You are currently viewing খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়, উপকারিতা, কিভাবে তৈরি হয়?

খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়, উপকারিতা, কিভাবে তৈরি হয়?

শীতের শুরুতেই বাঙালি উৎসুক হয়ে ওঠে খেজুরের গুড়ের জন্য। আর পায়েসের রাজা হিসেবে গণ্য করা হয় খেজুরের গুড়ের তৈরী পায়েস। শীতকালে গুড়ের স্বাদ বাঙালির কাছে মধুর মত। আমাদের দেশে খেজুরের রস থেকে তৈরি হয় খেজুরের গুড়। শীতের দিনে গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা, পুলি, পায়েস, মিষ্টি নিয়ে মজে থাকে বাঙালি। 

খেজুর গুড় কিভাবে তৈরি হয় ?

বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে খেজুরের গুড় পাওয়া যায়। এক সময় খেজুরের রস থেকে তৈরি হত চিনি। বৃহত্তর যশোর ও ফরিদপুর জেলায় ব্যাপক পরিমানে খেজুর গাছ চাষ হত। এইসব এলাকা গুলোতে কয়েক যুগ ধরে সুনামের সাথে খেজুরের গুড় তৈরি হয়ে আসছে যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ১৯৪০ এর দশকের প্রথম দিকে চবিবশ পরগনার হাওড়া, মেদিনীপুর এবং ফরিদপুর জেলা গুলোতে এই শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটে।

এই খেজুরের গুড় তৈরির সাথে মিসে আছে বাঙালির সংস্কৃতি। শীতের পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে গাছিদের খেজুর গাছের শীর্ষে আহরণ এবং কুয়াশার চাদরে ঢাকা ভোরে রসের হাড়ি নামানো গ্রামীণ জনপদের একটি অতিসাধারণ ও মনোমুগ্ধকর চিত্র। এরপর সেই রস জাল দিয়ে নানান প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় গুড়। 

খেজুর গুড় তৈরি প্রক্রিয়া

খেজুর গাছ থেকে রস নামানোর উদ্দেশে গাছে কলসি বাঁধার বা গাছ কাটার মাধ্যমে শুরু হয় খেজুর গুড় তৈরির হাতেখরি। অর্থাৎ শীতের সময় খেজুর গাছের সবার উপরে উঠে গাছের ছাল বা উপরের অংশ ছিলে মসৃন করে মাটির ছোট হাড়ি বা কলস ভালো করে বেধে দেয়া হয়। একই সাথে ভালো করে এই হাড়ির উপরে সাদা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয় যেন কোন পাখি বা কীটপতংগ এতে প্রবেশ করতে না পারে। এরপর খেজুর গাছ থেকে খুব ভোরে রস নামিয়ে এনে টা পরিশোধন করে পরিষ্কার একটা পাত্রে ঢালা হয়। এরপর কঠিন উত্তাপে জ্বাল দেওয়া হয়। উত্তপ্ত আগুনে জ্বাল দেওয়ার ফলে এক সময় তা ঝোলা গুড়ে পরিণত হয়। 

এরপর জ্বাল দেওয়া শেষ হলে গুড়ের তলানিতে সাদা যে অংশ থাকে তা গুড়ের সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হয় খেজুর গুড়, এই পদ্ধতিকে বলা হয় খেজুর গুড় এর বীজ দেওয়া। এরপর নির্দিষ্ট পরিমানে ঘন করে খেজুরের গুড়ে পরিণত করা হয় তারপর তা বিভিন্ন ছাচে রেখে তার আকার দেওয়া হয়। 

তবে বাজারে গোল ও লম্বা আয়তাকার আকৃতির পাটালি গুড় ও তরল খেজুরের গুড় বা ঝোলা গুড় বেশি দেখা যায়। বর্তমানে নানান  আকৃতির খেজুর গুড় দেখা যায় যা বাঙালির শিল্পকে উপস্থাপন করে।  

খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়

বাড়তি চাহিদা থাকার কারণে, খেজুর গুড়ের রং উজ্জ্বল করতে চিনি, ফিটকিরি ও রাসায়নিক মেশানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আসায় গুড়ে কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকে যে কারনে অনেক সময় খাঁটি খেজুর গুড় চেনা মুশকিল হয়ে যায়। কিন্তু গুড় আসল না ভেজাল তা চেনার কিছু উপায় আছে। যা অবলম্বন করলে আসল হাজার ভেজাল গুড়ের মধ্যে থেকে আসল থাকি খেজুর গুড় চিনে ফেলা সম্ভব। খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়:

  • ভেজাল গুড়ে স্বাদ গন্ধ তেমন থাকে না।
  • সাধারণত কেমিক্যাল মেশানো থাকলে, খেজুর গুড়ের রং হলুদ দেখায়।
  • খাঁটি খেজুর গুড় এর রং গাঢ় বাদামি রঙের হয়ে থাকে।
  • ভেজার গুড়ে কৃত্রিম চিনি মেশানোর ফলে তা চকচক করে এবং শক্ত হয়ে থাকে।
  • আসল পাটালি গুড় চকচক করে না। এটি ভাংলে ভিতরে ভেজা ও রসাল ভাব থাকে ও কিছু টা নরম হবে। একই সাথে খেজুরের গন্ধ পাওয়া যায়।
  • খাঁটি খেজুরে গুড়ের পাটালির রং কালচে লাল হয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত জ্বাল দেওয়ার কারণে, ভেজাল গুড়ের স্বাদ তিতা ভাব থাকে।
  • অনেক সময় গুড়ে মিষ্টি বারানর জন্য নানান কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যার ফলে গুড়ের মধ্যে ফটিকের মত অংশ দেখা যায়। এরকম হলে বুঝতে হবে গুড়ে ভেজাল আছে।
  • খাঁটি গুড়ে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলে তা থেকে টুনটুন শব্দ হবে না। যদি এমন হয় তো বুঝতে হবে গুড়ে ভেজাল মেশানো আছে। 
  • ভেজাল গুড় তুলনামূলক শক্ত হয়ে থাকে। তবে খাঁটি প্রিমিয়াম খেজুর গুড় হাতে নিতে ভাংলে তা রসালো ভাব অনুভূত হবে। 

খেজুর গুড়ের উপকারিতা

খেজুর গুড়ের উপকারিতা
  • প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম এর ভাণ্ডার এই খেজুর গুড়। যাঁরা রক্তস্বল্পতার ভুগছেন, তাঁরা খেজুরের গুড় খেলে উপকার পাবেন বলে বিষেশজ্ঞ মতবাদ দিয়েছেন। হাড় ও বাতের ব্যথা উপশমে খেজুর গুড় বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। তবে ডায়াবেটিস আছে এমন মানুষদের খেজুর গুড় এরিয়ে চলাই উত্তম।
  • খেজুর গুড় ওজন কমাতে দারুণভাবে কাজ করে । যাদের হজমের সমস্য আছে, তারা নিয়মিত ডায়েটে রাখতে পারেন খেজুর গুড়।
  • খেজুর গুড় কোল্ড অ্যালার্জি কমাতে সহায়তা করে। রক্তাল্পতায় ভুগলেও খেতে পারেন খেজুর গুড়। কারণ, এই গুড় শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বারিয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতেও খেজুর গুড় এর গুণাবলি কাজে দেয়।
  • শীতে শরীর গরম রাখতে অথবা সর্দি-কাশি ও জ্বরের মতো রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে খেজুরের গুড় খেতে পারনে। 

তবে খেয়াল রাখবেন, একমাত্র খাটি গুড় থেকেই এইসব উপকারিতা আপনি পাবেন। ভেজাল গুড় খেলে শরীরে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বেশি হবে। 

আমাদের খেজুর গুড় কেন  সেরা

আমাদের বিন্নি ফুডের খেজুর গুড় উৎপাদনে কোন প্রকার কৃত্রিম চিনি, রঞ্জক পদার্থ, কেমিক্যাল, হাইড্রোজ, ফিটকিরি সহ কোন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে ও পুষ্টিগুণ বজায় রেখে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়ে থাকে। আমাদের খেজুর গুড় ভালোভাবে সংরক্ষন করলে সারা বছর জুড়ে এই প্রিমিয়াম স্বাদ নেওয়া সম্ভব। তাই খাটি ফুডের আস্থায় বিন্নি ফুডই সেরা।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.