You are currently viewing বিভিন্ন প্রকার তেলের পরিচিতি, তেল কত প্রকার ও কি কি?

বিভিন্ন প্রকার তেলের পরিচিতি, তেল কত প্রকার ও কি কি?

তেল আমাদের খাদ্য প্রস্তুত করার অন্যান্য উপাদানের মধ্যে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কোন কিছু ভাজি বা ভুনা করার জন্য তেলের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশে সরিষার তেল এবং সয়াবিন তেল বাদেও আরও অনেক ভোজ্য তেল রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। আমাদের আজকের লেখায় আমরা তেল কত প্রকার ও কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

তেল কত প্রকার ও কি কি?

তেল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে কোন খাবার রান্না করার সময় আমাদের তেল ব্যবহার করতে হয়। তেল আমাদের খাবারকে ভালোভাবে রান্না করতে ও স্বাদ বাড়াতে কাজে লাগে। অন্যদিকে এতে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। ভোজ্য তেলকে সাধারণত প্রাণিজ তেল ও উদ্ভিজ্জ তেল এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। নিচে এই দুই শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

প্রাণিজ তেল

অ্যানিম্যাল অয়েলের আরেক নাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট। বিশেষত প্রাণী দেহ থেকে যে চর্বি পাওয়া যায় তাকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বলা হয়। যেমন গরুর চর্বি, খাসির চর্বি, ঘি, মাখন ইত্যাদি প্রাণিজ তেল হিসেবে ব্যবহার হয়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের জন্য তেমন স্বাস্থ্যকর না হওয়ায় আমরা রান্নার কাজে ভেজিটেবল অয়েল ব্যবহার করি। 

উদ্ভিজ্জ তেল

উদ্ভিজ্জ তেল বা ভেজিটেবল অয়েলকে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বলা হয়। বিশেষত ভোজ্য তেল বলতে আমরা উদ্ভিজ্জ তেলকেই বুঝি। সাধারণ বিভিন্ন শস্য বীজ থেকে তৈরি করা তেল কে ভেজিটেবল অয়েল বলা হয়। এই তেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, বাদাম তেল, সূর্যমুখীর তেল, ভুট্টার তেল ইত্যাদি। নিচে বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি জনপ্রিয় তেল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

সরিষার তেল 

বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন বিল জুড়ে হলুদ এক ফুলের সমাহার শুরু হয়। দেখতে সুন্দর এই ফুল থেকে অনেক মিষ্টি ঘ্রাণ চারপাশ মুখরিত করে রাখে। সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই ফুলের গাছের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। আমরা এতক্ষণ যে উদ্ভিদ নিয়ে আলোচনা করলাম সেটি আসলে আমাদের সবার পরিচিত সরিষার গাছ। সরিষার বীজ থেকে উৎপাদিত সরিষার বা সর্ষের তেল রান্নার কাজের জন্য ব্যাপক পরিচিত। বিশেষ করে ঘানিতে ভাংগা খাটি সরিষার তেল।

খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এই তেলের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। সাধারণত সরিষার তেলের স্বাদ ঝাঁঝালো হয়। তবে এই তেল রান্নায় ব্যবহার করার পর খাবার থেকে অনেক সুন্দর একটি ঘ্রাণ আসে এবং রুচি বেড়ে যায়। এই তেল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া সরিষার তেল ব্যবহার করলে শরীরের ত্বক পরিপুষ্ট হয়, হাড় মজবুত হয়, সর্দি কাশির সমস্যা তথা ঠাণ্ডার সমস্যা দূর হয়। 

সূর্যমুখীর তেল 

সূর্যমুখীর তেল

সূর্যমুখী ফুলের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। অন্যান্য ফুলের মত সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি এই ফুলের বীজ দিয়ে তৈরি করা হয় উচ্চমূল্যের ভোজ্য তেল। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই তেল বাংলাদেশেও বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। সূর্যমুখীর তেলের রয়েছে নানান ভেষজ গুন। তাছাড়া নিয়মিত এই তেল রান্নার সাথে খেলে শরীরের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। সাধারণত সূর্যমুখীর তেল নিয়মিত গ্রহণ করলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে। কারণ এই তেলে রয়েছে খুম অল্প পরিমাণে কোলেস্টেরল এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ডি ও ই। তাছাড়া এই তেল ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে, হাড়ের সমস্যা দূর করে, শরীরের ব্যথা ও ক্ষয় রোগ দূর করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

বাদাম তেল 

আমরা জানি বাদাম একটি চমকপ্রদ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। নিয়মিত বাদাম খেলে বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। বিশেষ করে প্রতিদিন সকালবেলা বাদাম ভিজিয়ে খেলে তা দেহের পুষ্টিগুণের ভারসাম্য রক্ষা করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। ঠিক তেমনি বাদাম থেকে তৈরি করা তেল ভোজ্য তেল হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। এটি একটি উচ্চ প্রোটিন ও ক্যালরিযুক্ত ভেষজ খাদ্য।

নিয়মিত খাবারের সাথে বাদাম তেল খেলে তা দেহের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, চুল উজ্জ্বল ও শক্তিশালী করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, ত্বকের প্রদাহ দূর করে তা উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ করে। এগুলো বাদে শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা হলে হালকা করে বাদাম তেল তালুতে নিয়ে উক্ত জায়গায় মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়। 

সয়াবিন তেল

বাংলাদেশে সয়াবিন তেল ব্যাপক মাত্রায় জনপ্রিয়। এটি দেশের সব থেকে বেশি ব্যবহৃত ও পরিচিত ভোজ্য তেলের মধ্যে অন্যতম। প্রতিদিন আমাদের রান্নার কাজে সব থেকে বেশি সয়াবিন তেল ব্যবহার করা হয়। এই কারণেই তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে মানুষ আন্দোলনে নামে। যাইহোক, সয়াবিন তেলের রয়েছে অনন্য স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ। 

সয়া নামক উদ্ভিদের বীজ থেকে এই তেল তৈরি করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিন তেল গ্রহণ করলে ৯ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া এই তেল মেয়েদের মেনোপজ স্বাভাবিক রাখে এবং প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত পরিমাণ সয়াবিন তেল ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া, স্নায়ুজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। 

পাম অয়েল 

আমাদের দেশে পাম অয়েল সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই তেল দেখতে হুবহু সয়াবিন তেলের কাছাকাছি তবে ঘনত্বের দিক দিয়ে আলাদা। পাম অয়েল ঠাণ্ডায় জমে গেলেও সয়াবিন তেল জমে না। প্রায় সব ধরনের রান্নার কাজে এই তেল ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে ভাঁজা এবং বুনা খাবার রান্না করার জন্য এই তেলের কোন জুড়ি নেই। 

যাইহোক, পাম অয়েলে প্রচুর পরিমাণ টোকোট্রিয়েনল ভিটামিন ই থাকে যা অন্যান্য কোন তেলের মধ্যে থাকে না। অর্থাৎ এই তেল ভিটামিন ই সরবরাহের একটি অনেক শক্তিশালী মাধ্যম। অন্যদিকে পাম অয়েল ব্লাড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। 

জলপাই তেল বা জয়তুন তেল

জলপাই তেলকে আমরা জয়তুন তেল বা অলিভ অয়েল নামেও চিনি। এই তেল চুল ও ত্বকের যত্নে সব থেকে বেশি কার্যকরী। জয়তুনের তেল আপনি বাহ্যিক ব্যবহারের পাশাপাশি খাবারের সাথেও গ্রহণ করতে পারবেন। জলপাই থেকে সংগ্রহ করা এই তেলের রয়েছে ব্যাপক পুষ্টিগুণ। অলিভ অয়েল নিয়মিত ব্যবহার করলে শরীরের কোলেস্টেরলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হয়, লিভার সুস্থ রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের ভারসাম্য রক্ষা করে, চুল সিল্কি ও শক্তিশালী করে।   

নারিকেল তেল 

নারিকেল একটি অর্থকরী উদ্ভিদ। এর প্রতিটি অংশ কোনো না কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে নারিকেল থেকে তৈরি হওয়া তেল আমাদের প্রতিদিনের জীবন ধারণে ব্যবহার হয়ে থাকে। সাধারণত কোকোনাট অয়েল আমরা ত্বকে ও চুলে ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হলেও এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। সে কারণে খাবারের সাথে গ্রহণ করলে তা আমাদের দেহে সরাসরি কাজে লাগে। 

নারিকেল তেলে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার কারণে সরাসরি খাবারের সাথে গ্রহণ করা অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে। তবে এই তেল আমাদের ত্বকের ময়েশ্চারাইজার বজায় রাখার পাশাপাশি চুলের গোড়া শক্ত করে ও  সিল্কি করে। এগুলো ছাড়াও নারিকেল তেল ত্বকে ব্যবহার করলে লোমকূপ পরিষ্কার থাকে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। 

অ্যাভোকাডো তেল 

অ্যাভোকাডো অনেক জনপ্রিয় ফলের নাম। সাধারণত সালাদ তৈরি করার জন্য এই ফল সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার জন্য এই ফলের রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। যাইহোক, অ্যাভোকাডো থেকে তৈরি করা তেল ভোজ্য তেলের পাশাপাশি বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। 

এই তেলকে অনেকটা অলিভ অয়েলের বিকল্প হিসেবে ধরা হয়। কারণ অলিভ অয়েল যেমন শরীরের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক ও চুলের যত্ন নেয় ঠিক তেমনি এই তেল ব্যবহার করলেও একই সুফল পাওয়া যায়। এই কারণে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এই তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে রেস্টুরেন্টে অ্যাভোকাডো তেল ব্যবহার করে বিভিন্ন খাবার রান্না ও পরিবেশন করা হয়। 

তিলের তেল 

তিল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় খাদ্য। তিলের ব্যবহার সব থেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এর থেকে তৈরি তেলের কারণে। সাধারণত তিলে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে। অন্যদিকে তিল থেকে তৈরি করা তেল দিয়ে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার রান্না করা যায়। এটি খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন নিশ্চিত করে। তিলের তেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি উপকারী উপাদান আছে। এই তেল খাওয়ার পাশাপাশি ত্বকে ও ব্যবহার করা যায়। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ও দেহের হাড় মজবুত হয়।  

রাইস ব্রান অয়েল

রাইস ব্রান অয়েল

ধানের তুষ অথবা ব্রাউন রাইসের উপরের যে লেয়ার থাকে তা সংগ্রহ করে রাইস ব্রান অয়েল তৈরি করা হয়। খাবারের সাথে এই তেল ব্যবহার করলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়। সাধারণত অন্যান্য ভোজ্য তেলের বিকল্প হিসেবে এই তেল তৈরি করা হলেও এতে খরচ বেশি হয়। এই কারণে রাইস ব্রান অয়েল বাজারে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। 

যাইহোক, রাইস ব্রান অয়েল খাবারের সাথে গ্রহণ করলে ডায়বেটিসের মাত্রা কমে, হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ থাকে, ওজন, খুশকি ও চুলের আগা ভাঙা রোধ করে। তেল আমাদের রান্নার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাছার তেলের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আকারে স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। উপরিউক্ত আলোচনায় তেলের প্রকারভেদ সহ আমাদের দেশের প্রচলিত কিছু তেলের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.