You are currently viewing যবের ছাতুর রেসিপি, পুষ্টিগুন, খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

যবের ছাতুর রেসিপি, পুষ্টিগুন, খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

যব আমাদের দেশে অনেক যুগ আগে থেকেই প্রচলিত। সাধারণত ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে এই খাবার সব থেকে বেশি প্রচলিত। তবে যুগের সাথে সাথে এই পুষ্টিকর খাবার হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই গমের মত দেখতে এই ফসল চাষ করা হচ্ছে। আজকের লেখায় যবের গুণাবলি, উপকারিতা এবং রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

যবের ছাতু কি?

যব একটি গম সদৃশ বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। যবের ইংরেজি নাম হলো বার্লি যাকে গ্রাম অঞ্চলে আমরা পায়রা বলে চিনি। এটি দেখতে গমের মতই তবে আকারে গম থেকে ছোট হয়। যব বা বার্লি একটি প্রাচীন খাদ্য যা সময়ের সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। 

পূর্বে গ্রাম অঞ্চলে গমের বিকল্প হিসেবে যবের চাষ করা হতো। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবারের অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। প্রধানত যব খাওয়ার জন্য একে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করে নেয়া হয়। অর্থাৎ যবের  ছাতু বা বার্লি পাউডার র যবকে পিষে তারপর তৈরি করা হয়। মোটকথা যবের ছাতু হল যব রোদে শুকিয়ে তা হালকা ভেজে নিয়ে তা পিষে গুঁড়ো করে যে পাউডারের মত তৈরি করা হয়। 

যবের ছাতু খাওয়ার নিয়ম 

যবের ছাতু খাওয়ার সব থেকে প্রচলিত পদ্ধতি হলো এটি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া। সাধারণত একটি প্লেটে পরিমাণ মত যবের ছাতু নিয়ে তা প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে প্রথমে ভিজিয়ে নিতে হবে। কি পরিমাণ পানি ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করবে আপনার উপর যে বেশি তরল খাবেন না একটু শক্ত শক্ত খাবেন। যাই হোক, পানি দিয়ে ভেজানো হলে তাতে স্বাদমতো লবণ দিতে হবে। 

কারণ যব হালকা মিষ্টি স্বাদের হলেও পানি মেশানোর কারণে তা স্বাদহীন হয়ে পরে। লবণ মেশানো হলে তারপর সেভাবেই তরল থাকলে চুমুক দিয়ে বা চামচ অথবা হাত ব্যবহার করে খেতে পারবেন। অনেকেই লবণ মেশানোর পর মিষ্টি করার জন্য এর সাথে গুড়, চিনি ইত্যাদি মিশিয়ে থাকে। 

অন্যদিকে আপনি যবের ছাতু শরবতের মত করে তৈরি করে তা খেতে পারবেন। প্রধানত সকালে নাস্তা হিসেবে এই ছাতু খাওয়া সব থেকে বেশি ভালো কারণ এতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এতে খুদা লাগে কম। যবের রুটি অথবা সূপ তৈরি করার জন্য এর গুঁড়া বা ছাতু ব্যবহার করা হয়। গ্রীষ্মকালে এই খাবার খুদা নিবারণের পাশাপাশি দেহ ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে। 

যবের ছাতুর পুষ্টি উপাদান

যবের ছাতুর পুষ্টি উপাদান

যবের ছাতু অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। নিচে প্রতি ১০০ গ্রাম যবের ছাতুতে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে তা দেওয়া হলো। 

  • ২০.৬% প্রোটিন
  • ৭.২% ফ্যাট
  • ১.৩৫% ফাইবার
  • ৬৫.২% কার্বোহাইড্রেট
  • ২.৭% ভুসি
  • ২.৯৫% ময়েশ্চার
  • ৪০৬ ক্যালোরি
  • সোডিয়াম- ২ মিলিগ্রাম 
  • ম্যাংগানিজ- ১ মিলিগ্রাম

এছাড়া যবের ছাতুতে আছে  মালটোজ, গ্লুকোজ, স্যাকারিন, লেসিথিন, এল্যানটয়েন, এমাইলেস এবং ভিটামিন-বি পুষ্টি উপাদান। 

যবের ছাতু খাওয়ার উপকারিতা

যবের ছাতু খাওয়ার উপকারিতা

যবের ছাতু খাওয়ার অনেক রকম উপকারিতা রয়েছে যা নিম্নে আলোচনা করা হলো। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

যবের ছাতুতে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা রক্তের অতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট এবং ব্রেইন সুস্থ রাখে। এছাড়া এই ছাতু দেহের পর্যাপ্ত পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে যা রক্তের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করে। যে কারণে পুরো দেহে ঠিকমতো রক্ত পরিভ্রমণ করতে পারে।  

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে 

আমরা জানি মানব দেহে দুই ধরনের কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। যার মধ্যে উপকারী এবং ক্ষতিকর এলডিএল অন্যতম। তো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হার্টের স্বাস্থ্যহানির জন্য দায়ী। যবের ছাতু রক্তে থাকা এই ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ কমিয়ে উপকারী কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। মোটকথা যব বা বার্লি দেহের কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। 

ওজন কমায় 

যবের ছাতুতে প্রচুর পরিমাণ দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ থাকে। মূলত এই খাদ্যআঁশ পাকস্থলীতে সহজেই গলে যায় এবং দেহে ক্যালোরি সঞ্চার শুরু করে। অন্যদিকে দ্রবণীয় খাদ্যআঁশ দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধার উদ্রেক নিয়ন্ত্রণ করে। এতে অতিরিক্ত ক্ষুধা পায় না যা পরোক্ষভাবে আমাদের ওজন কমাতে সহায়তা করে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে 

যখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় তখন তা ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য জটিল রোগের সূত্রপাত ঘটায়। ডায়াবেটিস নিরোধক যে সকল খাবার প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে যব অন্যতম। এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে যা রক্তে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় শর্করা জমতে দেয় না। 

মস্তিষ্ক সচল রাখে 

যবের ছাতুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া মস্তিষ্ক ঠান্ডা ও সচল রাখার জন্য সঠিক মাত্রায় রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করে। এই কারণে প্রতিদিন সকালে কোন ধরনের মিষ্টি ছাড়া যবের ছাতু খাওয়া অনেক উপকারী। 

হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় 

যবের ছাতু রক্তে থাকা কোলেস্টেরল এলডিএল দূর করে জন্য তা হার্টের ভাল্ব ও পেশি সুস্থ রাখে। এতে হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 

যবে থাকা খাদ্যআঁশ পেটে থাকা হজম করার এনজাইমগুলোকে সচল করে। এতে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক মাত্রায় হয় এবং পুষ্টি উপাদান গুলো দেহের উপকারে আসে। তবে যবের ছাতু তরল অবস্থায় খাওয়া উচিত না হলে তা পেটে অস্বস্তি ও পীড়ার জন্ম দিতে পারে। 

শরীর ঠাণ্ডা রাখে 

বার্লি বা যবের ছাতুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে। এছাড়া এতে খাদ্যআঁশের পাশাপাশি বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন উপাদান থাকে যা শরীর এবং পেট দুটোই ঠান্ডা রাখে। 

দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে 

এই ছাতুতে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং হাড় ও মাংস পেশি মজবুত করে। এই কারণে সাধারণ দুর্বলতা থেকে শুরু করে মানুষিক অবসাদ দূর হয়। বিশেষ করে প্রতিদিন সকালে এই ছাতু খেলে তা দেহের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ 

ছাতুতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়া এই উপাদান থাকায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্য উন্নত হয়। 

Jober Chatu

যবের ছাতু – স্বাদ ও পুষ্টির প্রাকৃতিক সমাধান

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

সঠিকভাবে হজম প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বলে খাবার পরিপূর্ণভাবে পাচন সম্পন্ন হয়। এতে দেহের অতিরিক্ত বর্জ্য নিঃসরণ হয় এবং কোলন এবং প্রটেস্ট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। 

লিভার ভালো রাখে

লিভার বা অন্ত্রে থাকা বিভিন্ন প্রদাহ এবং জ্বালাপোড়া দূর করার জন্য যবের ছাতু অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

মূত্রনালির প্রদাহ দূর করে

যবের ছাতু মূত্রনালির সংক্রমণ ঠেকায় যা মূত্রনালির প্রদাহ দূর করে। অন্যদিকে এটি কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। 

পানি স্বল্পতা দূর করে 

বার্লিতে প্রচুর পরিমাণে তরল থাকে যা দেহের পানি স্বল্পতা দূর করে। 

যবের ছাতুর রেসিপি

যবের ছাতু দিয়ে বিভিন্নরকম খাবার তৈরি করা যায়। নিচে এই ছাতুর রেসিপি বর্ণনা করা হলো। 

  • যবের রুটিঃ ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে যবের তৈরি রুটি বেশ জনপ্রিয়। এই সকল অঞ্চলে ক্ষুধা নিবারণের জন্য সকালের নাস্তায় যবের রুটির সাথে হালুয়া বা সবজি মিশিয়ে খাওয়া হয়। যবের রুটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং বুকে জমে থাকা কফ দূর করে। এগুলো ছাড়াও এই রুটির রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা ও ব্যবহারবিধি। 
  • ছাতুর শরবতঃ যবের ছাতুর সাথে পানি এবং লবণ মিশিয়ে তাতে পরিমাণ মত মধু বা চিনি যোগ করে ফলের শরবতের মত যে পানীয় তৈরি করা হয় তাকে ছাতুর শরবত বলা হয়। এই তরল মিশ্রণ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি অনেক উপকারী। 
  • ছাতুঃ যবের তৈরি যত গুলো রেসিপি আছে ছাতু তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান খাবার। সাধারণত যব পিষে তা থেকে ছাতু তৈরি করা হয়। এই ছাতু পরবর্তীতে বিভিন্ন খাবারের সাথে যোগ করে অথবা শুধু লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। 

এখানে যবের তৈরি ছাতু এবং এর সকল প্রকারের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি লেখাটি পরে আপনি হারিয়ে যাওয়া যব বা বার্লি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখতে পারবেন। 

এরকম আরও খাবার সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য পেতে ভিসিট করতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট এর ব্লগ সেকশন এ।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.