আমরা শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরলেই উদ্বগ্ন হয়ে উঠি। তবে মানসিক অসুখকে গুরুত্বপূর্ণ সহকারে দেখি না। কোনো ব্যক্তি যদি দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক চাপ নিয়ে দিন কাটাতে থাকে। একসময় তিনি মানসিকভাবে বিপদগ্রস্থ হয়ে উঠবেন। পরবর্তীতে নেশাগ্রস্ত বা আত্মহননকারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়। জার্নালের তথ্যানুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৮.৭ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত।
নিজেদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখার দায়িত্ব আমাদের। তাই মানসিক রোগ যেনো বাসা বাধতে না পারে সেই বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আমাদের জীবন কর্মব্যস্ততার কারণে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বেড়েই চলছে। এবং দীর্ঘদিন সময় এভাবে চলতে থাকার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। তাই সুস্থ থাকলে হলে শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াটা একান্ত জরুরি। আজকের আর্টিকেলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০ উপায় জানবো।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০ উপায়
শরীর অসুস্থ হয়ে পরলে উপসর্গগুলো সহজেই বোঝা যায়। তবে মনের অসুখগুলো প্রকাশ পায়না। মানসিক সমস্যা বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। যেমন অনিয়ন্ত্রিত জীবপযাপন, ব্যায়াম না করা, যত্নের অভাব ইত্যাদি থেকে মানসিক অসুস্থতা দেয়া যায়। মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থ্যতা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালোর রাখার জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
স্বাস্থ্যকর খাবার
আমাদের নিত্যদিনের কাজকর্ম সম্পন্ন করার জন্য অবশ্যই শক্তির প্রয়োজন। আমরা খাবার খেয়েই কাজকরার শক্তি পেয়ে থাকি। সুষ্ঠূভাবে কাজ করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অত্যাবশক। তাই নিয়মিত খাবার তালিকায় সুষম খাদ্য রাখতে হবে।
অনুভূতি শেয়ার করা
আমরা অনেক সময় অনুভূতি শেয়ার করতে পারিনা। দুঃখ কষ্ট চাপা রাখার ফলে সুইডাইডের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে থাকে। তাই মানসিক সমস্যা থাকলে সেটা নিজের মধ্যে চেপে রাখা উচিত নয়। পরিবার বা বিশ্বত্ব কারোর কাছে শেয়ার করা উচিত। এতে আমরাদের মন হালকা হয়ে যায়। মনের মধ্যে একধরনের প্রশান্তি কাজ করে।
ডিভাইসের ব্যবহার কমানো
মনোযোগ ধরে রাখা ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো অতিরিক্ত পরিমাণে ডিভাইস ব্যবহার করা। বর্তমানে ছোট বড় সবাই ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হয়ে পরছেন। যার কারণে অনেক সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আমরাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। কাজে ফোকস হওয়ার জন্য আমরা ডিজিটাল ওয়েলবিঙ ফিচারটি ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন এন্ড্রোয়েট ফোনেই এই ফিচারটি রয়েছে।
ধ্যানে মগ্ন হওয়া
আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো ধ্যান। এটি আমাদেরকে খারাপ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে সাহায্য করে। এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করার ফলে আমাদের মন শান্ত থাকে এবং মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমাদের মনকে স্থির করলে প্রতিদিন কয়েক মিনিট মেডিটেশন করা যেতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
ব্যায়াম করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। আমরা ফিট থাকা জন্য ব্যায়াম করে থাকি। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে মানসিক ব্যথা উপশমকারী এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। ব্যায়াম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। পছন্দের ব্যায়াম গুলো নিত্যদিনের কার্যকলাপে অর্ন্তুভুক্ত রাখতে পারেন। এতে আমাদের মন প্রফুল্ল থাকবে।
শখের কাজ করা
শখের কাজগুলো করলে মানসিকভাবে খুশি থাকা যায় তাই খুজে বের করার চেষ্টা করুন আপনার শখের কাজগুলো কি কি! অনেকেই খেলাধুলা করতে পছন্দ করেন। আবার কেউ বাগান, কেউ সাইক্লিং ইত্যাদি তবে ফোনে গেম খেলার বিষয়টি অনুৎসাহিত করা হয়েছে। যা উপকারের চেয়ে অপকার বেশি বয়ে আনবে। মোবাইলে গেম অতিরিক্ত মাত্রায় খেলার ফলে আমাদের চোখের ক্ষতি হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলে।
এক্টিভ থাকার চেষ্টা
প্রতিদিন নিজেকে এক্টিভ বা সক্রিয় রাখালে নানার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আমরা যখন অলসতায় দিনগুলো পার করে দেই। তখন বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা জাগ্রত হয়। এবং মানসিকভাবে আমরা দুর্বল হয়ে পরি। তাই সবসময় কাজের মধ্যে থাকতে হবে। এতে মনও ভালো থাকবে।
পর্যাপ্ত ঘুম
শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো জরুরি। কারণ ঘুম ঠিকভাবে না হলে আমরা ক্লান্তি অনুভব করে থাকি। আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। তাই একজন প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।পরিমিত পরিমাণে ঘুমানোর ফলে মন ফ্রেশ ও প্রফুল্ল থাকবে। এবং কাজ করার প্রোডাক্টিভিটি বেড়ে যায়। ঘুম ভালো হওয়ার জন্য টিপস রয়েছে।
সামাজিকভাবে সংযোগ করুন
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আমরা পুরো পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত থাকতে পারছি। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেইসবুক ইন্ট্রাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে আমরা দূরদূরান্তর থেকে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারি। তবে তরুণরা আজকার এগুলোর ঝোকে পরে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। সারাদিন ইন্টারনেটে এক্টিভ থাকার কারণে বাহিরে গিয়ে খেলাধুলা করা বা প্রতিবেশিদের সাথে মেশা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের মানসিক বিকাশে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দূর করার জন্য সামাজিক সংযোগ স্থাপন করা অনেক জরুরী।
নিজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
কখনোই অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা উচিত নয়। এতে হতাশা ও বিষন্নতা বেড়ে যায়। তাই নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে নিজের সাথে নিজের দৃঢ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করলে সফল হওয়া সম্ভব। নিজের প্রতি বিশ্বাস কখনোই হারিয়ে ফেলা উচিত নয়।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস
শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। শরীর অসুস্থ থাকলে মন ভালো থাকে না। এছাড়াও শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলেই আমরা ডাক্তারের কাছে ছুটে চলে যাই। অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা অনাগ্রহী বেশি। মন ভালো না থাকলে কোনো কাজে ঠিকভাবে সম্পূর্ণ হয়ে উঠেনা। তাই শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য এই দুটো বিষয়কে সমান ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালোর রাখার আরও কিছু টিপস নিচে উল্লেখ করা হলো-
- সূর্যের আলো গায়ে মাখা। ভিটামিন ডি এর মূল উৎস হলো সূর্যের আলো। এটি শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
- নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে।
- ব্যস্ততার সময়ের মাঝেও প্রিয়মানুষদের সাথে আনন্দময় সময় কাটানোর চেষ্টা করতে হবে।
- নিজের জন্য সময় বের করে নিজেকে সময় দেওয়া। ঘুরতে যাওয়া ও কাজের মধ্যে বিরত নেওয়া।
- নতুন কিছু শেখা। পছন্দের কোনো কাজের ওপর দক্ষতা বাড়ানো।
- রুটিন মেনে চলা । যেমন সময় মতো খাবার গ্রহণ করা। কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পাদান করা, বিশ্রাম নেওয়া।
- নিজেকে প্রকাশ করতে পারা। আমাদের অনেকের মধ্যে অনেক ধরনের দক্ষতা রয়েছে। যেমন কেউ ছবি আটকে পারে, কেউ সুন্দর ভাবে লিখতে পারে, আবার কেউ নাচতে পারে।
- আমাদের প্রয়োজন হলে সাহয্যের জন্য জিজ্ঞাসা করা। এতে করে যিনি সাহায্য করবেন তিনি নিজেকে উৎসাহিত করবেন ভালো কাজের জন্য। সেই সাথ আপনার সমস্যাগুলো সমাধান হবে সহজেই।
- কাউকে সাহায্য করলে নিজের মধ্যেও একধরনের ভালো লাগা কাজ করে। তাই অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ানো উচিত। এটিও একধরনের মহৎ গুণ করা যায়।
উপসংহার
শরীরিক সুস্থতা যতটা জরুরি, তেমনি মানসিক সুস্থতাও জরুরি। তাই আমাদের সকলের উচিত মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়ায়। কারণ শারীরিক সমস্যা গুলো ভালো হলেও মানসিক সমস্যাগুলো কাঠিয়ে ওঠা সম্ভব হয়না। গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যার জন্য অবশ্যই মানসিক বিশেষজ্ঞের নিকট পরামর্শ নিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা কঠিক কোনো বিষয় নয়। উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললেই মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়।