণ করতে নারিকেল তেল সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয়। কারণ এই লেতে আছে চুলের গড়া মোটা করার উপাদান সহ আরও অনেক পুষ্টিগুণ।
তাছার এটি একটি ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে, জট ধরা চুল মসৃণ করতে ও চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ময়েশ্চারাইজার
ত্বকে ময়েশ্চারাইজার অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস কারণ এর কারণেই ত্বকে সজীবতা ও খসখসে ভাব থাকে না। নারিকেল তেল একটি ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি সরাসরি ত্বকে মাখানো যায় জন্য সারাদিন ত্বক সুস্থ ও সজেত রাখে।
প্রাকৃতিক টোনার
নারিকেল তেল ত্বকের টোনার হিসেবে কাজ করে। ত্বকে থাকা লোমকূপ থেকে আসা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
ব্রণ দূর করতে
নারিকেল তেল লোমকূপে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে। এতে ত্বকে থাকা ময়লা থেকে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় । এই কারণে নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার করলে ব্রণ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
উপরিউক্ত লেখায় নারিকেল তেলের উপকারিতা, ব্যবহার ও রূপচর্চায় এর অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে। আসা করি লেখাটি পরে আপনি এই তেল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন।